Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
(07-08-2021, 11:41 AM)ddey333 Wrote: #আলোর_ঠিকানা

#রূপান্বিতা



মাথায় পেঁচিয়ে রাখা ভিজে গামছাটা খুলে চুল মুছতে মুছতে আন্নার দিকে তাকালো চামেলি। চুল আগের চেয়ে পাতলা হয়েছে অনেক, তাও গোছ আছে বেশ! চুল মুছে, গামছাটা নিংড়াতে নিংড়াতে দেখে আন্না ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, মুখে একটা কেমন হাসি!

"কি রে, হাসছিস কেন?"
"তোর 'সে' এয়েচে রে...আজ আবার বাজারের ব্যাগ এনেচে...জানি না সেই ব্যাগে কি আচে..."আন্নার হাসি আর থামেই না।
"কোথায় তিনি"?
"তোর ঘরে...হা হা, আমাকে আবার জিজ্ঞেস করল 'তোমার দিদির ঘরে একটু বসি?' আমার জাঁইবাবু!" অশ্লীল ভাবে হাসল আন্না।
দড়িতে গামছা আর কাচা শাড়ি জামা গুলো মেলতে মেলতে একটু থমকে গেল চামেলি।
এই ' মাস হলো লোকটা আসছে ওর ঘরে। রোগাসোগা মানুষ, কেমন ভিজে বিড়ালের মতো চেহারা। দেখে মনে হয় না, এমন মানুষ যে এই পাড়ায় আসতে পারে। কিন্তু এই তিন চার বছরে, মানে যবে থেকে এখানে আছে চামেলি, এরকম যে কত দেখল! দেখে মনে হবে ছেলে-মেয়ে-সংসার ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না, এদিকে এখানে আসা চাই! তা বলতে নেই, এমনিধারা লোকেদের জন্যই তো চামেলিদের পেট ভরে। তাই, এই লোকটাকে প্রথমদিন দেখেও তেমনি মিটমিটে শয়তান বলে মনে হয়েছিল। তাই অভ্যাস মতো মোহিনী হেসে এগিয়ে গেছিল লোকটার দিকে। আর, ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথা নীচু করে ফেলেছিল লোকটা।
"কি গো বাবু, লজ্জা পেলে? নাকি আমাকে পছন্দ হচ্ছে না?" স্বভাব মতো হেসে হেসে বলেছিল চামেলি। সেই তো শাড়ি খুলবে, তার জন্য কত ঢং!
"...আপনার নাম কী?" কেমন তোতলাতে তোতলাতে বলেছিল লোকটা।
শুনে খিলখিল করে হেসে উঠেছিল চামেলি। তারপর বলেছিল "রাতের পরীদের আবার নাম! তা বাবু, তোমার কোন হিরোইন পছন্দ? দীপিকা না করিনা না ক্যাটরিনা? সেই নামটাই আমার ধরে নাও!"
ওর কথা শুনে আরো চুপসে গেছিল লোকটা।
ততক্ষণে নিজেই শাড়ি খুলতে শুরু করে দিয়েছিল চামেলি। সবে সন্ধ্যে, একে মিটিয়ে নিলে আরো এক -দু'জনের জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে।
"শুনুন, - আমি এসব করতে আসিনি...আপনি আমাকে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন?" যেন অনেক সাহস নিয়ে বলেছিল লোকটি।
"মাথায় হাত বুলিয়ে মানে!" অবাক হয়ে গেছিল চামেলি।
"আমি খুব একা...বিয়ে থা করিনি, সামান্য সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করি, রাতে ডিউটি থাকে। মা চলে গেলেন গেল বছর..সেই থেকে বাড়ি যেতেও ইচ্ছে করে না..ভাই ভাই বৌ বিরক্ত হয় আমি গেলে, বুঝতে পারি..." এসব রামকাহিনীতে আগ্রহ নেই চামেলির, তবু কেন জানি না শুনে কষ্ট হচ্ছিল বড্ড। আর কেন জানি না, নিজের কোল পেতে দিয়েছিল সেই অচেনা মানুষটির জন্য।
তারপর থেকে এই মাস তিনেকের মধ্যে বার চারেক এসেছে লোকটা ওর ঘরে। কোনোবার খালি হাতে আসেনি। একবার কানের গলার সেট,যেরকম ফুটপাতে পাওয়া যায়, তেমন এনেছে, একবার একটা 'টা টিপের পাতা। এসব দেখে হাসতে গিয়েও হাসেনি চামেলি। লোকটা ওর যা পাওনা সেটা ঠিক দিয়ে যায়, তবে কোনোবার হাতে দেয় না, বালিশের নিচে রেখে যায়। প্রথম দু বার গুনে নিয়েছিল চামেলি। তিনবারের বার থেকে আর গোনেনি। ইচ্ছে করেনি। মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া, অফিসের কোন বাবু কী বললেন, সেইসব গল্প শোনার জন্য টাকা নিয়ে আবার সেই টাকা কি গোনা যায়? আর, লোকটা আসেও দুপুর দুপুর বা বিকেল বিকেল, এখান থেকেই কাজে যায়।"আবার আসব তাড়াতাড়ি" বলে হাত নেড়ে বেরিয়ে যায়... দেখে কেমন মায়া হয় চামেলির। কেন কে জানে, সেই ফেলে আসা জীবনের কথা মনে পড়ে। এভাবেই তো সংসারী মানুষেরা অফিস কাছারি যায়...
নিজের একচিলতে ঘরটায় ঢুকে চামেলি দেখে ওর তক্তপোষে বসে আছে লোকটা। ফ্যান চলছে, তাও ঘাম পড়ছে কপাল, গলা গড়িয়ে। ওকে দেখেই একগাল হাসল লোকটা।
"তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ" কেমন ঘোরলাগা আওয়াজ।
শুনে লজ্জা পেল চামেলি। এটা দুপুরে খাওয়া দাওয়ার সময়। স্নান করে বেরিয়েছে সবে। শড়িটাও এলোথেলো করে পরা।
"কি যে বলেন?"
"সত্যি বলছি চামেলি...আজ তোমাকে...মা মা লাগছে...এইভাবে শাড়ি পরা, ভিজে চুল..." বলতে বলতেই থেমে গেল লোকটি। যেন বুঝে গেল 'মা' আর 'গনিকা' এক না!
"তা আজ এইসময়ে কী মনে করে?" ইচ্ছে করেই একটু রুক্ষ হলো ও।
"আজ...ইয়ে, তোমাকে একটা জিনিস দেবার ছিল...সামনে পুজো...এই যে এটা...জানি না, তোমার পছন্দ হবে কিনা..."
তাকিয়ে দেখে একটা লাল সিন্থেটিক সিল্কের শাড়ি। সাথে লাল টিপ আর একটা আলতার শিশি।
লাজুক মুখে ওর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলছে "তুমি এত সুন্দর...শাড়ি তো বুঝিনা আমি, তবে এই শাড়িটা দেখে মনে হলো, তোমাকে পরলে মা দুগ্গার মতোই লাগবে...তাই আর কী...আর টিপটাও, আলতাটা...ইয়ে মানে..."
"আপনি বিয়ে করেননি কেন,আর আপনি আমার কাছেই আসেন কেন? এত জিনিস নিয়ে?" কোনোদিন কাউকে ব্যক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করে না, কিন্তু আজ করেই ফেলল চামেলি।
লোকটা একটু চুপ করে থেকে বলে উঠল "কেউ তো দিলই না বিয়ে! আমি বোকা মানুষ, যা মাইনে পাই, তাতে সংসার করার উপায় নেই...কেউ ভাবেইনি আমার একটা সুখ দুঃখের কথা বলার কেউ লাগতে পারে। তাও, মা যদ্দিন ছিলেন...মাকে বলতাম...তারপর তো মা চলে গেলেন, কথা বলার কেউ নেই, যে মেসে থাকি, সেখানের একজন বলায় এখানে এলাম... তোমার কাছেই প্রথম এসেছি...তুমি কোলে শুতে দিলে, সব কথা শুনলে...তোমার কাছে এলে মনে হয় আমার কলিগদের মতো,ওরা যেমন সপ্তায় সপ্তায় বাড়ি যায়, বৌ, বাচ্চার কাছে, তেমনি আমিও এসেছি তোমার কাছে..."
শুনতে শুনতে সবকিছু ঝাপসা দেখছিল চামেলি। বোকা কোথায়, সামনে তো একজন গোটা মানুষ, যে ওকে নিছক বাজারি মেয়ে না ভেবে...স্ত্রীয়ের মতো কেউ ভেবেছে! আর একসময়ে যার হাত ধরে ঘর ছেড়েছিল, সে এখানে বিক্রি করে দিয়ে গেছিল...
"সুন্দর হয়েছে শাড়ি, তুমি একটু বসো, আমি একটু ভাত বেড়ে আনি, দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি নিশ্চয়ই? এসো, আগে খেয়ে নাও,,তারপর তোমায় মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব..." বলতে বলতে ছোট্ট বারান্দায় চলে যায় চামেলি। কলাইয়ের থালায় ভাত, ডাল আর শাকভাজা বাড়ে...আজ ওঁর সাথে এক থালাতেই খাবে চামেলি...না না, চামেলি না, কৃষ্ণা...সেই কৃষ্ণা, সংসার করবে বলে ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে যার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে গেছে...
আর...ঘরে
একটু আলো দেখা যাচ্ছে... ভালোবাসার ওম আছে সে আলোতে...।।


কিছু গল্প হয় যেগুলো সোজা বুকের বাঁদিকে মোচড় দিয়ে যায়... এই কাহিনী.... কাহিনী? নাকি বাস্তব? সেইরকমই ❤

রিপুর থেকে বেরিয়ে এই পুরুষ নারী শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার কাঙাল. অসাধারণ.....

বন্ধ মনের দুয়ার দিয়েছি খুলে
এসেছে ফাগুন হওয়া,
এখন সবই দেবার পালা
নেই তো কিছু চাওয়া
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by Baban - 07-08-2021, 11:55 AM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)