28-07-2021, 04:56 PM
সলিল সমাধি
বহুদিন পরে বাড়ি ফিরলাম। খুবই নিঃশব্দে।
২৩.০৭.২০২১
বহুদিন পরে বাড়ি ফিরলাম। খুবই নিঃশব্দে।
ফেরবার যে খুব একটা ইচ্ছে ছিল, তা নয়; কিন্তু ঘরে ফেরবার টান, বড়ো অমোঘ টান! তাই না ফিরেও থাকতে পারলাম না।
মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করতে গিয়ে, বেশ কিছুকাল বাড়ি-ছাড়া হয়ে, সমুদ্রে-সমুদ্রেই কাটিয়েছি।
আজ যখন ফিরে এলাম, তখন আর কাউকে বিশেষ ডাকলাম না। চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম।
নিজের ঘরের বিছানার আমেজটাই আলাদা; তার সঙ্গে স্বর্গ-সুখেরও তুলনা চলে না।
তাই স্নান-খাওয়া ব্যাতি রেখেই, দু'চোখ আরামে বুজিয়ে ফেললাম।
ঘুমটা ভেঙে গেল মুহূর্মুহু চুমুর আদরে।
চোখ খুলে দেখি, বউদি আমার শায়িত শরীরের উপর, ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নিজের গায়ের পোশাকের ঠিক নেই, আমাকেও ঘুমন্ত অবস্থাতেই, পোশাকহীন করে ছেড়েছে।
বউদি ঠিক টের পেয়ে গেছে যে, আমি ফিরে এসেছি। এ বাড়িতে একমাত্র বউদিই আমার ব্যাপারে সব কিছু আগে-আগে টের পায় চিরকাল; কবে আমি বড়ো হয়ে উঠলাম, কখন আমার সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠল, কোন-কোন অসহ্য রাতে, আমার কিছুতেই ঘুম আসত না, সব কিছুই…
বউদি এখন আমার তলপেটে পাগলের মতো মুখ ঘষছে। আমার হালকা লোমশ বুকে, নিজের সরু-সরু মেয়েলি আঙুলগুলো দিয়ে, আঁকড়ে ধরছে, আমার ছাতির গুল্মগুলোকে। আমার খোলা শরীরের খাঁজে-ভাঁজে, সর্ব শক্তি দিয়ে নামিয়ে আনছে, নিজের নরম শরীরের ঢালু উচ্চতা দুটোকে।
বহুদিন পরে আমাকে কাছে পেয়ে, আত্মহারা হয়ে গেল বউদি। নিজেকে আর সামলাতে পারল না। গা থেকে কাপড়ের শেষ আড়ালটুকু এক টানে মেঝেতে ফেলে দিয়ে, আমার কোমড়ের উপর চড়ে বসল। নিজের কোমড়ের নীচের অনন্ত, গভীর, সেই আদিমতম সমুদ্রটাকে দিয়ে, গিলে নিতে চাইল, আমার দক্ষিণান্তের একমাত্র উদ্ধত বাতিঘরটাকে!
কিন্তু বউদি ঠিক মতো লিপ্ত হওয়ার আগেই, আমি ক্রমশ বিছানা থেকে মিলিয়ে যেতে লাগলাম ধোঁয়া হয়ে।
তারপর এক সময় শূন্য বিছানায় কেবল বউদির নগ্ন দেহটাই, নিষ্ফল হতাশায় উপুড় হয়ে পড়ে রইল। আমি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলাম!
আতঙ্কিত, অপমানিত ও অতৃপ্ত বউদি তখন চোখ তুলে, জানলার দিকে তাকাল। দেখল, বিকেল গড়িয়ে কখন যেন সন্ধে নেমে গেছে।
সেই ধূপছায়ারঙা সন্ধের বুক থেকে একটা দমকা হাওয়া উঠে এসে, বউদির গাল-ঠোঁট ছুঁয়ে গেল হঠাৎ। বউদির এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে, সেই অশরীরী হাওয়া ফিসফিসিয়ে বলে উঠল: "আমি আর নেই, বউদি। আমাদের জাহজটা প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবে গিয়েছে। তোমরা বোধ হয় এখনও খবরটা পাওনি…"
হাওয়াটা ফিরে গেল নগ্ন ঘরটার মধ্যে, ব্যর্থ ঘুরপাক খেয়ে। তারপর অন্ধকার আরও গাঢ় হল।
বউদির মুখটা কেবল যন্ত্রণায়, পাথর হয়ে রইল।
বউদি কিন্তু এক ফোঁটাও কাঁদল না।
আগুনের মতো একটা দৃষ্টি তুলে, শুধু একবার মাত্র তাকাল, মেঝেতে পড়ে থাকা, নিজের গায়ের ওড়নাটার দিকে ও আমার ঘরের উপরে, সিলিংয়ের আঙটাটার দিকে।
ব্যাপারটা দেখে, আমার অশরীরী মনটাও যেন ছ্যাঁৎ করে উঠল।
আমার সূক্ষ্ম অনুভূতি দিয়ে আমি যেন স্পষ্ট শুনতে পেলাম, বউদির ওই অব্যক্ত, কঠিন ঠোঁট দুটো বলে উঠল: "কোথায় পালাবে তুমি? আমিও আসছি তোমার কাছে; তুমি একটু অপেক্ষা করো…"