Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
আদিম কাব্য_ শ্রী অনঙ্গদেব রসতীর্থ
#12
এই গ্রামের নাম পেটুকপুর। গ্রামের অদূরে নদী-পার্শ্বে পেটুকবাবার জীর্ণ একখানি মন্দির আছে। পেটুকবাবা সম্ভবতঃ অন্ত্যজ কোনো দেবতা হইতে শিবঠাকুরে অঙ্গীভূতও উন্নীত হইয়াছেন। গ্রামে পূর্বে ঘর ছিল কুড়ি-পঁচিশটা মাত্র। মন্বন্তরের পরে তাহাদের পাঁচটা কী ছয়টা কোনোক্রমে ধুঁকতে-ধুঁকতে টিঁকিয়া আছে। এই পেটুকপুর গ্রাম দেবগ্রামের জমিদারদের শাসনাধীন। দেবগ্রাম যদিও এখান হইয়ে বহু ক্রোশ দূরে। হন্টন ব্যাতীত যাইবার বিকল্প ব্যবস্থা হইল গোরুর-গাড়ি। আগে খেয়া পারাপার হইত; কিন্তু এখন এই প্রায় পুরুষ-শূন্য গ্রামে সে সবও বন্ধ হইয়া গিয়াছে। চাষের জমি ছাড়াও এই অঞ্চলে প্রচুর আম, লিচু ও কাঁঠালের বাগান আছে। উৎকৃষ্ট আম্র ফলনের জন্য এতদাঞ্চল ইতিহাস প্রষিদ্ধ। এই পেটুকপুর হইতেই কয়েক-ক্রোশ মাত্র দূরে ইতিহাসখ্যাত পলাশীর আমবাগান; যেইখানে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের হাতে পরাজিত হইয়াছিলেন।

আমি এতো সব কিছু পূর্বে জানিতাম না। এখানে কয়েকদিন মাত্র বাস করিয়া জানিয়াছি।… বোষ্টমদের নৌকা হইতে এক রাতে আমি এই পেটুকপুরের চরায় একাই নামিয়া পড়ি। তখন মধ্যরাত হইবে। আমার বিবাগী মনে ভূত-সাপ-বাঘের ভয় ছিল না। আমি নির্জনতা, একাকীত্বের প্রত্যাশী হইয়াই নদীর চরের আম্রকুঞ্জে অন্তর্হিত হইলাম। পরদিন প্রত্যূষে আমাকে না পাইয়া বৈষ্ণব-তরী কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হইয়া যাইল। আমি তখন অপরাহ্নের অস্তরাগ চোখে ভাসাইয়া নদীর চরে একাকী আসিয়া বসিলাম। ক্রমশ সন্ধ্যে পাখিদের কূজন পূরবী-রাগিনীর আবহ সৃষ্টি করিয়া নামিয়া আসিল। নদীর শান্ত স্রোতের উপর একটি-দুটি করিয়া আকাশের তারকা চক্ষু মেলিল। আমি অবসন্ন হইয়া, হাতে মাথা রাখিয়া ভূমিশয্যা গ্রহণ করিলাম। কখন যে ঘুমাইয়া পড়িয়াছি, খেয়াল ছিল না।

একটা কোমল, স্নিগ্ধ করতলের স্পর্শ্বে চমকাইয়া আমার তন্দ্রা ছুটিয়া যাইল। তৎপর হইয়া উঠিয়া দেখি, একটি ক্ষীণতনু স্ত্রীলোক আমার পার্শ্বে বসিয়া আছে। সেও সচকিত হইয়া আমার বুকের উপর হইতে তাহার কোমল হাতখানি সরাইয়া লইল। বিব্রত-কন্ঠে বলিল: “তুমি… মানে, আপনি বেঁচে আছেন কিনা দেখছিলুম। আজকাল প্রায়সই নদী দিয়ে মড়া ভেসে আসে কিনা…”

রমণীর সন্দেহ অমূলক নয়। মন্বন্তর পরবর্তী বাংলায় সব নদীর কূলেই বুঝি এমনটাই ঘটিতেছে। কিন্তু… মেয়েটির গলটা বড়ো চেনা-চেনা ঠেকিল। আমি কিছু বলিবার পূর্বেই, সে আবারও বলিল: “আমি ঘাটে এসেছিলুম… তখনই দেখলুম আপনাকে। আপনি কী বিদেশী? কার ঘরে যাবেন?”

শেষের বাক্যটিতে তাহার স্বর কাঁপিয়া গেল। বুঝিলাম, এখানে কাহারও ঘরই অবশিষ্ট নাই। সে ঘাট হইতে কিছু সিক্ত বাসন ও জলপূর্ণ ঘট তুলিয়া লইল। এতোক্ষণে কৃষ্ণা-চতুর্দশীর ক্ষীণ আলোকেও লক্ষ্য করিলাম, মেয়েটি বিধবার সাদা থান পড়িয়া আছে এবং সেই বস্ত্রখণ্ডটিও অত্যন্ত মলিন ও রুগ্ন। সে বলিল: “আসুন, আমার সঙ্গে।…”
[+] 4 users Like anangadevrasatirtha's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আদিম কাব্য_ শ্রী অনঙ্গদেব রসতীর্থ - by anangadevrasatirtha - 19-04-2019, 12:42 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)