Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
আরও একবার

 
 
নিজের বেডরুমের দরজা টা ভালো করে বন্ধ করে ছিটকিনি টা আটকে দিল নিলয়। মা চলে যাবার পর থেকে দরজা বন্ধ করে শোয় না ও। বাবার বয়স হয়েছে, যদি রাত বিরেতে দরকার হয়, এই ভেবে।
কিন্তু, আজ কিচ্ছু করার নেই!
আজ একদম আলাদা একটা দিন... আর সবকিছু শেষ করে দেবার দিন!
এতবছর ধরে চলে আসা কষ্ট,বঞ্চনা, অপমান...অ্যাবিউজ...আজ সব শেষ করে দেবার দিন!
আজ নিলয় নিজেকে শেষ করে দেবে! সব ল্যাটা চুকে যাবে। এই কেন্নোর জীবন নিয়ে আর বাঁচতে হবে না তাহলে।
কয়েকদিন ধরেই শরীরটা খারাপ ছিল ওর। জ্বর-মাথা ব্যথা...সারা শরীরে ব্যথা। আর এই উপসর্গ নিয়ে ডাক্তার কাকুকে দেখিয়েছিল ও। আর ওর খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখের কোনের ডিপ ডার্ক সার্কেল দেখে ডাক্তারকাকু নিজেই জিজ্ঞেস করেছিলেন
'কি রে বাপ্পা? ঘুমোস না নাকি ঠিক মতো? কি চেহারা বানিয়েছিস? চোখ তো পুরো রাস্তার গাড্ডার মতো!' বলে, হা হা করে হেসেছিলেন কাকু।
নিলয় হেসেছিল, প্রানখোলা হাসি। তারপর বলেছিল 'কাকু, ঘুমোতে গেলেই তো বসের গরিলার মতো মুখ টা মনে পড়ে! জানোই তো সেলসে আছি। সারাক্ষণ টার্গেটের পেছনের দৌড়তে হয়! বড্ড টায়ার্ড হয়ে আছি জানো...'
'কিন্তু বাবা, সে তো জীবনের পার্ট একট! পারসোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ আলাদা করতে হবে। শোন, তোকে খুব মাইল্ড একটা ওষুধ দিচ্ছি যেটা রাতে খাবার আধ ঘন্টা আগে খাবি, কেমন? সাতদিনের জন্য লিখে দিলাম। তার বেশি খাবি না। আর স্ট্রেস থাকবেই, বুঝলি। ওভারকাম করতে হবে। ফোন দূরে রেখে শুবি। এই সোশ্যাল মিডিয়াই তোদের সর্বনাশ করল।' খসখস করে প্রেসক্রিপশান লিখতে লিখতে বলেছিলেন কাকু।
আর, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল নিলয়।
দ্যাট ইজ ইট!
রোজ রোজ এরিয়া ম্যানেজারের বকা খাওয়া, 'তুমি একটি ওয়ার্থলেস!' শোনা আর সহকর্মীদের মুখ টিপে হাসা...দিনের পর দিনের এই এক জিনিস আর নিতে পারছে না ও।
কবে থেকে অন্য চাকরির চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো ওপেনিং আসছে না!
যদি ওর ওপর বাবার দায়িত্ব না থাকত...তবে কবেই কুইট করে যেত! আফটার অল, যার বৌ বিয়ের পর এই ভাবে চলে যেতে পারে, তার বেঁচে থাকার কি কোনো দরকার আছে?
'মাস ধরেই চলে আসা ভাবনা টা... কেমন যেন পেড়ে ফেলছিল ওকে। ব্যাকপ্যাকের ভেতর থেকে নিরীহ প্রেসক্রিপশন টা যেন হাতছানি দিচ্ছিল ওকে। বারবার বলছিল 'আমি তো আছি...কোল পেতে...এসো আমার কাছে...'
আজ অফিসে যাবার পর থেকেই ওদের টিমের সবাই কেমন নিজেদের মধ্যে চোখে চোখে কথা বলছিল, মিটিমিটি হাসছিল, কারণ টা বুঝতে পারেনি নিলয়। পরে, বাঁধাধরা মর্নিং মিটিং এরিয়া ম্যানেজার যখন ওর হাতে একটা 'পারফরম্যান্স ওয়ার্নিং' এর চিঠি ধরালেন তখনই বুঝতে পারল এত হাসাহাসির কারণ কি ছিল! সবাই সব জানত! ছিঃ! কি লজ্জা! কি অপমান!
আর তখন সিদ্ধান্ত টা নিয়ে নিয়েছিল ও। নিজেকে শেষ করে দেবে। ব্যাংকে অনেক কষ্ট করে লাখ খানেক জমিয়েছে, লাইফ ইন্সিওরেন্স আছে, সামান্য কিছু ইনভেস্টমেন্ট...বাবার নিজের পেনসান আছে...চলে যাবে ঠিক ...
রি ভেবেই অনেক গুলো দোকান ঘুরে ঘুরে ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে এনেছে ও।
কোথায় যেন পড়েছিল, খালি পেটে ঘুমের ওষুধ খেলে মৃ্ত্যু নিশ্চিত! তাই 'পেট খারাপ আছে' এই অজুহাতে ডিনার করেনি ও। বাবার খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পর নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে দিয়েছে। এমনিতেই কাল রবিবার। দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। বাবা ডাকেন না কখনো। সারা সপ্তাহের ক্লেদ ঘুমের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, ভাবেন হয়ত। এক এক রবিবার তো সাড়ে এগারোটা বারোটাতেও ওঠে ও। উঠে আর ব্রেকফাস্ট করে না, সোজা রান্নার মাসির বানানো খাবার দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে ফেলে। তাই, বাবা কাল হয়ত বারোটা বেজে গেছে ছেলে উঠছে দেখেও চিন্তা করবেন না তেমন... আর তারপর যখন ডাকবেন...তখন তো কতদূরে....

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 06-09-2021, 10:35 AM



Users browsing this thread: 23 Guest(s)