11-08-2021, 02:07 PM
#অণুগল্প
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে..." গাইতে গাইতে দরজার বাইরে চটি খুলছিল চিত্রা। আজ মনটা খুব ভাল লাগছে ওর। যদিও, বেশিরভাগ রবিবার গুলোতেই একটুও নিজের জন্য সময় বা বিশ্রাম পায় না ও, কিন্তু সেই সাথে মনটা ভাল থাকে...যে কাজে যায় ও, সেই কাজগুলো ভাল ভাবে হলে সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের গ্লানি কেটে যায় এক লহমায়।
চটি খুলতে খুলতেই দেখে আরও তিনজোড়া জুতো খুলে রাখা। বাড়িতে কেউ এসেছে! ভেবেই, মনটা আবার ভাল হয়ে গেল ওর। এই একটা বাজে রোগ... লোকের বাড়ি আসা, লোকলৌকিকতা... সব বন্ধ করে দিয়েছে। আগে মনে হত, "বাঁচা গেছে বাবা!" আর এখন, কষ্ট হয় খুব। এই অসামাজিক ভাবে বাঁচা যায়? ওর তো তাও কত জায়গায় যাবার থাকে, অফিস, কলেজ... বাবা মা একদম বন্দি হয়ে গেছেন।
গুনগুনটা থামিয়ে ঘরে ঢুকল চিত্রা। আর ঢুকেই দেখে তিনজন বসে আছেন। সামনে চায়ের কাপ আর ক'টা প্লেট রাখা। ভাল করে তাকিয়ে দেখে, ওমা, এতো ওদের বাড়ি থেকে চারটে বাড়ি পরে যাদের বাড়ি ছিল, সেই প্রদীপকাকু আর কাকিমা। সঙ্গে ওটা কে? অর্জুন নাকি? বাব্বা! এত বড় হয়ে গেছে! আগে তো গুরগুট্টি ছিল! লম্বাই হচ্ছিল না! এখন বসে থাকলেও লম্বা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
হাত পা ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, ঘরের জামা পরে বসার ঘরে এল চিত্রা। বেশ ক্লান্ত লাগছে এখন। শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মা রাগ করবেন, এভাবে গেস্টদের কুশল ও না জিজ্ঞেস করলে।
"কাকু, কাকিমা, কেমন আছ তোমরা?" একগাল হেসে বলে চিত্রা।
"আমরা ভাল আছি রে মা। আজ এদিকে এসেছিলাম, ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।" হাসতে হাসতে বললেন কাকু।
"আমাকে জিজ্ঞেস করলি না তো, কেমন আছি? সেইরকম ই হিংসুটি রয়ে গেছিস দেখছি!" শুনে তাকাল অর্জুনের দিকে চিত্রা। তারপর বলল "দেখতেই পাচ্ছি, সিঙারা খাচ্ছিস...তাই বুঝতেই পারছি দিব্যি আছিস!"
হঠাৎ করে মা বলে উঠলেন "কাকু কাকিমারা এসেছেন, একটু ভাল জামা তো পরতে পারতিস। সেই ঘরের নাইটি পরে চলে এলি!"
একটু অবাক হল শুনে চিত্রা। মা তো জানেন, সারাদিন কত পরিশ্রম হয় এইদিনগুলোতে। তাই বাড়িতে পরার জন্য নরম সূতির কিছু স্লিভলেস গাউন কিনেছে ও। দেখতেও সুন্দর সবগুলো। তাহলে মা এভাবে বললেন কেন?
তারপরই মনে পড়ল।
হাতকাটা জামা! তাই বাহু পুরোটাই উন্মুক্ত। আর সেই সাথে হাতের পোড়া দাগটাও দৃশ্যমান। গলার দাগটাও। তাই!
তিনবছর আগের কালীপুজোর আগের দিন। দরজায় প্রদীপ দেবার সময়ে অতর্কিতে আগুন লেগে গেছিল ওর গায়ে। গলা-বুক-হাত পুড়ে গেছিল বিশ্রীভাবে। ভাগ্যিস সূতির শাড়ি ছিল! তারপর চিকিৎসা হয়েছে অনেক। কিন্তু দাগটা রয়েই গেছে স্পষ্টভাবে। সেই দাগের জন্যই চিত্রা হীনমণ্যতায় ভুগেছে বহুদিন। তারপর, বুঝতে শিখেছে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বাঁচার আনন্দ। আরও বুঝতে পেরেছে, এই সামান্য কারণের জন্য ঋজু, ওর তখনকার বয়ফ্রেন্ড ওকে ডাম্প করায়। সেদিন অবশ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ও!
এত কষ্টে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ, তাকে কি ছোট করা যায়? তাই হেসে মা কে বলল "তুমি চিন্তা করো না মা, কাকু, কাকিমা তো জানেনই, আমি কুরূপা!"
মা একটু থমকে যান। মেয়ে তো কখনও এমনি বলে না। উলটে কদিন আগে ওর এক বন্ধুর ছবি মোবাইলে দেখে "ও মা, কত মোটা হয়ে গেছে!" বলায় বকা খেয়েছেন। সেটা নাকি বডি শেমিং। মেয়েটি নাকি খুব ভাল। সেটাই মেয়েটির পরিচয়। আর আজ নিজেকে কুরূপা বলছে? মন খারাপ নাকি ওর? সেই আগের মতো?
তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন "বালাই ষাট, কুরূপা কেন হবি তুই? অ্যাক্সিডেন্টে যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি, সেটাই তো অনেক! " আর তারপর ওঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন "তাই না?"
"একদম তাই, আন্টি। ইন ফ্যাক্ট, এখন তুই আরো সুন্দরী হয়েছিস। আমি সেদিন ই ফেসবুকে দেখলাম তুই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করিস নিয়মিত। এই প্যান্ডামিকে অনেকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছিস। এসব তোকে আরও সুন্দরী করেছে। আর প্লেটে সিঙারা আছে দেখেও ভাগ বসালি না, তার মানে আগের মতো ছোঁচাও নেই তুই! সব প্লাস পয়েন্ট!" হাসতে হাসতে বলে অর্জুন।
হেসে ওঠেন বাবা মায়েরাও। আর চিত্রাও।
তারপর ই খটকা লাগে।
রক্তদান শিবির!
প্যান্ডামিকে খাবার পৌঁছে দেওয়া!
ও কিভাবে জানে? ফেসবুকে তো নেই? স্টক করে নাকি ওকে? কেন?
অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকায় ও।
অর্জুন ও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
সেই দৃষ্টিতে "বঁধূ কোন আলো লাগল চোখে" র সুর লাগা আছে!
একটু হাসল চিত্রা, চিত্রাঙ্গদা।
সুরূপা চিত্রাঙ্গদা।
অর্জুন নিজেই বলল যে...
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে..." গাইতে গাইতে দরজার বাইরে চটি খুলছিল চিত্রা। আজ মনটা খুব ভাল লাগছে ওর। যদিও, বেশিরভাগ রবিবার গুলোতেই একটুও নিজের জন্য সময় বা বিশ্রাম পায় না ও, কিন্তু সেই সাথে মনটা ভাল থাকে...যে কাজে যায় ও, সেই কাজগুলো ভাল ভাবে হলে সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের গ্লানি কেটে যায় এক লহমায়।
চটি খুলতে খুলতেই দেখে আরও তিনজোড়া জুতো খুলে রাখা। বাড়িতে কেউ এসেছে! ভেবেই, মনটা আবার ভাল হয়ে গেল ওর। এই একটা বাজে রোগ... লোকের বাড়ি আসা, লোকলৌকিকতা... সব বন্ধ করে দিয়েছে। আগে মনে হত, "বাঁচা গেছে বাবা!" আর এখন, কষ্ট হয় খুব। এই অসামাজিক ভাবে বাঁচা যায়? ওর তো তাও কত জায়গায় যাবার থাকে, অফিস, কলেজ... বাবা মা একদম বন্দি হয়ে গেছেন।
গুনগুনটা থামিয়ে ঘরে ঢুকল চিত্রা। আর ঢুকেই দেখে তিনজন বসে আছেন। সামনে চায়ের কাপ আর ক'টা প্লেট রাখা। ভাল করে তাকিয়ে দেখে, ওমা, এতো ওদের বাড়ি থেকে চারটে বাড়ি পরে যাদের বাড়ি ছিল, সেই প্রদীপকাকু আর কাকিমা। সঙ্গে ওটা কে? অর্জুন নাকি? বাব্বা! এত বড় হয়ে গেছে! আগে তো গুরগুট্টি ছিল! লম্বাই হচ্ছিল না! এখন বসে থাকলেও লম্বা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
হাত পা ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, ঘরের জামা পরে বসার ঘরে এল চিত্রা। বেশ ক্লান্ত লাগছে এখন। শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মা রাগ করবেন, এভাবে গেস্টদের কুশল ও না জিজ্ঞেস করলে।
"কাকু, কাকিমা, কেমন আছ তোমরা?" একগাল হেসে বলে চিত্রা।
"আমরা ভাল আছি রে মা। আজ এদিকে এসেছিলাম, ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।" হাসতে হাসতে বললেন কাকু।
"আমাকে জিজ্ঞেস করলি না তো, কেমন আছি? সেইরকম ই হিংসুটি রয়ে গেছিস দেখছি!" শুনে তাকাল অর্জুনের দিকে চিত্রা। তারপর বলল "দেখতেই পাচ্ছি, সিঙারা খাচ্ছিস...তাই বুঝতেই পারছি দিব্যি আছিস!"
হঠাৎ করে মা বলে উঠলেন "কাকু কাকিমারা এসেছেন, একটু ভাল জামা তো পরতে পারতিস। সেই ঘরের নাইটি পরে চলে এলি!"
একটু অবাক হল শুনে চিত্রা। মা তো জানেন, সারাদিন কত পরিশ্রম হয় এইদিনগুলোতে। তাই বাড়িতে পরার জন্য নরম সূতির কিছু স্লিভলেস গাউন কিনেছে ও। দেখতেও সুন্দর সবগুলো। তাহলে মা এভাবে বললেন কেন?
তারপরই মনে পড়ল।
হাতকাটা জামা! তাই বাহু পুরোটাই উন্মুক্ত। আর সেই সাথে হাতের পোড়া দাগটাও দৃশ্যমান। গলার দাগটাও। তাই!
তিনবছর আগের কালীপুজোর আগের দিন। দরজায় প্রদীপ দেবার সময়ে অতর্কিতে আগুন লেগে গেছিল ওর গায়ে। গলা-বুক-হাত পুড়ে গেছিল বিশ্রীভাবে। ভাগ্যিস সূতির শাড়ি ছিল! তারপর চিকিৎসা হয়েছে অনেক। কিন্তু দাগটা রয়েই গেছে স্পষ্টভাবে। সেই দাগের জন্যই চিত্রা হীনমণ্যতায় ভুগেছে বহুদিন। তারপর, বুঝতে শিখেছে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বাঁচার আনন্দ। আরও বুঝতে পেরেছে, এই সামান্য কারণের জন্য ঋজু, ওর তখনকার বয়ফ্রেন্ড ওকে ডাম্প করায়। সেদিন অবশ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ও!
এত কষ্টে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ, তাকে কি ছোট করা যায়? তাই হেসে মা কে বলল "তুমি চিন্তা করো না মা, কাকু, কাকিমা তো জানেনই, আমি কুরূপা!"
মা একটু থমকে যান। মেয়ে তো কখনও এমনি বলে না। উলটে কদিন আগে ওর এক বন্ধুর ছবি মোবাইলে দেখে "ও মা, কত মোটা হয়ে গেছে!" বলায় বকা খেয়েছেন। সেটা নাকি বডি শেমিং। মেয়েটি নাকি খুব ভাল। সেটাই মেয়েটির পরিচয়। আর আজ নিজেকে কুরূপা বলছে? মন খারাপ নাকি ওর? সেই আগের মতো?
তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন "বালাই ষাট, কুরূপা কেন হবি তুই? অ্যাক্সিডেন্টে যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি, সেটাই তো অনেক! " আর তারপর ওঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন "তাই না?"
"একদম তাই, আন্টি। ইন ফ্যাক্ট, এখন তুই আরো সুন্দরী হয়েছিস। আমি সেদিন ই ফেসবুকে দেখলাম তুই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করিস নিয়মিত। এই প্যান্ডামিকে অনেকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছিস। এসব তোকে আরও সুন্দরী করেছে। আর প্লেটে সিঙারা আছে দেখেও ভাগ বসালি না, তার মানে আগের মতো ছোঁচাও নেই তুই! সব প্লাস পয়েন্ট!" হাসতে হাসতে বলে অর্জুন।
হেসে ওঠেন বাবা মায়েরাও। আর চিত্রাও।
তারপর ই খটকা লাগে।
রক্তদান শিবির!
প্যান্ডামিকে খাবার পৌঁছে দেওয়া!
ও কিভাবে জানে? ফেসবুকে তো নেই? স্টক করে নাকি ওকে? কেন?
অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকায় ও।
অর্জুন ও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
সেই দৃষ্টিতে "বঁধূ কোন আলো লাগল চোখে" র সুর লাগা আছে!
একটু হাসল চিত্রা, চিত্রাঙ্গদা।
সুরূপা চিত্রাঙ্গদা।
অর্জুন নিজেই বলল যে...