Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
অসমাপ্ত


কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টে কিছু না খেয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিলো ছেলেটা। খেলাধুলা তার বড্ডো প্রিয়। আর প্রিয় গিটার। এই দুটো ছাড়া তার জীবন যেন অন্ধকার। সাধারণ ঘরের একজন সাধারণ ছেলে অনির্বান। ছেলে না বলে বালক বলাই ভালো। বেশি বয়স না। ক্লাস এইট এ পড়ে। একদিন খেলার শেষে বাড়ি ফিরে জানতে পারে পাড়ার কিছু দাদা তাকে খোঁজ করছিলো। কারণ জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারে তাদের পাড়ায় এবছর রবীন্দ্র জয়ন্তী খুব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হবে। শুধু তাদের পাড়ার নয় আশেপাশের পাড়ার ও অনেকে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। অনির্বান কে তাদের সঙ্গে গিটার বাজাতে হবে। সে তো এক কথায় রাজি। এরপর এক রবিবারে পাড়ার ক্লাবে শুরু হলো অনুষ্ঠানের মহড়া। কিছূক্ষনের মধ্যে অনির্বান ও সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে এসে দেখলো সেখানে তাদের পাড়ার অনেক মেয়ে কাকি উপস্থিত। সঙ্গে আশেপাশের অনেক মেয়ে বউ ও এসেছে। কেও নাচ করবে, কেও গান করবে কেও আবৃতি করবে। সবাই উত্তেজিত। হঠাৎ অনির্বান দেখলো একপাশে আকাশী রঙের ফ্রক পরে একটা মেয়ে চুপ করে তার মায়ের পাশে বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই অনির্বাণের বুকে গিটার বাজতে শুরু করে দিলো। মেয়েটা কি করবে? গান, নাচ না আবৃতি? অনির্বান ভাবতে থাকে। কিছুক্ষন পরে সে জানতে পারলো মেয়েটা নাচ করবে। দুটো গানে নাচ করবে মেয়েটা আর সেই গানে গিটার বাজাবে অনির্বান। কিন্তু গিটার বাজাবে কি তারতো তখন মনের মধ্যে উথালপাতাল অবস্থা। বেশ কয়েকবার ভুল করে ফেললো সে। উপরি হিসাবে জুটলো বড়দের বকা আর সমবয়সীদের উপহাস। যাইহোক শুরু হলো মহড়া। একদিকে মহড়া চলছে আর অন্যদিকে অনির্বাণ দেখে যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে। এর মধ্যে সেই মেয়েটার নামও জেনে ফেলেছে সে। চন্দ্রা ডাকনাম চুনু পাশের পাড়ায় বাড়ী ক্লাস 6 এ পড়ে বালিকা বিদ্যালয়ে। চন্দ্রা কে নিয়ে বালক বয়সেই অনির্বাণের মনে উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। ধীরে ধীরে চলে আসে অনুষ্ঠানের দিন। খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনির্বাণের বাজনা, চন্দ্রার নাচ দুটোই খুব প্রশংসা পায়। অনুষ্ঠানের শেষে কলাকুশীলবরা সবাই খুশি অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে শুধু একজনের মনে দুঃখ। কেন এই দিনটা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো? আরও কিছুদিন পরও তো আসতে পারতো তাহলে সে দেখতে পারতো চন্দ্রা কে। এরপর মাঝেমধ্যে অনির্বাণের সঙ্গে দেখা হয় চন্দ্রার। অনির্বান শুধু আর শিখে দেখে কিছু বলতে পারেনা। এইভাবে দেখতে দেখতে প্রায় 4 বছর কেটে যায়। এর মধ্যে অনির্বান চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে অপরিপক্ক হাতে একটা একটা চিঠিও লিখে ফেলে সেই চিঠিতে ভাষার ব্যবহার সাবলীল না হলেও ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। চন্দ্রাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে অনির্বান। কিন্তু চন্দ্রার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস তার নেই। রাস্তায় তাকে দেখলেই শুধু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এরবেশি আর কিছু বলতে পারে না। কয়েকবার ভেবেছে যেভাবেই হোক চন্দ্রার সাথে কথা বলবে, কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে চন্দ্রা এইসবের কিছুই জানেনা। তারও এইবার মাধ্যমিক। সে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত। ওইসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। এইভাবেই একসময় অনির্বাণের কলেজ শেষ হয়। কলেজ শেষ হবার পর অনির্বান একটা বেশ ভালো বেসরকারী চাকরিও জুটিয়ে নেয়।  হঠাৎ একদিন রাস্তায় চন্দ্রাকে দেখে রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে পরে অনির্বান। সিঁথিতে লাল সিঁদুর পরে, হাতে শাখা-পলা, গলায় মঙ্গলসূত্র! ঠিক দেখছে তো অনির্বান??? হ্যাঁ ঠিকই। এটা চন্দ্রাই যার জন্য কত বিনিদ্র রাত সে কাটিয়েছে। পায়ের তলায় মাটি সরে যায় অনির্বাণের। তার ভালোবাসা আজ অন্যকারো হয়ে গেছে। বিয়ে হয়ে গেছে চন্দ্রার। হ্যাঁ ঠিকই তো কেন বিয়ে করবে না চন্দ্রা? সে তো কখনো বলেনি যে সে চন্দ্রাকে ভালোবাসে। তাহলে চন্দ্রা তার হলো কিকরে? এটা তার মনের দুঃসাহস যে চন্দ্রাকে নিজের বলে ভেবেছিল। কি আছে তার মধ্যে যে চন্দ্রা তাকে পছন্দ করবে? 

*******************************

আরে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠো ছেলেকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে আজকে গাড়ী আসবেনা ড্রাইভারের শরীর খারাপ ফোন করেছিলো, সকালের ব্যস্ততার মাঝে নিজের স্বামীর দিকে কথাগুলো ছুড়ে দেয় তিতলি। অনির্বাণের স্ত্রী। ছেলে অঙ্কুশ কে নিয়ে অনির্বান তিতলির  সংসার। ইতিমধ্যে অনির্বান একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। ছেলে বউ কে নিয়ে ভালোই আছে সে। অন্যদিকে স্বামী কন্যা নিয়ে ভরা সংসার চন্দ্রার। তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করে। একমাত্র মেয়ে অনুসূয়া কে নিয়ে তাদের প্রচন্ড আদরের। 

*******************************

অনির্বান, চন্দ্রার বিয়ে হয়ে গেলে কিহবে অনির্বান এখনো চন্দ্রা কে ভুলতে পারেনি। রাস্তায় দেখা হলে এখনো সে বিভোর হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনের মধ্যে চন্দ্রার জন্য একটা জায়গা সংরক্ষণ করে রেখেছে সে। সেখানে প্রবেশের অধিকার কারো নেই। মাঝে মাঝে ফেসবুকে চন্দ্রার প্রোফাইল খুঁজে তার সব ছবি ওপর বিস্ময়ে দেখতে থাকে  অনির্বান। এরপর একদিন দুরু দুরু বুকে সে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠালো। অনেকদিন সেই আবেদন পরে থাকার পরেও অন্যদিকে থেকে সারা না আসায় অনির্বান সেই আবেদন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু চন্দ্রার ছবি, ভিডিও দেখা চলতেই থাকে। এর কিছুদিন পর আবার বন্ধুত্বের আবেদন পাঠায় অনির্বান। এবারেও আবেদন অনেক আবেদনের নিচে চাপা পরে যায়। হঠাৎ একদিন অনির্বানের একটা নোটিফিকেশন আসে "Chandra is accepted your friend request" ব্যাস অনির্বান কে আর পায় কে? তার চন্দ্রা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে।  এরপর কিছুদিন কেটে যায় কিন্তু অনির্বান চন্দ্রা কে কোনো মেসেজ করেনা। কিছুদিন পরে আর থাকতে না পেরে চন্দ্রাকে একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়ে ফেলে Hi। কিছুক্ষন পর চন্দ্রা সেটা সীন করে এবং উত্তর দেয় Hello।
অ : চিনতে পারছো?
চ : হ্যাঁ পারছি।
অ : কেমন আছো?
চ : ভালো।  তুমি? 
অ : এই চলে যাচ্ছে। কিকরে চিনলে?
চ : ছোটবেলায় দেখেছিলাম।
অ : যাক মনে আছে তাহলে।
চ : ভুলবো কেন?
অ : সময়ের চাদরে ঢাকা পরে আছি তাই......
চ : মানে?
অ : মানে আর বুঝতে হবেনা।

এরপর দুইজনার মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে। শুধু দুজনার কাছে দুইধরণের। চন্দ্রার কাছে নিছক বন্ধুত্ব আর অনির্বাণের কাছে স্বপ্নসম। চন্দ্রা যে তার সাথে কথা বলছে এইটাই তার চাওয়ার থেকে অনেক বেশি। ইদানিং অনির্বান তার জীবনের বাঁচার মানে খুঁজে পেয়েছে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে কখন চন্দ্রার নামের পাশে সবুজ বাতিটি জ্বলবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অনির্বান বাস্তব কে উপলব্ধি করতে শুরু করে। তারা দুজনেই আজ বিবাহিত। তাদের দুজনেরই সংসার বাচ্চা রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রার সঙ্গে রোজ কথা বললে হয়তো সে চন্দ্রার কাছে দুর্বল হয়ে পড়বে।  চন্দ্রা তার অনুভুতি গুলো ধরে ফেলবে। তখন হয়তো তার সঙ্গে আর কথা বলবে না। সেই ভয় তাকে গ্রাস করতো। হঠাৎ একদিন সে তার আইডি ডিএকটিভ করে দিলো। তার নামের পাশে আর সবুজ বাতি জ্বলবে না। চন্দ্রা শুধু তার মনের অন্তরেই বাস করুক।

**** অসমাপ্ত ****

কিছু কিছু প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়না, কিন্তু একতরফা হলেও সেটা কারো মনের মধ্যে থেকে যায় সারাজীবন।

কিছু কিছু ব্যক্তিগত দুঃখ আছে যেগুলো স্পর্শ করার অধিকার কারোর নেই - হুমায়ুন আহমেদ।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 17-09-2021, 08:09 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)