23-07-2021, 06:15 PM
(This post was last modified: 18-12-2021, 02:10 PM by Bumba_1. Edited 6 times in total. Edited 6 times in total.)
জীবনের প্রথম পুরস্কার পাওয়ার তৃপ্তি
লেখা:- বুম্বা
প্রচ্ছদ:- জয়ের সেই মুহূর্তটার ফটোগ্রাফ
আমার বাড়ির মেমেন্টো আর মেডেলগুলি ছাড়াও বেশীরভাগ show piece এবং কাঁচের বা চিনামাটির, শরবতের সেট, টি সেট, ডিনার সেট, এছাড়াও অনেক রকম জিনিস যেমন ফ্লাস্ক, টাওয়েল, দেওয়াল ঘড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি .. এগুলি সবই আমার পুরস্কার পাওয়া এ কথা অনেকেই জানেন।
কিন্তু শুরুর দিকের দিনগুলি একেবারেই এইরকম ছিল না। একদম ছোটবেলাতে আমি খুবই সাধারণ মানের একটি বাচ্চা ছিলাম। কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষাই ছিল না আমার, অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যেতাম। পড়াশোনাতে ৬০% নম্বর পেয়েই খুশী থাকতাম আর খেলাধুলাতেও সব থেকে শেষেই নাম থাকতো আমার।
বাচ্চারা কোনোকিছু না পেলে বা না পারলে কেঁদে জেতার চেষ্টা করে, কিন্তু আমার মধ্যে সেইটুকু তাগিদও দেখা যায়নি কখনও, আমি যেন ধরেই নিয়েছিলাম কোনোকিছুতে প্রথম হওয়া বা জেতা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাবার চাকরির সুবাদে আমার পুরো শৈশবকাল, কৈশোর এবং যৌবনের প্রথম দিকটা কেটেছে অফিসার্স কম্পাউন্ডে। ওখানে প্রতিবছর ২৬শে জানুয়ারি annual sports আয়োজিত হতো। ১৯৯০ সালে আমি প্রথম অংশগ্রহণ করি প্রতিযোগীতায়, তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। বলা বাহুল্য তিনটি বিভাগেই কার্যত ব্যর্থতা নিয়ে ফিরতে হয় আমাকে।
এর মধ্যে একটা কথা বলা হয়নি .. যেহেতু আমি দৌড়াতে পারতাম না তাই বাবা- মা আমার রেস শুরু হওয়ার সময় অন্যদিকে মুখ করে থাকতেন লজ্জাতে। ওই দৃশ্যটা যে আমার কাছে কতটা দুঃখের আর লজ্জার ছিল সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।
পরের বছর ১৯৯১ .. অনিচ্ছাসত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই অংশগ্রহণ করতে হলো আমাকে.. প্রথম বিভাগের খেলা "অঙ্ক রেস" সেখানে সৌমিক বলে শুধুমাত্র একটি ছেলেই অঙ্কটি ঠিক করেছিল, বাকিরা আমরা সবাই ভুল।
যাইহোক দ্বিতীয় বিভাগের খেলা শুরু হলো "ফ্লাট রেস".. কি করে জানিনা by chance আমি তৃতীয় হয়ে গেলাম। সবে আনন্দ করতে যাবো, এমন সময় বাধ সাধলেন ভট্টাচার্য আঙ্কেল। সলিল বলে একটি ছেলে disqualified হয়ে যাওয়ার দরুন রেস'টা আবার শুরু করতে হলো, কারণ সলিল ছিল ওই কোম্পানির মালিকের ভাইপো/ভাগ্নে কি যেন একটা .. তাকে খুশি করতে পারলেই ভট্টাচার্য আঙ্কেলের পদোন্নতি।
পুনরায় "ফ্লাট রেস" শুরু হলো .. কিন্তু হায় ভগবান আমি আর পারলাম না .. সবার পিছনে দৌড় শেষ করলাম। মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাদের মুখের করুণ অবস্থা, ইচ্ছে থাকলেও কিছু বলতে পারছেন না। ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো, যেটা কোনোদিন করিনি সেটাই করলাম .. হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললাম।
আমাদের গ্রুপের ক্যাপ্টেন পুনম দিদিও তখন থামাতে পারছে না আমাকে। মা দৌড়ে এসে বললো "পারিসনি তো কি হয়েছে বুম্বা .. সবাই কি আর সবকিছু পারে? কাঁদিস না সোনা.."
মা এর হাত টা ছাড়িয়ে দিয়ে এসে একটা ফাঁকা জায়গাতে বসলাম। মনে মনে সঙ্কল্প করতে লাগলাম, আমাকে অনেক কিছুর জবাব দিতে হবে, নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
শুরু হলো তৃতীয় বিভাগ "অরেঞ্জ রেস"। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে। যথাসময় whistle বাজলো .. রেস শুরু হলো .. এক পা দৌড়ানোর পরেই মুখ থুবড়ে পরলাম আমি .. আমি দেখতে পাচ্ছি আমার পাশ দিয়ে সৌমিক, দেবেশ, তমাল, সলিল, আরো কয়েকজন (সবার নাম এই মুহূর্তে মনে নেই).. এরা সব একে একে পেরিয়ে গেলো। দূর থেকে শুনতে পাচ্ছি পুনম দিদি আর কুশান দা'র গলা "come on Bumba, you can do it"
হঠাৎ মায়ের করুণ মুখটার কথা মনে পরে গেলো। আমি উঠলাম .. দৌড় শুরু করলাম .. আমার স্বপ্নের দৌড় .. কিভাবে কি হলো জানি না .. ফিনিশিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার বুকের উপর গিয়ে পড়লাম .. সেই মুহূর্তে মাইকে announcement শুনলাম অরেঞ্জ রেসে অরুণাভ মৈত্র অর্থাৎ আমি প্রথম হয়েছি।
উফ্ .. সে কি অনুভুতি .. সে কি আনন্দ .. বলে বোঝাতে পারবো না। তারপর থেকে আমাকে লেখাপড়া হোক বা খেলাধুলা কোনো বিষয়েই আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়েনি। বিশেষ করে দৌড়ের প্রতিযোগীতা মানেই আমি প্রথম। দ্বিতীয় বা তৃতীয় কে হবে সেটা নিয়ে বাকিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতো। পরবর্তীকালে ওই এলাকায় খেলাধুলার জন্য আমি রকেট বুম্বা নামে পরিচিত হই।