15-08-2021, 07:54 PM
আসলে দুর্বলতা মানুষের শরীরে থাকে না। থাকে মনের ভিতরে। শরীরে থাকলে মেয়েরা পারত না শত শত ভিমের গদার আঘাতের থেকেও বেশি যন্ত্রণার, প্রসব যন্ত্রণা নিজের শরীরে নিতে। আসলে আমার মনে হয় ভয় বা দুর্বলতা বলে কিছুই হয় না। আসলে মানুষ বা যেকোনো জীব বা জন্তু সেই ভয় বা দুর্বলতা টপকে নিজেকে সামনে নিয়ে যাওয়ার রসদ খুঁজে পায় না তাই ভয় পায় বা নিজেকে দুর্বল ভাবে। প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করা হবু মায়ের সব থেকে বড় রসদ তার পেট থেকে যে বেরবে তাকে চোখে একবার অন্তত দেখা। যাকে সে নয় মাস ধরে নিজের রক্ত দিয়ে বড় করল নিজের পেটের মধ্যে। নিজের খাবারের পুষ্টির অর্ধেক দিয়ে তার শরীরে রক্ত দিল। তাকে একবার ও দেখবে না? সেই বিশাল আকিঞ্চন ই সেই মা কে বাঁচিয়ে রাখে ওই অসম্ভব যন্ত্রণার হাত থেকে। জীবন যুদ্ধে প্রায় মৃত পিতামাতা নিজের সন্তানের আকাশ ছুঁয়ে ফেলা দেখবার জন্যই সব আঘাত, অপমান সয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। সন্ধ্যে বেলায় বাইরের ইজি চেয়ার এ বসে মতিবাবু এই কথাই ভাবেন। নিজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্বপ্ন নিজের ছেলেরা পূরণ করছে এই স্বপ্ন কোনও বাবা মা দেখে না, এ আমি জানিনা। মতিবাবু ও তার ব্যতিক্রম নন। কি অদ্ভুত পরিহাস। সে বছর অলিম্পিক এ ভারতের কোন পদক ই আসে নি। কিন্তু মতিবাবু লড়লে একটা পদক নিশ্চিন্ত ছিল সেটা অলিম্পিক দলের প্রধান জানত। কিন্তু তাকেই দলবাজি করে সরিয়ে দিল। নিজের দুটো হাত কে মুঠো করে জড়ো করে মাথায় ঠেকিয়ে রেখে বসে রইলেন।তারপরে নিজের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী কে হত্যা করে কার ই বা বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে? কিন্তু ওই যে বললাম, কিছু তো একটা আকিঞ্চন ছিলই যার জন্য মতিবাবু আজকে বেঁচে। সেটা হল শিবা আর জিষ্ণুর রিং এ নেমে মাস্তানি দেখা। শিবা মনে হয় তাকে কোনদিন ও ক্ষমা করতে পারবে না। অতো বড় মানুষটার চোখ থেকে জল গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়তে লাগলো। হে ঠাকুর আমি কেন বেঁচে আছি? মানুষ টা এই কথাই ভাবতে লাগলো। এমন অবস্থা যে ছোট টা ভাল করে ট্রেনিং ও নিতে পারছে না।বাবা হয়ে একদিন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে পুরো পরিবার টা কে জলে ভাসিয়ে চলে গেছিলো। সেটা যে কত বড় কষ্টের মতিবাবু ছাড়া মনে হয় কেউ অনুধাবন ও করতে পারবে না। মতিবাবুর একটা মুহূর্তের ভুলে এত বড় সর্বনাশ ঘটে গেছিলো পুরো পরিবারে। ও ভেবেছিল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে চলে যাবে কোথাও। কিন্তু বেড়িয়ে দেখে একটা লম্বা চওড়া হাটটা কাট্টা জোয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ওর জন্য। প্রথমে ভেবেছিল এটাই হয়ত শিবা। কিন্তু ভুল টা ভাঙল যখন মনে পড়ল শিবা এত টা ফর্সা না। এটা জিষ্ণু। কিন্তু চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল শিবা কে। যখন জিষ্ণু প্রনাম করল তখন বুকে জড়িয়ে ধরেছিল নিজের সন্তান কে। আর এই সন্তানের জন্যই চলে গেছে তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী। ভাগ্যের কি অদ্ভুত পরিহাস। যাকে সব থেকে বেশি ভালবাসত সে একবার ও মনে হয় বাবার কথা ভেবেও দেখেনি। আর যার জন্য স্ত্রী মারা গেল, যার সামনে স্ত্রী কে হত্যা করেছিলেন মতিবাবু, সেই ছেলে তাকে এখন বুকে আগলে রেখে দিয়েছে। সেই ছেলের রিং এ ঢুকে মাস্তানি দেখবে না মতিবাবু? এই ইচ্ছা টাই যে তাকে বাঁচিয়ে রেখে দিয়েছে! আর সেই ছেলের জন্য কিছুই করতে পারছে না মতিবাবু। নাহ একবার পুরনো ডেরায় যেতেই হবে। চেনা পুরনো লোক পেয়ে যেতেই পারে।