14-08-2021, 04:30 PM
নীচে নেমে গাড়িতে উঠে প্রথমেই সিগারেটে টান , সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাগে। কিন্তু কে পরোয়া করে তার রাগের। বাড়ি ফিরে জুতো লাথি মারার ভঙ্গিতে ছুড়ে দিতে আয়নায় লাগল।হাতের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে নিজের শাড়ি,ব্লাউস সায়া সব খুলে শুধু প্যানটি আর আলগা করা ব্রা পড়ে মনীষা এক বড় বোতল স্কচ নিলেন। ধকধক করে গলায় ঢেলে মেঝেতে বসে মাথা বিছানায় এলিয়ে মনীষা। নেশা আসছে, মনের জ্বালা কমছে কই
“ ‘রাত কত হোল উত্তর মেলে না’ কি হোল ও মণি, কি হোল?
……কে কে? তুই আবার এসেছিস? কি আছে আমার, পয়সা চাই? কতো বল কতো নিবি? কয়েক শত কোটির মালিক আমি। তোর কত চাই?
“ ফক্কা। সব ফক্কা রে মণি। এতো বড় বাড়ি কেউ নেই। এই যে তুই বসে মদ গিলছিস, বেশ্যা বাড়ির মাসিরা পর্যন্ত এই ভাবে মদ খায়না। তোর কেউ নেই, তাই এই ভাবে ন্যাংটো হয়ে মদ খাচ্ছিস। কার ওপর তোর রাগ? তুই কেন উদয়নকে ওই চিঠি লিখেছিলি? শেষ করে দিতে? উদয়ন মেয়েদের দিতে চায়নি, তাই তুই উদয়নকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলি রাগে। তুই তো পারতিস উদয়নের সাথে দেখা করে, একবার না হয় বার বার দেখা করে কিছু সমঝোতায় আস্তে। অথবা, সেরাকে বিয়ের পরই একটা বাচ্চা নিতে, কেন নিস নি ? সেরা তো কখনও না করেনি, তাহলে? তুই ওই চিঠি কি করে লিখলি মনীষা?
………কি করতে পারতাম আমি? আমার মন নেই?, আমি একটু সম্মান, ভালোবাসা পেতে পারি না? সংসার ভাংতে আমার কি আনন্দ হয়েছিলো? না। উদয়ন জেনে যাবার পর মায়ের সামনে স্বিকার করেছিলাম সব। তবু উদয়ন ৭ দিন একটা কথা বলে নি। মা আমাকে বলে ছিল ‘গর্ভস্রাব’, তার পরেও আমি সেরার থেকে আলাদা ছিলাম বোম্বেতে ৬ মাস। কেন? কি কারন? বার বার আশা করতাম উদয়ন ফোন করে বলবে “ ফিরে এসো মণি”। আমি ভালবাসতাম উদয়ন কে। আমাকে একটু সময় দিতে পারত উদয়ন। সেরা কে ভালবেসেছিলাম, অস্বীকার করিনি তো? উদয়ন কেন ডিভোর্স কনটেস্ট করলো না? শুধু আমাকে অবজ্ঞা করার জন্য। “তুমি থাক আর না থাক কিছু আসে যায় না”। এ অপমান আমার সহ্য হয় নি। পরে ভেবেছি, রাগের মাথায় ওই চিঠি লেখা ঠিক হয়নি
………মেয়েদের তো আনতে পারতিস মাঝে মাঝে?
………৯-১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি ইচ্ছা করে চেষ্টা করিনি। জানতে পেরে গেছিলাম যে সেরার অল্প বয়েসি মেয়েদের ওপর দুর্বলতা আছে। ওর ফিল্মের কারবারে অনেক মেয়ে আসতো, কানাঘুষোয় শুনেছিলাম যে সেরা অনেক কে এক্সপ্লয়েট করেছে। টাপুর যে মাথা ঘোরান সুন্দরী হবে, তা আমি সংসার ছাড়ার সময় থেকেই জানতাম। তবে এ সব কিছুই খুব বাজে এক্সকিউস।
………ওই উলঙ্গ সেক্স? কোনদিন ভাবতে পারতিস? ব্লু ফিল্ম এর সেক্স, তুই বাস্তবে কি করে করলি মণি? নাকি তুই বেড়া ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলি? দেখ এখানেও আমি ফার্স্ট। সেরার ওই সেক্স প্রতি আকর্ষণ তোকে বিচলিত করেনি
……পরের দিকে মনে হতো, সেরার এই মনোভাব কেন? তবে ওই সেক্সে বাঁধনছেড়ার এক হাতছানি আছে। সেটা আমি উপভোগ করেছি। স্বীকার করছি, পরে ভাবতাম কি করে করলাম, ব্যালকনিতে বিদেশে ওই সেক্স? বোধহয় ওই হাতছানি, সাথে আজে বাজে নেশা যা রিরংসা কে বহুগুন বাড়িয়ে দিত। চাইতাম সবাই দেখুক, কি ভাবে আমি মজা লুটছি। আমার শিক্ষা, বেড়ে ওঠা সব হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে উড়তাম।
………তুইকি তোর মেয়েদের ঘুষ দিতে গেছিলি? কোন সাহসে রে মণি?
……।প্রথম দিন টাকার কথা না বললে ভালো হতো। আর সারা জীবনে যে কত ভুল করলাম। কিন্তু আমার অপমান? ওই টুকু বাচ্চা একবার মুখ টুকু পর্যন্ত দেখতে দিল না?
……তুই তো ওই সন্দেশের একটু অন্তত ভেঙে মুখে দিতে পারতিস? ওদের প্রথম সংসার, এখনও শিখে ওঠেনি, আর কে শেখাবে, আছে টা কে? তোর উচিৎ ছিল আরও সহজ ভাবে মেশার
গোলাম ৩ বার এসে দেখে গেছে ‘মা’ ওই ভাবে মদ খাচ্ছে আর আয়নার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে কথা বলছে বিড়বিড় করে। রাত ১২ বেজে ৩০ মিনিট। গোলাম থাকতে না পেরে খেয়ে নিয়েছে এখন বাইরে মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছে কখন মনীষা ডাকে। আরও অপেক্ষা , আবারও ঘরে উঁকি মেরে দেখল গোলাম মনীষা ‘দ’ হয়ে মেঝেতে শুয়ে, মদের বোতল গ্লাস সব গড়াগড়ি খাচ্ছে। আস্তে করে পাশে গিয়ে ‘মা’? মা? কোন সাড়া নেই। দু হাতে সহজেই তুলে নিল গোলাম , সযত্নে শুইয়ে দিল বিছানায় মাথার নীচে বালিশ দিয়ে।গায়ে এক চাদর দিয়ে ঢেকে মাথার কাছে ছোট টেবিলে এক জগ জল আর এসি কমিয়ে ২৬ এনে , মেঝে পরিস্কার করে দরজা বাইরের থেকে আস্তে ভেজিয়ে দিল। এখন ঘুমাক।
মনীষা ঘুম ভাংতে মাথা তুলতেই বুঝল মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে । তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ।এক পেট জল খেয়ে বাথরুম ঘুরে, পরনের কাপড় পালটে, ডাকল ‘গোলাম’।
……চা দে গোলাম আর মাথা ধরার ওষুধ।
এইপ্রথম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১ টা বেজে গেছে। চা এর সাথে দুটো বড়ি এক সাথে খেয়ে মাথা ধরা একটু কমল । মুখে কোন স্বাদ নেই, খিদেও নেই। পর পর দু কাপ চা সাথে দুটো বিস্কিট খেয়ে চান করলো অনেক সময় ধরে। বেরিয়ে একটা খুব দামি অফ ক্রিম খোলের শাড়ি, পড়ল। “ দেখি একবার ফোন করে, কি বলে। বড়জোর না করবে, করুক। কত অপমান এই কদিনে সহ্য করলাম, দেখি।‘
………হ্যালো , আমি টাপুর টুপুরের মা বলছি,।
………হ্যাঁ বলুন। আমি পিনাকি
……অল্প সময়ের জন্য আসব, এই শেষ। কিছু বলার আছে
………শেষ কেন , নিশ্চয়ই আসবেন, আসুন আমরা অপেক্ষা করছি।
………এই ৩ টে নাগাধ। রবিবারের ঘুম নষ্ট তোমাদের
………না না আপনি আসুন, আসুন……ফোন শেষ করে “টাপুর, টুপুর উনি আজ আসছেন। বলছেন এই শেষ বার। প্লিস অপমান করো না
………পুকুদা উনি ‘টাপুর টুপুরের মা’ বললেন , না? ……।ঘাড় নাড়ল পুকু।
মনীষা এলেন বেলা ৩-৩০ মিনিটে। ঘরে ঢুকতেই দুই বোন বুঝল ‘গ্রেস’ কি জিনিষ।
ঘরে বসিয়ে পুকু অতিন, টাপুর, টুপুর সবাই সামনে পাশে বসলো। মনীষা একটা সোফায় একা বসে
……।।রবিবারের ঘুম ছুট করালাম। কিছু কথা বলার আছে, শুনতে হবে। ্্্ব্যাগ থেকে একটি লাল পাতলা কাগজে মোরা ছোট হার বের করে
……টাপুর,, ওই শিশুটি কি তোমার
………হ্যাঁ। ছেলে, সবাই ডাকে বুবকা। ৬ মাস হবে
………এই হারে সাক্সেনা কোম্পানির কোন ছাপ নেই। আমার মুখেভাতে বাবা আমায় দিয়ে ছিলেন, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে
………হ্যাঁ দেবেন। ও ঘুম থেকে উঠুক আপনি পরিয়ে দেবেন……সকাল থেকে প্রথম মনীষার মন একটু ভালো হোল।
………যে কথা গুলো বলব, তোমরা বাঁধা দেবে না। ঘর ভাঙ্গার জন্য আমি একা দায়ী নই। আমি আমার সব দোষ স্বিকার করার পরেও উদয়ন কথা বলতো না, মা গর্ভস্রাব বলেছিলেন। খুব অপমানের এই সব…।
……ধর্ষিতা হওয়ার থেকেও?
......টুপুরের শ্লেষে জ্বলে উঠলো মনীষার চোখ। উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে টুপুরের সামনে দাঁড়িয়ে, সজোরে চড়, প্রথম চড় খেয়ে টুপুর একটু থমকে গেছে , গন গনে চোখ নিয়ে তাকাতে আবার চড়……দু হাতে টুপুরকে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে ” অনেকবার বলেছি ওই ঘটনা পাপ, আমার পাপ। লজ্জার সীমা নেই আমার। তবুও তুই ইচ্ছা করে শুধু অপমান করার জন্য কেন বার বার ওই কথা বলিস। ঝি ডেকে জুতো পেটা কর, কিন্তু ওই কথা বলিস না টুপুর। ও যে আমার কি লজ্জা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তোকে গর্ভে ধরেছি। মানিস না মানিস আমি তোর মা। তুই একদিন মা হবি, তখন বুঝবি ওই ঘটনা কি লজ্জার” ডুকরে কেঁদে উঠলেন মনীষা। ছোট মেয়েরা নিজের প্রিয় কিছু হারালে যে ভাবে কাঁদে, সেই ভাবে কার্পেটের ওপর বসে সোফায় মাথা রেখে, ফুলে ফুলে কাঁদছেন মনীষা ।একটানা কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়ে, নাক টেনে চলেছেন “ আমি চলে যাচ্ছি, আর আসব না । তোমরা আর দেখবে না আমায়। এখানে এলেই টুপুর ইচ্ছা করে অপমান করে ওই কথা বলে। রাস্তার ভিখারিকেও মানুষ রোজ হেনস্থা করে না………বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন মনীষা। ধীরে ধীরে থামলেন । খুব ধীরে উঠে নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, “ সবাই ভালো থেক” …
দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন, অতিন আর টুপুরের চোখে কি কথা হোল , টুপুর উঠে হাত ধরে“ কোথায় যাচ্ছেন? আসুন। আর বলব না কথা দিলাম। একবার বিশ্বাস করে দেখুন”। তবু কাদছেন, “ ওই ঘটনা আমার পাপ, পাপ অনেক পাপের ফল” । টাপুর উঠে এগিয়ে হাত ধরে বসিয়ে জলের বোতল দিল। রুমালে চোখ মুখ মুছে জল খেলেন। কিন্তু ওই জল খেতে খেতে পেটে হাত দিয়ে টিপে ধরলেন, মুখ বিকৃতি হোল ব্যাথায়। পেট টিপে মাথা ঝুকে বসে রইলেন। টাপুর এগিয়ে এসে, খুব মোলায়েম ভাবে
………পেটে ব্যাথা হচ্ছে, ওষুধ খাবেন?......খুব আস্তে
………ওষুধ লাগবে না রে টাপুর।পেট একেবারে খালি। অল্প কিছু খেতে দিবি, ? কাল দুপুরের পর শুধু দুটো বিস্কিট খেয়েছি, পেট কামড়াচ্ছে
প্রায় ২০ বছর পর প্রথম ‘তুই’ সম্বোধন করলেন…।“ সেকি, একটু দাড়ান, টুপুর আয়।লুচি খাবেন, সাদা তেলে ভাঁজা”
………আবার লুচি বেলবি , যা হোক কিছু দে।
‘খিদে পেয়েছে’ শুনলে অধিকাংশ মহিলারা বিচলিত হয়। দুই বোন তার ব্যাতিক্রম নয়। রান্নাঘরে গিয়ে
……বোন, তুই মোচা মাইক্রওয়েভে গরম করতে বসিয়ে, কড়াই চাপা, আমি ময়দা মাখছি। ধ্রুত হাতে দুই বোন রান্নার ব্যাবস্থা করছে
………আজ দারুন দেখাচ্ছে রে দিদি। যাকে বলে গর্জাস। শাড়ি টা খুব দামি, মানিয়েছে দারুন।
……… তোকে দেব আমি ওই রকম শাড়ি, খুব খুলবে তোকে।এখন গিয়ে একবার বলতে পারিস “ আপনাকে আজ দারুন দেখাচ্ছে এই শাড়িতে”………টাপুর লঘু সুরে
………তাহলে খুলে দিয়ে বলবেন “ টাপুর একটা শাড়ি দাও তো’, হি হি হি… কি সুন্দর শাড়ি আর মানিয়েছে দারুন। অতিন আমায় বলতো “ অসাধারণ সুন্দরী”, আমি ওর পিছনে লাগতাম আজ বুঝছি, ‘গ্রেস’ কাকে বলে। কম বয়েসে কত ছেলে যে রাতে স্বপ্ন দেখেছে
………পুকু বলে আমায় নাকি ওনার মতো দেখতে। “টুপুরের মুখেও আদল আছে, কিন্তু তোমার মুখ একেবারে বসানো”।
……… খারাপ লাগছিলো দিদি, ‘ আর আসব না” বলে কাঁদছিলেন যখন। ব্যাথা পেয়েছেন খুব।উনি সেইদিন আমাকে চোখে চোখে রাখছিলেন, হঠাৎ নেই। যাক গে , আমার কপাল।
………অত কপাল কপাল করিস না তো। তোর মতো কপাল কটা মেয়ের আছে রে? অতিনের মতো ছেলে তোর প্রেমে হাবু ডুবু, আর তুই বলছিস কপাল
………সেই ভাবে বলিনি, বাদ দে। দিদি, বাইরের ঘরে কোন শব্দ নেই কেন? দুই জামাই কি সোফায় না বসে মাটিতে বসে পায়ে তেল মারছে , দেখে আসব?......জোরে শব্দ করে হেঁসে উঠলো দুই বোন। বাইরের ঘরে অতিন বুঝল ওদের নিয়ে দুই বোন আলোচনা করছে
………কাল দুপুরের পর থেকে খায়নি কেন? টুপুর?
……আমার মনে হয় মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছিলেন। ইসস, ২৪ ঘণ্টার ওপর উনি না খেয়ে আছেন………কথা চালাতে চালাতে দুই বোন সুন্দর করে প্লেটে লুচি আর বাটিতে মোচা আর মাছের এক রান্না নিয়ে এসে দাড়াতে অতিন সামনে টেবিল রাখল। পুকু একটা বাটিতে হাত ধোয়ার জল এগিয়ে ধরল। মনীষার চোখ দেখে বোঝা গেল খুব খুশি। প্রথমেই, মাছের রান্না থেকে এক টুকরো নিয়ে মুখে দিয়ে চোখ তুলে দুই মেয়ের দিকে খুসিতে ঝলমল চোখে
………মুইঠ্যা? উফ , দারুন হয়েছে………খেলেন মনীষা তৃপ্তি করে। চেয়ে নিলেন লুচি। খাওয়া দেখে সবাই বুঝল কত অভুক্ত ছিলেন উনি। খাওয়া শেষে
………চিংড়ি দিয়ে মোচা, বোধ হয় ২০ বছর পর খেলাম, কে রেধেছে রে? একেবারে মায়ের রান্না। মুইঠ্যা খেয়েছি, বড় রেস্তোরাঁ তে কিন্তু এই স্বাদ না, কি দিয়েছিস?
………মাখার সময় ডিম দিয়ে মাখলে স্বাদ ভালো হয়। আমার শাশুড়ি শিখিয়েছেন……টুপুর হাসি মুখে উত্তর দিল। মনীষা তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে তাকাতে, অতিন মুখ টিপে
………ভর পেট খাবারের পর এই বাড়িতে সিগারেট খাওয়া যায়না। বুবকা আছে,
………সিগারেট না খেলেই হয়, খেতেই হবে, কি শাস্ত্রে বিধান আছে……… চোখ কপালে তুলে অতিন মনীষাকে দেখছে হাসি মুখে
………শোন সবাই। টাপুর এদিকে আয়……এগিয়ে আসতে মাথায় হাত রেখে “ টাপুর আমার প্রথম সন্তান। ‘মা’ ডাক শুনি প্রথম ওর মুখে। টুপুর তখনো কথা বলতে শেখেনি, তাই টাপুরের মাথায় হাত রেখে বলছি এক বর্ণ মিথ্যা কথা বলব না।কিন্তু আমার কথা শুনতে হবে।
……সৌরভ আমাদের বাড়িতে উদয়নের কাছে প্রায়ই আসতো সেই সুবাদে আলাপ। তারপর একদিন কোন ভাবে একান্তে চা পান, সেই থেকে শুরু দুজনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ভালবাসায় শেষ হয়। এখন তোরা প্রশ্ন করতে পারিস, উদয়ন থাকতেও কি করে সৌরভের প্রেমে পড়লাম। এর কোন উত্তর নেই, হয় না। রবি ঠাকুরের কবিতা “ ওই যে বাজলো বাঁশি, এখন আমি কি করি?”। কে যে কি ভাবে ওই বাঁশি শুনবে কেউ জানে না। বিমলা কেন সন্দীপের প্রেমে পড়ে বাইরের আগুনে নিজের ঘর জালাল? শুধু কি বিপ্লবী বক্তৃতায় আর সুন্দর চেহারায়? নিখিলেশের কি কম ছিল? মহেন্দ্র কেন বিনোদিনীর প্রেমে পরেছিল, ঘরে তো অপরুপ সুন্দরী স্ত্রী ছিল? সেই বিখ্যাত বাঙ্গালির স্ত্রী কেন শিশু পুত্র ,স্বামী সংসার ফেলে বেশি বয়েসের বিদেশির সাথে পালিয়ে গেল? প্রাগঐতিহাসিক গল্পের পাঁচি কেন ভিখু , যে তার স্বামী কে হত্যা করেছে তার সাথে পালিয়ে গেল? ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ র ওই মেয়েটা কেন হসেন মিয়াঁ র সাথে পালাল? একটি গ্রাম্য ছড়া আছে
ঘর চিকন হয় লেপনে পুছনে,
চাষা চিকন ধানে।
পরপুরুষে নারী চিকন হয়,
নদী চিকন হয় বানে।
এই ‘কেনর’ কোন উত্তর নেই, হয় না। কেউ জানে না, আমিও জানিনা। জোরের সাথে একটা কথা বিশ্বাস করি, এক সাথে দুটো আলাদা পুরুষ কে ভালোবাসা যায়, যে ষাই বলুক।তবে একজনের সাথে আলগা সময় বেশি কাটালে তার প্রতি একটু বেশি টান আসে। আমি প্রেমে পড়েছিলাম সেরার। প্রেমে পরা কি অপরাধ? হ্যাঁ, টুপুর সেই প্রেমের ফসল। টুপুর উত্তেজিত হবি না, শোন।আমি চেয়েছিলাম সৌরভের সাথে আমার প্রেমের একটি চিনহ নিজের কাছে রেখে দিতে? আমার গর্ভ, সেখানে শুধু উদয়নের অধিকার আর আমার কোন অধিকার নেই, আমি মানিনা। টুপুর তুই আজকের ষুগের মেয়ে, আশা করি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবি। আমার জীবনের প্রথম বড় ভুল হয়েছিলো, টুপুর হওয়ার পরেও ওই সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। টুপুর হওয়ার আগের ৩ মাস আর পরের ৩ মাস সৌরভের সাথে যোগাযোগ ছিল না আর চোখের দূরে মানে মনের দূর। কিন্তু টুপুর হওয়ার পর আমি আবার ওই সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এইখানে আমার অন্যায়। তার স্মৃতি আমার কাছে তবুও কেন যে গেছিলাম। তখন সৌরভ সেই ভাবে টানত না তবুও ওই খোলামেলা ঘুরে বেড়ান, সৌরভের ফ্লাটে সিগারেট খাওয়া ইত্যাদি টানত। বোধ হয় সব মানুষ চায় লক্ষ্মণ রেখা পেরিয়ে দেখতে কি হয়।বেড়া ভাংতে চায় ।তার ফল আমি এখন দেখছি। জীবনের সব থেকে বড় ভুল, উদয়নকে জানান টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত। উদয়ন ডিভোর্স কনটেস্ট করেনি। আমাকে উপেক্ষা “ তোমার থাকা না থাকা , কিছু এসে যায়না”। বোম্বেতে গিয়ে আমি ৬ মাস সৌরভের থেকে আলাদা ছিলাম ষদি একবার উদয়ন ফোন করে বলে “ ফিরে এসো”। ওই ডিভোর্স কনটেস্ট না করা আর ফোন না করা ভিতরে ভিতরে আমাকে ভীষণ অশান্ত আর রাগি করে তুলেছিল, অপমান হয়েছিলো ‘আমার কোন মুল্য নেই?’। তাই বিয়ের পর চেষ্টা করেছি, কি ভাবে সৌরভকে সম্পূর্ণ ভাবে শুধু আমি পাব আর কেউ না। সেইজন্য এমন জীবনে অভস্ত হই যা কোনোদিন কল্পনা করতে পারতাম না । সে উলঙ্গ জীবন আমি তোমাদের বলতে পারব না। সব রকমের নেশা, সাজ কিছু বাকি ছিল না। ভোগের চরমতম সীমায় পৌছে গেছিলাম। তার ফল পেলাম ৭ বছর পর এক বিকলাঙ্গ পুত্র প্রশব করে। ঘাড় ধরে আমাকে বাস্তবে দাড় করাল। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলিছি। ৪ বছর সেই শিশু বেঁচে ছিল, তার ২ বছর পর ৬ মাসের মাথায় গর্ভপাত হয় আর চিরদিনের মতো আমি শেষ। বেশি করে ডুবলাম কাজে, নেশা তখনো ছাড়তে পারিনি। দুই মেয়েকে আমি তখন ভয় পেতে শুরু করেছি। যদি ওই জীবন দেখে বলে “মা, এই জীবন তোমার?”। তাই দূর দূর থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারও শেষ আছে। গর্ভপাত এর পর কলকাতায় এসে তোদের অনেক খুজেছি,বিজ্ঞাপন দিয়েছি কিন্তু কোন খবর পাইনি। সৌরভ বুঝত না কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তোরা লুকিয়ে আছিস, দেখা করবি না। যে অভিমান আর রাগের বশে আমি উদয়নকে টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত জানাই, সেই অভিমান আর রাগ তোদের ভিতর আছে, সেই জিন কাজ করেছে আর সেই জন্য তোরা জেনেও দেখা দিসনি। আমি ৩০-৪০ হাজার টাকার মদ খাচ্ছি আর আমার সন্তানেরা কচু সিদ্ধ আর ভাত খেয়ে দিন কাটিয়েছে, এর থেকে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে। অফুরন্ত ভোগ আর সুখের জীবন কাটয়েছি কিন্তু শান্তি পাইনি। মনে মনে জানতাম এই স্বার্থপরতার দাম একদিন দিতে হবে। সেরা মরে বেঁচে গেছে কিন্তু আমি পারলাম না। মরতে আমার খুব ভয়, তাই পারিনি। আমার সন্তান দের প্রতি কনা মাত্র দায়িত্ব পালন করিনি। সেইদিনের পর সেরা আর আমি আলাদা আলাদা ঘরে শুতাম। সারা দিনে দু একটা কথাও হতো না নিজেদের মধ্যে। দেড় বছর আগের সেই ঘটনার পর দুজনে প্রথম একসাথে বেরোই ওই বিয়ে বাড়িতে। মনে মনে অনেক বার ভেবেছি, অতিন কে খুলে বলি। মউকে বলি কি ভাবে তোদের দেখা পাওয়া যায়। যেখানে তোরা নিজেরাই লুকিয়ে আছিস, সেখানে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। মা কষ্টে কাটিয়েছে দিন তোদের সাথে এ ভাব ……… আঁচলে আবার মুখ ঢেকে কেঁপে উঠছেন কান্নায়।“ এক বারের জন্য কি তোরা পারলিনা ক্ষমা করতে? আর তোমরা দুই জামাই, তোমরা কেন জানাওয়া নি? অতিন যা করেছে তা বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ।সন্তান স্নেহে দেখতাম তোমায়। তুমি জানতে টুপুরের পরিচয়, আমি বিজ্ঞাপন দিয়েছি, খোঁজ করছি এই সব কিছু শোভনদা তোমায় বলেছে, তোমার কি কনা মাত্র সহানুভুতি হোল না আমার জন্য? নাকি আমায় মানুষ বলে মনে করো না? আমি মনে মনে ভাবতাম,সেই দু বছরের টুপুরের কথা। নিশ্চয়ই এখন সুন্দরী হয়েছে।ইসস, ষদি দেখা পেতাম তাহলে অতিনের বাবা মায়ের কাছে ষেতাম হাত জড় করে। হ্যাঁ রে এই ভাবনা আসতো। মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে।……মনীষার গলা ধরে আসছে কান্নায়।
অতিন গিয়ে হাত ধরে “ আর কিছু বলতে হবে না, প্লিস চুপ করুন, প্লিস। আমি আপনাকে বললে যে একজনকে হারাতাম। আপনারই মেয়ে, একই রকমের জেদ, অভিমান, রাগ। মা চণ্ডী আমার “ ।
………বাবা টাকা যথেষ্ট রেখেছিলেন। দিদুর টাকাও ছিল। কিন্তু বাবা আর দিদুর ওসুখ আর বসে বসে খাওয়া, সব শেষ হয়ে গেছিল। মাসে ৪ হাজার টাকা টিউশন এ পেতাম আমি আর দিদি। অতিনের সাথে তখন বন্ধুত্ব হচ্ছে। ওকে খুলে বলতে, অতিন দিদুর ওষুধ এর দাম দিত জোর করে। ও দিতে চেয়েছিল, কিন্তু খাবারের টাকা নিতে খুব খারাপ লাগত বলে নিতাম না।ওই সিরিয়াল করতে গেছিলাম , টাকা ভালো পাব , দিদুর হাসপাতালের বাকি, ধীরে ধীরে শোধ করে দেব এই ভেবে।আমার শাশুড়ি হাসপাতালের টাকা দেন ওই দিনের পর
………সেই দিন দুর্ঘটনা না ঘটলে, হয়ত টুপুর বাড়ি আসার আগে নিজের পরিচয় দিত আপনাকে
আঁচলে মুখ ঢেকে ফুফিয়ে কাঁদছেন মনীষা।অতিন পাশে বসে
……… ভুল আপনি করেছেন , স্বীকারও করেছেন। আমাকে ওখানে চাকরি করতে পাঠায় টুপুর।
দু চোখে জলের ধারা নিয়ে জাপটে ধরলেন অতিন কে আর সোজা সম্বোধন তুই, প্রচণ্ড আবেগে
………তুমি তো জানতে অতিন , তোকে আমি অন্য চোখে দেখতাম, কেন বললি না আমায় তুই? বল , তুই কেন আমায় বললি না ? তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটত না।
………অতিন আপনাকে বলেছিল, আপনি ধরতে পারেন নি……পুকু প্রথম মুখ খুলল।
……না কোনদিন বলেনি?
………গাড়িতে টাপুর টুপুর গান, আপনাকে প্রশ্ন আপনার ভালো লাগে কিনা, আপনার মনে হয়নি, এর পিছনে কি কারন? ওই গরমে কেন টাপুর টুপুর ? ভাবলেন না কেন? আপনার মনে নেই। আমি আপনার কোম্পানির অডিট করতে গিয়ে বোম্বের বাড়িতে গেছি, আপনি রান্না করে খাইয়েছেন। আমি ৩ বার আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কলকাতায় আপনার কেউ থাকে কিনা। আপনি এরিয়ে গেছেন। একবার যদি বলতেন , হ্যাঁ আমার মেয়েরা থাকে, আমি বলতাম টাপুর আমার হবু স্ত্রী।
………বোকা আমি বেসিক্যালি। যদি বলতাম আমার মেয়েরা থাকে মায়ের কাছে, পিনাকি বুঝত , আমি ফিরে পেতাম সব। আর অতিন সব সময় এতো লঘু কথা বলে আমি বুঝতে পারিনি। তোমাকে মনে পড়েছে। সাথে আরেকজন ছিল আর তুমি তোমার বাবার কথা বলেছিলে “আই হেট হিম”, এখন মনে পড়েছে
………নিন চোখ মুছুন……বলেই টুপুর হাসতে শুরু করলো
……টুপুর হাসছিস কেন?......হাসতে হাসতে অতিন কে দেখাল, টাপুর ও হাসতে আরম্ভ করলো। মনীষা একটু অপ্রস্তুত …কি ব্যাপার?
………অতিন বলেছিল, “ আসলে অত ফাঁকা জায়গা মাথায়, তাই সিগারেটের ধোঁয়া গিয়ে আর বেরতে পারে না , অন্য কিছু ঢুকতেও দেয় না……বলে সবার হাসি। মনীষা একটু সহজ হয়ে, কপট রাগে তাকালেন অতিনের দিকে।
…… কি রকম জেদি বুঝুন, আমি ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে আসতে পারিনি বলে, ৪ বছর প্রায় খোঁজ দেয়নি। কিন্তু আমার যেখানে বাড়ি, যিনি আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, তার কাছে গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছে।একেবারে গোয়েন্দার মতো করে খুঁজে বার করেছি
………কি রকম শুনি………বিস্তারিত শুনে
………ভালো না রে, ভালো না। আমাকে দ্যাখ। নমনিও হওয়া ভালো। আমি যদি আরও ১৫-২০ দিন থাকতাম, তাহলে কি মা বা উদয়ন বের করে দিতে পারত। কথা বলতেই হত, ঘাড় ধাক্কা কোনোদিন দিত না তোদের বাবা। ‘বোকার মরণ’ আমি।
……… কেন রাগ হবে না। আমাদের তখন একমাত্র পুরুষ বন্ধু পিনাকি। আর কেউ নেই, কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। তাই সম্পর্ক রাখি নি
………চা খাবেন ? ৭ টা বাজে………টুপুর জিজ্ঞাসা করলো
………রাতে কি খাবেন?
………রাতে খাবার? জীবনে ৭ টা লুচি খেয়েছি বলে মনে পরেনা। অতখানি মোচা আর মুইঠ্যা।এতো খাবার বহু দিন খাই নি । ধুর, বাড়ির ওই অত বড় টেবিলে একা একা বসে খেতে ভালো লাগে! কিচ্ছু খাবো না। চা খাবো। অতিন আর টুপুরের শুরু কি ভাবে?
“ ‘রাত কত হোল উত্তর মেলে না’ কি হোল ও মণি, কি হোল?
……কে কে? তুই আবার এসেছিস? কি আছে আমার, পয়সা চাই? কতো বল কতো নিবি? কয়েক শত কোটির মালিক আমি। তোর কত চাই?
“ ফক্কা। সব ফক্কা রে মণি। এতো বড় বাড়ি কেউ নেই। এই যে তুই বসে মদ গিলছিস, বেশ্যা বাড়ির মাসিরা পর্যন্ত এই ভাবে মদ খায়না। তোর কেউ নেই, তাই এই ভাবে ন্যাংটো হয়ে মদ খাচ্ছিস। কার ওপর তোর রাগ? তুই কেন উদয়নকে ওই চিঠি লিখেছিলি? শেষ করে দিতে? উদয়ন মেয়েদের দিতে চায়নি, তাই তুই উদয়নকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলি রাগে। তুই তো পারতিস উদয়নের সাথে দেখা করে, একবার না হয় বার বার দেখা করে কিছু সমঝোতায় আস্তে। অথবা, সেরাকে বিয়ের পরই একটা বাচ্চা নিতে, কেন নিস নি ? সেরা তো কখনও না করেনি, তাহলে? তুই ওই চিঠি কি করে লিখলি মনীষা?
………কি করতে পারতাম আমি? আমার মন নেই?, আমি একটু সম্মান, ভালোবাসা পেতে পারি না? সংসার ভাংতে আমার কি আনন্দ হয়েছিলো? না। উদয়ন জেনে যাবার পর মায়ের সামনে স্বিকার করেছিলাম সব। তবু উদয়ন ৭ দিন একটা কথা বলে নি। মা আমাকে বলে ছিল ‘গর্ভস্রাব’, তার পরেও আমি সেরার থেকে আলাদা ছিলাম বোম্বেতে ৬ মাস। কেন? কি কারন? বার বার আশা করতাম উদয়ন ফোন করে বলবে “ ফিরে এসো মণি”। আমি ভালবাসতাম উদয়ন কে। আমাকে একটু সময় দিতে পারত উদয়ন। সেরা কে ভালবেসেছিলাম, অস্বীকার করিনি তো? উদয়ন কেন ডিভোর্স কনটেস্ট করলো না? শুধু আমাকে অবজ্ঞা করার জন্য। “তুমি থাক আর না থাক কিছু আসে যায় না”। এ অপমান আমার সহ্য হয় নি। পরে ভেবেছি, রাগের মাথায় ওই চিঠি লেখা ঠিক হয়নি
………মেয়েদের তো আনতে পারতিস মাঝে মাঝে?
………৯-১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি ইচ্ছা করে চেষ্টা করিনি। জানতে পেরে গেছিলাম যে সেরার অল্প বয়েসি মেয়েদের ওপর দুর্বলতা আছে। ওর ফিল্মের কারবারে অনেক মেয়ে আসতো, কানাঘুষোয় শুনেছিলাম যে সেরা অনেক কে এক্সপ্লয়েট করেছে। টাপুর যে মাথা ঘোরান সুন্দরী হবে, তা আমি সংসার ছাড়ার সময় থেকেই জানতাম। তবে এ সব কিছুই খুব বাজে এক্সকিউস।
………ওই উলঙ্গ সেক্স? কোনদিন ভাবতে পারতিস? ব্লু ফিল্ম এর সেক্স, তুই বাস্তবে কি করে করলি মণি? নাকি তুই বেড়া ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলি? দেখ এখানেও আমি ফার্স্ট। সেরার ওই সেক্স প্রতি আকর্ষণ তোকে বিচলিত করেনি
……পরের দিকে মনে হতো, সেরার এই মনোভাব কেন? তবে ওই সেক্সে বাঁধনছেড়ার এক হাতছানি আছে। সেটা আমি উপভোগ করেছি। স্বীকার করছি, পরে ভাবতাম কি করে করলাম, ব্যালকনিতে বিদেশে ওই সেক্স? বোধহয় ওই হাতছানি, সাথে আজে বাজে নেশা যা রিরংসা কে বহুগুন বাড়িয়ে দিত। চাইতাম সবাই দেখুক, কি ভাবে আমি মজা লুটছি। আমার শিক্ষা, বেড়ে ওঠা সব হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে উড়তাম।
………তুইকি তোর মেয়েদের ঘুষ দিতে গেছিলি? কোন সাহসে রে মণি?
……।প্রথম দিন টাকার কথা না বললে ভালো হতো। আর সারা জীবনে যে কত ভুল করলাম। কিন্তু আমার অপমান? ওই টুকু বাচ্চা একবার মুখ টুকু পর্যন্ত দেখতে দিল না?
……তুই তো ওই সন্দেশের একটু অন্তত ভেঙে মুখে দিতে পারতিস? ওদের প্রথম সংসার, এখনও শিখে ওঠেনি, আর কে শেখাবে, আছে টা কে? তোর উচিৎ ছিল আরও সহজ ভাবে মেশার
গোলাম ৩ বার এসে দেখে গেছে ‘মা’ ওই ভাবে মদ খাচ্ছে আর আয়নার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে কথা বলছে বিড়বিড় করে। রাত ১২ বেজে ৩০ মিনিট। গোলাম থাকতে না পেরে খেয়ে নিয়েছে এখন বাইরে মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছে কখন মনীষা ডাকে। আরও অপেক্ষা , আবারও ঘরে উঁকি মেরে দেখল গোলাম মনীষা ‘দ’ হয়ে মেঝেতে শুয়ে, মদের বোতল গ্লাস সব গড়াগড়ি খাচ্ছে। আস্তে করে পাশে গিয়ে ‘মা’? মা? কোন সাড়া নেই। দু হাতে সহজেই তুলে নিল গোলাম , সযত্নে শুইয়ে দিল বিছানায় মাথার নীচে বালিশ দিয়ে।গায়ে এক চাদর দিয়ে ঢেকে মাথার কাছে ছোট টেবিলে এক জগ জল আর এসি কমিয়ে ২৬ এনে , মেঝে পরিস্কার করে দরজা বাইরের থেকে আস্তে ভেজিয়ে দিল। এখন ঘুমাক।
মনীষা ঘুম ভাংতে মাথা তুলতেই বুঝল মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে । তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ।এক পেট জল খেয়ে বাথরুম ঘুরে, পরনের কাপড় পালটে, ডাকল ‘গোলাম’।
……চা দে গোলাম আর মাথা ধরার ওষুধ।
এইপ্রথম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১ টা বেজে গেছে। চা এর সাথে দুটো বড়ি এক সাথে খেয়ে মাথা ধরা একটু কমল । মুখে কোন স্বাদ নেই, খিদেও নেই। পর পর দু কাপ চা সাথে দুটো বিস্কিট খেয়ে চান করলো অনেক সময় ধরে। বেরিয়ে একটা খুব দামি অফ ক্রিম খোলের শাড়ি, পড়ল। “ দেখি একবার ফোন করে, কি বলে। বড়জোর না করবে, করুক। কত অপমান এই কদিনে সহ্য করলাম, দেখি।‘
………হ্যালো , আমি টাপুর টুপুরের মা বলছি,।
………হ্যাঁ বলুন। আমি পিনাকি
……অল্প সময়ের জন্য আসব, এই শেষ। কিছু বলার আছে
………শেষ কেন , নিশ্চয়ই আসবেন, আসুন আমরা অপেক্ষা করছি।
………এই ৩ টে নাগাধ। রবিবারের ঘুম নষ্ট তোমাদের
………না না আপনি আসুন, আসুন……ফোন শেষ করে “টাপুর, টুপুর উনি আজ আসছেন। বলছেন এই শেষ বার। প্লিস অপমান করো না
………পুকুদা উনি ‘টাপুর টুপুরের মা’ বললেন , না? ……।ঘাড় নাড়ল পুকু।
মনীষা এলেন বেলা ৩-৩০ মিনিটে। ঘরে ঢুকতেই দুই বোন বুঝল ‘গ্রেস’ কি জিনিষ।
ঘরে বসিয়ে পুকু অতিন, টাপুর, টুপুর সবাই সামনে পাশে বসলো। মনীষা একটা সোফায় একা বসে
……।।রবিবারের ঘুম ছুট করালাম। কিছু কথা বলার আছে, শুনতে হবে। ্্্ব্যাগ থেকে একটি লাল পাতলা কাগজে মোরা ছোট হার বের করে
……টাপুর,, ওই শিশুটি কি তোমার
………হ্যাঁ। ছেলে, সবাই ডাকে বুবকা। ৬ মাস হবে
………এই হারে সাক্সেনা কোম্পানির কোন ছাপ নেই। আমার মুখেভাতে বাবা আমায় দিয়ে ছিলেন, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে
………হ্যাঁ দেবেন। ও ঘুম থেকে উঠুক আপনি পরিয়ে দেবেন……সকাল থেকে প্রথম মনীষার মন একটু ভালো হোল।
………যে কথা গুলো বলব, তোমরা বাঁধা দেবে না। ঘর ভাঙ্গার জন্য আমি একা দায়ী নই। আমি আমার সব দোষ স্বিকার করার পরেও উদয়ন কথা বলতো না, মা গর্ভস্রাব বলেছিলেন। খুব অপমানের এই সব…।
……ধর্ষিতা হওয়ার থেকেও?
......টুপুরের শ্লেষে জ্বলে উঠলো মনীষার চোখ। উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে টুপুরের সামনে দাঁড়িয়ে, সজোরে চড়, প্রথম চড় খেয়ে টুপুর একটু থমকে গেছে , গন গনে চোখ নিয়ে তাকাতে আবার চড়……দু হাতে টুপুরকে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে ” অনেকবার বলেছি ওই ঘটনা পাপ, আমার পাপ। লজ্জার সীমা নেই আমার। তবুও তুই ইচ্ছা করে শুধু অপমান করার জন্য কেন বার বার ওই কথা বলিস। ঝি ডেকে জুতো পেটা কর, কিন্তু ওই কথা বলিস না টুপুর। ও যে আমার কি লজ্জা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তোকে গর্ভে ধরেছি। মানিস না মানিস আমি তোর মা। তুই একদিন মা হবি, তখন বুঝবি ওই ঘটনা কি লজ্জার” ডুকরে কেঁদে উঠলেন মনীষা। ছোট মেয়েরা নিজের প্রিয় কিছু হারালে যে ভাবে কাঁদে, সেই ভাবে কার্পেটের ওপর বসে সোফায় মাথা রেখে, ফুলে ফুলে কাঁদছেন মনীষা ।একটানা কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়ে, নাক টেনে চলেছেন “ আমি চলে যাচ্ছি, আর আসব না । তোমরা আর দেখবে না আমায়। এখানে এলেই টুপুর ইচ্ছা করে অপমান করে ওই কথা বলে। রাস্তার ভিখারিকেও মানুষ রোজ হেনস্থা করে না………বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন মনীষা। ধীরে ধীরে থামলেন । খুব ধীরে উঠে নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, “ সবাই ভালো থেক” …
দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন, অতিন আর টুপুরের চোখে কি কথা হোল , টুপুর উঠে হাত ধরে“ কোথায় যাচ্ছেন? আসুন। আর বলব না কথা দিলাম। একবার বিশ্বাস করে দেখুন”। তবু কাদছেন, “ ওই ঘটনা আমার পাপ, পাপ অনেক পাপের ফল” । টাপুর উঠে এগিয়ে হাত ধরে বসিয়ে জলের বোতল দিল। রুমালে চোখ মুখ মুছে জল খেলেন। কিন্তু ওই জল খেতে খেতে পেটে হাত দিয়ে টিপে ধরলেন, মুখ বিকৃতি হোল ব্যাথায়। পেট টিপে মাথা ঝুকে বসে রইলেন। টাপুর এগিয়ে এসে, খুব মোলায়েম ভাবে
………পেটে ব্যাথা হচ্ছে, ওষুধ খাবেন?......খুব আস্তে
………ওষুধ লাগবে না রে টাপুর।পেট একেবারে খালি। অল্প কিছু খেতে দিবি, ? কাল দুপুরের পর শুধু দুটো বিস্কিট খেয়েছি, পেট কামড়াচ্ছে
প্রায় ২০ বছর পর প্রথম ‘তুই’ সম্বোধন করলেন…।“ সেকি, একটু দাড়ান, টুপুর আয়।লুচি খাবেন, সাদা তেলে ভাঁজা”
………আবার লুচি বেলবি , যা হোক কিছু দে।
‘খিদে পেয়েছে’ শুনলে অধিকাংশ মহিলারা বিচলিত হয়। দুই বোন তার ব্যাতিক্রম নয়। রান্নাঘরে গিয়ে
……বোন, তুই মোচা মাইক্রওয়েভে গরম করতে বসিয়ে, কড়াই চাপা, আমি ময়দা মাখছি। ধ্রুত হাতে দুই বোন রান্নার ব্যাবস্থা করছে
………আজ দারুন দেখাচ্ছে রে দিদি। যাকে বলে গর্জাস। শাড়ি টা খুব দামি, মানিয়েছে দারুন।
……… তোকে দেব আমি ওই রকম শাড়ি, খুব খুলবে তোকে।এখন গিয়ে একবার বলতে পারিস “ আপনাকে আজ দারুন দেখাচ্ছে এই শাড়িতে”………টাপুর লঘু সুরে
………তাহলে খুলে দিয়ে বলবেন “ টাপুর একটা শাড়ি দাও তো’, হি হি হি… কি সুন্দর শাড়ি আর মানিয়েছে দারুন। অতিন আমায় বলতো “ অসাধারণ সুন্দরী”, আমি ওর পিছনে লাগতাম আজ বুঝছি, ‘গ্রেস’ কাকে বলে। কম বয়েসে কত ছেলে যে রাতে স্বপ্ন দেখেছে
………পুকু বলে আমায় নাকি ওনার মতো দেখতে। “টুপুরের মুখেও আদল আছে, কিন্তু তোমার মুখ একেবারে বসানো”।
……… খারাপ লাগছিলো দিদি, ‘ আর আসব না” বলে কাঁদছিলেন যখন। ব্যাথা পেয়েছেন খুব।উনি সেইদিন আমাকে চোখে চোখে রাখছিলেন, হঠাৎ নেই। যাক গে , আমার কপাল।
………অত কপাল কপাল করিস না তো। তোর মতো কপাল কটা মেয়ের আছে রে? অতিনের মতো ছেলে তোর প্রেমে হাবু ডুবু, আর তুই বলছিস কপাল
………সেই ভাবে বলিনি, বাদ দে। দিদি, বাইরের ঘরে কোন শব্দ নেই কেন? দুই জামাই কি সোফায় না বসে মাটিতে বসে পায়ে তেল মারছে , দেখে আসব?......জোরে শব্দ করে হেঁসে উঠলো দুই বোন। বাইরের ঘরে অতিন বুঝল ওদের নিয়ে দুই বোন আলোচনা করছে
………কাল দুপুরের পর থেকে খায়নি কেন? টুপুর?
……আমার মনে হয় মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছিলেন। ইসস, ২৪ ঘণ্টার ওপর উনি না খেয়ে আছেন………কথা চালাতে চালাতে দুই বোন সুন্দর করে প্লেটে লুচি আর বাটিতে মোচা আর মাছের এক রান্না নিয়ে এসে দাড়াতে অতিন সামনে টেবিল রাখল। পুকু একটা বাটিতে হাত ধোয়ার জল এগিয়ে ধরল। মনীষার চোখ দেখে বোঝা গেল খুব খুশি। প্রথমেই, মাছের রান্না থেকে এক টুকরো নিয়ে মুখে দিয়ে চোখ তুলে দুই মেয়ের দিকে খুসিতে ঝলমল চোখে
………মুইঠ্যা? উফ , দারুন হয়েছে………খেলেন মনীষা তৃপ্তি করে। চেয়ে নিলেন লুচি। খাওয়া দেখে সবাই বুঝল কত অভুক্ত ছিলেন উনি। খাওয়া শেষে
………চিংড়ি দিয়ে মোচা, বোধ হয় ২০ বছর পর খেলাম, কে রেধেছে রে? একেবারে মায়ের রান্না। মুইঠ্যা খেয়েছি, বড় রেস্তোরাঁ তে কিন্তু এই স্বাদ না, কি দিয়েছিস?
………মাখার সময় ডিম দিয়ে মাখলে স্বাদ ভালো হয়। আমার শাশুড়ি শিখিয়েছেন……টুপুর হাসি মুখে উত্তর দিল। মনীষা তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে তাকাতে, অতিন মুখ টিপে
………ভর পেট খাবারের পর এই বাড়িতে সিগারেট খাওয়া যায়না। বুবকা আছে,
………সিগারেট না খেলেই হয়, খেতেই হবে, কি শাস্ত্রে বিধান আছে……… চোখ কপালে তুলে অতিন মনীষাকে দেখছে হাসি মুখে
………শোন সবাই। টাপুর এদিকে আয়……এগিয়ে আসতে মাথায় হাত রেখে “ টাপুর আমার প্রথম সন্তান। ‘মা’ ডাক শুনি প্রথম ওর মুখে। টুপুর তখনো কথা বলতে শেখেনি, তাই টাপুরের মাথায় হাত রেখে বলছি এক বর্ণ মিথ্যা কথা বলব না।কিন্তু আমার কথা শুনতে হবে।
……সৌরভ আমাদের বাড়িতে উদয়নের কাছে প্রায়ই আসতো সেই সুবাদে আলাপ। তারপর একদিন কোন ভাবে একান্তে চা পান, সেই থেকে শুরু দুজনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ভালবাসায় শেষ হয়। এখন তোরা প্রশ্ন করতে পারিস, উদয়ন থাকতেও কি করে সৌরভের প্রেমে পড়লাম। এর কোন উত্তর নেই, হয় না। রবি ঠাকুরের কবিতা “ ওই যে বাজলো বাঁশি, এখন আমি কি করি?”। কে যে কি ভাবে ওই বাঁশি শুনবে কেউ জানে না। বিমলা কেন সন্দীপের প্রেমে পড়ে বাইরের আগুনে নিজের ঘর জালাল? শুধু কি বিপ্লবী বক্তৃতায় আর সুন্দর চেহারায়? নিখিলেশের কি কম ছিল? মহেন্দ্র কেন বিনোদিনীর প্রেমে পরেছিল, ঘরে তো অপরুপ সুন্দরী স্ত্রী ছিল? সেই বিখ্যাত বাঙ্গালির স্ত্রী কেন শিশু পুত্র ,স্বামী সংসার ফেলে বেশি বয়েসের বিদেশির সাথে পালিয়ে গেল? প্রাগঐতিহাসিক গল্পের পাঁচি কেন ভিখু , যে তার স্বামী কে হত্যা করেছে তার সাথে পালিয়ে গেল? ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ র ওই মেয়েটা কেন হসেন মিয়াঁ র সাথে পালাল? একটি গ্রাম্য ছড়া আছে
ঘর চিকন হয় লেপনে পুছনে,
চাষা চিকন ধানে।
পরপুরুষে নারী চিকন হয়,
নদী চিকন হয় বানে।
এই ‘কেনর’ কোন উত্তর নেই, হয় না। কেউ জানে না, আমিও জানিনা। জোরের সাথে একটা কথা বিশ্বাস করি, এক সাথে দুটো আলাদা পুরুষ কে ভালোবাসা যায়, যে ষাই বলুক।তবে একজনের সাথে আলগা সময় বেশি কাটালে তার প্রতি একটু বেশি টান আসে। আমি প্রেমে পড়েছিলাম সেরার। প্রেমে পরা কি অপরাধ? হ্যাঁ, টুপুর সেই প্রেমের ফসল। টুপুর উত্তেজিত হবি না, শোন।আমি চেয়েছিলাম সৌরভের সাথে আমার প্রেমের একটি চিনহ নিজের কাছে রেখে দিতে? আমার গর্ভ, সেখানে শুধু উদয়নের অধিকার আর আমার কোন অধিকার নেই, আমি মানিনা। টুপুর তুই আজকের ষুগের মেয়ে, আশা করি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবি। আমার জীবনের প্রথম বড় ভুল হয়েছিলো, টুপুর হওয়ার পরেও ওই সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। টুপুর হওয়ার আগের ৩ মাস আর পরের ৩ মাস সৌরভের সাথে যোগাযোগ ছিল না আর চোখের দূরে মানে মনের দূর। কিন্তু টুপুর হওয়ার পর আমি আবার ওই সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এইখানে আমার অন্যায়। তার স্মৃতি আমার কাছে তবুও কেন যে গেছিলাম। তখন সৌরভ সেই ভাবে টানত না তবুও ওই খোলামেলা ঘুরে বেড়ান, সৌরভের ফ্লাটে সিগারেট খাওয়া ইত্যাদি টানত। বোধ হয় সব মানুষ চায় লক্ষ্মণ রেখা পেরিয়ে দেখতে কি হয়।বেড়া ভাংতে চায় ।তার ফল আমি এখন দেখছি। জীবনের সব থেকে বড় ভুল, উদয়নকে জানান টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত। উদয়ন ডিভোর্স কনটেস্ট করেনি। আমাকে উপেক্ষা “ তোমার থাকা না থাকা , কিছু এসে যায়না”। বোম্বেতে গিয়ে আমি ৬ মাস সৌরভের থেকে আলাদা ছিলাম ষদি একবার উদয়ন ফোন করে বলে “ ফিরে এসো”। ওই ডিভোর্স কনটেস্ট না করা আর ফোন না করা ভিতরে ভিতরে আমাকে ভীষণ অশান্ত আর রাগি করে তুলেছিল, অপমান হয়েছিলো ‘আমার কোন মুল্য নেই?’। তাই বিয়ের পর চেষ্টা করেছি, কি ভাবে সৌরভকে সম্পূর্ণ ভাবে শুধু আমি পাব আর কেউ না। সেইজন্য এমন জীবনে অভস্ত হই যা কোনোদিন কল্পনা করতে পারতাম না । সে উলঙ্গ জীবন আমি তোমাদের বলতে পারব না। সব রকমের নেশা, সাজ কিছু বাকি ছিল না। ভোগের চরমতম সীমায় পৌছে গেছিলাম। তার ফল পেলাম ৭ বছর পর এক বিকলাঙ্গ পুত্র প্রশব করে। ঘাড় ধরে আমাকে বাস্তবে দাড় করাল। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলিছি। ৪ বছর সেই শিশু বেঁচে ছিল, তার ২ বছর পর ৬ মাসের মাথায় গর্ভপাত হয় আর চিরদিনের মতো আমি শেষ। বেশি করে ডুবলাম কাজে, নেশা তখনো ছাড়তে পারিনি। দুই মেয়েকে আমি তখন ভয় পেতে শুরু করেছি। যদি ওই জীবন দেখে বলে “মা, এই জীবন তোমার?”। তাই দূর দূর থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারও শেষ আছে। গর্ভপাত এর পর কলকাতায় এসে তোদের অনেক খুজেছি,বিজ্ঞাপন দিয়েছি কিন্তু কোন খবর পাইনি। সৌরভ বুঝত না কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তোরা লুকিয়ে আছিস, দেখা করবি না। যে অভিমান আর রাগের বশে আমি উদয়নকে টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত জানাই, সেই অভিমান আর রাগ তোদের ভিতর আছে, সেই জিন কাজ করেছে আর সেই জন্য তোরা জেনেও দেখা দিসনি। আমি ৩০-৪০ হাজার টাকার মদ খাচ্ছি আর আমার সন্তানেরা কচু সিদ্ধ আর ভাত খেয়ে দিন কাটিয়েছে, এর থেকে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে। অফুরন্ত ভোগ আর সুখের জীবন কাটয়েছি কিন্তু শান্তি পাইনি। মনে মনে জানতাম এই স্বার্থপরতার দাম একদিন দিতে হবে। সেরা মরে বেঁচে গেছে কিন্তু আমি পারলাম না। মরতে আমার খুব ভয়, তাই পারিনি। আমার সন্তান দের প্রতি কনা মাত্র দায়িত্ব পালন করিনি। সেইদিনের পর সেরা আর আমি আলাদা আলাদা ঘরে শুতাম। সারা দিনে দু একটা কথাও হতো না নিজেদের মধ্যে। দেড় বছর আগের সেই ঘটনার পর দুজনে প্রথম একসাথে বেরোই ওই বিয়ে বাড়িতে। মনে মনে অনেক বার ভেবেছি, অতিন কে খুলে বলি। মউকে বলি কি ভাবে তোদের দেখা পাওয়া যায়। যেখানে তোরা নিজেরাই লুকিয়ে আছিস, সেখানে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। মা কষ্টে কাটিয়েছে দিন তোদের সাথে এ ভাব ……… আঁচলে আবার মুখ ঢেকে কেঁপে উঠছেন কান্নায়।“ এক বারের জন্য কি তোরা পারলিনা ক্ষমা করতে? আর তোমরা দুই জামাই, তোমরা কেন জানাওয়া নি? অতিন যা করেছে তা বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ।সন্তান স্নেহে দেখতাম তোমায়। তুমি জানতে টুপুরের পরিচয়, আমি বিজ্ঞাপন দিয়েছি, খোঁজ করছি এই সব কিছু শোভনদা তোমায় বলেছে, তোমার কি কনা মাত্র সহানুভুতি হোল না আমার জন্য? নাকি আমায় মানুষ বলে মনে করো না? আমি মনে মনে ভাবতাম,সেই দু বছরের টুপুরের কথা। নিশ্চয়ই এখন সুন্দরী হয়েছে।ইসস, ষদি দেখা পেতাম তাহলে অতিনের বাবা মায়ের কাছে ষেতাম হাত জড় করে। হ্যাঁ রে এই ভাবনা আসতো। মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে।……মনীষার গলা ধরে আসছে কান্নায়।
অতিন গিয়ে হাত ধরে “ আর কিছু বলতে হবে না, প্লিস চুপ করুন, প্লিস। আমি আপনাকে বললে যে একজনকে হারাতাম। আপনারই মেয়ে, একই রকমের জেদ, অভিমান, রাগ। মা চণ্ডী আমার “ ।
………বাবা টাকা যথেষ্ট রেখেছিলেন। দিদুর টাকাও ছিল। কিন্তু বাবা আর দিদুর ওসুখ আর বসে বসে খাওয়া, সব শেষ হয়ে গেছিল। মাসে ৪ হাজার টাকা টিউশন এ পেতাম আমি আর দিদি। অতিনের সাথে তখন বন্ধুত্ব হচ্ছে। ওকে খুলে বলতে, অতিন দিদুর ওষুধ এর দাম দিত জোর করে। ও দিতে চেয়েছিল, কিন্তু খাবারের টাকা নিতে খুব খারাপ লাগত বলে নিতাম না।ওই সিরিয়াল করতে গেছিলাম , টাকা ভালো পাব , দিদুর হাসপাতালের বাকি, ধীরে ধীরে শোধ করে দেব এই ভেবে।আমার শাশুড়ি হাসপাতালের টাকা দেন ওই দিনের পর
………সেই দিন দুর্ঘটনা না ঘটলে, হয়ত টুপুর বাড়ি আসার আগে নিজের পরিচয় দিত আপনাকে
আঁচলে মুখ ঢেকে ফুফিয়ে কাঁদছেন মনীষা।অতিন পাশে বসে
……… ভুল আপনি করেছেন , স্বীকারও করেছেন। আমাকে ওখানে চাকরি করতে পাঠায় টুপুর।
দু চোখে জলের ধারা নিয়ে জাপটে ধরলেন অতিন কে আর সোজা সম্বোধন তুই, প্রচণ্ড আবেগে
………তুমি তো জানতে অতিন , তোকে আমি অন্য চোখে দেখতাম, কেন বললি না আমায় তুই? বল , তুই কেন আমায় বললি না ? তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটত না।
………অতিন আপনাকে বলেছিল, আপনি ধরতে পারেন নি……পুকু প্রথম মুখ খুলল।
……না কোনদিন বলেনি?
………গাড়িতে টাপুর টুপুর গান, আপনাকে প্রশ্ন আপনার ভালো লাগে কিনা, আপনার মনে হয়নি, এর পিছনে কি কারন? ওই গরমে কেন টাপুর টুপুর ? ভাবলেন না কেন? আপনার মনে নেই। আমি আপনার কোম্পানির অডিট করতে গিয়ে বোম্বের বাড়িতে গেছি, আপনি রান্না করে খাইয়েছেন। আমি ৩ বার আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কলকাতায় আপনার কেউ থাকে কিনা। আপনি এরিয়ে গেছেন। একবার যদি বলতেন , হ্যাঁ আমার মেয়েরা থাকে, আমি বলতাম টাপুর আমার হবু স্ত্রী।
………বোকা আমি বেসিক্যালি। যদি বলতাম আমার মেয়েরা থাকে মায়ের কাছে, পিনাকি বুঝত , আমি ফিরে পেতাম সব। আর অতিন সব সময় এতো লঘু কথা বলে আমি বুঝতে পারিনি। তোমাকে মনে পড়েছে। সাথে আরেকজন ছিল আর তুমি তোমার বাবার কথা বলেছিলে “আই হেট হিম”, এখন মনে পড়েছে
………নিন চোখ মুছুন……বলেই টুপুর হাসতে শুরু করলো
……টুপুর হাসছিস কেন?......হাসতে হাসতে অতিন কে দেখাল, টাপুর ও হাসতে আরম্ভ করলো। মনীষা একটু অপ্রস্তুত …কি ব্যাপার?
………অতিন বলেছিল, “ আসলে অত ফাঁকা জায়গা মাথায়, তাই সিগারেটের ধোঁয়া গিয়ে আর বেরতে পারে না , অন্য কিছু ঢুকতেও দেয় না……বলে সবার হাসি। মনীষা একটু সহজ হয়ে, কপট রাগে তাকালেন অতিনের দিকে।
…… কি রকম জেদি বুঝুন, আমি ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে আসতে পারিনি বলে, ৪ বছর প্রায় খোঁজ দেয়নি। কিন্তু আমার যেখানে বাড়ি, যিনি আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, তার কাছে গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছে।একেবারে গোয়েন্দার মতো করে খুঁজে বার করেছি
………কি রকম শুনি………বিস্তারিত শুনে
………ভালো না রে, ভালো না। আমাকে দ্যাখ। নমনিও হওয়া ভালো। আমি যদি আরও ১৫-২০ দিন থাকতাম, তাহলে কি মা বা উদয়ন বের করে দিতে পারত। কথা বলতেই হত, ঘাড় ধাক্কা কোনোদিন দিত না তোদের বাবা। ‘বোকার মরণ’ আমি।
……… কেন রাগ হবে না। আমাদের তখন একমাত্র পুরুষ বন্ধু পিনাকি। আর কেউ নেই, কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। তাই সম্পর্ক রাখি নি
………চা খাবেন ? ৭ টা বাজে………টুপুর জিজ্ঞাসা করলো
………রাতে কি খাবেন?
………রাতে খাবার? জীবনে ৭ টা লুচি খেয়েছি বলে মনে পরেনা। অতখানি মোচা আর মুইঠ্যা।এতো খাবার বহু দিন খাই নি । ধুর, বাড়ির ওই অত বড় টেবিলে একা একা বসে খেতে ভালো লাগে! কিচ্ছু খাবো না। চা খাবো। অতিন আর টুপুরের শুরু কি ভাবে?