Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.07 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller রক্তমুখী নীলা (সমাপ্ত)
#80
কিছুক্ষন সব নিস্তব্ধ। তারপর আস্তে আস্তে মুখ তুলে চাইলো মুক্তর মা। আমার দিকে চেয়ে বললো -- আমার সাথে আসো।
কাছে এগিয়ে গেলাম। ওনার পিছন পিছন ঘরে প্রবেশ করলাম। বিছানার ওপর মুক্ত শুয়ে আছে। ঘুমাচ্ছে কি। কিন্তু বুকের কাছটা এত চাপচাপ রক্ত কেন? 
-- মিতুকে ওখানে শুইয়ে দাও। বললো মুক্তর মা।
আসতে করে মিত্রাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সপ্রশ্ন নেত্রে ওনার দিকে তাকালাম। খেয়াল করলাম একভাবে দুজনের দিকে দেখে চলেছে। 
আমার দিকে ঘার ঘুরিয়ে বলতে আরম্ভ করলো -- ছেলেটা খুব কষ্ট পেলো জানো রাজ, আমার এই অবস্থাটা ও সহ্য করতে পারলোনা। আমায় ছেরে চলে গেলো ও। ছেলেকে হারালাম কিন্তু মেয়েকে হারাতে পারবোনা। সবটা নাটক হলেও মানুষ করার সময় মায়ের স্নেহে কমতি রাখিনি আমি। পেটে ধরিনি কিন্তু ও আমার মেয়ে। ওই শয়তানটার অনেক কথা শুনেছি কিন্তু আজ, আজ আমি মুক্ত। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওনার বুক থেকে।

বড় আলমাড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো মুক্তর মা। পাল্লা খুলে কিছু বার করে আমার দিকে এগিয়ে এলো। হাতে সেই বাক্স।
-- এটা তোমার সম্পত্তি। এটা রাখো। আর এই নাও ফিরে যাও বাবা মার কাছে।
হাতে একতারা টাকা গুঁজে দিলো। 
-- শুধু একটা কথা দাও আমায়, কোনদিন আমার মেয়েকে কষ্ট দেবেনা।
মাথা নেড়ে সম্মত্তি জানালাম।
-- যাও এবার তোমরা। তোমাদের জীবন সুখী হোক। 
বাক্স থেকে নীলাটা বার করে পকেটে গুঁজে নিলাম সাথে টাকাটাও। মিত্রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে। সিঁড়ির কাছে পৌছে ঘর থেকে ভেসে আসা দুম করে একটা শব্দে কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম। চোখ থেকে একফোটা জল বেরিয়ে এলো আমার। আর দাঁড়ালাম না, সামনে এগিয়ে গেলাম।

ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পর দুদিন কেটে গেছে। মিত্রার একটু চিকিৎসার জন্য এই বিলম্ব। গোয়া আমার প্রিয় জায়গা কিন্তু এই ঘটনার পর আমি আর কোনদিন এখানে আসবোনা। আর নীলা? গোয়ার সমুদ্রে ওটা নিক্ষেপ করে মন থেকে চেয়েছিলাম ও জিনিস যেন কারোর হাতে না যায়। 


তারপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ দশটা বছর বাবা মা আমি মিত্রা এই আমাদের সংসার। এই কবছরে আমার জীবন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। কোন কাজেই বিফল হইনি। যে কাজে হাত দিয়েছি সে যতই শক্ত হোকনা কেন আমি সফল হয়েছি। সংসারে আমি এখন একজন সন্মানীয় ব্যাক্তি। 
শুধু একটা ব্যাপারে একটু অসুবিধা এই দশ বছরে প্রতিটা রাতেই সেই এক স্বপ্ন। বহুবার বহুভাবে লেখাটা বোঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। 


এতকিছু লিখলাম হয়তো আমার কথা অনেকে বিশ্বাস করবে না কিন্তু যেটা সত্যি সেটা বললাম। বাকি কথাটাও বলি, আজ আমার জীবনের শ্রেষ্ট দিন। শুধু যে আজকে আমি বাবা হয়েছি তা নয় আরো একটা একটা কারন আছে।

রাতে শুয়ে সেই এক স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ মাথায় বিদ্যুত খেলে গেলো। ধাঁধার উত্তরটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেলো। লেখাটা ছিলো ক(ও)+ম(অ)+র(অ) ব(অ)+ন(ধ+অ)+ন(ঈ)

দাদু এই লেখাটা নিজে লিখে পাথরে খোদাই করে গেছে। প্রতি রাতে স্বপ্নে এটাকেই দেখিয়েছে। আজ এর অর্থ আমার কাছে পরিষ্কার
ক(ও)=কো, ম(অ)=ম, র(অ)=র
শব্দটা কোমর। ঠিক একই ভাবে 
ব(অ)=ব, ন(ধ+অ)=ন্ধ, ন(ঈ)=নী
মানে বন্ধনী। দুটো শব্দ মিলিয়ে কোমর বন্ধনী। ছোটবেলায় আমার কোমরে সোনার চেনের সাথে একটা লকেট ঝুলে থাকতো এখনো আছে তবে হাতে। আমি ওটাকে আমার লাকি লকেট মনে করি। কোনদিন খুলতাম না। তবে কি এই সেই কোমর বন্ধনী যার কথা উল্লেখ করেছে দাদু। ছুটে গেলাম মায়ের কাছে মায়ের কথায় নিশ্চিন্ত হলাম। হ্যাঁ, দাদুই ছোটবেলায় লকেটটা আমার কোমরে বেঁধে দিয়েছিলেন। হাত থেকে লকেটটা খুলে নিয়ে আসলাম চোখের সামনে, লকেটটা বেশ বড়ো সড়ো মানতেই হবে। চটপট লকেটটা খুলে মোমের ভিতর থেকে যেটা বের করে আনলাম তা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এ যে সেই নীলা। হঠাৎ মিত্রার চিতকারে দৌড়ে ঘরে গেলাম। প্রসব যন্ত্রনায় ছটপট করছে মিত্রা। হাসপাতালে ভর্তি করে আরো একবার দেখলাম। হ্যাঁ সেই নীলা, ভিতর থেকে আগুনের ছটা বেরোচ্ছে। হঠাৎ সে আলো নিভে গেলো, প্রথমটা অবাক হয়ে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স বেরিয়ে এসে আমার ছেলে হওয়ার খবর শোনালো। মাথার মধ্যে চিরিক করে উঠলো। তবে কি? দৌড়ে ভিতরে গেলাম। ছেলের কাছে এগিয়ে হাতে নীলাটা ঠেকাতেই আবার সেই আগুনের ছটা প্রকাশ পেলো। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।

এটাই যদি আসল সেই শক্তিশালী নীলা হয় তবে যেটা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম সেটা  তবে কি ?

উত্তরটা না হয় আপনারাই ভেবে নিন। ধন্যবাদ।

সমাপ্ত
[+] 5 users Like HASIR RAJA 19's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রক্তমুখী নীলা - by HASIR RAJA 19 - 07-08-2021, 02:29 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)