28-07-2021, 11:00 AM
খাটিয়া-অলভ্য ঘোষ
ষোল তলায় দাঁড়িয়ে সুইসাইড করার আগে শেষবার আমারমনে হচ্ছে এ জীবনের টোটাল টাই বেকার হয়ে গেল । কিন্তু চেয়ে ছিলাম ষোল কলাপূর্ণ করতে । সবাই যেমন চায় । সবাই চায় দ্রুত উঁচুতে আরও উঁচুতেউঠতে।সূর্যের কাছে গেলে পুড়ে যাবে জেনেও। ওপর থেকে নিচেটা খুব ছোট দেখায় ।নিচের লোকরাও ওপরের লোকদের নির্ঘাত ছোট লোক বলে মনে করে উপরের মতো। যাইদেখাক না কেন ; আমার মতো বায়ন-কুলার দিয়ে তাদের কেউ আমার নিকটে আসার চেষ্টাকরলেও আত্মহত্যার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ তারা বুঝতে পারবে তারা কত সুখীএই ওপরের বহুমাত্রিক নিশাচর প্রাণীটার চাইতে ।
এই শহরের বুকে বড় বড় মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং প্রতিদিন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেআকাশ ছোঁবে বলে। যত ওপরে উঠছে আকাশ ততো-দূরে যাচ্ছে পেছিয়ে ।হারিয়ে যাচ্ছেআকাশ ছুঁবার স্বপ্ন ছাদের তলায়। ব্যার্থ হচ্ছে সব আস্ফালন। এই পায়রার খোপেবন্দী জীবনে অতৃষ্ট হয়ে ;আমার মতো একদিন সবাই আত্মঘাতী হবে ওপর তলারমানুষেরা ! মগজে সাইবার কাফে আর শিরায় মেঘাসিটির ঘন কার্বনেটে জমা দুষিতঅ্যালকহল রক্ত বহন করে ; হৃদপিন্ডের বাইপাস সার্জারির পর দেখবে সবকিছু কতকম । প্রেম,ভালবাসা,বিশ্বাস । শুধু বেশি বুন বিষ যৌবন ।কামনা থেকে জাগ্রতপাশবিক হিংস্রতার জংলা গাছ সারা সমাজ টাকেই জঞ্জাল করে তুলেছে । ঝুপড়িরপাসে লাইট পোস্টের নিচে ; খাটিয়ার ওপর জড়াজড়ি করে শুয়ে ঘুমায় দুইজন শীতার্তমানুষ । নব দম্পতি বোধয় । জড়াজড়ির কায়দাটার মধ্যে যে আন্তরিকতা আছে,তাঅপটু নাবালকত্যপূর্ণ অথচ ভাব গভীর । যা বিবাহিত জীবনের বছর দুই তিন গড়ালেইআর থাকে না বলে আমার বিশ্বাস জন্মেছে । অবশ্য আমার বিশ্বাস টা একান্তব্যক্তিগত । এর ব্যতিক্রম নেই এমনটা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি না ।আমারবায়ন-কুলার টা আমি কিনেছিলাম বিয়ের পর হানিমুনে কাঞ্চনজঞ্জার অপরূপসৌন্দর্য কাছে এনে দেখবো বলে । ইডেনে শেষ ভারত পাকিস্তান টেস্ট-ম্যাচদেখেছি এটা দিয়ে ।কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি এটাই আমার চোখ খুলে এগিয়ে দেবেমৃত্যুর দিকে । কেন দেখতে গেলাম ! ষোল তলার ওপর যখন আমি আমার শোকেস টাতুলে-ছিলাম যে চার জোন মুঠে সেটা মাথায় করে এনেছিল তার মধ্যে ঐ লোকটা ছিল ;যে এখন বৌকে জড়িয়ে গভীর ঘুম ঘুমচ্ছে । ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটা ছোট্ট চাদরযেটা দিয়ে এক জনেরী ঠিক ঠাক শরীর ঢাকা যায়না ; নিজের গা থেকে খুলে চুমুখেয়ে ঢেকে দিয়েছিল তার বৌয়ের গায়ে।মালা বদলের মতো বৌটা নিজের গা থেকে চাদরটা খুলে ঢেকে দিয়েছিল তার স্বামীকে। অবশেষে সহজ সমাধান ;জড়াজড়ি করে শুয়েপড়েছে একি চাদরের তলায় । অবিরত ছুটতে থাকা অশান্ত এই শহরে ওদের চোখেশান্তির ঘুম আসে । আমার চোখে ঘুমনেই । শ্যাম্পেন , কোনিয়্যাক , ব্র্যান্ডি , হোয়াইট –রেড ওয়াইন , রাম , ভদকা , হুইস্কি , জিন , টিকিলা ,মহুয়া ,হাঁড়িয়া,তাড়ি এমন কী জালেফ্লোন,সৌনাটা,রামেলটেওম,রোজেরেম , ট্রায়াজোলাম,হালসিওন ঘুমের ওষুধ গুলোও অতি ব্যাবহারে ফেল মেরে গেছে ।
-“এই বস্তির লোকটা আমাকে তোদের খাটিয়া টা দিবি ? আমার ডবল বেড্ বিছানা টা অবহেলায় ফাঁকা পড়ে আছে ;এই নিয়ে য়া । “আমি চেঁচাচ্ছি ;কিন্তু আমার বিন্দুবিসর্গ শব্দও পৌঁছচ্ছে না ওদের কানে ।দাঁড়া; ষোল তলা থেকে নেমে সুখের খোঁজে আমিও আসছি তোদের ঐ বস্তির আস্তা কুড়ে।বস্তির মাটিতে হাওয়ার সাথে যুদ্ধ করে শূন্য থেকে যখন ধপ করে পড়লাম ;খাটিয়াটা থেকে আমি হাত কুড়ি দূরে ।ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠেছে খাটিয়ারসওয়ারীরা। আমার মাথার পিছনটা ফেটে ঘিলু বেড়িয়ে পড়েছে ;মল ,মূত্রের মতো আমারশরীরের দূষিত রক্ত বয়ে চলেছে বস্তির মাটিতে ।আঃ কি শান্তি !
-”এই তোদের খাটিয়া টায় আমাকে একটু ঘুমতে দিবি । আমি ঐ নোংরা খাটিয়াটায় শুতে চাইছি এটা তোদের সৌভাগ্য । ”আগের মতোই আমার এক বর্ণও পৌঁছচ্ছে না ওদের কানে । মানুষ আর মানুষের মাঝেরব্যবধান কিছুতেই কমছে না। এই প্রথম বুঝতে পারছি মানুষ মরে গেলে তার কথা আরকেউ শোনে না । মরে ব্যবধান বাড়ে; তবে বাঁচার মতো বাঁচায় ।সবাই ঘুম ভাঙ্গা চোখে ছোটা ছুটি করছে ; বলছে পুলিশে ফোন কর ।ওপর থেকে কেউধাক্কা মেরে ফেললো ? না পা হড়কে পড়ে গেল ? নাকি আত্ম হত্যা !
ধাক্কা আমি একটা খেয়েছি বটে ; তবে ময়নাতদন্তেও তা কেউ জানবে না ।জানলে ভাল হতো ; অন্তত সে ধাক্কা খাবার আগে বাকিরা সচেতন হতে পারতেন ।পুলিশের ডোম এসে পলিথিন প্যাকেটেতে মুড়ে ভ্যান রিক্সা করে আমার বডিটা তুলেনিয়ে যাচ্ছে । খাটিয়া টা এখন শূন্য পড়ে । আমার স্ত্রী ও দেখছি খবর টা পেয়েছুটে এসেছে ;বাপের বাড়ির সুখ ঘুম ফেলে । সাথে আমার শ্বশুর শাশুড়িওআছেন।আমার বৌ ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ডের কাছ থেকে আমার ফ্লোরের ডুপ্লিকেটচাবি টা নিচ্ছে । অরিজিনাল টা কতবার ওকে দিতে চেয়েছি ; কোনদিন নিলো না ।এবার মর্গ থেকে শ্মশানে । প্লীজ স্বর্গ রথের বদলে আমাকে একটা খাটিয়ায় নিয়েযেও । খরচ কম শান্তি বেশি । শান্তির মূল্য সামান্য আমি মরার পর বুঝেছি।
(সংগৃহীত গল্প)
ষোল তলায় দাঁড়িয়ে সুইসাইড করার আগে শেষবার আমারমনে হচ্ছে এ জীবনের টোটাল টাই বেকার হয়ে গেল । কিন্তু চেয়ে ছিলাম ষোল কলাপূর্ণ করতে । সবাই যেমন চায় । সবাই চায় দ্রুত উঁচুতে আরও উঁচুতেউঠতে।সূর্যের কাছে গেলে পুড়ে যাবে জেনেও। ওপর থেকে নিচেটা খুব ছোট দেখায় ।নিচের লোকরাও ওপরের লোকদের নির্ঘাত ছোট লোক বলে মনে করে উপরের মতো। যাইদেখাক না কেন ; আমার মতো বায়ন-কুলার দিয়ে তাদের কেউ আমার নিকটে আসার চেষ্টাকরলেও আত্মহত্যার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ তারা বুঝতে পারবে তারা কত সুখীএই ওপরের বহুমাত্রিক নিশাচর প্রাণীটার চাইতে ।
এই শহরের বুকে বড় বড় মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং প্রতিদিন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেআকাশ ছোঁবে বলে। যত ওপরে উঠছে আকাশ ততো-দূরে যাচ্ছে পেছিয়ে ।হারিয়ে যাচ্ছেআকাশ ছুঁবার স্বপ্ন ছাদের তলায়। ব্যার্থ হচ্ছে সব আস্ফালন। এই পায়রার খোপেবন্দী জীবনে অতৃষ্ট হয়ে ;আমার মতো একদিন সবাই আত্মঘাতী হবে ওপর তলারমানুষেরা ! মগজে সাইবার কাফে আর শিরায় মেঘাসিটির ঘন কার্বনেটে জমা দুষিতঅ্যালকহল রক্ত বহন করে ; হৃদপিন্ডের বাইপাস সার্জারির পর দেখবে সবকিছু কতকম । প্রেম,ভালবাসা,বিশ্বাস । শুধু বেশি বুন বিষ যৌবন ।কামনা থেকে জাগ্রতপাশবিক হিংস্রতার জংলা গাছ সারা সমাজ টাকেই জঞ্জাল করে তুলেছে । ঝুপড়িরপাসে লাইট পোস্টের নিচে ; খাটিয়ার ওপর জড়াজড়ি করে শুয়ে ঘুমায় দুইজন শীতার্তমানুষ । নব দম্পতি বোধয় । জড়াজড়ির কায়দাটার মধ্যে যে আন্তরিকতা আছে,তাঅপটু নাবালকত্যপূর্ণ অথচ ভাব গভীর । যা বিবাহিত জীবনের বছর দুই তিন গড়ালেইআর থাকে না বলে আমার বিশ্বাস জন্মেছে । অবশ্য আমার বিশ্বাস টা একান্তব্যক্তিগত । এর ব্যতিক্রম নেই এমনটা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি না ।আমারবায়ন-কুলার টা আমি কিনেছিলাম বিয়ের পর হানিমুনে কাঞ্চনজঞ্জার অপরূপসৌন্দর্য কাছে এনে দেখবো বলে । ইডেনে শেষ ভারত পাকিস্তান টেস্ট-ম্যাচদেখেছি এটা দিয়ে ।কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি এটাই আমার চোখ খুলে এগিয়ে দেবেমৃত্যুর দিকে । কেন দেখতে গেলাম ! ষোল তলার ওপর যখন আমি আমার শোকেস টাতুলে-ছিলাম যে চার জোন মুঠে সেটা মাথায় করে এনেছিল তার মধ্যে ঐ লোকটা ছিল ;যে এখন বৌকে জড়িয়ে গভীর ঘুম ঘুমচ্ছে । ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটা ছোট্ট চাদরযেটা দিয়ে এক জনেরী ঠিক ঠাক শরীর ঢাকা যায়না ; নিজের গা থেকে খুলে চুমুখেয়ে ঢেকে দিয়েছিল তার বৌয়ের গায়ে।মালা বদলের মতো বৌটা নিজের গা থেকে চাদরটা খুলে ঢেকে দিয়েছিল তার স্বামীকে। অবশেষে সহজ সমাধান ;জড়াজড়ি করে শুয়েপড়েছে একি চাদরের তলায় । অবিরত ছুটতে থাকা অশান্ত এই শহরে ওদের চোখেশান্তির ঘুম আসে । আমার চোখে ঘুমনেই । শ্যাম্পেন , কোনিয়্যাক , ব্র্যান্ডি , হোয়াইট –রেড ওয়াইন , রাম , ভদকা , হুইস্কি , জিন , টিকিলা ,মহুয়া ,হাঁড়িয়া,তাড়ি এমন কী জালেফ্লোন,সৌনাটা,রামেলটেওম,রোজেরেম , ট্রায়াজোলাম,হালসিওন ঘুমের ওষুধ গুলোও অতি ব্যাবহারে ফেল মেরে গেছে ।
-“এই বস্তির লোকটা আমাকে তোদের খাটিয়া টা দিবি ? আমার ডবল বেড্ বিছানা টা অবহেলায় ফাঁকা পড়ে আছে ;এই নিয়ে য়া । “আমি চেঁচাচ্ছি ;কিন্তু আমার বিন্দুবিসর্গ শব্দও পৌঁছচ্ছে না ওদের কানে ।দাঁড়া; ষোল তলা থেকে নেমে সুখের খোঁজে আমিও আসছি তোদের ঐ বস্তির আস্তা কুড়ে।বস্তির মাটিতে হাওয়ার সাথে যুদ্ধ করে শূন্য থেকে যখন ধপ করে পড়লাম ;খাটিয়াটা থেকে আমি হাত কুড়ি দূরে ।ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠেছে খাটিয়ারসওয়ারীরা। আমার মাথার পিছনটা ফেটে ঘিলু বেড়িয়ে পড়েছে ;মল ,মূত্রের মতো আমারশরীরের দূষিত রক্ত বয়ে চলেছে বস্তির মাটিতে ।আঃ কি শান্তি !
-”এই তোদের খাটিয়া টায় আমাকে একটু ঘুমতে দিবি । আমি ঐ নোংরা খাটিয়াটায় শুতে চাইছি এটা তোদের সৌভাগ্য । ”আগের মতোই আমার এক বর্ণও পৌঁছচ্ছে না ওদের কানে । মানুষ আর মানুষের মাঝেরব্যবধান কিছুতেই কমছে না। এই প্রথম বুঝতে পারছি মানুষ মরে গেলে তার কথা আরকেউ শোনে না । মরে ব্যবধান বাড়ে; তবে বাঁচার মতো বাঁচায় ।সবাই ঘুম ভাঙ্গা চোখে ছোটা ছুটি করছে ; বলছে পুলিশে ফোন কর ।ওপর থেকে কেউধাক্কা মেরে ফেললো ? না পা হড়কে পড়ে গেল ? নাকি আত্ম হত্যা !
ধাক্কা আমি একটা খেয়েছি বটে ; তবে ময়নাতদন্তেও তা কেউ জানবে না ।জানলে ভাল হতো ; অন্তত সে ধাক্কা খাবার আগে বাকিরা সচেতন হতে পারতেন ।পুলিশের ডোম এসে পলিথিন প্যাকেটেতে মুড়ে ভ্যান রিক্সা করে আমার বডিটা তুলেনিয়ে যাচ্ছে । খাটিয়া টা এখন শূন্য পড়ে । আমার স্ত্রী ও দেখছি খবর টা পেয়েছুটে এসেছে ;বাপের বাড়ির সুখ ঘুম ফেলে । সাথে আমার শ্বশুর শাশুড়িওআছেন।আমার বৌ ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ডের কাছ থেকে আমার ফ্লোরের ডুপ্লিকেটচাবি টা নিচ্ছে । অরিজিনাল টা কতবার ওকে দিতে চেয়েছি ; কোনদিন নিলো না ।এবার মর্গ থেকে শ্মশানে । প্লীজ স্বর্গ রথের বদলে আমাকে একটা খাটিয়ায় নিয়েযেও । খরচ কম শান্তি বেশি । শান্তির মূল্য সামান্য আমি মরার পর বুঝেছি।
(সংগৃহীত গল্প)