21-09-2021, 06:23 PM
(05-01-2020, 12:54 PM)sairaali111 Wrote: শেষ থেকে শুরু...
এই ডিসেম্বর মাসটা পড়লেই আমার ক'বছর থেকে কেমন যেন শরীর-মনে একটা প্যালপিটেশন্ শুরু হয়ে যায় - আর ডিসেম্বরের শেষ রাত্তিরটায় তো আমি স্বেচ্ছাবন্দী-ই হয়ে থাকি । আসলে, ক'বছর বলছি কেন - নির্দিষ্ট করে বললে ঠি-ক তিন বছর । তার আগে তো প্রতীক্ষার প্রহর-ই গুনতাম আমরা এই দিনটির বা বলা ভাল এই রাতটির জন্যেই । ও , ''আমরা'' শব্দটিতে হোঁচট লাগলো বুঝি ? না, আমি গৌরবে বহুবচন হয়ে ''আমরা'' হচ্ছে মোটেই তা' নয় - আসলে, আমি আর বিশাল । সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী না হলেও চলতি ইংরাজি গ্রামার মতে এ তো 'প্লুরাল' - বহুবচন । - অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে , দুই বাড়িরই মতামত সম্মতির তোয়াক্কা না করেই আমরা বিয়ে করেছিলাম । নামেই হয়তো ধরে ফেলেছেন - 'বিশাল' জন্মগত 'বাঙালি' নয় । ওরা আসলে ভূপালের মানুষ । কিন্তু পারিবারিক ব্যবসা আর শৈশব থেকেই বাংলা কলেজে পড়া বিশাল শুধু খানিকটা অ-বাঙালীত্ব বয়ে বেড়াচ্ছিল তার পিতৃদত্ত নামটুকুতেই বোধহয় - বাকি সবকিছু মিলেই বিশালের মধ্যে , না , ষোল আনা নয় , বরং আঠারো আনা-ই ছিল বাঙালীয়ানা । - তবে , আমি কিন্তু ওর ''বিশালত্ব'' অনুভব করতাম ওর বিশেষ একটি জায়গায় । আর , সেটি-ই হয়তো আমাকে খুব দ্রুত-ই ওর কাছাকাছি এনে দিয়েছিল । ... একই অফিসে এ ঘর ও ঘরে বসতাম আমরা । অফিস বসের ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের অ্যারেঞ্জমেন্ট আমাদের খুব কাছাকাছি এনে দিয়েছিল । সাধারণ বাঙালি মেয়েদের বিবাহ-বয়সের অনুপাতে আমার বয়স বেশ খানিকটা বেশী-ই হয়ে গেছিল । ঠিক করেছিলাম বিয়ে করবই না । চাকরি সূত্রে যা ইনকাম করি আর মা-বাবার এক সন্তান হওয়ার সুবাদে পারিবারিক সম্পদের একমেবাদ্বিতীয়ম মালিকানা আমারই - তাই আর্থিক প্রয়োজনে কোন পুরুষের অনুবর্তী হওয়ার দরকার আমার ছিল না । তাছাড়া , আমার বারো ক্লাসে পড়াকালিনই আমার বিদেশ থেকে আসা তুতো দাদা যে অভিজ্ঞতার অন্ধকূপে ফেলে দিয়েছিল আমায় তার পর পুরুষ-সঙ্গ আমাকে যেন ভয়-ই দেখাতো । কিন্তু আমার উনত্রিশ বছর বয়সে নিউ ইয়ার্স ঈভে সব হিসেবপত্রই কেমন যেন উলটপালট হয়ে গেল । ত্রিশের বিশাল উনত্রিশের আমাকে ঐ রাতেই আসন্ন ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের কিছু উপহারসামগ্রী কেনা আর চয়েস করার অনুরোধ জানাতেই আমিও এক কথায় সম্মতি দিয়েছিলাম । বিশালের আচরণ কথাবার্তা সাজপোশাক আর কাজকর্মের ধরণ - সবকিছু মিলেই বোধহয় আমারও একটি সফ্ট কর্ণার তৈরি হয়েছিল । ওর গলার আওয়াজ পেলে ভাল লাগতো , অনেক সময় হাত হাত ছুঁয়ে গেলে সেই কিশোরীবেলার মুকুলিকা-শিহরণ অনুভব করতাম যেন শরীরে । শিরশিরানির সেই রেশটি অনেক অনেকক্ষণ যেন আচ্ছন্ন করে রাখতো আমায় । - তারপর যা' হয় । বিপরীত পক্ষেও যে সম্পর্কের একটি মধু-রসায়ণ [b]ঘনীভূত হয়ে চলেছিল সেটিই যেন ডালপালা মেললো ঐ ডিসেম্বরের শেষ রাতে পার্ক স্ট্রীটের সেই বিখ্যাত রেস্তোঁরায় কফির কাপ-কে সাক্ষী রেখে । [/b]
[b] উত্তরবঙ্গের একটি সীমান্তবর্তী শহর থেকে মহানগরে আসা আমার একার ছোট্ট আস্তানায় তারপর বিশালের আসা । সেই রেস্তোঁরা থেকে পছন্দ-করা দামী উপহারসামগ্রী সহ । আমারই আমন্ত্রণে অবশ্যই । - সময়ের কী মহিমা ! দেখতে দেখতে চলে গেছে প্রায় ন' ন'টি বছর । উনত্রিশের আমি আজ প্রায় চল্লিশ-ছুঁতে চলা আটত্রিশ প্লাসের ভরন্ত যুবতী । - যুবতী ? কে জানে ! আসপাশের নানান বয়সী পুরুষ-দৃষ্টি তো সে কথা-ই বলে যেন । ''তুমি এখনও যুবতী । শুধু যুবতী না । সদ্যো-যুবকদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবার মালমশলা-পোরা ফায়ারি-মিলফ্ !'' . . . বিশালও ঠিক ওইরকম কথা-ই বলতো । বিয়ের আগে সেই প্রথম ৩১ ডিসেম্বর ''যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে...'' - সে রাতেও যেমন , বিয়ের পরে আমাদের সাজানো সংসারের ছ'টি বছরও যেন ভালবাসার জোয়ারে ভেসেছিলেম আমরা । আর প্রত্যেক নিউ ইয়ার্স ঈভে সন্ধ্যার খানিকটা সময় বাইরে কাটিয়ে , রেস্টোরান্টে খেয়ে আমরা ঘরে ফিরে যেন শ্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়তাম । বাইরের পৃথিবী আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো একেবারেই । পরস্পরের মধ্যে আমরা যেন ডুবুরি হয়ে একে অন্যের গভীর থেকে গহীনতম কন্দর সেঁচে মুক্তা তুলে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করে করে রাতের অন্ধকার থেকে ভোরের আলোয় পৌঁছে যেতাম । - তিন বছর আগের সেই সন্ধ্যাটির সূচনা-ও ওইরকমই হয়েছিল কিন্তু দু'দিন পর একটি নামকরা নার্সিং হোমের বেডে আমি যখন চোখ মেললাম তখন ডক্টরেরা বলছিলেন আমার বিপদ নাকি কেটে গেছে । ওরা জানতেনই না বিপদ তো আমার কাটেই নি , বরং জীবনব্যাপী একমাত্র বিপদ-ই আমার সঙ্গী হয়ে গেছে । - অবশ্য সেই মুহূর্তে আমারও জানা ছিল না পিছন থেকে আসা ব্রেক-ফেইল-করা ডাম্পারটা আমাকে কতোখানি নিঃস্ব করে দিয়েছে । মেয়ের এই অকাল-বৈধব্যের খবর বিচলিত করেছিল আমার সম্পর্ক-ছিন্ন বাবা-মাকেও । দু'দিন পর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মায়ের প্রায়-অশ্রুত ফোঁপানি-কান্না যা' জানানোর জানিয়ে দিয়েছিল আমাকে । - ছ'বছর ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে-থাকা বিশাল চলে গেছে এই বিশাল বিশ্বে আমাকে একা করে দিয়ে । ...[/b]
[b] না, কাজটাকেই আরো যেন আঁকড়ে ধরলাম তারপর থেকে । বাবা মা উত্তরবঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিল । এমনকি মা আমার সাথে কলকাতায় থাকারও কথা বলেছিল । কোনটাতেই রাজি হ'ইনি । মা এখানে এসে থাকলে বাবার এই বয়সে নানান অসুবিধা হবে এই যুক্তিতে নিরস্ত করেছিলাম ওদের । - সময়ের স্রোত তো থেমে থাকে না । অফিসে আমার অনলস শ্রম আর যোগ্যতা স্বীকৃতি পেয়েছে । একসাথে দুটো ধাপ প্রমোশন দিয়েছে আমাকে ম্যানেজমেন্ট । অ্যাডিশনাল ম্যানেজার হিসেবে আলাদা চেম্বার , ফোন , পি.এ বরাদ্দ হয়েছে আমার । তিন তিনটে বছর কোথা দিয়ে যে কাটিয়ে দিলাম ভাবলেই কেমন যেন মনে হয় আর ঐ ডিসেম্বর এলেই যেন কেমন একরকম প্যানিকি হয়ে পড়ি । মনযোগে চিড় ধরে , কাজকর্মে কনসেন্ট্রেট করতে বেশ কষ্ট হয় । সময় একদিন হয়তো সব কিছুর উপরেই মলম লাগিয়ে দেবে , হয়তো চলছেও সেই প্রক্রিয়া , কিন্তু এখনও এই ডিসেম্বর , বিশেষত ক্রিশমাস ঈভ সিন্ড্রোম থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারিনা যেন । - ব্যাপারটা ওর-ও নজর এড়ায়নি - সুমন্ত - আমার ম্যানেজমেন্ট-প্রদত্ত পি.এ । খানিকটা ইতস্তত করে খুব আন্তরিক গলায় জানতে চাইলো - ''ম্যাডাম , আপনাকে বেশ আপসেট দেখাচ্ছে । কোনো প্রবলেম ম্যাম ?'' আমি এড়িয়ে যেতে চাইলেও ঐ সদ্যো-এমবিএ মাত্র বছর বাইশের আমার তুলনায় প্রায়-বাচ্চা ছেলেটির তীক্ষ্ণ নজর আর নিপাট-আন্তরিকতার কাছে হার মানতে হলো । ঝরঝর করে আদ্যোপান্ত সবটাই বলে গেলাম ওকে । বলতে বলতে কখনো উচ্ছ্বল হলাম আনন্দে , কখনো ভাসলাম চোখের জলে । মুগ্ধ আর নিবিষ্ট শ্রোতা হয়ে শুনে গেল সুমন্ত । - অফিস তো অফিসিয়্যালি ছুটি । বড়দিনের । কাজের নেশায় আমিই কেবল এসেছি । আর, আমার পি.এ - সুমন্তকেও তাই আসতে হয়েছে । - ''ম্যাম্ , প্রায় ছ'টা বাজে - আমি যদি আপনাকে এক কাপ কফি খাওয়াতে চাই ম্যাম...চলুন না ম্যাম...'' - সুমন্তর সকাতর আর্তিটাকে ফিরিয়ে দিতে মন চাইলো না । হেসে বললাম - ''একদম ছেলেমানুষ ! আচ্ছা চলো । কিন্তু তোমার গার্ল ফ্রেন্ডকে এই সন্ধ্যেটা দিলেই তো পারতে ।'' - ''ঠিক বলেছেন ম্যাম্ '' - হেসে উঠে সুমন্ত বললো - ''কিন্তু মাথা থাকলে তো মাথা ব্যথার গল্প আসবে ম্যাম - তাই না ?'' - আমাকেও যেন কেমন রঙ্গ-তামাসায় পেয়ে বসেছে । বললাম - ''তাহলে শোনো - আজ থেকেই অ্যাক্টিভ হও যাতে নিউ ইয়ার তোমার কাছে সত্যি সত্যিই হ্যাপি হয়ে ওঠে । ওয়েট । ওয়াশরুম থেকে আসছি । তুমিও তৈরি হয়ে নাও ।''...[/b]
ইতিহাস নাকি ফিরে ফিরে আসে । শুনেছিলাম । - সে-ই ন বছর আগের রেস্তোঁরাটিতেই সুমন্ত নিয়ে এলো কফি খাওয়াতে । কফি কেক জনস্রোতে পা মিলিয়ে চলা চার্চে গিয়ে দেখা - ভূতগ্রস্ত আমি - প্রায় উনচল্লিশের আমি রাত্রির আঁচল ধরতে ছুটে-চলা পরিণত-সন্ধ্যায় আমার পি.এ বাইশ বছরের সুমন্তকে আমন্ত্রণ করলাম আমার বাসায় । . . . বাকিটা ইতিহাস । যা পুনরাবৃত্ত হবে । হচ্ছে-ও । উদ্যোগটা ছিল প্রাথমিকভাবে আমার দিক থেকেই । স্বাভাবিক । তবে 'অ-স্বাভাবিক' ছিল ওর 'ওটা' । বিশালেরটা গ্রহণেই আমার মধ্যে যেন গ্রহণ লাগতো । প্রথম প্রথম তো অবশ্যই । আর সেই সন্ধ্যায় মনে হলো সুমন্ত-র 'ওটা'র পাশে বিশালেরটা নেহাৎ-ই এলেবেলে । - বহুযুগ পর যেন শাপমুক্তি ঘটলো আমার । বছরের শেষ রাত একদিন অমাবস্যার নিকষ কালো রঙে লেপে দিয়েছিল আমার জীবনটা । আর ন'বছর পরের আরেকটি বছর-ফুরানো রাত্রি যেন জ্বেলে দিলো আলো পূবে পশ্চিমে আমার নতুন-করে পাওয়া জীবনে । বাইরেও তখন ৩১ ডিসেম্বরের রাত ভোর হয়ে আসছে - পরস্পরকে আঁকড়ে রয়েছি আমরা , সুমন্ত আরো বড় , আরো মোটা , আরো কঠিন কঠোর হয়ে আমার ভিতরে প্রোথিত । নিশ্চলতা আমার পছন্দ নয় । কোত্থাওই । সুমন্তর বুকের নীচ থেকে উছাল দিয়ে জানান দিলাম - থেমে থেকো না - জীবনের অন্য নাম ওঠা-নামা নামা-ওঠা ... - ধরে নিলো সুমন্ত - শুধু বলে উঠলো - ''ম্যাম, এ হলো শেষ থেকে শুরু...'' -সুমন্তর কোমরের ওঠা পড়া গতি পেলো - ''আমার রাত পোহালো..'' - নাইবা হলো ''শারদ প্রাতে'' - এই শীতেই বেজে উঠেছে আমার বেদনা-রাহুমুক্তির বাজনা - ঢাকের তালে নয় - আমার ''বিশাল-পালঙ্কের'' ছন্দায়িত শব্দ-মূর্চ্ছনায় - পকাৎৎ পকক পপককাাৎৎ পঅঅকক . . . . . ( সায়রা চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু কার কেমন লাগবে ....)
আপনার পিপিং টম পড়ার আগে এটা পড়লাম। সেই একই শিক্ষার প্রতিফলন.... খুব ভালো লাগলো...
একটা প্রশ্ন ছিল --- এটাও কি আপনার সত্য ঘটনা?
❤❤❤