25-07-2021, 08:51 AM
কবির লেকটির ধারে দাড়িয়ে ওর জালটা ছুড়ে দেয় যতদুর সম্ভব, এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে জালটা গুটিয়ে আনে। স্নিগ্ধা কাছেই গাছের নিচে বসে ছিল, কবিরকে জাল গুটিয়ে আনতে দেখে স্নিগ্ধা এগিয়ে যায়, জালটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কবিরকে। দুটো পুটি আর একটা টাকি মাছ উঠেছে তাতে।
কবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে " তুই এখানেই থাক। আমি একটু ঐদিকে জাল ফেলে দেখি কিছু পাই কিনা।"
" তুই একটু ছায়ায় বস না, আমি এবার জাল ফেলি। একেবারে ঘেমে গেছিস। " স্নিগ্ধা বলে
" এখন না, একটু পরে। " বলে কবির ওর জালটি নিয়ে লেকের ধার ঘেষে এগিয়ে যায়। কবির জানে যে পাশের গ্রাম থেকেই স্নিগ্ধার মার সাথে কথা বলার পর ওদের ধরা পরে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। কবির যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু তার জন্য টাকার প্রয়োজন। গত তিনদিন ধরে ওরা লেকে মাছ ধরে পাশের গ্রামে এক মাছ বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছে। প্রথম দিন দুইশত টাকা, পরের দিন চারশ পন্চাশ টাকা, পরের দিন চারশ টাকা, একয়দিনের মাছ বিক্রির টাকা ওদের। অন্য কোথাও গিয়ে সেটেল হতে চাইলে ওদের অনেক টাকার প্রয়োজন, কমপক্ষে পাচ হাজার টাকা না হলে কবির সে রিস্ক নেবে না।
কবির লেকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জাল ফেলে, কিন্তু একটি আধা কেজি ওজনের মৃগেল ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু পায় না। কবির ভাবে যে তার ডিঙ্গি নৌকাটা যদি থাকত তবে নৌকা বেয়ে লেকের মাঝামাঝিতে জাল ফেলতে পারত সে। কবির এবার কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে জাল ফেলতে শুরু করে। এবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই ওর জালে একটি বড় কাতল মাছ ওঠে। জালটাকে লেকের ধারে তুলেই স্নিগ্ধাকে ডাকে কবির, স্নিগ্ধা সাথে সাথে ছুটে আসে।
" ওয়াও! কত্তবড় কাতল মাছ! এটা কতো ওজন হবে? " স্নিগ্ধা উচ্ছসিত কন্ঠে বলে
" দশ বারো কেজি তো হবেই। " কবির বলে। তারপর ওদের শিকার করা মাছগুলোকে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে যায়। দুজন মিলে ছোট মাছগুলোকে কেটে ধুয়ে আলু দিয়ে চচ্চরি করে। তা দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নেয়। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে ওরা ওদের মাছগুলোকে নিয়ে রওনা দেয় পাশের গ্রামের উদ্দেশ্য। ওদের সংগ্রহে বড় কাতল মাছটি ছাড়াও একটি মাঝারি কালবাউস ও দুটি মাঝারি মৃগেল আছে। কবির যখন প্রথম বান্দরবানে এসেছিল তখন অংসুন গ্রামে ছিল কয়েক মাস। অংসুন নামক একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গ্রামটি বেশ সুন্দর। এখানে কবিরের বেশ কিছু পরিচিত লোক আছে, যাদের মাঝে রশিদ একজন। রশিদ মাছের ব্যবসা করে, গ্রামের বাজারে তার মাছের দোকান আছে।
"ও রশিদ চাচা। বাড়ি আছো নাকি। " রশিদের ছুপরির সামনে এসে ডাকে কবির
" কে? " রশিদের কন্ঠ শুনতে পায় ওরা
" আমি করিম। " কবির বলে
" ও ভাইস্তা, ভেতরে আসো । " ভেতর থেকেই বলে রশিদ।
দরজাটা ভেজানো ছিল, ওরা খুলে ভেতরে ঢোকে।
" আরে, বউমাকেও আনছো দেখি! আসো মা বস। " বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে।
" চাচা, শরীর কি খারাপ নাকি? অবেলায় শুয়ে আছেন। " মাছের ডালাটা নামিয়ে রাখতে রাখতে কবির বলে
" অল্প জ্বর আছে, ও তেমন কিছু না। দেখি তোমরা কি আনছো? " বলে উঠে মাছের ডালাটা দেখে।
" ওরে বাবা, এ দেখি বিশাল মাছ। কই পাইলা? ঐ ভুতের জলায়? " রশিদ বলে
" ভুতের জলা? " স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলে
" করিম তোমাক বলে নাই? ঐ জলায় আর ঐ বাড়িতে কাল্লা কাটা ভুত থাকে, অনেক মানুষ দেখছে। ঐখানে তো দিনের বেলায়ও মানুষ যাইতে ভয় পায়। তয় করিম মানতে চায় না।"
" আমাকে বলিসনি কেন? " ফিসফিস করে বলে স্নিগ্ধা।
" ফিজিক্সের ছাত্রী হয়ে তুই এসব বিশ্বাস করিস? " কবির বলে
স্নিগ্ধা কিছু বলে না।
"" আমি বলি কি, তোমরা ঐখানে আর থাইক না। এই গেরামেও থাইক না, দুরে কোথাও চইলা যাও। " রশিদ বলে
" সেই চেষ্টাই করছি চাচা। সেই জন্যই তো এসব। " বলে মাছের ডালাটার দিকে ইশারা করে কবির।
"কিন্তু এই মাছ কেনার মুরুদ তো আমার নাই। আর এই গেরামে কেউ কিনতেও পারব না। তাও তুমি যখন আনছো, ব্যাটাকে শহরে পাঠাইয়া বেচমু নি। কিন্তু কত নিবা? " রশিদ বলে
" আপনিই বলেন চাচা। "
" টাকা পয়সা বেশি নাই, ব্যাবসা ভাল চলে না। আমি পনেরশ দিমু। "
" দশ কেজি ওজনের কাতলা, কমপক্ষে ছয় হাজার টাকায় তো বেচতেই পারবেন। অন্তত তিন হাজার মিল কইরা দেন। " কবির বলে
" অতো টাকা তো নাই ভাইস্তা। গেরামে তো বেচতে পারমু না, শহরে নিয়া যাইতে হইব, খরচা আছে না? আচ্ছা, দুই হাজার দেই।" রশিদ বলে
" চাচা, আর পাচশটা টাকা দেন। এই সব মাছ আপনার। " কবির বলে
" ঠিক আছে ভাইস্তা, আমি আর তিনশ দিব। " রশিদ বলে
কবির আর আপত্তি করে না। রশিদকে বিদায় জানিয়ে ওরা ফিরে আসে।
গ্রামটা পেরতেই কবির মানিব্যাগ বের করে টাকা গোনে, ওর কাছে মোট ছয় হাজার টাকা আছে।
" আমরা কালকেই এই এলাকা ছেড়ে চলে যাব। " কবির বলে
"কিন্তু, কোথায় যাব আমরা ? "
" আজ রাতেই ডিসিশন নিব আমরা। " কবির বলে
কবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে " তুই এখানেই থাক। আমি একটু ঐদিকে জাল ফেলে দেখি কিছু পাই কিনা।"
" তুই একটু ছায়ায় বস না, আমি এবার জাল ফেলি। একেবারে ঘেমে গেছিস। " স্নিগ্ধা বলে
" এখন না, একটু পরে। " বলে কবির ওর জালটি নিয়ে লেকের ধার ঘেষে এগিয়ে যায়। কবির জানে যে পাশের গ্রাম থেকেই স্নিগ্ধার মার সাথে কথা বলার পর ওদের ধরা পরে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। কবির যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু তার জন্য টাকার প্রয়োজন। গত তিনদিন ধরে ওরা লেকে মাছ ধরে পাশের গ্রামে এক মাছ বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছে। প্রথম দিন দুইশত টাকা, পরের দিন চারশ পন্চাশ টাকা, পরের দিন চারশ টাকা, একয়দিনের মাছ বিক্রির টাকা ওদের। অন্য কোথাও গিয়ে সেটেল হতে চাইলে ওদের অনেক টাকার প্রয়োজন, কমপক্ষে পাচ হাজার টাকা না হলে কবির সে রিস্ক নেবে না।
কবির লেকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জাল ফেলে, কিন্তু একটি আধা কেজি ওজনের মৃগেল ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু পায় না। কবির ভাবে যে তার ডিঙ্গি নৌকাটা যদি থাকত তবে নৌকা বেয়ে লেকের মাঝামাঝিতে জাল ফেলতে পারত সে। কবির এবার কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে জাল ফেলতে শুরু করে। এবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই ওর জালে একটি বড় কাতল মাছ ওঠে। জালটাকে লেকের ধারে তুলেই স্নিগ্ধাকে ডাকে কবির, স্নিগ্ধা সাথে সাথে ছুটে আসে।
" ওয়াও! কত্তবড় কাতল মাছ! এটা কতো ওজন হবে? " স্নিগ্ধা উচ্ছসিত কন্ঠে বলে
" দশ বারো কেজি তো হবেই। " কবির বলে। তারপর ওদের শিকার করা মাছগুলোকে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে যায়। দুজন মিলে ছোট মাছগুলোকে কেটে ধুয়ে আলু দিয়ে চচ্চরি করে। তা দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নেয়। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে ওরা ওদের মাছগুলোকে নিয়ে রওনা দেয় পাশের গ্রামের উদ্দেশ্য। ওদের সংগ্রহে বড় কাতল মাছটি ছাড়াও একটি মাঝারি কালবাউস ও দুটি মাঝারি মৃগেল আছে। কবির যখন প্রথম বান্দরবানে এসেছিল তখন অংসুন গ্রামে ছিল কয়েক মাস। অংসুন নামক একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গ্রামটি বেশ সুন্দর। এখানে কবিরের বেশ কিছু পরিচিত লোক আছে, যাদের মাঝে রশিদ একজন। রশিদ মাছের ব্যবসা করে, গ্রামের বাজারে তার মাছের দোকান আছে।
"ও রশিদ চাচা। বাড়ি আছো নাকি। " রশিদের ছুপরির সামনে এসে ডাকে কবির
" কে? " রশিদের কন্ঠ শুনতে পায় ওরা
" আমি করিম। " কবির বলে
" ও ভাইস্তা, ভেতরে আসো । " ভেতর থেকেই বলে রশিদ।
দরজাটা ভেজানো ছিল, ওরা খুলে ভেতরে ঢোকে।
" আরে, বউমাকেও আনছো দেখি! আসো মা বস। " বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে।
" চাচা, শরীর কি খারাপ নাকি? অবেলায় শুয়ে আছেন। " মাছের ডালাটা নামিয়ে রাখতে রাখতে কবির বলে
" অল্প জ্বর আছে, ও তেমন কিছু না। দেখি তোমরা কি আনছো? " বলে উঠে মাছের ডালাটা দেখে।
" ওরে বাবা, এ দেখি বিশাল মাছ। কই পাইলা? ঐ ভুতের জলায়? " রশিদ বলে
" ভুতের জলা? " স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলে
" করিম তোমাক বলে নাই? ঐ জলায় আর ঐ বাড়িতে কাল্লা কাটা ভুত থাকে, অনেক মানুষ দেখছে। ঐখানে তো দিনের বেলায়ও মানুষ যাইতে ভয় পায়। তয় করিম মানতে চায় না।"
" আমাকে বলিসনি কেন? " ফিসফিস করে বলে স্নিগ্ধা।
" ফিজিক্সের ছাত্রী হয়ে তুই এসব বিশ্বাস করিস? " কবির বলে
স্নিগ্ধা কিছু বলে না।
"" আমি বলি কি, তোমরা ঐখানে আর থাইক না। এই গেরামেও থাইক না, দুরে কোথাও চইলা যাও। " রশিদ বলে
" সেই চেষ্টাই করছি চাচা। সেই জন্যই তো এসব। " বলে মাছের ডালাটার দিকে ইশারা করে কবির।
"কিন্তু এই মাছ কেনার মুরুদ তো আমার নাই। আর এই গেরামে কেউ কিনতেও পারব না। তাও তুমি যখন আনছো, ব্যাটাকে শহরে পাঠাইয়া বেচমু নি। কিন্তু কত নিবা? " রশিদ বলে
" আপনিই বলেন চাচা। "
" টাকা পয়সা বেশি নাই, ব্যাবসা ভাল চলে না। আমি পনেরশ দিমু। "
" দশ কেজি ওজনের কাতলা, কমপক্ষে ছয় হাজার টাকায় তো বেচতেই পারবেন। অন্তত তিন হাজার মিল কইরা দেন। " কবির বলে
" অতো টাকা তো নাই ভাইস্তা। গেরামে তো বেচতে পারমু না, শহরে নিয়া যাইতে হইব, খরচা আছে না? আচ্ছা, দুই হাজার দেই।" রশিদ বলে
" চাচা, আর পাচশটা টাকা দেন। এই সব মাছ আপনার। " কবির বলে
" ঠিক আছে ভাইস্তা, আমি আর তিনশ দিব। " রশিদ বলে
কবির আর আপত্তি করে না। রশিদকে বিদায় জানিয়ে ওরা ফিরে আসে।
গ্রামটা পেরতেই কবির মানিব্যাগ বের করে টাকা গোনে, ওর কাছে মোট ছয় হাজার টাকা আছে।
" আমরা কালকেই এই এলাকা ছেড়ে চলে যাব। " কবির বলে
"কিন্তু, কোথায় যাব আমরা ? "
" আজ রাতেই ডিসিশন নিব আমরা। " কবির বলে