Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Gay/Lesb - LGBT কুড়ি হতে ফুল হয়ে ওঠার গল্প।।কামদেব
#17
[Image: 0?ui=2&ik=a34779cd59&attid=0.1&permmsgid..._krnao4920]মন্দানীলের কথা





“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…” গান বেজে ওঠে।



আমার মোবাইলের রিংটোন।বইয়ের ভিতর পেজ মার্ক দিয়ে বন্ধ করলাম বইটা। ঘড়ির দিকে  তাকিয়ে দেখি কাঁটা এগারোটার ঘর ছাড়িয়ে চলেছে।এত রাতে আবার কে? পরিচিত কেউ হলে স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠতো।ফোন ধরে বললাম, মন্দানিল বলছি।

কোন সাড়া নেই।এত রাতে কে আবার বাদরামি শুরু করল?ফোন কেটে দেব কি না ভাবছি,অপর প্রান্ত হতে শোনা গেল , কাটবেন না প্লীজ। মনে হচ্ছে মেয়ের  গলা! জিজ্ঞেস করলাম, কে বলছেন? কাকে চাইছেন?

–আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। এত রাতে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।

–ঠিক আছে।আমি অনেক রাত অবধি জেগে থাকি।আপনি কে?

–আমি নর দেহে নারী।

মনে পড়ল এই নামে একটা গল্প নেট-এ পোষ্ট করেছি,হয়তো পড়ে থাকবেন। একটু বিরক্ত নিয়ে বললাম, আপনার নামটা জানতে পারি কি?

–আমার নাম চন্দ্রনাথ। আমাকে তুমি বলবেন।

চন্দ্রনাথ? মানে ছেলে? বেশ মজা লাগল।জিজ্ঞেস করি, তোমার বয়স?

–তেইশ চলছে।

–আমার বয়স জানো?

–আপনি লিখেছেন,লিঙ্গ বয়স জাত ধর্ম সম্পর্ক স্থাপনে বাঁধা হতে পারেনা।

–আমার সে রকম বিশ্বাস।গলার স্বর কথা বলার ভঙ্গী মেয়েলি , বোঝাযায় পড়াশুনা  আছে।

–আপনার নামটা খটোমটো। কিছু মনে করলেন না তো?

এনামে আমাকে কেউ ডাকে  না,হাসি পেল ওর কথা শুনে বললাম,তুমি ছোটো  করে নিতে পারো, ‘তুমি’ বললেও আপত্তি নেই।

–ধন্যবাদ। তোমাকে নীল বলতে পারি কি?

–তোমার নামটাও সরল নয়।

–তুমি আমাকে চাদু বা চন্দ্রা—চন্দ্রা বললে আমি খুব খুশি হব।

–চন্দ্রাই বলব।এখন বলোতো কেন ফোন করেছ?

ছেলেটি গে আমার ধারণা।গে-দের প্রতি দুর্বলতা আমার বরাবর,আমি আগ্রহ বোধ করি।কিন্তু ফোন করার উদ্দেশ্য কি বুঝতে পারছি না।

–জানো নীল আমি তোমার লেখা পড়ে মুগ্ধ।

–তুমি কি লেখা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এত রাতে ফোন করেছ?

–তুমি রাগ করছো? আসলে কি জানো লেখাটা পড়া অবধি তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য আকুল।লেখাটার মধ্যে নিজেকে সনাক্ত করতে পারি।মনে হয় তুমি আমার কত চেনা।

–ধন্যবাদ।মনে থাকবে।

–আচ্ছা নীল এসব কি তোমার কল্পনা প্রসূত ?

–আমার জীবনের অভিজ্ঞতা।

–আমার ও তাই মনে হয়েছে।তোমার মতামত বেশ সাবলীল যুক্তি নিষ্ঠ।তুমি যা লিখেছ তা কি অন্তর থেকে বিশ্বাস করো?

চন্দ্রা পড়াশুনা করা ছেলে,সংবেদনশীল কথাবার্তায় স্পষ্ট।ফোনে কি উত্তর দেব? টেলিফোন কোম্পাণীকে অকারন পয়সা দেওয়া আমার অপছন্দ।ওকে বললাম, দেখ চন্দ্রা ,তোমার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগছে।কিন্তু ফোনে এতসব–।

আমাকে শেষ করতে না দিয়ে চন্দ্রা বলল, আমরা কি দেখা করতে পারি?

–আমার বাড়িতে অসুবিধে আছে।তুমি যদি জায়গা ঠীক করতে পার যেখানে  নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারি, তা হলে অবশ্যই দেখা হতে পারে।

–আমার ও জায়গা নেই তবে ব্যাবস্থা করতে পারি।তুমি আসবে তো?

–ঠিক আছে বলবে কবে কোথায় কখন? আমি অপেক্ষা করবো।

–ধন্যবাদ, শুভ রাত্রি।

অনেক রাত হল আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।বইটা তুলে রাখলাম।কত কথা মনে  আসছে।পুরানো কালে মানে রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্র শরৎচন্দ্র প্রভাত কুমার প্রমূখের লেখায় সমকামিদের প্রসঙ্গ আসেনি।তখন কি সমাজে সমকামিতা ছিল না ? তারা কি এ যুগের ফসল? তা কি করে হয়? মহাভারতে শিখণ্ডির কথা আছে, সে তো নরদেহে নারী।চন্দ্রা  হয়তো নানা প্রশ্ন করবে, সব প্রশ্নের জবাব দেব সাধ্য কি? আমাকে জানতে হবে, আরো পড়তে হবে।

সংসার বড় নিষ্ঠুর,বড় স্বার্থপর। প্রয়োজন ছাড়া কিছু বোঝেনা।চন্দ্রা প্রসঙ্গ চাপা পড়ে  গেছে অন্যান্য ব্যস্ততায়।এক পক্ষকাল কেটে গেছে।একদিন রাতে বেজে উঠল মোবাইল, স্ক্রিনে  ভাসছে চন্দ্রা।

–আমি নীল বলছি।

–আমাকে মনে আছে? আমি চন্দ্রা।

–বুঝতে পেরেছি, বলো।

–একটু দেরী হল,ঘর পেয়েছি।দুপুর বেলা আসতে পারবে?

–কোথায়,কার ঘর?

–একটা নাচের কলেজ।সুরক্ষিত,নিরাপদ,একটাই সমস্যা খাট নেই,মেঝেতে কার্পেট পাতা।

কি চাইছে চন্দ্রা? খাট কার্পেট এসব কথা কেন? শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহী? তাতে  আমার অনীহা তা নয়।একটা মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন।

–তুমি কি শারীরিক সম্পর্ক চাও?

–তা ছাড়া আরও অনেক কথা আছে।নীল তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে।

চন্দ্রার গলায় আকুলতা টের পাই।তেইশ বছর বয়স আমার অর্ধেকেরও কম। চিনি না  তবু কেন যেন ওর প্রতি একটা দুর্বলতা জন্মে গেছে অজান্তে। বর্তমান সমাজে গে-অস্তিত্বের নানা প্রতিকূলতা।

--চন্দ্রা একটা কথা জিজ্ঞেস করছি কিছু মনে কোরো না--।

--নীল তোমার যা ইচ্ছে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করতে পারো।

--তুমি টপ না বটম?

কয়েক মুহুর্ত নীরব।জিজ্ঞেস করে কি ভুল করলাম? আমি বললাম,চন্দ্রা তুমি আছো?

--হ্যা-হ্যা আছি।জানো নীল আমি মেয়ে আমার ব্রেস্ট আছে কিন্তু--।ভগবান আমার সঙ্গে জোক করে একটা বিচ্ছিরি জিনিস লাগিয়ে দিয়েছে।

চন্দ্রা সম্ভবত পুরুষাঙ্গের কথা বলছে।

–আচ্ছা চন্দ্রা,  আরেকটা একটা কথা জিজ্ঞেস করছি কিছু মনে কোরনা।তুমি কি ভার্জিন ?

কয়েক মুহূর্তের নীরবতা। চন্দ্রা বলল, এক রকম ভার্জিন বলতে পারো।

আরও জট পাকিয়ে যায়।এক রকম ভার্জিন? তার মানে কি? যদিও বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।ভাবছি কোনো ফাঁদে পড়তে যাচ্ছি নাতো?আবার ভাবি কি করবে টাকা পয়সা ছিনতাই?কোথাও গেলে বেশি টাকা পয়সা নিয়ে যাই না।বড়জোর হাতে একটা ঘড়ি থাকে।  ইতিপূর্বে চড় লাথি খাবার অভিজ্ঞতা হয়েছে।তার বেশি আর কি হবে।

— ঠিক আছে চন্দ্রা।দুপুর বলতে কটা, কোথায় যেতে হবে?

–বুধবার বেলা একটা…….।

বিস্তারিত বিবরণ কিভাবে যেতে হবে কোথায় দাড়াতে হবে ইত্যাদি জেনে নিয়ে ফোন রেখে দিলাম।আমরা স্বাধীন বলে বড়াই করি আসলে লিখিত অলিখিত নানা বন্ধনে  আমরা বাঁধা।ইচ্ছে হলেই যা খুশি তা করতে পারি না।সামাজিক সংস্কার ব্যতিক্রমী ইচ্ছের পরিপন্থী,সব আকুলতা আমরা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করতে পারি না। বড় দাবিয়ে রাখে  ছোটকে, সবল দুর্বলকে ।নদী বাহিত পলি জমে হয় পাললিক শিলা তখন নদী স্রোত আর তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনা। আমরা যেদিন শিলায় রূপান্তরিত হব সমাজ তখন আর শাসনের চাবুক হাতে আমাদের বিচার করার সাহস দেখাতে পারবে না।
[+] 3 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কুড়ি হতে ফুল হয়ে ওঠার গল্প।।কামদেব - by kumdev - 27-07-2021, 01:13 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)