29-08-2021, 09:00 AM
(This post was last modified: 29-08-2021, 11:47 AM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Update 2
ফোনটা কর্কশ আওয়াজ করতেই আকাশের বাবার ঘুমটা ভেঙে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখলেন তার স্ত্রীর ঘুম না ভাঙলেও ফোনের আওয়াজে তিনি নড়ে উঠছেন। তাই তিনি ফোনটা রিসিভ করে ঘরের বাইরে চলে এলেন। অফিসেই সারাদিন থাকার পর রাতে বাড়িতেও অফিসের কাজ ডেকে আনলে আকাশের মা একদম সহ্য করতে পারেন না। তাই বাড়ি ফেরার পর ফোন করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ । এটাই আকাশের বাবা তার সমস্ত কর্মচারীকে আদেশ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এই আদেশের উলঙ্ঘন হওয়ায় তিনি ঘরের বাইরে এসে বেশ রেগে গিয়ে বিরক্তি নিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন “ উপেন তোমাকে বলা আছে না বাড়িতে ফোন না করতে ? তাও আবার এতো রাতে ? „
উপেন হলো আকাশের বাবার কোম্পানির ম্যানেজার। পুরো নাম উপেন্দ্রকিশোর। মাঝারি উচ্চতার হালকা শ্যাম বর্ণের সৎ এবং বিশ্বাসী চরিত্র । বয়স ত্রিশ হতে চললো কিন্তু এখনও বিয়ে করে নি। থাকে বিধবা মায়ের সাথে। আকাশের বাবাকে উপেন বড়ো দাদার চোখে দেখে। আকাশের বাবার কন্ঠে রাগ শুনে উপেন ঘাবড়ে গিয়ে বললো “ স্যার খুব আর্জেন্ট তাই ফোন করেছি। ফোন না করলে ক্ষতি হয়ে যেত । „
“ কিসের আর্জেন্ট ? কি হয়েছে ? „ ক্ষতির কথা শুনে আকাশের বাবার বিচলিত হয়ে পড়লেন ।
“ স্যার আজ রাতে যে অর্ডারটা ছিল সেই কথা মত পাঁচটা ট্রাক বেড়িয়ে গেছিল। কিন্তু মাঝরাস্তায় আসিফের ট্রাকটা বিকল হয়ে গেছে । আমাদের নতুন ট্রাক পৌঁছতে তো সকাল হয়ে যাবে , আর আপনি তো জানেন ভোরের আগেই মাল পৌঁছে না গেলে ডিলটাই ক্যান্সেল করে দিতে পারে । „ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বললো উপেন।
নদীয়ায় একটা প্রাইভেট নার্সিংহোম কোম্পানি একটা নার্সিংহোম বানাচ্ছে। সেই নার্সিংহোমের জন্যেই প্রতিদিন সকাল সাতটার আগে বিল্ডিং বানানোর ইস্পাতের মোটা রড গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেওয়াই আকাশের বাবার কাজ। খুব বড়ো একটা ডিল হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ভেবে আকাশের বাবা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে পড়লেন। “ আশে পাশে কোন গ্যারাজ নেই ? „
“ না স্যার , কোন গ্যারাজ নেই ? কিন্তু একটা ব্যাবস্থা হয়েছে । তার জন্যেই আপনাকে ফোন করেছি । „
“ কি ব্যাবস্থা ? „ আকাশের বাবা যেন আশার আলো দেখতে পেয়েছেন ।
“ আমাদের সাথে যে আর একটা কোম্পানির ডিল আছে তাদের একটা ট্রাক ফিরছে। আমরা আমাদের মাল যদি ওদের ট্রাকে তুলে দিই তাহলে আজকের মত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । „
“ তাই করো। „ আর কোন রাস্তা নেই দেখে আকাশের বাবা বাধ্য হয়েই কথাটা বললেন। “ আমি ওই কোম্পানির সাথে কথা বলে নিচ্ছি । „
দুই দিন পর অফিসের দরজায় টোকা দিয়ে উপেন বললো “ স্যার সঞ্জয় বাবু এসছেন । „
“ হ্যাঁ ওনাকে ভেতরে নিয়ে এসো। „ ফাইল থেকে মুখ তুলে বললেন শুভাশীষ বাবু।
“ ওকে স্যার „ বলে উপেন চলে গেল।
কয়েক মিনিট পর আকাশের বাবার অফিসের দরজা ঠেলে যে ব্যাক্তি ঢুকলো তার বয়স আনুমানিক পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ। লম্বা বলা যায় না আবার বেঁটে ও তিনি নন। গোঁফ দাড়ি কামানো ফর্সা মুখ। তবে নাক থোবড়ানো আর মুখে একটু পাহাড়ের ছাপ আছে দেখে বোঝা যায়। গায়ে আছে কালো কোর্ট প্যান্ট । ভদ্রলোক দরজা ঠেলতেই আকাশের বাবা ফাইল থেকে চোখ তুলে দাঁড়িয়ে বললেন “ আসুন আসুন । বসুন । „ বলে সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন
ভদ্রলোক একটু হেঁসে কোর্টের কলার ধরে ঠিক করে আরামদায়ক চেয়ারে বসতেই আকাশের বাবা বলে উঠলেন “ আপনি সেদিন যেভাবে বাঁচালেন । না হলে তো পুরো ডিলটাই বাতিল হয়ে যেত । „
ভদ্রলোক খুব বিনয়ের সাথে বললেন “ ধন্যবাদ দেবেন না ! আপনার কাজে আসতে পেরেছি এই অনেক । „
“ দেখেছেন ! আপনাকে কিছু অফার করা হলো না । কি নেবেন বলুন ? „
“ না , না , ব্যাস্ত হবেন না আমি এখন কিছু নেবো না । „
“ একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি ? „
“ করুন না । „
“ আমি শুনেছি আপনি থাকেন সল্টলেকে আর আপনার পদবী বিশ্বাস কিন্তু আপনার মুখের আদল পাহাড়িদের মত .....
“ সবাই এখানেই বোকা বনে যায়। „ আকাশের বাবার কথার মাঝখানেই সঞ্জয় বলে উঠলো । “ আসলে আমি পাহাড়ের ছেলে । বাবা কলকাতার। কাজের সূত্রে শিলিগুড়ি যান। ওখানেই বিয়ে। আমি কলেজের পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসি তারপর এখানেই বিয়ে আর এখানেই সংসার । „
“ আপনার উত্তরবঙ্গের পারমিট পেতে অসুবিধা হয় না ? „ সঞ্জয়ের কথার মধ্যেই আকাশের বাবা ব্যাবসার লাভের একটা সুযোগ টের পেলেন।
“ খুব বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ব্যাক্তি আপনি। হ্যাঁ আমার উত্তরবঙ্গের পারমিট পেতে কোন অসুবিধাই হয় না । „
“ আমি আর আপনি যদি একসাথে কাজ করি তাহলে পুরো বাংলায় আমাদের একছত্র অধিপত্য থাকবে। যদি আপনি রাজি হন তাহলে ! „ আকাশের বাবা বুঝলেন যে এই ব্যাক্তির সাথে হাত মেলালে তার লাভ হবে। এতদিন ধরে উত্তরবঙ্গের পারমিট নিয়ে অনেক কষ্ট তাকে করতে হয়েছে। এখন এই কষ্টের সমাধানের রাস্তা তার সামনে খুলে গেল।
“ আপনি আমার মনের কথাই বললেন মি. মিত্র। আমি এটাই বলবো বলবো করছিলাম কিন্তু বলতে পারছিলাম না । „ এক গাল হাসি নিয়ে বললো সঞ্জয়।
আকাশের বাবা সঞ্জয়ের কথা শুনে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। সঞ্জয় আকাশের বাবার হাত ধরে করমর্দন করলো।
কয়েক দিনের মধ্যেই আকাশের বাবা বুঝলেন লোকটা বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ কিন্তু মাঝে মাঝে উপস্থিত বুদ্ধি কোথাও যেন হারিয়ে যায়। কিন্তু তার স্বভাব উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না। তাই আকাশের বাবা একটু সতর্ক থাকেন সব সময়।
80%--20% এর শেয়ারে দুটো কোম্পানি একসাথে হতেই সঞ্জয়ের জন্য নতুন অফিস ঘর বানানো হলো। দীর্ঘ এক মাস কাজ করার পর যখন হিসাবের কাগজ পত্র সঞ্জয়ের টেবিলে এলো তখন সে দেখলো কর্মচারীদের বেতন দেওয়া আর কর দেওয়ার পর অর্ধেকের বেশি টাকা কয়েকটা অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে যায়। সঞ্জয় সেটা দেখে খুশি হলো এবং ম্যানেজার উপেনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো এটার ব্যাপারে। উপেন খুব গর্ব করে বুক ফুলিয়ে উত্তর দিল “ আমাদের স্যারের মনটা তার শরীরের থেকেও বড়ো । „
“ মানে ? „ একটু হেঁসে জিজ্ঞেস করলো সঞ্জয় ।
“ ছয় সাত বছর আগে যখন প্রথম এই কোম্পানিতে আসি তখন স্যার দুটো অনাথ আশ্রম আর একটা বৃদ্ধাশ্রমে টাকা পাঠিয়ে সাহায্য করতেন। এখন বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে পাঁচটা অনাথ আশ্রম আর তিনটে বৃদ্ধাশ্রমে। „ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো উপেন। এবার একটু গর্বের সাথে বললো “ কর্মচারীদের সব সময় পাশে থাকেন। যতোটা সম্ভব সাহায্য করার তিনি করেন। দুই বছর আগে আমার মায়ের কিডনির পাথরের অপরেশন হয়েছিল। পুরো খরচটাই স্যার দিয়েছিলেন। „
সঞ্জয় খুব খুশি হলো এইধরনের কর্মকাণ্ডে। মনে মনে ভাবলো “ এই ধরনের মানুষের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নয় আত্মীয়ের সম্পর্ক করা উচিত। „
কথাটা সঞ্জয় নিজের মনের আপন খেয়ালে বলেছিল । কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর সেই মনের খেয়ালকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সম্ভাবনা তার সামনে আসবে সেটা সে ভাবে নি।
কয়েক সপ্তাহ পর ছিল বিশ্বকর্মা পূজা। আকাশের পুরো পরিবার এই দিন অফিসে এসে একটা বড়ো করে পুজা করে । প্রতিবারের ন্যায় এবারেও আকাশের মা আর দিদিমা পূজা করতে এসছেন। আকাশ রোজ রোজ বাবার অফিসে আসে না। আসতে দেওয়া হয় না। তাই যখনই সে আসে তখন পুরো অফিস, সমস্ত গাড়ি, সব কর্মচারীদের দেখে তাদের সাথে কথা বলে। এবারেও সে পুরো অফিস ঘুরে দেখছিল। আকাশের মা সন্তোষকে বলেছেন “ দেখো যেন এদিক ওদিক না যায় ! খুব বদমাশ হয়েছে আজকাল। কারোর কথা শোনে না। „
উপেন তাই আকাশ কে পুরো অফিস ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল। পূজা প্রায় শেষের সময় সঞ্জয় এসে ঢুকলো । ঢুকেই আকাশ আর উপেনের সাথে দেখা। সঞ্জয় আকাশকে চিনতে পারেনি , তাই সে ম্যানেজার কে জিজ্ঞাসা করলো “ এই খোকাটা কে ? „
উপেন একটু হেঁসে বললো “ এ হলো আমাদের ছোট স্যার। শুভাশীষ স্যারের ছেলে। „
সঞ্জয় এবার আকাশকে জিজ্ঞাসা করলো “ তোমার নাম কি ? কোন ক্লাসে পড়ো তুমি ? „
“ আমার নাম আকাশ। আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। „ আকাশের আজ খুব তাড়া । তাই সে উত্তরটা দিয়েই দৌড়ালো বাকি সব অফিস ঘর আর গাড়ি দেখার জন্য।
আকাশের উৎসাহ দেখে সঞ্জয় আর উপেন দুজনেই একটু হেসে বিদায় নিল । কিছুদূর যাওয়ার পরেই আইডিয়া টা তার মাথায় এলো “ --- আমার মেয়ের সাথে আকাশের বিয়ে দিলে কেমন হয় ! এতে দুটো কাজ হবে । এক মি. মিত্রের সাথে আত্মীয়তা আর দুই তিনিই হবেন এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ মালিক । নিজের মর্জি মতো কোম্পানিকে চালাতে পারবে তখন। সঞ্জয় নিপাট সাদাসিধে মানুষ। কিন্তু কখন কার মনে কোন রিপু জেগে ওঠে সেটা বলা যায় না। সঞ্জয়ের মনে এখন যে রিপু জেগে উঠলো সেটা হলো লোভ।
নিজের মেয়ের কথা মাথাতে আসতেই সঞ্জয়ের মনে পড়লো কয়েক দিন পর তো তার মেয়ের জন্মদিন। কথাটা মাথাতে আসতেই সঞ্জয় চলে গেল আকাশের পরিবারকে জন্মদিনে আমন্ত্রণ করতে। আকাশের বাবা সঞ্জয়কে দেখতে পেয়ে তার পরিবারের সাথে সঞ্জয়ের পরিচয় করে দিলেন। নিজের স্ত্রীর দিকে হাত দেখিয়ে আকাশের বাবা বললেন “ আমার স্ত্রী স্নেহা মিত্র। „
আকাশের মা দুই হাত জোড় করে নমস্কার করলেন। সঞ্জয়ও নমস্কার করলো। তারপর আকাশের বাবা দিদিমার দিকে হাত দেখিয়ে বললেন “ আমার মা বীণাপাণি দেবী । „
সঞ্জয় দিদিমাকেও একটা নমস্কার করে বললো “ আমি মি. মিত্রের নতুন বিজনেস পার্টনার। নাম সঞ্জয় বিশ্বাস । আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে খুব খুশী হলাম । „
স্নেহা দেবী হেসে বললেন “ আপনাকে দেখে তো....
“ আমাকে দেখে পাহাড়ি মনে হয়। তাইতো ! „ আকাশের মায়ের কথার মাঝখানেই বলে উঠলো সঞ্জয়। তারপর একটু হেসে বললো “ সে অনেক কথা। একদিন সাময় করে বলবো। „ তারপর হঠাৎ চোখ বড়ো বড়ো বললো “ সামনের শনিবার তো আমার মেয়ের জন্মদিন। আপনারা আসুন না। তখন কথা হবে। আপনাদের সবাইকে আসতে হবে কিন্তু। „
আকাশের মা হেসে বললেন “ অবশ্যই আসবো। আপনার মেয়ের নাম কি ? „
ততক্ষণে আকাশকে নিয়ে উপেন চলে এসছে । আকাশ এসেই মায়ের বাম হাত ধরে মায়ের পাশে দাঁড়ালো। “ আমার মেয়ের নাম গোধূলি। সেও খুব দুষ্টু। „ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো শেষ কথাটা। তারপর বললো “ জন্মদিনেই আমার মেয়ে আর স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। „
সুচি আর আকাশের সিডি কিনে এনে সিনেমা দেখা একটা নেশায় পরিনত হয়েছে। টানা কয়েকদিন চলার পর আকাশের মা বলেছিলেন “ এবার থেকে শুধু শনিবার আর রবিবার তোরা সিনেমা দেখবি। পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। „
মায়ের কথা মতো আকাশ আর সুচি শুধু শনিবার আর রবিবার সিনেমা দেখে। শনিবার হাফডে কলেজ করে আসার পর আকাশের মা আকাশকে বললেন “ আজ সিনেমা দেখতে হবে না। „
“ কেন মা ? „
“ আজ আমরা সবাই মিলে তোর বাবার বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনে যাবো। „
সেই কথা মতো বিকাল বেলায় সপরিবারে সল্টলেকে সঞ্জয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সুচির বাড়িতে বাদশাকে রেখে দিল। অন্যের বাড়িতে কুকুর নিয়ে যাওয়া ঠিক না। অনেকে পছন্দ করে না।
অঙ্কিতার বিয়ে হয়ে গেছে বলে সুচি এখন অন্য একটা জায়গায় নাঁচ শেখে। সেখানে ক্ল্যাসিক্যাল এর সাথে মডার্ন নাঁচ ও শেখায়। সন্ধ্যায় নাঁচের ক্লাস থেকে ফিরে এসে দেখলো আকাশদের দরজায় তালা দেওয়া । নিজের ঘরে আসতেই বাদশা সুচির গায়ে ঝাপিয়ে পড়লো বলা যায়। বাদশার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে মাকে জিজ্ঞাসা করলো “ আকাশদের ঘরে তালা দেওয়া। কোথাও গেছে ? „
সুচির মা বললো “ কার একটা জন্মদিনে গেছে। নামটা মনে নেই । „
অফিস থেকে সবাই বাড়ি ফিরছে তাই রাস্তায় জ্যাম একটু বেশিই। জ্যাম কাটিয়ে গোধূলিদের বাড়ি পৌঁছতে সাতটা বেজে গেল । বিশাল দু তলা বাড়ির সামনে গাড়িটা থামতেই দারোয়ান গেট খুলে দিল। তারপর সামনের গ্যারাজ দেখিয়ে দিল। গ্যারাজে গাড়ি রাখতে রাখতে আকাশের বাবা তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন “ তুমি চাইলেই এরকম একটা বাড়িতে আমরা থাকতাম। একটা বাড়ি শুধু আমাদের। „
“ একজনের বাড়িতে এসছি। এখানে আবার শুরু হয়ে যেও না। „ আকাশের মা তার স্বামীকে চুপ করিয়ে দিলেন।
তারপর ঘরে ঢুকতেই সঞ্জয় বিনয়ের সাথে বললো “ আসুন আসুন। আপনাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। „
কথাটা বলার পর সঞ্জয় আকাশের পরিবারকে লিভিং রুমে নিয়ে গেল । লিভিং রুমে বেলুন দিয়ে ভর্তি। আর মাঝখানে একটা টেবিলে বড়ো ভ্যানিলা কেক আছে। ঘরে আরও অনেক লোকজন আছে। কয়েকজন আত্মীয় আর কয়েকজন প্রতিবেশী। ভিতরে নিয়ে গিয়ে একজন সুন্দরী মহিলার সামনে গিয়ে সঞ্জয় বললো “ ইনি হলেন আমার স্ত্রী চারুলতা আর ওটা আমার মেয়ে গোধূলি। „
চারুলতা কলকাতার মেয়ে। উচ্চতা সঞ্জয়ের মতোই মাঝারি। স্বামী স্ত্রীর উচ্চতা সমান। কিন্তু তাদের মেয়ে গোধূলিকে দেখে পাহাড়ী বলেই মনে হয়। গায়ে আছে লাল ফ্রগ। গায়ের রং এতোটাই ফর্সা যে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলেই লাল হয়ে যাবে। গাল দুটো লাল। আর নাকটা বাবার মতোই বসা। চুলে বিনুনি করা।
সঞ্জয়ের নিজের পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আকাশের বাবাও নিজের স্ত্রী , শাশুড়ি আর ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পেয়ে চারুলতা বললো “ নমস্কার । আপনাদের কথা সঞ্জয়ের মুখে অনেক শুনেছি। আপনারা এসছেন দেখে খুশি হলাম। চলুন কেক কেটে নিই। „
কেক কাটার পর যে যার সাথে গল্প করতে শুরু করলো। অতিথিদের জন্য বিভিন্ন পদের খাবার আছে। কাটলেট , ফিস ফ্রাই , পকোড়া , ভেজিটেবল চপ এমনকি সুপ পর্যন্ত আছে । যে যার পছন্দ মতো খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো। চারুলতা জোড় করে দুটো কাটলেটের প্লেট আকাশের মা আর দিদিমার হাতে ধরিয়ে দিল।
আকাশ দিদার সাথেই ঘুরছিল। সঞ্জয় তার মেয়ের হাতে একটা কেকের প্লেট দিয়ে বললো “ যাও এটা ওকে দাও আর ওর সাথে গল্প করো। নতুন বন্ধু তোমার। „
গোধূলি বাবার কথা মতো আকাশের কাছে গিয়ে আকাশের দিকে কেকের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বললো “ তোমার নাম কি ? „
“ আমার নাম আকাশ। „ কথাটা বলে আকাশ মনে মনে ভাবলো --- কি বোকা মেয়ে। কিছুক্ষণ আগেই তো বাবা আমার নাম বললো। “ তুমি কোন ক্লাসে পড়ো । „
“ আমি সেন্ট চার্লসে ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আর তুমি ? „
“ আমি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে ক্লাস ফাইভে পড়ি । „ আকাশ ফের মনে মনে ভাবলো --- কি সুন্দর তুমি তুমি করে কথা বলছে। সুচিতো তুই ছাড়া কথাই বলে না। আবার মারে।
আকাশের কথা শুনতে পেয়ে সঞ্জয় আকাশের বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো “ সরকারি কলেজে কেন পড়াচ্ছেন ? এখন তো সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে। „
আকাশের বাবা ঠোঁটের কোনায় হাসি নিয়ে বললেন “ ওর এক বন্ধু ওই কলেজেই পড়ে। তাই জেদ ধরেছিল একসাথে একই কলেজে পড়বে। তাই ওখানে ভর্তি করিয়েছি। „
আকাশের বাবার কথা শুনে সঞ্জয় উপর নীচ মাথা নাড়লো । যেন তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। তারপর আরও অনেক কথা বলে হাসিঠাট্টা করে আকাশরা বিদায় নিলো । বিদায় নেওয়ার সময় সঞ্জয় তার মেয়েকে বললো “ টাটা করে দাও সবাইকে। „
গোধূলি সবাইকে হাত নেড়ে টাটা করে দিল। আকাশও প্রতিউত্তরে টাটা করলো। সঞ্জয়ের স্ত্রী চারুলতা বললো “ আবার আসবেন সময় করে। „
তারপর সবাই গাড়িতে উঠে পড়লো। রাস্তায় এতো জ্যাম ছিল যে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেল। এত দেড়িতে আকাশ কখনো জেগে থাকে না। তাই রাস্তায় গাড়িতেই দিদিমার কোলে আকাশ ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝ রাস্তায় আকাশের বাবা আপন মনেই বললেন “ একটা নতুন গাড়ি কিনতে হবে। „
পরের দিন সকালে আকাশের বাবা স্নান করতে গেছেন। মা রান্না করতে ব্যাস্ত আর দিদিমা বাদশাকে নিয়ে ছাদে গেছেন তার আচারের বয়াম গুলো রোদে শুকানোর জন্য। আকাশ সকাল সকাল টিভি খুলে বসে গেছে কার্টুন দেখবে বলে। দুটো কার্টুন একসাথে দেখছে। একটা হলো Ben 10 আর একটা হলো doremon. যখন Ben 10 এ বিঞ্জাপন শুরু হচ্ছে তখন চ্যানেল ঘুরিয়ে ডোরেমন দেখছে। সকাল সকাল টিভির সামনে বসে পড়ার জন্য স্নেহা দেবী রেগে গিয়ে বললেন “ রবিবার বলে কি তোর পড়াশোনা নেই ? সকাল সকাল টিভির সামনে বসে গেলি ! „
“ এই এটা দেখেনি তারপর পড়তে বসবো। „ কথাটা বলার পর আকাশ খেয়াল করলো সুচি দিদিমার খোলা রাখা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। আকাশ সুচিকে দেখে বললো “ এই দেখ Ben 10 এর নতুন এলিয়েন বেরিয়েছে। „
সুচি আকাশের পাশে সোফায় বসে বললো “ কাল কোথায় গেছিলি ? „
“ কালকে তো গোধূলির বাড়িতে গেছিলাম। ওর জন্মদিন ছিল। „
“ গোধূলি কে ? „ ভুরু কুঁচকে সুচি জিজ্ঞাসা করলো।
“ বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমাকে কেক খেতে দিল। জানিস ওর গাল দুটো টকটকে লাল , পুরো আপেলের মতো । আমাকে কি সুন্দর তুমি তুমি করে কথা বলছিল। তুই তো তুই তুই করে বলিস.......ঠাসসসসস
আর সহ্য করতে পারলো না সুচি। একজন মেয়ে আর একজন মেয়ের প্রশংসা কতক্ষণ শুনতে পারে ! একের পর এক গোধূলির প্রশংসা শুনতে এমনিই ভালো লাগছিল না সুচির। তার উপর তার সাথে ওই মেয়েটার তুলনা একদম বরদাস্ত করতে পারলো না সুচি। তাই রেগে গিয়ে চড়টা বসিয়ে দিল আকাশের গালে।
চড় খেয়ে আকাশের মনে হচ্ছিল ডিগবাজী খেয়ে সোফার উল্টো দিকে গিয়ে পড়ে। চড়ের আওয়াজ শুনে বাথরুমে আকাশের বাবা শাওয়ার বন্ধ করে কান খাড়া করে রইলেন কিছুক্ষণ , আওয়াজটা আরও একবার শোনার আশায় । তিনি আওয়াজ শুনতে পেলেও কিসের আওয়াজ সেটা বুঝতে পারেন নি। আকাশের মা রান্নাঘর থেকেই বলে উঠলেন “ তোরা সকাল সকাল আবার শুরু করলি ? „
“ মারলি কেন ? „ আকাশ রেগে গিয়ে গালে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করলো।
“ তুই আর যাবি না ওই মেয়েটার বাড়ি। „ সুচিও রেগে গিয়ে বললো।
“ তুই মারলি কেন ? „
“ আগে বল তুই আর ওই মেয়টার বাড়ি যাবি না । „
“ কেন ? যাবো না কেন ? „
“ তুই আর যাবি না। „ সুচি কিভাবে বলবে যে গোধূলি কে তার একদম পছন্দ হয়নি ? তাই কথা ঘোরানোর জন্য সুচি বললো “ কালকে আমাদের সিনেমা দেখার কথার ছিল না ! আমাকে না বলে চলে গেলি । „
“ ওওও , তুই সিনেমা দেখতে পারিস নি বলে মারলি। „
আকাশ হয়তো আরও কিছু বলতো কিন্তু বলার আগেই বাদশা আর দিদিমা ঘরে ঢুকলেন। বাদশা এসেই সুচির পায়ের কাছে এসে লেজ নাড়তে লাগলো। সুচি কিছুক্ষণ আদর করে নিজের ঘরে চলে গেল।
একটা সিনেমা দেখতে না পাওয়ার জন্য সুচি ওকে চড় মেরেছিল সেটা আকাশ এখনও ভোলে নি। চড়ের স্মৃতি মাথায় নিয়েই রোজ সুচির সাথেই কলেজে যেতে হয়, মাঝে মাঝে তো সুচি হাত ধরে নিয়ে যায় । একদিন কলেজে টিফিন ব্রেকে ডিমটোস্ট খেয়ে টিফিন করার পর আকাশ নিজের ঘরে ঢুকে গেছে । বিপ্লব বিচ্ছু গেছে টয়লেটে । টিফিন ব্রেক শেষ হতে আর পাঁচ ছয় মিনিট বাকি । এইসময় টয়লেটে খুব ভীড় হয় তাই আকাশ ভিড় হওয়ার আগেই বাথরুম করে নেয় ।
টয়লেট করার পর বিপ্লব ক্লাস রুমের দিকেই আসছিল ঠিক তখন দশম শ্রেনীর ছাত্র নকুল বিপ্লবকে ডাকলো “ এই শোন। „
আকাশের সাথে একই ক্লাসে বিপ্লব পড়ে । এই কলেজে অষ্টম থেকে দশম শ্রেনীর ছাত্ররা ফুল প্যান্ট পড়ে । তাই ছেলেটাকে লাল রঙের ফুল প্যান্ট পড়ে থাকতে দেখে বিপ্লব ঘাবড়ে গেল। বিপ্লব দেখলো দাদাটা একাই আছে তাই সাহস সঞ্চয় করে দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেল কিন্তু কিছু বলার সাহস পেল না। বিপ্লব সামনে আসতে নকুল জিজ্ঞাসা করলো “ ওই মেয়েটা তোদের সোসাইটিতে থাকে না ? „
বিপ্লব দেখলো নকুল দূরে চার জন মেয়ের দিকে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু ওই চারজনের মধ্যে কাকে দেখাচ্ছে বুঝলো না। তাই জিজ্ঞাসা করলো “ ওদের মধ্যে কার কথা বলছো ? ওখানে তো চারজন দাঁড়িয়ে আছে ! „
“ ওদের মধ্যে সবথেকে লম্বা । সুচিত্রা নাম ওর। „
“ হ্যাঁ ও আমাদের সোসাইটিতেই থাকে । „
বিপ্লবের চিনতে পারার সঙ্গে সঙ্গে নকুল পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে বিপ্লবের হাতে দিল। বিপ্লব দেখলো এটা একটা প্রেমের গ্রিটিংস কার্ড । বিপ্লব কার্ডটা হাতে নিতেই নকুল বললো “ এই কার্ডটা ওকে দিয়ে আয়। „