14-08-2021, 04:31 PM
……… আমি ছুটিতে কলকাতা আসার পর মা বিয়ের জন্য পিছনে লেগে পড়ে। তখনো জাপান একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবিনি, কিন্তু বাড়ির ইচ্ছা যে আমি না যাই। এইরকম এক দিনে, পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি এমন সময় দেখি সুন্দরীকে। বাস স্টপে গিয়ে গলা খাঁখাঁরই দিলাম। নো রেসপন্স। কাছে গিয়ে ইম্প্রেস করার জন্য “ হে হে আমি অতিন, এখানে ছুটিতে এসেছি জাপান থেকে।‘ আড় চোখে দেখে পাত্তা দিল না। ৩ দিনেও তার ঘাড় ঘুরলো না। চথুরথ দিন আমার মা কে নিয়ে এসে দেখালাম। মা গিয়ে কথা বলে বুঝল যে দিদুকে নিয়ে খুব চিন্তিত। মা তখন আমায় বললেন যে তুই ওকে বাইকে করে নিয়ে যা। মুখ বেঁকিয়ে, আমার দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টি হেনে তিনি উঠলেন বাইকে। সেই দিন আমি সারাদিন ওর সাথে ছিলাম। ওষুধ কেনা, হাসপাতালে কথা বলা সব করে বুঝলাম সত্যি খুব চিন্তায় আছে।সন্ধ্যার সময় চা আর অল্প খাবার “ না বাইরে খাই না”, কি জেদ রে বাবা। ওই খাওয়াতে আধ ঘণ্টা কথা বলতে হয়েছে, এতো তেজ। রাত ৯ টায় বাড়িতে নামিয়ে দিদির সাথে আলাপ করিয়ে দিল। পরের দিন আবার আমি সকালে হাজির, এই ভাবে ২ দিন যাওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলো” আপনি কি করেন, কাজ নেই ? ” কাজ ই তো করছি, এই যে তোমার দিদুর জন্য চিন্তা ভাগ করে নিচ্ছি , আপাতত এটাই কাজ। বাসন মেজে দিতে হবে? ……তিনি প্রথম হাসলেন। তখন জানলেন আমি কি করি। তার আগে পর্যন্ত নো পাত্তা। সব শোনার পর মুখ দেখে বুঝলাম লোফার ভাবে নি। মোটামুটি একসেপটেড। এর দিন ১৫ পর বলল যে '"বিজ্ঞাপন দিয়েছে , দেখ না কি রকম।জাপান না গেলে যদি চলে, বাড়ির ওই অবস্থা, একটা দায়িত্ব তো আছে” । বুঝলাম , চণ্ডী মা চান।ব্যাস ‘জাপান দূর হটো, কাছে এসো মা চণ্ডী’ ।তখনো কিছু জানতাম না।জয়েন করার পর রোজ, “ তোমার বস কে কীরকম দেখতে গো?” রোজ শুনতে শুনতে একদিন বলেদিলাম “খুব সুন্দর, তোমার থেকেও সুন্দর”।
……… “ ধ্যাত বাজে কথা, দিদু অনেকবার বলেছে যে আমায় মায়ের থেকেও…… বলেই এক হাত লম্বা জিভ” তখন আমি ওকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, “ তাহলে কি উনি?”। সেই জানলাম আপনার পরিচয়। আর বিয়েটা আমার মা জোর করে বিয়ে বাড়ির ৬ দিনের মাথায় দিয়েছেন। মা বলল “এখুনি তুই ওকে বিয়ে কর এই ট্রমা থেকে কাটার জন্য” পুকুদা আর দিদিও চাইছিল
……আর তুমি?......টুপুর পিছনে লাগছে
……… “ গোঁসাই ভাত খাবে? না আঁচাব কোথায়” এই অবস্থায় …অতিনের বলার ভঙ্গিতে না হেঁসে পারা যায়না। চা খেতে খেতে বুবকা কে নিয়ে এল টাপুর। কোলে করে বুকের সাথে ধরে নিলেন কিছু সময়। মুখে তৃপ্তির হাসি।
………অতিন ৭ দিন সময় দিলাম তার ভিতর যদি না জয়েন করো তাহলে সব বেচে দেব। আমার পক্ষে চালান সম্ভন না
………সে সবাই জানে
………কি বললে তুমি? ……বাকিদের দিকে তাকিয়ে “ একদম মানে না আমায়। আর সেই ছেলে লুকিয়ে রাখল আমার থেকে । পিনাকি হলে নিশ্চয়ই বলতো।
………পুকুদা?...হা হা , দিদি তাহলে আবার ডুব মারত। ছাড়ুন ওই সব। আমি আর টুপুর কাল পুরী যাচ্ছি, ফিরে আসি তারপর।টুপুর আমি কিন্তু জিতে গেছি। আচ্ছা আপনি শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গান কেন ? আর কাউর গান পছন্দের না ? অতিনের হালকা চালে কথা
”সব খানে তোমার পায়ের ছাপ, কোথায় রাখি পা” … এই জন্য
………দিনেশ দাস । ঠিক বলেছি? ……।ঘাড় নাড়লেন মনীষা
……… একটা গান শোনান না, টাপুর মাঝে মাঝে আপনার গাওয়া গান গায়।
………বহু বছর গাই নি। কিন্তু আজকের দিনের উপযুক্ত গান, মা শিখিয়েছিলেন
শুরু করলেন মনীষা
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে, দিবস গেলে , করব নিবেদন, আমার ব্যাথার পূজা হয়নি সমাপন
যখন বেলা শেষের ছায়ায়, পাখিরা যায় আপন কুলার মাঝে, সন্ধ্যা পূজার ঘণ্টা যখন বাজে
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন।
অনেক দিনের অনেক কথা ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন ডোরে, মনের মাঝে উঠেছে আজ ভরে
যখন পূজার হোমানলে……উঠবে জ্বলে একে একে তারা , আকাশ পানে ছুটবে বাঁধন হারা
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন
………কেডা গাইত্যাছে রে? ও টুপুর, কে গায়, মণি আইছে নাকি? মনির গলা লাগতাছে। দেহি একবার……বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা সঙ্গে আয়া। মনীষা প্রচণ্ড উত্তেজনায় ‘মা’ বলে উঠে দাঁড়িয়েছেন। পাশ থেকে টুপুর আস্তে “ বসুন। কথা বলবেন না। উত্তেজনা ওনার শরীরের পক্ষে খারাপ। বসুন”। হাত ধরে বসিয়ে’……।
……দিদু, তোমার মণি এই এখানে। …… বৃদ্ধা সামনে এসে
………দেহি তোমারে। কি গাইত্যা ছিলে,জান? এইটা হোল রাগ ‘ভীম পলস্রী’, সন্ধ্যা বেলার রাগ। রবি ঠাকুর কন্যার মৃত্যুর পর বাঁধেন। কিন্তু তোমার তো মা অন্তরা টা হয় নাই। আরও আবেগ লাগব , প্রান লাগব। মন পরিস্কার কইরা এই গান গাইবা । তুমি জর্জদার রেকর্ড শুনবা, তবে বুঝবা। বুঝলা।মণি কি সুন্দর গাইত এই গান, সিখাইছিলাম ……একটু গভীর ভাবে চোখে চোখ রেখে
……তোমার নাম কি? চিনো মনিরে? ও দিদু, আমার টাপুর, এই মাইয়া টা কেডা, দেহি নাই তো আগে। ও টুপুর, তুই খালি মিছা কথা কস, এ মণি না। চক্কে কাজল দিছে, সুবাস মাখছে, মনির তো এমনই কাজল কালো চোখ, পেরজাপতির মতো ভুরু নাই, এ মণি না।………ধীরে ধীরে আবার পিছনের দিকে যেতে যেতে থেমে এক মুখ হাসি
………ও মেয়ে, তোমার মুখে না আমার মনির আদল আছে। তোমারে ভরম হয় মণির লগে। কোথায় যে যায় মাইয়াটা। হেইদিন এক জন আইসা কয় , হে নাকি আমার পোলা। আমার কোন পোলাই নাই। আমার তো শুধুই মণি, ওই আমার পোলা, ওই আমার মাইয়া………কোথায় যে যায়…………মনীষা কি অজ্ঞান হয়ে যাবে! দু চোখের জল বাঁধা মানছে না। টুপুর জোর করে ধরে রেখেছে। থর থর করে কাপছেন মনীষা কান্নার দমকে । এই ২ মিনিট নিয়ে এল ফেলে আসা ভালোবাসা জড়ান অফুরন্ত স্মৃতি। মনীষা কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। দুই মেয়ে নিঃশব্দে উঠে গেল। অতিন এসে জড়িয়ে নিল দু হাতে
……… ম্যাডাম, এইবার ফিল করুন দিদি আর টুপুর কি বেদনা বুকে চেপে দিন কাটিয়েছে। মণি , এখন মৃত্যু শয্যায়, তাকে বাচাতে পারেন এক মাত্র আপনি। উনি মণি কে খুঁজছেন। কিন্তু আপনি তো এখন আর মণি নেই। সেই মূল্যোবোধ, সেই দৃষ্টিভঙ্গি সব হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু খুজলে পাবেন। আজ থেকে চেষ্টা করুন মণি কে বাচাতে।পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।
……অতিন আর আমি কথা বলে বুঝেছি, দুই মেয়ের সাথে সম্পর্ক সহজ হতে সময় নেবে। কিন্তু হবে। তারাও চায় ‘মা’, যে হারিয়ে গেছে, আমি কি আমার বাবাকে ভুলতে পারি? সময় দিন। আপনি রোজ আসবেন, রোজ আসুন। আমি সপ্তাহে ৩ দিন থাকি না। সেই সময় আপনি থাকলে টাপুরের ভালো লাগবে …… ধীরে ধীরে সহজ হলেন মনীষা। এক অনাবিল হাসি উপহার দিলেন দুই জামাইকে। টাপুর আর টুপুর চা আর স্নাক্স নিয়ে এল। চা খেয়ে
……… টাপুর, টুপুর এইবার আসি। টাপুর আমি যদি আবার আসি, অসুবিধা হবে?
………সে কি! রোজ আসুন, বুবকা তো আছে, দিদু আছে। রোজ আসুন, একেবারে খেয়ে যাবেন
………টুপুর, তোর শ্বশুর শাশুড়ির সাথে একবার দেখা করা যায়?
………তা তো যায়। কিন্তু আমি আপনার সম্পর্কে কি জানি যে ওনাদের বলব। আজ নিয়ে ৩ দিন আলাপ নিজের মায়ের সাথে।তাই একটু সময় নি। কাল অতিন আর আমি পুরী যাচ্ছি, ২দিনের জন্য
………ভাপ…দু দিনের জন্য? দেখাচ্ছি। মনে রেখ তুমি গোঁ হারা হেরে গেছ। ২০দিন লেগে যেতে পারে ম্যাডাম………আবার অতিনের স্বভাব সুলভ কথা। দুই জামাই নীচে নেমে গাড়িতে তুলে ওপরে আসতে
……।।দিদি আজ একজন যা ঘুমাবে না, ভাবা যায়না……টুপুরের হি হি করে হাসি
……।।তোমার কোলে শুয়ে ঘুমাব……টুপুরের কানে কানে অতিন………ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
……।অসভ্য!
………দিদি কাল থেকে রান্না একটু বেশি করো। উনি কিন্তু রোজ আসবেন, খুব সম্ভব না খেয়ে
………না খেয়ে?
………শুনলে না “অত বড় টেবিলে একা একা খাওয়া যায়” ……টুপুরের চোখ বলে উঠলো “ তুমি সবার থেকে আলাদা, , তুমি আমার রাজা”
গাড়িতে উঠে মনীষা সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে “ আচ্ছা আজ দুপুর ৩ টে থেকে তো খাইনি, খুব কষ্ট হয়নি তো! খাবো না। এখনি শুরু হোক,” সিগারেট প্যাকেট ছুড়ে ফেললেন গাড়ির জানলা দিয়ে। বাড়ি ফিরে স্নান করে ‘সেলার’ খুলতে গিয়ে ‘ না, আমাকে মণি হতে হবে’। সব বোতল উপুর করে দিলেন কমোডে । ড্রেসিং টেবিলে সব প্রসাধন ধাক্কা দিয়ে ফেলে , চিরুনি দিয়ে চুল সোজা করে ‘ দেখি তো বিনুনি করতে পারি কিনা’।বসে বসে দুটো বিনুনি ঝুলিয়ে বিছানায় শুয়ে নানা স্বপ্ন আঁকছেন। বুঝতে পারলেন না কখন পরীর দেশ থেকে রাশি রাশি ঘুম চোখে বসেছে। বহু বছর পর, ঘুমের ওষুধ বা নেশা না করে ঘুমিয়ে পরলেন মনীষা।
………………………………………………শেষ………………………………………………
……… “ ধ্যাত বাজে কথা, দিদু অনেকবার বলেছে যে আমায় মায়ের থেকেও…… বলেই এক হাত লম্বা জিভ” তখন আমি ওকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, “ তাহলে কি উনি?”। সেই জানলাম আপনার পরিচয়। আর বিয়েটা আমার মা জোর করে বিয়ে বাড়ির ৬ দিনের মাথায় দিয়েছেন। মা বলল “এখুনি তুই ওকে বিয়ে কর এই ট্রমা থেকে কাটার জন্য” পুকুদা আর দিদিও চাইছিল
……আর তুমি?......টুপুর পিছনে লাগছে
……… “ গোঁসাই ভাত খাবে? না আঁচাব কোথায়” এই অবস্থায় …অতিনের বলার ভঙ্গিতে না হেঁসে পারা যায়না। চা খেতে খেতে বুবকা কে নিয়ে এল টাপুর। কোলে করে বুকের সাথে ধরে নিলেন কিছু সময়। মুখে তৃপ্তির হাসি।
………অতিন ৭ দিন সময় দিলাম তার ভিতর যদি না জয়েন করো তাহলে সব বেচে দেব। আমার পক্ষে চালান সম্ভন না
………সে সবাই জানে
………কি বললে তুমি? ……বাকিদের দিকে তাকিয়ে “ একদম মানে না আমায়। আর সেই ছেলে লুকিয়ে রাখল আমার থেকে । পিনাকি হলে নিশ্চয়ই বলতো।
………পুকুদা?...হা হা , দিদি তাহলে আবার ডুব মারত। ছাড়ুন ওই সব। আমি আর টুপুর কাল পুরী যাচ্ছি, ফিরে আসি তারপর।টুপুর আমি কিন্তু জিতে গেছি। আচ্ছা আপনি শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গান কেন ? আর কাউর গান পছন্দের না ? অতিনের হালকা চালে কথা
”সব খানে তোমার পায়ের ছাপ, কোথায় রাখি পা” … এই জন্য
………দিনেশ দাস । ঠিক বলেছি? ……।ঘাড় নাড়লেন মনীষা
……… একটা গান শোনান না, টাপুর মাঝে মাঝে আপনার গাওয়া গান গায়।
………বহু বছর গাই নি। কিন্তু আজকের দিনের উপযুক্ত গান, মা শিখিয়েছিলেন
শুরু করলেন মনীষা
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে, দিবস গেলে , করব নিবেদন, আমার ব্যাথার পূজা হয়নি সমাপন
যখন বেলা শেষের ছায়ায়, পাখিরা যায় আপন কুলার মাঝে, সন্ধ্যা পূজার ঘণ্টা যখন বাজে
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন।
অনেক দিনের অনেক কথা ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন ডোরে, মনের মাঝে উঠেছে আজ ভরে
যখন পূজার হোমানলে……উঠবে জ্বলে একে একে তারা , আকাশ পানে ছুটবে বাঁধন হারা
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন
………কেডা গাইত্যাছে রে? ও টুপুর, কে গায়, মণি আইছে নাকি? মনির গলা লাগতাছে। দেহি একবার……বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা সঙ্গে আয়া। মনীষা প্রচণ্ড উত্তেজনায় ‘মা’ বলে উঠে দাঁড়িয়েছেন। পাশ থেকে টুপুর আস্তে “ বসুন। কথা বলবেন না। উত্তেজনা ওনার শরীরের পক্ষে খারাপ। বসুন”। হাত ধরে বসিয়ে’……।
……দিদু, তোমার মণি এই এখানে। …… বৃদ্ধা সামনে এসে
………দেহি তোমারে। কি গাইত্যা ছিলে,জান? এইটা হোল রাগ ‘ভীম পলস্রী’, সন্ধ্যা বেলার রাগ। রবি ঠাকুর কন্যার মৃত্যুর পর বাঁধেন। কিন্তু তোমার তো মা অন্তরা টা হয় নাই। আরও আবেগ লাগব , প্রান লাগব। মন পরিস্কার কইরা এই গান গাইবা । তুমি জর্জদার রেকর্ড শুনবা, তবে বুঝবা। বুঝলা।মণি কি সুন্দর গাইত এই গান, সিখাইছিলাম ……একটু গভীর ভাবে চোখে চোখ রেখে
……তোমার নাম কি? চিনো মনিরে? ও দিদু, আমার টাপুর, এই মাইয়া টা কেডা, দেহি নাই তো আগে। ও টুপুর, তুই খালি মিছা কথা কস, এ মণি না। চক্কে কাজল দিছে, সুবাস মাখছে, মনির তো এমনই কাজল কালো চোখ, পেরজাপতির মতো ভুরু নাই, এ মণি না।………ধীরে ধীরে আবার পিছনের দিকে যেতে যেতে থেমে এক মুখ হাসি
………ও মেয়ে, তোমার মুখে না আমার মনির আদল আছে। তোমারে ভরম হয় মণির লগে। কোথায় যে যায় মাইয়াটা। হেইদিন এক জন আইসা কয় , হে নাকি আমার পোলা। আমার কোন পোলাই নাই। আমার তো শুধুই মণি, ওই আমার পোলা, ওই আমার মাইয়া………কোথায় যে যায়…………মনীষা কি অজ্ঞান হয়ে যাবে! দু চোখের জল বাঁধা মানছে না। টুপুর জোর করে ধরে রেখেছে। থর থর করে কাপছেন মনীষা কান্নার দমকে । এই ২ মিনিট নিয়ে এল ফেলে আসা ভালোবাসা জড়ান অফুরন্ত স্মৃতি। মনীষা কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। দুই মেয়ে নিঃশব্দে উঠে গেল। অতিন এসে জড়িয়ে নিল দু হাতে
……… ম্যাডাম, এইবার ফিল করুন দিদি আর টুপুর কি বেদনা বুকে চেপে দিন কাটিয়েছে। মণি , এখন মৃত্যু শয্যায়, তাকে বাচাতে পারেন এক মাত্র আপনি। উনি মণি কে খুঁজছেন। কিন্তু আপনি তো এখন আর মণি নেই। সেই মূল্যোবোধ, সেই দৃষ্টিভঙ্গি সব হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু খুজলে পাবেন। আজ থেকে চেষ্টা করুন মণি কে বাচাতে।পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।
……অতিন আর আমি কথা বলে বুঝেছি, দুই মেয়ের সাথে সম্পর্ক সহজ হতে সময় নেবে। কিন্তু হবে। তারাও চায় ‘মা’, যে হারিয়ে গেছে, আমি কি আমার বাবাকে ভুলতে পারি? সময় দিন। আপনি রোজ আসবেন, রোজ আসুন। আমি সপ্তাহে ৩ দিন থাকি না। সেই সময় আপনি থাকলে টাপুরের ভালো লাগবে …… ধীরে ধীরে সহজ হলেন মনীষা। এক অনাবিল হাসি উপহার দিলেন দুই জামাইকে। টাপুর আর টুপুর চা আর স্নাক্স নিয়ে এল। চা খেয়ে
……… টাপুর, টুপুর এইবার আসি। টাপুর আমি যদি আবার আসি, অসুবিধা হবে?
………সে কি! রোজ আসুন, বুবকা তো আছে, দিদু আছে। রোজ আসুন, একেবারে খেয়ে যাবেন
………টুপুর, তোর শ্বশুর শাশুড়ির সাথে একবার দেখা করা যায়?
………তা তো যায়। কিন্তু আমি আপনার সম্পর্কে কি জানি যে ওনাদের বলব। আজ নিয়ে ৩ দিন আলাপ নিজের মায়ের সাথে।তাই একটু সময় নি। কাল অতিন আর আমি পুরী যাচ্ছি, ২দিনের জন্য
………ভাপ…দু দিনের জন্য? দেখাচ্ছি। মনে রেখ তুমি গোঁ হারা হেরে গেছ। ২০দিন লেগে যেতে পারে ম্যাডাম………আবার অতিনের স্বভাব সুলভ কথা। দুই জামাই নীচে নেমে গাড়িতে তুলে ওপরে আসতে
……।।দিদি আজ একজন যা ঘুমাবে না, ভাবা যায়না……টুপুরের হি হি করে হাসি
……।।তোমার কোলে শুয়ে ঘুমাব……টুপুরের কানে কানে অতিন………ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
……।অসভ্য!
………দিদি কাল থেকে রান্না একটু বেশি করো। উনি কিন্তু রোজ আসবেন, খুব সম্ভব না খেয়ে
………না খেয়ে?
………শুনলে না “অত বড় টেবিলে একা একা খাওয়া যায়” ……টুপুরের চোখ বলে উঠলো “ তুমি সবার থেকে আলাদা, , তুমি আমার রাজা”
গাড়িতে উঠে মনীষা সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে “ আচ্ছা আজ দুপুর ৩ টে থেকে তো খাইনি, খুব কষ্ট হয়নি তো! খাবো না। এখনি শুরু হোক,” সিগারেট প্যাকেট ছুড়ে ফেললেন গাড়ির জানলা দিয়ে। বাড়ি ফিরে স্নান করে ‘সেলার’ খুলতে গিয়ে ‘ না, আমাকে মণি হতে হবে’। সব বোতল উপুর করে দিলেন কমোডে । ড্রেসিং টেবিলে সব প্রসাধন ধাক্কা দিয়ে ফেলে , চিরুনি দিয়ে চুল সোজা করে ‘ দেখি তো বিনুনি করতে পারি কিনা’।বসে বসে দুটো বিনুনি ঝুলিয়ে বিছানায় শুয়ে নানা স্বপ্ন আঁকছেন। বুঝতে পারলেন না কখন পরীর দেশ থেকে রাশি রাশি ঘুম চোখে বসেছে। বহু বছর পর, ঘুমের ওষুধ বা নেশা না করে ঘুমিয়ে পরলেন মনীষা।
………………………………………………শেষ………………………………………………