Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
গল্প: বন্ধন
কলমে: সৌমিতা 

মেয়েটা বড় অবাধ্য। আজকে সুমিত্রা পিউকে অনেকবার মানা করেছিল অফিস না যেতে। সকালে উঠে নিজেই বলল শরীরটা ভালো লাগছেনা অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। সুমিত্রা বলেছিল শরীর যখন ভালো না তখন তো না গেলেই হয় আজ! কোন উত্তর না করে গটগট করে বেরিয়ে গেল সে!! এগুলো দেখলেই রাগ উঠে যায় সুমিত্রার।এই যদি নিজের মা হতো তাহলে ঠিক মেনে নিতো!! গেল আর এলো,কিন্তু দেখালো যে সুমিত্রার কথার পাত্তা দিল না। গজগজ করতে করতে সুমিত্রা দুধ বসালো। আজ জোর করে হলেও পিউকে দুধ খাওয়াবেই সে... যতসব ন্যাকামো.. শরীর খারাপের আর দোষ কি!! ডায়েট করছে ডায়েট.. পাখির মতো খাবার খাবে... এতো জেদ..সুমিত্রা রান্না করলে সে রান্না পর্যন্ত খায় না, নিজের রান্না নিজে করে নেয় কম তেলে.. ঢং যত্তসব। এত জেদ কিসের বাপু! কিছু বললেই মুখেমুখে শুধু তক্কো!!
সুমিত্রার একমাত্র ছেলে দেবরাজের বৌ পিউ। খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিল সুমিত্রা। স্টেট ব্যাংকে চাকরি করতেন উনি। পেনশনের টাকায় ছেলেকে মানুষ করে তুলেছিলেন তিনি। বর্তমানে দেবু একটা প্রাইভেট কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার। পিউ এর সাথে তার আলাপ অফিস যাতায়াতের পথে। পিউ রেলে চাকরি করে।দেবু তার খুব মন খোলা ছেলে, সারাক্ষণ হই হই করতে ভালোবাসে। সুমিত্রা এক-একসময় ভাবে পিউ এর সাথে তার ভাব হলো কি করে!! বাপরে কি গম্ভীর!! বধূবরণের দিন সুমিত্রার ননদ ল্যাটা মাছ ধরতে বলেছিল পিউ কে... মাগো মা!! মুখের উপরে বলে দিল, "আমি এই সমস্ত নিয়মকানুন মানি না। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।"
কি যে লজ্জা লাগছিল সুমিত্রার!!
যাইহোক, এখন যেটা নিয়ে দু জনেরই মন খারাপ সেটা হল দেবুর ট্রানস্ফার হয়ে গেছে কোচবিহারে। দেবু অনেক চেষ্টা করেছিল ট্রান্সফার আটকানোর, কিন্তু বৃথা চেষ্টা, অবশেষে এই দুদিন হল দেবুকে চলে যেতে হয়েছে। মাত্র ছয় মাস বিয়ে হয়েছে তাদের, এ সময় আলাদা থাকার কষ্ট সুমিত্রা বুঝতে পারছে। মেয়েটার মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। সুমিত্রারো কিছু ভালো লাগছেনা । সারাদিন কাজের পর অপেক্ষা করে বসে থাকত ছেলে কখন আসবে। হাসা হাসি, গল্প বেশ কাটছিল দিনগুলো। এখন যে কি করে তার সময়গুলো কাটবে কে জানে!!না,মহারানী  তাদের গল্পের আসরে কোন সময়ে যোগদান করতো না। অবশ্য রাতের বেলার খাবার টা সেই পরিবেশন করতো, সুমিত্রা কে কিছু করতে দিত না। নিজে তো কি সব ছাইপাশ সেদ্ধ খেতো। স্যালাদ খেতো। মাগো মা!! এসব খাবার খাওয়া তো দূরের কথা দেখলেই সুমিত্রার গায়ে জ্বর আসে..সুমিত্রার আবার একটু রসিয়ে রান্না না করলে চলে না। পিউ কম কথা বললেও রান্না নিয়ে কথা শোনাতে ছাড়তো না  সুমিত্রা কে!!! সুমিত্রা স্পষ্ট বলে দিয়েছিল,"শোনো ওইসব তেল মশলা কমিয়ে রোগীর পথ্য আমরা খেতে পারব না।" আর কথা বাড়ায়নি অবশ্য পিউ। মামা বাড়ির আবদার আর কি!! ওনার কথা শুনে রোগীর পথ্যি কখনোই খাবেনা সে!!
গ্লাসের মধ্যে দুধ ঢেলে একটু প্রোটিন পাউডার মেশালো সুমিত্রা, মনে মনে ঠিক করে নিল আজ খেতে না চাইলে সেও দু-চার কথা শোনাবে। মোটেই  ভয় পায় না সে!! সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে খট করে আবার আওয়াজ হলো হাটুতে। উফ্!!! পরশু থেকে ব্যথা টা একটু বেশিই বেড়েছে। কালকে আবার ল্যাবের ছেলেটা এসে অনেকগুলো রক্ত নিয়ে চলে গেল.. কি সব যেন টেস্ট করাবে... সব সময় কেমন যেন একটা দিদিমনি দিদিমনি ভাব!! আরে আমার রক্ত নিতে আসবে তা তুই আমাকে একবার জানাবি না!!! হঠাৎ করে লোকটাকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকে বললো, "তোমার কিছু টেস্ট করানো হবে, উনি ব্লাড নিতে এসেছেন!"যাক্ গে!!! বেশি লাগেনি... ছেলেটার হাত ভাল ছিল...
একটু খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটু ব্যথা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো সুমিত্রা। পিউ এর ঘরে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাড়ালো।
"হ্যাঁগো,নতুন নতুন বলে কিছু বলতে পারতাম না... কিন্তু এখন দেখছি শক্ত হাতে না ধরলে হবে না।"
কারোর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা শোনাটা যে শোভনতা নয় সেটা সুমিত্রা জানে ।কিন্তু তাকে নিয়েই যে কারো সাথে কথা হচ্ছে সেটা তার বুঝতে বাকি রইল না। হঠাৎ করে খুব কান্না পেয়ে গেল তার।মেয়েটার সাথে হয়তো কখনো কোনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি কিন্তু মনে মনে বড় ভালোবাসে পিউকে সে... আজকে পিউ প্রমান করে দিল বৌ কখনো মেয়ে হয়না...!!!
না আর দাঁড়ানো দরকার নেই আবার কষ্ট করে নিচে চলে যাবে সে। কিছু কিছু কথা না শোনাই ভালো।
চোখের জল মুছে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েই শুনল...
"অসম্ভব... আমি আর একদিনও সময় দিতে পারবো না, কাল থেকেই আমি নিজের হাতে সব নেব। তুমি এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলবে না। তুমি জানো?? ক্লোরেস্টল কত হাই... তার উপরে সুগার... ইউরিক অ্যাসিড.. কিছু বাকি নেই... অদ্ভুত ছেলে তুমি... এত বয়স হয়েছে ওনার কখনো টেষ্ট করাও নি কিছু??? আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি!!"
চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে সুমিত্রার। পিউ এসব কি বলছে!!! ছিঃ..কি সব আজেবাজে ভাবছিল সে এতক্ষন!! নিজের উপরই রাগ হলো তার!!এতটা ভাবে পিউ তাকে নিয়ে!! আর সে কিনা!!
 ফোনের ও প্রান্তে যে দেবু আছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই... পিউকে আবার বলতে শুনলো...
"কাল থেকে এই বাড়িতে আমি নিজের জন্য যেরকম রান্না করি সেই রান্নাই হবে। আর সেটা ওনাকে খেতেই হবে। না খেলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর হ্যাঁ, কোনদিনই ফিজিওথেরাপিস্ট ডেকে রে দিয়েছো বলেও তো মনে হয় না। কি যে টেক কেয়ার করতে মায়ের কে জানে।" কিছুক্ষণ থেমে আবার সে বলল,"ও হ্যাঁ, মায়ের নতুন নাম্বারটা তোমাকে পাঠিয়ে দেবো। আসলে জিও নাম্বার নিলাম মায়ের জন্য। আজকে সকালে যখন রিপোর্ট আনতে বেরিয়েছিলাম, তখন একটা স্মার্ট ফোন কিনে এনেছি। দেখোতো ...আমি একদম বেশি কথা বলতে পারিনা,মায়ের খুব বোর লাগবে তুমি নেই তো তাই!! সেই জন্য আজ রাতে মাকে ফোনটা গিফট করবো আর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সব শিখিয়ে দেব.. তখন দেখবে তোমার সাথেও মা ওয়াট্সএপ এ কথা বলবে...." নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলল পিউ।
সুমিত্রার খুব ইচ্ছা করছে পিউকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো তার। নিজের মায়ের থেকে কোন অংশে কম ভাবে না মেয়েটা তাকে!!! মনে মনে সে বলল প্রাণভরা আশীর্বাদ রইল তোমার জন্য... সারা জীবন খুব ভালো থেকো মা.....
কিন্তু.... পরমুহূর্তেই তার মনে হলো....তা বলে কাল থেকে কম তেলে রোগীর পথ্যি!! ওই গোটা গোটা সবজি সেদ্ধ!!! কাঁচা কাঁচা স্যালাদ!!হায়রে!!! এই অবস্থা হবে যদি সে জানতো তাহলে কালকে ওই ব্যাটাকে রক্ত নিতেই দিত না.... কি একটা মনে পড়তেই সুমিত্রা তাড়াতাড়ি করে ওই হাঁটু ব্যথা নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। রগরগে মসলার মাটন রান্না করা আছে ফ্রিজে, দেবু যেদিন যায় সেদিন ছেলের জন্য রান্না করেছিল সে, মনে পড়লো এখনো দু পিস পড়ে আছে ফ্রিজে, মনুর মাকে দিয়ে দেবে ভেবেছিল কিন্তু ভুলে গেছে, এক্ষুনি গিয়ে গরম করে মুখে পুরে দিতে হবে... একটু দেরি হলেই এ জন্মে  আর খাওয়া হবেনা।
                             *সমাপ্ত*
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 14-09-2021, 12:26 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)