16-09-2021, 04:32 PM
(This post was last modified: 16-09-2021, 04:34 PM by dimpuch. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(13-09-2021, 09:00 AM)Bichitravirya Wrote:
Update 3
সুচির স্বভাব , আচার-আচরন সব ভালো করেই জানে বিপ্লব । একসাথে বড়ো হয়েছে তারা। বলা ভালো সুচির চড় খেয়েই বড়ো হয়েছে বিপ্লব বিচ্ছু। সুচির চড় খেয়ে একদিন গালে ব্যাথা থাকে আর দুদিন গালে আঙুলের দাগ থাকে । আর সেই সুচিকেই প্রেমপত্র দিতে বলছে এই দাদা। দুরুদুরু বুকে কার্ডটা নিল বিপ্লব। কার্ড হাতে ধরতেই নকুল বললো “ দিয়ে আয় যা। „
উঁচু ক্লাসের দাদার কথা অমান্য করা যায় না। অমান্য করার সাহস নিচু ক্লাসের ছাত্রদের নেই। তার উপর লাস্টের ‘ দিয়ে আয় যা । ‚ কথাটা যেন আদেশ করলো মনে হলো বিপ্লবের। আদেশকে তোয়াক্কা করা যাবে না । বেশি কিছু হলে সুচি একটা চড় মারবে এটা ভেবেই বিপ্লব কার্ডটা নিয়ে এগিয়ে গেলো সুচি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সুচির কাছে যেতেই সুচি বিপ্লবকে জিজ্ঞাসা করলো “ এখানে কি করছিস ? তোর ক্লাস এইদিকে নাকি ! „
সুচি প্রশ্নটা করতেই বাকি তিনজন বিপ্লবের দিকে ফিরে তাকালো। এতক্ষণ বাকি তিনজন সুচির দিকে মুখ করে ছিল। আর সুচি বিপ্লবের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি তিনজন বিপ্লবের দিকে ফিরে তাকাতেই বিপ্লব দেখলো তাদের মধ্যে একজন জয়শ্রী দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের হাতে গ্রিটিংস কার্ড দেখে সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল জয়শ্রী । তারপর সেটা খুলে দেখলো , তাতে বড়ো করে সুচিত্রার নাম লেখা আছে। সুচিত্রার নাম পড়ে জয়শ্রী বললো “ পড়াশোনা না করে এইসব করছিস ? আজ কাকিমাকে বলছি তুই এইসব করে বেড়াচ্ছিস কলেজে। „
একেই হৃৎপিন্ড একটু বেশিই দ্রুত চলছিল বিপ্লবের । এখন মায়ের কাছে বলে দেবে শুনে বুকটা যেন ড্রাম বাজাতে শুরু করলো “ আমি কি করলাম ? ওই দাদাটাই তো আমাকে এই কার্ডটা দিয়ে বললো সুচিকে দিয়ে আসতে । „ বলে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নকুলের দিকে দেখিয়ে দিল ।
বিপ্লবের মুখে নিজের ডাকনাম শুনে সুচি রেগে গেল। ঠাসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো “ বড়োদের নাম ধরে ডাকছিস আবার ! তোর সাহস তো কম না। আজ বাড়ি চল কাকি তোর কি অবস্থা করে দেখ। „ বলে জয়শ্রীর হাত থেকে কার্ডটা নিল সুচি।
কিছুক্ষণ মন দিয়ে কার্ডটা পড়লো সুচি । এই সুযোগে বিপ্লব দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল । কার্ডে লেখা আছে ----- অনেকদিন ধরে তোমাকে কথাটা বলবো বলবো করছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। আজ সাহস করে বলছি ‘ তোমাকে যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই এই বুকে তুমি বাস করছো । তোমার গালে টোল পড়া হাঁসি দেখার জন্য আমি প্রতিদিন কলেজে আসি। তোমার নাচ দেখার জন্য আমি সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি ...........
আরও অনেক কিছুই লেখা ছিল কার্ডে। সেগুলো পড়ার আর ইচ্ছা হলো না সুচির। যতোটা পড়লো তাতেই সুচির কান লাল হয়ে উঠলো রাগে । কার্ডটা নিয়ে সোজা নকুলের সামনে গিয়ে ঠাসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল “ এতোই যখন নাঁচ দেখার শখ তখন নিজের দিদিকে নাঁচ শিখিয়ে তার নাঁচ দেখ। „ দাঁতে দাঁত ঘসে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলে গ্রিটিংস কার্ডটা নকুলের দিকে ছুড়ে দিল সুচি।
সুচির ওই সরু সরু আঙুলের হাতের চড়ে আওয়াজ হয় খুব। নকুলকে মারা চড়ের আওয়াজ এতোটাই তীব্র ছিল যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সবাই হকচকিয়ে গেল। কোলাহল করা কলেজের বারান্দা এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু নিচু ক্লাসের সবাই নকুলের দিকে তাকালো। নকুল তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই ক্লাস শুরু হওয়ার ঘন্টা বেজে গেল। সুচি হয়তো আরও কিছু বলতো কিন্তু টিফিন শেষের ঘন্টা শুনে নিজের ক্লাসের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
এরপর নকুল একমাস আর কলেজে আসেনি। আসলেই তো ঠাট্টা টিটকিরির মুখোমুখি হতে হবে। তাই যতদিন না ঘটনাটা সবার স্মৃতি তে আবছা হয়ে যায় ততদিন সে এলো না। কলেজে ক্লাস টিচার কে একটা অসুস্থতার চিঠি দিয়ে দিল।
নকুল চড়ের জন্য কলেজে আসলো না। কিন্তু সেদিন নকুল ছাড়া আরও একজন চড় খেয়েছিল। যে চড় খেয়েছিল সে কিন্তু ভোলার পাত্র নয়। বিপ্লব সুচির চড় খেয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো --- খুব দিদি হওয়ার শখ। যখন তখন শাসন করবে। চড় মারবে। কিছু একটা করতে হবে। দিদি হওয়ার শখ বার করতে হবে।
কয়েকদিনের মধ্যে বিপ্লব সুচির চড়ের কথা ভুলে গেল। কিন্তু দোল পূর্ণিমার হাওয়া গায়ে মাখতেই আবার পুরানো স্মৃতি সব নতুন হয়ে জেগে উঠলো। আশে পাশের কয়েকটা দোকানে খোঁজ করে পাঁচ টাকার দুটো বাঁদুড়ে রঙ কিনে আনলো। কিনে তো আনলো কিন্তু সুচিকে মাখানোর সাহস হলো না। কি করা যায় ভেবে আকাশকে ডেকে বললো “ এটা পাকা রঙ। একবার মাখলে একমাস উঠবে না....
বিপ্লবের কথা মাঝপথেই থামিয়ে উৎসাহে আকাশ বলে উঠলো “ একটা দে , সুচিকে মাখাবো । „ বিপ্লব এটাই চাইছিল কিন্তু আকাশকে বলতে পারছিল না। আকাশ নিজে থেকেই সুচিকে মাখানোর কথা বলতে দুটো শিশির মধ্যে একটা আকাশকে দিয়ে দিল।
দোলের দিন সকালে সুচি একটা পুরানো টপ আর একটা ফুল প্যান্ট পড়লো। প্রথমে দিদিমাকে একটা প্রনাম করলো তারপর বাড়ির সবার পায়ে আবির দিয়ে প্রনাম করে নিচে নামলো। নিচে নেমে দাদুর সেই ঘরের দিকে দৃষ্টি পড়তেই মনটা ভারি হয়ে উঠলো সুচির। দাদুর ঘরটা এখন স্টোররূমে পরিনত হয়েছে। সোসাইটির সব পুরানো আসবাবপত্র এখন দাদুর ঘরে স্থান পায়। প্রতিবার দাদুর পায়ে আবির দিয়ে প্রনাম করতো সুচি। দাদু সবার জন্য রসগোল্লা কিনে রাখতো। সবাইকে দেওয়া হয়ে গেলে বাকি বেচে থাকা রসগোল্লা একা সুচিকে দিয়ে দিত দাদু। এইসব পুরানো কথা মনে পড়তেই মনটা আরও ভারী হয়ে উঠলো সুচির।
কিন্তু আজ মন ভারী করার দিন না। বাবার এনে দেওয়া আবির দিয়ে দোল খেলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরে একে একে জয়শ্রী, সুমি সবাই এলো। শুধু বাদশাকে নিচে নামতেই দেওয়া হলো না । আকাশ দিদিমার কাছে বাদশাকে গচ্ছিত রেখে নিচে এসে সবাইকে আবির মাখালো। কেউ কেউ পিচকারি দিয়ে আবির গুলে গায়ে ছুঁড়তে লাগলো। দেখতে দেখতে সোসাইটির খেলার মাঠ আর সবার মুখ আবিরে সেজে উঠলো।
দোল খেলার পর যে যার বাড়ি চলে গেল। সোসাইটির খেলার মাঠটা এখন বিভিন্ন রঙের আবিরে রামধনুর মতো সেজে আছে। সুচি নিজের ঘরে গিয়ে তোয়ালে , একটা টপ আর একটা হাফপ্যান্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল স্নান করতে। প্রথমে বালতি থেকে মগে করে জল তুলে মুখটা ধুলো। সমস্ত আবির উঠে গেল কিন্তু আকাশের মাখানো পাকা রঙ উঠলো না। কোন এক সুযোগে আকাশ এই পাকা রঙ মাখিয়ে চলে গেছে।
মুখ ধোওয়ার পর বাবার দাড়ি গোঁফ কামানোর জন্য টাঙিয়ে রাখা বড়ো আয়নায় নিজের মুখ দেখেই ভুরু কুঁচকে গেল সুচির। পুরো মুখে হালকা কালচে রঙ। পাকা বাদুড়ে রঙ। মুখের আসল রঙ বোঝাই যাচ্ছে না এই পাকা রঙের জন্য।
পাকা রঙ দেখে ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ ধুলো সুচি । তিন চারবার ধোওয়ার পরেও উঠলো না। কিছুক্ষণ আয়নায় নিজের মুখ দেখে ভাবলো---- ‘ কে করতে পারে এইরকম বদমাইশি ? একমাত্র বিপ্লব করে এই ধরনের শয়তানি। কিন্তু বিপ্লব তো আজ ওর কাছে একবারও আসেনি । তাহলে কে হতে পারে ? ‚ তারপরেই মনে পড়লো ‘ আকাশের হাতে এই পাকা রঙ দেখেছিল কিন্তু তখন খেয়াল করেনি। অন্যমনষ্কতার সুযোগে কোন এক সময় আকাশ এই কাজ করেছে । ‚ এই সিদ্ধান্তে আসতে বেশি সময় লাগলো না সুচির।
আকাশের কথা মাথায় আসতেই দাঁত দাঁত ঘসে নিয়ে বাথরুমের বাইরে এসে সোজা আকাশের ঘরে চলে এলো। দিদিমা তখন বাদশাকে স্নান করানোর জন্য একটা বড়ো গামলায় জল ভরছেন আর আকাশ টিভি দেখছে। সুচিকে ওইরকম তেড়েফুড়ে ঘরে ঢুকতে দেখে আকাশ তড়াং করে সোফা থেকে উঠো পড়লো।
“ তুই করেছিস না এটা ? „ বলো আকাশকে মারতে যাচ্ছিল। কিন্তু আকাশ হাসতে হাসতে সোফার চারিদিকে গোল হয়ে দৌড়াতে লাগলো।
আকাশকে হাসতে দেখে সুচি আরও রেগে গেল। মনে হচ্ছিল চড়ে গাল দুটো লাল করে দেয়। কিন্তু আকাশ হাতে আসছে না। তিন চারবার সোফার চারিদিকে দৌড়ে সুচি হাঁপিয়ে গেল। একটু শান্ত হয়ে বললো “ আচ্ছা তোকে মারবো না। শুধু বল কে তোকে এই রঙ দিয়েছে ? তোর এত সাহস নেই আমাকে পাকা রঙ মাখানোর। „
“ আমি ভীতু ! „ কোন ছেলেকে যদি বলা হয় তুই সাহসী না তাহলে সে খুব রেগে যাবে। সুচি আকাশকে সাহসী মনে না করায় সেও রেগে গেল। রেগে গিয়ে সোফার চারিদিকে গোল হয়ে দৌড়ানো বন্ধ করে দিল।
“ হ্যাঁ তুই ভীতু। ভীতুর ডিম তুই। এবার সত্যি সত্যি বল কে তোকে এই রঙ দিয়েছে ? না হলে কিন্তু মার খাবি । „ আকাশের পুরো সামনে এসে চোখ বড়ো বড়ো করে ধমকিয়ে বললো সুচি ।
আকাশ এখন পুরো সুচির হাতের নাগালে। চাইলেই একটা চড় বসিয়ে দিতে পারে আকাশের গালে। মার খাওয়ার ভয়ে আর সুচির বড়ো বড়ো চোখের ভয়ে আকাশ বলে ফেললো “ বিপ্লব এই রঙ দিয়েছিল তোকে মাখানোর জন্য। „
ঠাসসসসস আকাশের কথা শেষ হতেই সুচির ডান হাত সজোরে বসে গেল আকাশের গালে “ পরের কথায় খুব নাঁচা হচ্ছে । বিপ্লব তোকে ছাদ দিয়ে ঝাপ দিতে বললে তুই ঝাপ দিবি ? „
সুচির চড় খেয়ে আকাশ সোফায় পড়ে গেল “ বা রে আমি ঝাপ দিতে যাবো কেন ? „ গালে হাত বুলিয়ে বললো আকাশ। চড়ের জন্য প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা তার ।
সুচির চড়ের আওয়াজ বাথরুমে দিম্মার কান অব্দি গিয়েছিল। চড়ের আওয়াজ শুনে তিনি বেরিয়ে এসে দেখলেন আকাশ সোফায় পড়ে আছে আর গালে হাত বুলাচ্ছে। সুচি তার সামনে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার পাকা রঙ । পাকা রঙের জন্য এখন সুচিকে পুরো ভুতের মতো দেখাচ্ছে “ এখনও স্নান করিস নি তুই। আর এ কি অবস্থা তোর ! „
“ দেখো না তোমার আদরের দাদুভাই কি করেছে । পুরো মুখে পাকা বাদুরে রঙ মাখিয়ে দিয়েছে । কিছুতেই উঠছেনা ! „ বলে কাঁদো কাঁদো গলায় দিম্মা কে জড়িয়ে ধরলো সুচি।
সুচি এখন দিম্মার থেকে লম্বা। দিম্মাকে জড়িয়ে ধরার জন্য দিম্মার মাথা সুচির গলা পর্যন্ত এসে ঠেকছিল। সুচির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দিম্মা বললেন “ কেন করেছিস এরকম দাদুভাই। পাকা রঙ মাখলে ত্বকের অনেক রোগ হয় জানিস না তুই ? „
“ আর করবো না দিদিমা । „ মাথা নিচু করে কথাটা বললো আকাশ। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সে।
“ চল তোকে স্নান করিয়ে দিই। হলুদ লাগিয়ে দেবো , দেখবি মুখের সব রঙ উঠে যাবে । „ সুচিকে বললেন দিদিমা।
তারপর সুচিকে দিদিমা স্নান করিয়ে দিলেন। মুখে সাবান মাখিয়ে দিলেন। হলুদ ও মাখালেন কিন্তু রঙ তেমন একটা উঠলো না। রাগে প্রায় চোখে জল এনে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে সুচি দিদিমা কে বললো “ আজ রাতে তুমি ঘরের দরজা খোলা রাখবে। „
“ কেন কি করবি তুই ? „
“ তুমি দরজা খোলা রাখবে । আমিও আকাশকে পাকা রঙ মাখাবো । „
দিদিমাকে ভুরু উপরে তুলে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সুচি বললো “ তুমি শুধু আকাশকেই ভালোবাসো আমাকে একদম ভালোবাসো না । „
সুচির অভিমান দেখে তাকে বুকে টেনে নিয়ে দিদিমা বললেন “ তুই আমার দাদুভাইকে ক্ষতিকর রঙ মাখাবি আমি কি করে রাজি হই বলতো ! „
“ আর তোমার দাদুভাইযে আমার মুখে এই রঙ মাখালো তখন ! „
দিদিমা আর কিছু বলতে পারলো না। বিকালে সুচি বিপ্লব কে ধরে বললো “ তুই আকাশকে পাকা রঙ দিয়ে বলেছিলি আমাকে মাখাতে ? „
সুচির গম্ভীর গলা শুনে বিপ্লব আগে থেকেই নিজের দুই গালে হাত দিয়ে দিল। সুচি যাতে না মারতে পারে তাই এই ব্যবস্থা। বিপ্লবের অবস্থা দেখে সুচি বললো “ আচ্ছা আমি মারবো না যদি তুই আমার একটা কাজ করে দিস । „
“ কি কাজ ? „
“ ওই পাকা রঙ আমাকে এনে দিতে হবে । আছে তোর কাছে ?
“ আছে । „
“ যা আন । „
বিপ্লব দৌড়ে নিজের বাড়ি গিয়ে একটা কাচের শিশি এনে দিল। সুচির হাতে দিয়ে বললো “ একটু হাতে নিয়ে কয়েক ফোটা জল দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে......
“ থাক আমাকে শেখাতে হবে না । „ বলে সুচি একটা অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে চলে গেল।
রাতে দিদিমা সুচির কথা মতো দরজা খুলে রেখেছিলেন। আকাশকে ওই পাকা রঙ মাখানোতে একদম মন ছিল না দিদিমার। কিন্তু সুচির অভিমান আবার ভয়ঙ্কর। সহজে ভাঙতে চায় না। তাই তিনি দরজা খোলা রাখলেন। রাত এগারোটার দিকে সুচি এলো। আকাশ তখন মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে আর সেই ছোটবেলার অভ্যাসের জন্য ঠোঁট নাড়ছে। এমন ভাবে ঠোঁট নাড়ছে যেন কথা বলছে।
সুচি এসে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল । ঘরে আলো জ্বললেও আকাশের ঘুম ভাঙলো না। সুচি একটু মুচকি হেসে শিশিতে যতোটা রঙ ছিল সব হাতে নিয়ে জল দিয়ে মেখে আকাশের পুরো মুখে মাখিয়ে দিল। সুচির দুষ্টুমি হাসি দেখে দিদিমাও হেসে ফেললেন।
সুচির কোমল হাত শুধুমাত্র চড় মারার সময়েই আকাশের গালে পড়েছে। এখন সেই কোমল হাতের আঙুল মুখের উপর ঘুরে বেড়াতে ঘুমের মধ্যেই আকাশ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মুখে রঙ মাখানো হয়ে গেল সুচির মুখে একটা যুদ্ধ জয়ের হাসি দেখা দিল। আকাশের মুখে রঙ মাখিয়ে খাট থেকে নেমে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল । দিদিমা এই দুজনের দুষ্টুমি খুব উপভোগ করেন। আকাশের সাথে থাকলে যেন সুচি নিজের বয়স ভুলে গিয়ে বাচ্চা হয়ে যায়। এটা দিদিমা সবথেকে বেশি উপভোগ করেন।
সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠে হাত আকাশে তুলে উবাসি কাটিয়ে ঘরের বাইরে এলো। ঘরের বাইরে এসে বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে দাঁত দেখার জন্য আয়নায় দৃষ্টি ফেলতেই দেখতে পেলো মুখে পাকা রঙ। মুখে রঙ কি করে এলো সেটা ভাবতে ভাবতেই চোখ বড়ো হয়ে গেল বিস্ময়ে। কে মাখালো ? কখন মাখালো ? এইসব ভাবতে ভাবতে ভালো করে মুখ ধুলো। বৃথা চেষ্টা করলো রঙ তোলার ।
তারপর বাথরুমের বাইরে আসতেই দেখতে পেলো ফ্ল্যাটে ঢোকার দরজায় সুচি দাড়িয়ে আছে। মুখে তার এখনও যুদ্ধ জয়ের হাসি । সুচির হাসি দেখেই আকাশ বুঝলো এটা সুচি করেছে । আকাশের কাছে এখন সবথেকে বড়ো বিষ্ময়ের বিষয় হলো ‘ সুচি কখন তাকে রঙ মাখিয়েছে ‚ তাই সে সুচিকে জিজ্ঞাসা করলো “ তুই এই রঙ কখন মাখালি আমায় ? „
সুচি হাসতে হাসতে বললো “ কাল রাতে যখন মড়ার মতো ঘুমিয়েছিলি তখন । „ সকালে ঘুম থেকে উঠে খুব ভালো করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়েছিল সুচি। রঙ কিন্তু ওঠেনি। সেটা মনে পড়তেই সুচি বললো “ একবারও ভেবেছিস তুই ! আমি কিভাবে এখন আমি কলেজে যাবো ? „
“ তুই কলেজে যেতে পারবি না বয়েই গেল আমার । „
“ তবে রে। „ বলে সুচি এগিয়ে গেল আকাশের দিকে। তারপর যথারীতি সকালের কুস্তি শুরু হয়ে গেল। আকাশ বিশেষ সুবিধা কখনোই করতে পারে না। সুচি আগেই আকাশের বড়ো বড়ো চুল ধরে তার মাথাটাকে কয়েক পাক ঘুরিয়ে নেয় তারপর চড় মারে। এখনও তার ব্যাতিক্রম হলো না। সুচি আকাশের চুল ধরার পরেই আকাশ দৌড়ে সরে গিয়ে হাসতে হাসতে বললো “ আবার মাখাবো । যখন এই রঙ উঠে যাবে তখন আবার মাখাবো। „
আকাশের কথা শুনে সুচি আরো রেগে গেল। দৌড়ে গিয়ে আকাশকে ধরতে গেল । আকাশকে ধরার আগেই আকাশের বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন । কাকাকে দেখে সুচি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সুচির দেখাদেখি আকাশও দাঁড়িয়ে পড়লো।
আকাশের বাবা ঘর থেকেই সুচি আর আকাশের জোরে জোরে কথার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন। তাই তিনি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। বাইরে লিভিং রুমে এসে সুচি আর আকাশের দিকে তাকাতেই মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল শুভাশীষ বাবুর। আকাশ আর সুচির মুখে যেন কেউ হাড়ির তলায় লেগে থাকা কালো কালি মাখিয়েছে কিংবা এক বালতি আলকাতরা যেন কেউ ভালোভাবে দুজনের মুখে মাখিয়ে দিয়েছে । বাবার বিষ্ময়ের কারন বুঝতে পেরে আকাশ সুচির দিকে আঙুল দিয়ে বললো “ এ মাখিয়েছে । „
সুচিও নিজেকে বাঁচানোর জন্য বললো “ তুই তো আগে মাখিয়েছিস। „
শুভাশীষ বাবু দুজনকেই বললেন “ এই ধরনের রঙ ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি হয়। আর কখনো মাখাবে না কাউকে। এতে চামড়ার অনেক ক্ষতি হয় „ বলে তিনি বাথরুমে চলে গেলেন ব্রাশ করতে।
কিছুক্ষণ পর স্নেহা দেবী ঘর গুছিয়ে এসে দুজনকেই বকলেন। তারপর সুচিকে এই পাকা রঙ তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপদেশ দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ তিনি দুজনকে বকাঝকা করতে পারলেন না কারন ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে তার স্বামীর জন্য।
রঙ মাখানোর পর এক সপ্তাহ সুচি কলেজে যায় নি। বাড়িতে বিভিন্ন ফেসওয়াশ , আয়ুর্বেদ পাতা,হলুদ , লেবু , নিম পাতা মেখে যতদিন না মুখের রঙ ওঠে ততদিন কলেজে গেল না । এই কয়েকদিন বাড়িতে বসে সুচি লক্ষ্য করলো বাদশা একটু ঝিমিয়ে আছে। আগের মতো আর লাফাচ্ছে না। রোজ বিকালে সবাই যখন খেলে তখন বাদশা দিদিমার পায়ের পাশে চুপচাপ বসে থাকে। সুচির মুখের রঙ পুরপুরি ওঠেনি তাই সে আলাদা হয়ে বাদশার সাথে খেলে কিন্তু বাদশার আগের মতো আর সেই উৎসাহ নেই। সুচির মনে হলো এটা সেই পাকা রঙের জন্যেই হয়েছে তাই একদিন বিকালে আকাশকে ঠাসসসস করে চড় মেরে বললো “ তোর ওই পাকা রঙের জন্যেই বাদশার শরীর খারাপ হয়েছে । „
“ তোর তো শুধু মারার বাহানা চাই। শুধু শুধু মারছিস , পাকা রঙ কেন ! আমি তো আবিরও মাখাইনি বাদশাকে। „
“ তাহলে বাদশার শরীর খারাপ হলো কি করে ? „
“আমি কি জানি । „
দিদিমা দুজনকেই থামিয়ে বললেন “ আর মারপিট করতে হবে না। কালকে বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। এখন যা তোরা পড়তে বস । „
ডাক্তারের কথা শুনেই সুচির বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো “ ডাক্তার কেন ? কি হয়েছে বাদশার ? „
“ ডাক্তারের কাছে গেলেই তো বুঝবো কি হয়েছে । „
“ তাহলে এখনই চলো দিদিমা । „
সুচির কথা শুনে আকাশও জেদ ধরলো আজকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। আকাশের জেদের কাছে সবাই হার মেনে নেয়। এখন দিদিমাও হার স্বীকার করলেন। তিনজন মিলে বাদশাকে পাশের একটা পশু চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার কিছুক্ষণ পরিক্ষা নিরিক্ষা করে সবাইকে আস্বস্ত করার জন্য বললেন “ রোগ টোগ কিছুই হয় নি। বাদশার বয়স হয়েছে। তাই আগের মতো আর এনার্জি পাচ্ছে না। আপনারা এর খাবার বদলে দিন। „ তারপর প্রেসক্রিপশনে কিছু একটা লিখে বললেন “ কত বয়স হয়েছে বাদশার ? „
দিদিমা আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন “ এর অন্নপ্রাশনে আমার ছেলে উপহার দিয়েছিল। তা সে এগারো বছর হতে যায় । „
“ খুব ভালো কেয়ার করেছেন আপনারা। এই ওষুধ গুলো নিয়ে নিন বাইরে থেকে আর খাবার পাল্টে ফেলুন । „
চেম্বারের বাইরে কম্পাউন্ডার একটা ছোটখাটো দোকান নিয়ে বসে আছে। সেখান থেকেই ওষুধ আর ডগ ফুড কিনে চলে এলো সবাই। রাস্তায় সুচি গলায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে আকাশকে বললো “ কিছু হয়নি তবুও ওষুধ দিল। „
আকাশ সবজান্তা হয়ে বললো “ না হলে দোকান চলবে কি করে ? দেখলি না বাইরেই তো নিজে দোকান দিয়েছে । „
কয়েক মাস ধরে বাদশা আর আগের মতো দৌড়ঝাঁপ করে না। বিকালে ফ্ল্যাটের নিচে এসে চুপচাপ বসে থাকে। তাই আকাশ আর সুচি আগের মতো একসাথে খেলতে পারে না। দুজনেরই মন খারাপ। সুচির মুখের রঙ এখন প্রায় উঠে এসছে। শুধু কানের নিচে আর নাকের দুই পাশে হালকা রঙ লেগে আছে। শুভাশীষ বাবু কয়েক দিন ধরেই একটা নতুন গাড়ি কিনবেন কিনবেন করছেন তাই তিনি একদিন শনিবার বিকালে ছেলেকে ডেকে বললেন “ চল গাড়ি কিনতে যাই । „
“ গাড়ি কিনবে ? কোন গাড়ি বাবা ? কি কোম্পানি ?.....
আকাশ আরও প্রশ্ন করতো। তাই আকাশের প্রশ্নবান থামিয়ে শুভাশীষ বাবু বললেন “ শোরুমে গেলেই তো দেখতে পাবি । „
দিদিমা আকাশকে বললেন “ সুচিকেও নিয়ে যা । „
সুচির কথা শুনে শুভাশীষ বাবু রাজি হয়ে গেলেন । সুচির সাথে থাকলে আকাশ ওখানে গিয়ে বেশি লাফালাফি করবে না।
সুচির কথা শুনে এক দৌড়ে আকাশ সুচির ফ্ল্যাটে চলে গেল । সুচি তখন নাচের ক্লাসে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে শুরু করেছে । আকাশ সুচির ঘরে গিয়ে সুচিকে দেখে বললো “ বাবা গাড়ি কিনতে যাবে । যাবি ? „
নতুন গাড়ি কিনতে যাবে এতে সুচি খুব খুশি। এমনিতেই আজকে নাচের ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল না তাই সে রাজি হয়ে গেল “ চল । „
দুজনে ঘরের বাইরে আসতেই সুচেতা দেবী প্রশ্ন করলেন “ কোন গাড়ি কিনবি রে ? „ তিনি বাইরে থেকেই আকাশের কথা শুনতে পেয়েছিলেন।
“ বাবা এখনও বলেনি । „ আকাশ কথাটা বলেই ঘরের বাইরে দৌড় দিল । সুচিও পিছন পিছন চললো। নাচের ক্লাসে যাওয়ার জন্য যে লাল রঙের জামা গায়ে চাপিয়ে ছিল সেটাই পড়ে কাকার সাথে একটা এসি ট্যাক্সি নিয়ে জাগুয়ার এর শোরুমে গেল।
আকাশের বাবার সন্দেহই ঠিক হলো । সুচি আসায় আকাশ বেশ শান্ত আছে। শোরুমে ঢুকতেই সেলসম্যান গোছের একজন এগিয়ে এলো। তারপর বিভিন্ন মডেলের গাড়ি দেখাতে শুরু করলো। গাড়ি দেখা শুরু করার আগেই শুভাশীষ বাবু লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলেন “ চেক পেমেন্ট চলবে তো ? „
“ অবশ্যই চলবে। শুধু আপনার আইডির এক কপি জেরক্স লাগবে । „
তারপর বিভিন্ন ধরনের আর নানা রঙের গাড়ি দেখা শুরু করলেন আকাশের বাবা । তিনি এখানে আসার আগেই জাগুয়ারের xe মডেল পছন্দ করে তার সম্পর্কে জেনে এসেছিলেন কিন্তু এখানে বিভিন্ন মডেল দেখে মত বদলাতে হলো । আকাশের বাবার একটা নীল রঙের জাগুয়ার পছন্দ হলো । সেটা সম্পর্কে জানার জন্যে লোকাটাকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বিভিন্ন ফিচারস বলতে শুরু করলো। লোকটার কথার মাঝেই আকাশ বললো “ বাবা অন্য রঙের কেনো । নিল রঙ তো আগের গাড়িটার ছিল । „
আগের গাড়ি শুনে লোকটা জিজ্ঞাসা করলো “ কোন গাড়ি ব্যাবহার করতেন স্যার ? „ আসলে লোকটা পরখ করে নিচ্ছে আদেও আকাশের বাবার ক্ষমতা আছে কি না জাগুয়ার কেনার।
“ Auston Martin „ আকাশের বাবা লোকটার প্রশ্নের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন না।
“ খুব সুন্দর গাড়ি। „ মনে মনে লোকটা ভাবলো --- আকাশের বাবা ফাঁপা আওয়াজ করছে না। তারপর আকাশ এর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলো “ কোন রঙের গাড়ি তোমার পছন্দ ? „
“ আমার কালো রঙ পছন্দ । „
তারপর সেলসম্যান একটা ক্যাটালগ থেকে কালো রঙের বিভিন্ন মডেল দেখাতে শুরু করলো। আকাশ তার মধ্যে থেকে জাগুয়ার এর XF মডেল পছন্দ করলে আকাশের বাবা চেকে পেমেন্ট করে দিলেন।
তিন দিনের মধ্যে গাড়ি পৌঁছে গেল আকাশদের ফ্ল্যাটের নিচে। দিদিমা নারকেল ফাটিয়ে পুজা করলেন। তারপর সুচি , বাদশা আর আকাশের সাথে গাড়িটার ছবি তুললেন।
দুই দিন পর ছবি গুলো প্রিন্ট হয়ে এলে সেগুলো এলবামে লাগানোর সময় সুচি দেখতে পেলো। এলবাম টা হাতে নিয়ে পাতা উল্টে দেখতে দেখতে সুচি জিজ্ঞাসা করলো “ এগুলো কখন তুললে তুমি ? এতে তো অনেক ফটো আছে আমাদের। „
“ হ্যাঁ অনেক ফটো আছে। তোর আর দাদুভাইয়ের প্রত্যেক জন্মদিনের ছবি। তোর প্রথম নাঁচের ছবি। প্রথম কেন ! সবকটা নাচের ছবিই আছে এখানে। „
“ কখন তুললে তুমি এইসব ? „
“ যখন তোরা মজা করিস তখন । „
একটু তাড়াতাড়ি ওদের বড় করুন।
টিনেজ প্রেম পড়তে ভালো লাগে।
ছবি দেওয়া বন্ধ করুন। পাঠকের নিজের মনের ছবির সাথে না মিললে ছন্দ পতন হয় বলে আমার মনে হয়। ভালো থাকবেন
হ্যাঁ আপনি ঠিক ওইটি ১ বছরের বেশি বন্ধ। ওইখানে লিখলাম না, পাছে ওইটি আবার ওপরে ওঠে তাই