31-07-2021, 05:31 PM
ন’টা বাজতে পাঁচ। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। প্রত্যেকেই যেন আগের থেকে একটু বেশিই সচল এই মুহুর্তে। আর ঠিক পাঁচ মিনিট পরই ব্যাঙ্কের সদর দরজা খুলে যাবে কাস্টমারদের কাছে। তাই তার আগে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক জায়গায় থাকা প্রয়োজন। ট্রেসির সামনের জানলার ফাঁক দিয়ে নজর গেল বাইরে, সেখানে কাস্টমাররা এই বৃষ্টির মধ্যেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যাঙ্কের দরজা খোলার অপেক্ষায়।
ব্যাঙ্কের গার্ড নতুন ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ আর উইথড্রয়াল স্লিপগুলো হলঘরের মাঝের টেবিলের ওপর নির্দিষ্ট মেটাল ট্রেতে গুছিয়ে রেখে দিচ্ছে। সাধারণত যারা নিয়মিত কাস্টমার, তাদেরকে ব্যাঙ্ক থেকেই পার্সোনাল ম্যাগনেটাইজড কোড দেওয়া ডিপোজিট স্লিপ দেওয়া হয়। তাতে সেই স্লিপ কাস্টমার জমা করতে সাথে সাথে কম্পুউটার সেই কাস্টমারের অ্যাকাউন্ট চিনে নিতে পারে। কিন্তু কখনো সখনও কাস্টমাররা ভুলে যায় নিজেদের ডিপোজিট স্লিপ আনতে, তখন তারা এই ট্রেতে রাখা ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ ভরে জমা করে কাউন্টারে। সেই জন্যই এই স্লিপগুলো রাখা।
গার্ড আর একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। টিক টিক করে ঘন্টার কাঁটাটা সরে সরে যাচ্ছে নয়ের ঘরের দিকে। ঠিক নটা বাজতেই সে এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুলে বড় ভারি পাল্লাদুটো দুপাশে সরিয়ে দিল প্রতিদিনকার মত।
সেই দিনের মত ব্যাঙ্কিং শুরু হল।
******
আগামী কয়এক ঘন্টা ট্রেসির মাথা তোলার সময় থাকে না। প্রতিটা ট্রান্সফার বার দুয়েক করে চেক করতে হয় তাতে সঠিক কোড আছে কিনা। যখন কোন অ্যাকাউন্ট ডেবিট করা হয়, তাকে সেই অ্যাকাউন্টের নাম্বার, জমা রাশি আর যে ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার হচ্ছে সেই ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোড লিখে তবে টাকা ট্রান্সফার করতে পারা যায়। প্রতিটা ব্যাঙ্কেরই নিজস্ব কোড নাম্বার আছে, আর সেই কোড নাম্বারগুলো একটা বিশেষ গোপনীয় ডায়রেক্টরিতে লিপিবন্ধ করা রয়েছে।
সকালটা কোথা দিয়ে যেন উড়ে গেল কাজের চাপে। ট্রেসি ঠিক করে রেখেছিল দুপুরে লাঞ্চএর সময় বেরিয়ে একবার চুলটাকে সেট করে আসবে। সেই মত ল্যারি স্টেল্লা বট্টেতে অ্যাপয়েন্টমেন্টও করে রেখেছে। ওখানে গেলে একটু বেশিই পয়সা লাগে ঠিকই কিন্তু তবুও, একবার গেলে বোঝা যায় এরা কত তফাত অন্যান্য হেয়ার ড্রেসারদের থেকে। ট্রেসির ইচ্ছা আছে আজ চার্লসের বাবা মার সামনে নিজের সবথেকে ভালোটা তুলে ধরার। ওনারা চার্লসের জন্য কাকে বেছে রেখেছেন জানা নেই, কিন্তু একটা ব্যাপারে ট্রেসি সুনিশ্চিত, ওর মত সুখি এই পৃথিবীতে কেউ চার্লসকে করতে পারবে না। করতে পারে না।
ঠিক ১টার সময়, তখন সবে ট্রেসি রেনকোটটা গায়ে দিয়ে তৈরী হচ্ছিল বেরুবার জন্য, ক্ল্যারেন্স ডেসমন্ড তাকে তার অফিসে ডেকে পাঠালো। ডেসমন্ডের অফিসে একটা আলাদা ভাবমুর্তি রয়েছে। সব সময় ফিটফাট, গুরুগম্ভীর। সাধারণত টিভিতে কোন কমার্শিয়াল অ্যাড হলে সেখানে ডেসমন্ডই প্রধান বক্তা হন। ওনার চারপাশে একটা কেমন সর্বদাই একটা কর্তৃত্বের বাতাবরণ ঘিরে থাকে। এমন একজন যাকে দেখলেই যেন মনে হয় না, একে সব ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায়, ভরসা করা যায়।
‘বসো ট্রেসি...’ সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বসতে বললেন ট্রেসিকে। উনি আবার প্রত্যেক কর্মচারীর প্রথম নাম ধরেই ডাকতে ভালোবাসেন। তাতে বেশ একটা গর্বও অনুভব করেন মনে মনে। ‘বাইরে আবহায়য়া কি জঘন্য, না?’
‘হ্যা, ঠিক বলেছেন।’ চেয়ারে বসতে বসতে উত্তর দিল ট্রেসি।
‘তাও দেখ, এই ওয়েদারেও লোকেদের ব্যাঙ্কে আসতে হয়, কি খারাপ, না?’ ভদ্রলোকের মনে যে আসলে অন্য কথা রয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। কিছু না বলে চুপ করে আসল কথার অপেক্ষা করতে লাগল সে। খানিক পর ডেসমন্ড বলেই ফেললেন, ‘আমি জানি খুব শিঘ্রই তুমি এবং চার্লস স্ট্যানহোপ বিয়ে করতে চলেছ।’
কথাটা শুনে একটু অবাকই হয়ে গেল ট্রেসি। ‘কই, আমরা তো এই ব্যাপারটা নিয়ে কোন অ্যানাউন্সমেন্ট করি নি!’
শুনে মুচকি হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিলেন, ‘সেটা তোমাকে মুখে না বললেও হবে। আসলে কি জানো তো স্ট্যানহোপরা নিজেরাই খবর তৈরী করে। সত্যি, বিশ্বাস কর, খুব খুশি হয়েছি শুনে। আশা করি তোমাদের মধুচন্দ্রিমার পর তুমি আবার এখানেই কাজে যোগদান করবে, তাই না? আমরা কিন্তু তোমার মত একজন যোগ্য কর্মচারীকে কোন মতেই হারাতে চাইনা। তুমি আমাদের ব্যাঙ্কের সম্পদ।’
ট্রেসি মাথা নিচু করে উত্তর দিল, ‘হ্যা, মানে চার্লসের সাথে আমার সেই রকমই কথা হয়েছে ইতিমধ্যেই। চার্লসেরও কোন দ্বিমত নেই আমার কাজ করা নিয়ে। সে খুশি মনেই আমার বিয়ের পর কাজ করা মেনে নিয়েছে।’
শুনে একগাল হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিল, ‘যাক, তাহলে তো আর কোন চিন্তাই নেই।’ স্ট্যান্সহোপ এন্ড সন্স্, ফিনানশিয়াল কমিউনিটিতে একটা বিশাল নাম, তাই তাদের যদি একটা বেশ বড়সড় অ্যাকাউন্ট ট্রেসির দৌলতে এই ব্যাঙ্কে খোলানো যায়, তাহলে তো কোন কথাই নেই, আর সেই জন্য ডেসমন্ডের খুশি হওয়াও স্বাভাবিক। চেয়ারে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে ট্রেসির উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘তোমরা মধুচন্দ্রিমা করে ফিরে এস, তারপর দেখো একটা বিরাট প্রমোশন তোমার জন্য তুলে রেখেছি আমি। তাতে তোমার পে প্যাকেজও যথেষ্ট বেড়ে যাবে।’
‘ওহ, অনেক ধন্যবাদ। সত্যি, খুব ভালো খবর এটা।’ বেশ খুশি মনেই উত্তর দিল ট্রেসি। ‘আজ গিয়েই খবরটা চার্লসকে দিতে হবে’, মনে মনে ভাবল সে। ‘উফ, ভগবান যেন সমস্ত ভালো খবরগুলোকে একসাথে সাজিয়ে রেখেছে আমার জন্য, বোধহয় আমাকে খুশি দেখার জন্যই।’
******
ব্যাঙ্কের গার্ড নতুন ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ আর উইথড্রয়াল স্লিপগুলো হলঘরের মাঝের টেবিলের ওপর নির্দিষ্ট মেটাল ট্রেতে গুছিয়ে রেখে দিচ্ছে। সাধারণত যারা নিয়মিত কাস্টমার, তাদেরকে ব্যাঙ্ক থেকেই পার্সোনাল ম্যাগনেটাইজড কোড দেওয়া ডিপোজিট স্লিপ দেওয়া হয়। তাতে সেই স্লিপ কাস্টমার জমা করতে সাথে সাথে কম্পুউটার সেই কাস্টমারের অ্যাকাউন্ট চিনে নিতে পারে। কিন্তু কখনো সখনও কাস্টমাররা ভুলে যায় নিজেদের ডিপোজিট স্লিপ আনতে, তখন তারা এই ট্রেতে রাখা ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ ভরে জমা করে কাউন্টারে। সেই জন্যই এই স্লিপগুলো রাখা।
গার্ড আর একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। টিক টিক করে ঘন্টার কাঁটাটা সরে সরে যাচ্ছে নয়ের ঘরের দিকে। ঠিক নটা বাজতেই সে এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুলে বড় ভারি পাল্লাদুটো দুপাশে সরিয়ে দিল প্রতিদিনকার মত।
সেই দিনের মত ব্যাঙ্কিং শুরু হল।
******
আগামী কয়এক ঘন্টা ট্রেসির মাথা তোলার সময় থাকে না। প্রতিটা ট্রান্সফার বার দুয়েক করে চেক করতে হয় তাতে সঠিক কোড আছে কিনা। যখন কোন অ্যাকাউন্ট ডেবিট করা হয়, তাকে সেই অ্যাকাউন্টের নাম্বার, জমা রাশি আর যে ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার হচ্ছে সেই ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোড লিখে তবে টাকা ট্রান্সফার করতে পারা যায়। প্রতিটা ব্যাঙ্কেরই নিজস্ব কোড নাম্বার আছে, আর সেই কোড নাম্বারগুলো একটা বিশেষ গোপনীয় ডায়রেক্টরিতে লিপিবন্ধ করা রয়েছে।
সকালটা কোথা দিয়ে যেন উড়ে গেল কাজের চাপে। ট্রেসি ঠিক করে রেখেছিল দুপুরে লাঞ্চএর সময় বেরিয়ে একবার চুলটাকে সেট করে আসবে। সেই মত ল্যারি স্টেল্লা বট্টেতে অ্যাপয়েন্টমেন্টও করে রেখেছে। ওখানে গেলে একটু বেশিই পয়সা লাগে ঠিকই কিন্তু তবুও, একবার গেলে বোঝা যায় এরা কত তফাত অন্যান্য হেয়ার ড্রেসারদের থেকে। ট্রেসির ইচ্ছা আছে আজ চার্লসের বাবা মার সামনে নিজের সবথেকে ভালোটা তুলে ধরার। ওনারা চার্লসের জন্য কাকে বেছে রেখেছেন জানা নেই, কিন্তু একটা ব্যাপারে ট্রেসি সুনিশ্চিত, ওর মত সুখি এই পৃথিবীতে কেউ চার্লসকে করতে পারবে না। করতে পারে না।
ঠিক ১টার সময়, তখন সবে ট্রেসি রেনকোটটা গায়ে দিয়ে তৈরী হচ্ছিল বেরুবার জন্য, ক্ল্যারেন্স ডেসমন্ড তাকে তার অফিসে ডেকে পাঠালো। ডেসমন্ডের অফিসে একটা আলাদা ভাবমুর্তি রয়েছে। সব সময় ফিটফাট, গুরুগম্ভীর। সাধারণত টিভিতে কোন কমার্শিয়াল অ্যাড হলে সেখানে ডেসমন্ডই প্রধান বক্তা হন। ওনার চারপাশে একটা কেমন সর্বদাই একটা কর্তৃত্বের বাতাবরণ ঘিরে থাকে। এমন একজন যাকে দেখলেই যেন মনে হয় না, একে সব ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায়, ভরসা করা যায়।
‘বসো ট্রেসি...’ সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বসতে বললেন ট্রেসিকে। উনি আবার প্রত্যেক কর্মচারীর প্রথম নাম ধরেই ডাকতে ভালোবাসেন। তাতে বেশ একটা গর্বও অনুভব করেন মনে মনে। ‘বাইরে আবহায়য়া কি জঘন্য, না?’
‘হ্যা, ঠিক বলেছেন।’ চেয়ারে বসতে বসতে উত্তর দিল ট্রেসি।
‘তাও দেখ, এই ওয়েদারেও লোকেদের ব্যাঙ্কে আসতে হয়, কি খারাপ, না?’ ভদ্রলোকের মনে যে আসলে অন্য কথা রয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। কিছু না বলে চুপ করে আসল কথার অপেক্ষা করতে লাগল সে। খানিক পর ডেসমন্ড বলেই ফেললেন, ‘আমি জানি খুব শিঘ্রই তুমি এবং চার্লস স্ট্যানহোপ বিয়ে করতে চলেছ।’
কথাটা শুনে একটু অবাকই হয়ে গেল ট্রেসি। ‘কই, আমরা তো এই ব্যাপারটা নিয়ে কোন অ্যানাউন্সমেন্ট করি নি!’
শুনে মুচকি হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিলেন, ‘সেটা তোমাকে মুখে না বললেও হবে। আসলে কি জানো তো স্ট্যানহোপরা নিজেরাই খবর তৈরী করে। সত্যি, বিশ্বাস কর, খুব খুশি হয়েছি শুনে। আশা করি তোমাদের মধুচন্দ্রিমার পর তুমি আবার এখানেই কাজে যোগদান করবে, তাই না? আমরা কিন্তু তোমার মত একজন যোগ্য কর্মচারীকে কোন মতেই হারাতে চাইনা। তুমি আমাদের ব্যাঙ্কের সম্পদ।’
ট্রেসি মাথা নিচু করে উত্তর দিল, ‘হ্যা, মানে চার্লসের সাথে আমার সেই রকমই কথা হয়েছে ইতিমধ্যেই। চার্লসেরও কোন দ্বিমত নেই আমার কাজ করা নিয়ে। সে খুশি মনেই আমার বিয়ের পর কাজ করা মেনে নিয়েছে।’
শুনে একগাল হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিল, ‘যাক, তাহলে তো আর কোন চিন্তাই নেই।’ স্ট্যান্সহোপ এন্ড সন্স্, ফিনানশিয়াল কমিউনিটিতে একটা বিশাল নাম, তাই তাদের যদি একটা বেশ বড়সড় অ্যাকাউন্ট ট্রেসির দৌলতে এই ব্যাঙ্কে খোলানো যায়, তাহলে তো কোন কথাই নেই, আর সেই জন্য ডেসমন্ডের খুশি হওয়াও স্বাভাবিক। চেয়ারে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে ট্রেসির উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘তোমরা মধুচন্দ্রিমা করে ফিরে এস, তারপর দেখো একটা বিরাট প্রমোশন তোমার জন্য তুলে রেখেছি আমি। তাতে তোমার পে প্যাকেজও যথেষ্ট বেড়ে যাবে।’
‘ওহ, অনেক ধন্যবাদ। সত্যি, খুব ভালো খবর এটা।’ বেশ খুশি মনেই উত্তর দিল ট্রেসি। ‘আজ গিয়েই খবরটা চার্লসকে দিতে হবে’, মনে মনে ভাবল সে। ‘উফ, ভগবান যেন সমস্ত ভালো খবরগুলোকে একসাথে সাজিয়ে রেখেছে আমার জন্য, বোধহয় আমাকে খুশি দেখার জন্যই।’
******