09-08-2021, 03:34 PM
#অন্য_রূপকথা
আজ সকালে কিন্তু মেঘ ছিল না একটুও! কিন্তু, বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে মেঘলা, আর তারপর ই, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।
তা, বিকেলে বৃষ্টি থামার পরে খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই অ্যাপ থেকে অর্ডার করে দিলাম আমার প্রিয়, টেন্ডার কোকোনাট আইসক্রিম। ডেলিভারি দিতে আসা ছেলেটিকে "ডানদিকের গলি", "শেষ বাড়ি", "তিনতলা" এসব আর পরে তিনি, মানে, আইসক্রিম এলেন! বেশ খানিকটা খাবার পরেই মনে পড়ল, কাল ই আমার এক বন্ধু আমাকে রোজ অন্তত মিনিট পনেরো- কুড়ি হাঁটতে বলেছে? শরীর আর মন ভাল রাখার জন্য? তাই তাড়াতাড়ি আইসক্রিম সরিয়ে, অফিসে 'ব্রেক টাইম' দেখিয়ে, জুতো গলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আবার মনে মনে ভাবছিলাম "কাল থেকে গেলেও হতো! আজ এমনিতেই প্যাচপ্যাচ করছে রাস্তা!"
এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস বেরিয়েছিলাম!
বাড়ি থেকে একটু এগিয়েই দেখি রাস্তায় আমাকে যে ছেলেটি ডেলিভারি দিতে এসেছিল, সে বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে। পিঠে যে ব্যাগ থাকে, যার মধ্যে খাবার থাকে? সেটা বাইকের সিটের ওপর রাখা।
ভাবলাম, ছেলেটি বোধহয় আবার কোনো ঠিকানা খুঁজছে। প্রায় এক দশক এই পাড়ার বাসিন্দা হবার সুবাদে আমি মোটামুটি চিনি জায়গাটা। তাই, হেল্প করার জন্য এগিয়ে গিয়ে বললাম, "ভাই, কোনো ঠিকানা খুঁজছ?"
একটু চমকেই ঘুরে থাকাল ছেলেটি।
হাতে একটা খোলা টিফিন বাক্স...তাতে রুটি দেখতে পেলাম!
ছেলেটি বোধহয় আমাকে চিনতে পারল। মাস্ক ছিল মুখে, কিন্তু মিনিট পাঁচ সাতেক আগেই তো ডেলিভারি দিয়েছে...জামাকাপড় ও এক আছে আমার। তাই একটু কেমন হাসল। অপ্রস্তুত হাসি। তারপর বলল "না ম্যাম, আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি। এই বৃষ্টিতেই জল জমে গেছে অনেক জায়গায়। আটকে গেছিলাম রাস্তায়। তাই এখন একটু খাচ্ছি।"
কিছু বলব না ভেবেও বলে ফেললাম "সেকি! এত দেরিতে! পাঁচটা বাজে প্রায়! কোথাও একটা খেয়ে নিতে পারতে আগে!"
ছেলেটি চুপ করে রইল কয়েক সেকেন্ড। তারপর বলল "ম্যাম, আমার মা বানিয়ে দিয়েছেন কষ্ট করে। এসব না খেয়ে অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। তাই ভাত খেয়েই বের হই বাড়ি থেকে। আর দেরি হলেও এইভাবেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেয়ে নিই। আসলে একদিন মা থাকবেন না...কিন্তু এইদিন গুলোই থেকে যাবে... তখন যাতে কষ্ট না হয়, তাই আর কি!"
থমকে গেলাম। আরও একবার।
এই আমাদের ভারতবর্ষ। এই আমাদের গর্বের দেশ। মায়ের মমতা আর ভালবাসা দিয়ে মাখা শুকনো রুটিও অমৃতসমান। এই স্মৃতি টুকুর মধ্যেও শান্তি আছে। ভালবাসার আহ্বান আছে। এইটুকুই যে সম্পদ আমাদের।
স্বামীজীর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী আমি। প্রতিদিন খাবার পরম ব্রহ্মকে নিবেদন করে মুখে তুলি, মনে মনে, নিজস্ব সুরে মন্ত্র পড়ি
"ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্মহবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্৷
ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্মসমাধিনা৷৷"
আর আজ, এই বৃষ্টিস্নাত... না না, প্যাচপেচে দিনে, তোবড়ানো টিফিন বাক্সের শুকনো রুটি হাতে হাড় জিরজিরে, মাথায় প্লাস্টিক বাঁধা ছেলেটিকে দেখে বুঝতে পারলাম, এই যে খাদ্যের প্রতি মায়াটুকু, মায়ের প্রতি মায়াটুকু, এটাই আমাদের আসল চালিকাশক্তি। কারণ খাবার মানে শুধু অন্নকণাই না, তাতে ভালবাসা আর তিতিক্ষা দুই ই আছে সমমাত্রায়।
আজ আমি চোখের সামনে যেন সেই 'ব্রহ্ম' কে দেখতে পেলাম।
ভাল দিন! আজ বড় ভাল দিন! মন ভাল লাগায় টইটুম্বুর হয়ে যাবার দিন।
আজ সকালে কিন্তু মেঘ ছিল না একটুও! কিন্তু, বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে মেঘলা, আর তারপর ই, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।
তা, বিকেলে বৃষ্টি থামার পরে খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই অ্যাপ থেকে অর্ডার করে দিলাম আমার প্রিয়, টেন্ডার কোকোনাট আইসক্রিম। ডেলিভারি দিতে আসা ছেলেটিকে "ডানদিকের গলি", "শেষ বাড়ি", "তিনতলা" এসব আর পরে তিনি, মানে, আইসক্রিম এলেন! বেশ খানিকটা খাবার পরেই মনে পড়ল, কাল ই আমার এক বন্ধু আমাকে রোজ অন্তত মিনিট পনেরো- কুড়ি হাঁটতে বলেছে? শরীর আর মন ভাল রাখার জন্য? তাই তাড়াতাড়ি আইসক্রিম সরিয়ে, অফিসে 'ব্রেক টাইম' দেখিয়ে, জুতো গলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আবার মনে মনে ভাবছিলাম "কাল থেকে গেলেও হতো! আজ এমনিতেই প্যাচপ্যাচ করছে রাস্তা!"
এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস বেরিয়েছিলাম!
বাড়ি থেকে একটু এগিয়েই দেখি রাস্তায় আমাকে যে ছেলেটি ডেলিভারি দিতে এসেছিল, সে বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে। পিঠে যে ব্যাগ থাকে, যার মধ্যে খাবার থাকে? সেটা বাইকের সিটের ওপর রাখা।
ভাবলাম, ছেলেটি বোধহয় আবার কোনো ঠিকানা খুঁজছে। প্রায় এক দশক এই পাড়ার বাসিন্দা হবার সুবাদে আমি মোটামুটি চিনি জায়গাটা। তাই, হেল্প করার জন্য এগিয়ে গিয়ে বললাম, "ভাই, কোনো ঠিকানা খুঁজছ?"
একটু চমকেই ঘুরে থাকাল ছেলেটি।
হাতে একটা খোলা টিফিন বাক্স...তাতে রুটি দেখতে পেলাম!
ছেলেটি বোধহয় আমাকে চিনতে পারল। মাস্ক ছিল মুখে, কিন্তু মিনিট পাঁচ সাতেক আগেই তো ডেলিভারি দিয়েছে...জামাকাপড় ও এক আছে আমার। তাই একটু কেমন হাসল। অপ্রস্তুত হাসি। তারপর বলল "না ম্যাম, আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি। এই বৃষ্টিতেই জল জমে গেছে অনেক জায়গায়। আটকে গেছিলাম রাস্তায়। তাই এখন একটু খাচ্ছি।"
কিছু বলব না ভেবেও বলে ফেললাম "সেকি! এত দেরিতে! পাঁচটা বাজে প্রায়! কোথাও একটা খেয়ে নিতে পারতে আগে!"
ছেলেটি চুপ করে রইল কয়েক সেকেন্ড। তারপর বলল "ম্যাম, আমার মা বানিয়ে দিয়েছেন কষ্ট করে। এসব না খেয়ে অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। তাই ভাত খেয়েই বের হই বাড়ি থেকে। আর দেরি হলেও এইভাবেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেয়ে নিই। আসলে একদিন মা থাকবেন না...কিন্তু এইদিন গুলোই থেকে যাবে... তখন যাতে কষ্ট না হয়, তাই আর কি!"
থমকে গেলাম। আরও একবার।
এই আমাদের ভারতবর্ষ। এই আমাদের গর্বের দেশ। মায়ের মমতা আর ভালবাসা দিয়ে মাখা শুকনো রুটিও অমৃতসমান। এই স্মৃতি টুকুর মধ্যেও শান্তি আছে। ভালবাসার আহ্বান আছে। এইটুকুই যে সম্পদ আমাদের।
স্বামীজীর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী আমি। প্রতিদিন খাবার পরম ব্রহ্মকে নিবেদন করে মুখে তুলি, মনে মনে, নিজস্ব সুরে মন্ত্র পড়ি
"ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্মহবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্৷
ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্মসমাধিনা৷৷"
আর আজ, এই বৃষ্টিস্নাত... না না, প্যাচপেচে দিনে, তোবড়ানো টিফিন বাক্সের শুকনো রুটি হাতে হাড় জিরজিরে, মাথায় প্লাস্টিক বাঁধা ছেলেটিকে দেখে বুঝতে পারলাম, এই যে খাদ্যের প্রতি মায়াটুকু, মায়ের প্রতি মায়াটুকু, এটাই আমাদের আসল চালিকাশক্তি। কারণ খাবার মানে শুধু অন্নকণাই না, তাতে ভালবাসা আর তিতিক্ষা দুই ই আছে সমমাত্রায়।
আজ আমি চোখের সামনে যেন সেই 'ব্রহ্ম' কে দেখতে পেলাম।
ভাল দিন! আজ বড় ভাল দিন! মন ভাল লাগায় টইটুম্বুর হয়ে যাবার দিন।