22-07-2021, 10:20 AM
কিন্তু পরদিন সকালেই সব বদলে যায়, সারাজীবনের মত। জরুরি তলব পেয়ে তড়িঘড়ি ক্লাস থেকে ফেরার পর নিবিড় জানতে পারে গত সন্ধ্যাটাই ছিল বাবাইয়ের সাথে কাটানো তার সর্বশেষ সন্ধ্যা, আজ সকালে তাকে মাথায় হাত দিয়ে “বাবু ওঠ, ক্লাস আছে তো” ডাকাটাই ছিল নিবিড়ের বাবার শেষবার তাকে “বাবু” বলে ডাকা………… সব শেষ…। জানতে পারে নিবিড় যাবার কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরোতে গিয়ে হঠাৎ অ্যাটাক হয়, মা এসে ধরেন, তারপর মায়ের হাতের ওপরই শেষ হয়ে যায় সব………… পাথর হয়ে যাওয়া নিবিড় কাঁদতে পর্যন্ত পারেনি সেদিন… দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিল চুপচাপ… নিঝুমের বাবা মা আসেন… বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই মানুষটিকেই কালকে সন্ধ্যায় দেখে গেছিলেন, কী হাসিখুশি, কী প্রাণোচ্ছল, আজ সেই মানুষটাই অতীত………
“ক্রিং ক্রিং! ক্রিং ক্রিং!”, ফোনের শব্দে চমকে ওঠে নিবিড়। ধাতস্থ হতে খানিকটা সময় লাগে, বুঝতে পারে সে সেইদিন থেকে আজ অনেক দূরে, সেই স্মৃতি শুধুই স্মৃতি এখন। বাবা নেই…শুধু স্মৃতি আছে, ফটোফ্রেমে বন্দী হয়ে আছে হাসি, কান্না, দুঃখ, আনন্দ। মনের অ্যালবামে সাজিয়ে রাখা আছে সেই মানুষটার নিত্যদিনের কথাগুলো………আবার বেজে ওঠে ফোন। বেজে বেজে কেটে গিয়েছিল এতক্ষণে। এখন আবার বাজছে। চোখ মুছে পকেট থেকে বের করে ফোনটা। নিঝুম ফোন করেছে। মনে মনে ভাবে, “এই মুহূর্তে ওকেই সবচেয়ে দরকার ছিল আমার……”। ধরে ফোনটা, কিছু বলার আগেই নিঝুমের গলা শোনা যায়, “মন খারাপ খুব?” নিবিড় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “কীভাবে জানলি?” উত্তর আসে, “জানিনা, মনে হল। খুব মনে হচ্ছিল তোর মন খারাপ। কথা বলতে ইচ্ছে করছিল খুব। বাবা-মাও বাইরে গেল, কী ভাগ্য! তাই ফোন করলাম। ”
-“হুম।”
কেন মন খারাপ জানতে না চেয়েই ওইপাশের মানুষটি বলে, “তুই এমন মন খারাপ করে থাকলে আনটির কেমন লাগবে বল তো? আজ তো উনার তোকে খুব দরকার। প্লিজ আজ একটু উনার পাশে থাকিস তুই, একা ছাড়িস না। আর বিসর্জনের পর তো নয়ই।” নিবিড় বুঝতে পারে কেন এ কথা বলছে। বিসর্জনের পর আবির খেলা হয়, প্রকাশ না করলেও মা’র ও তো মন কেমন করে……… ভালবেসে যার সাথে সাত জন্ম কাটানোর শপথ নিয়েছিলেন, সেই গাঁটছড়া ছুটে গেছে হঠাৎ, অকালে………
আবার ওপাশে নিঝুমের কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরে আসে নিবিড়, “এমন মন খারাপ করেনা রে। একদম চুপ হয়ে গেছিস, কিছুই বলছিস না। আনটির সামনে এমন করিস না, খুব কষ্ট পাবেন উনি।”
এরপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে নিবিড়। একেই বোধহয় ভালোবাসা বলে, টেলিপ্যাথি বলে কিছু থাকলেও সেটাও বোধহয় এটাকেই বলে। কিছু না বলেও অনেক কথা বলে ফেলা, বুঝে ফেলা… আর ঠিক সময়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া…… মেয়েটার কথায় যেন জাদু আছে, মন খারাপ করে থাকা যায় না বেশিক্ষণ। অনেক ভার নেমে যায় মন থেকে। কদিন থেকেই আকাশটা মেঘ হয়ে ছিল, আজ ওরা কথা বলতে বলতেই ঝুমবৃষ্টি নামে। একজন তাতে ভিজতে ভিজতে পুকুরপাড় থেকে বাড়িতে ফেরে, আর আরেকজন ফোন কানে নিয়ে সেই বৃষ্টির শব্দ শোনে আর ভালোবাসার মানুষটির মন ভালো করার খুশির অদৃশ্য বৃষ্টিধারায় ভিজতে থাকে………
*সমাপ্ত*
“ক্রিং ক্রিং! ক্রিং ক্রিং!”, ফোনের শব্দে চমকে ওঠে নিবিড়। ধাতস্থ হতে খানিকটা সময় লাগে, বুঝতে পারে সে সেইদিন থেকে আজ অনেক দূরে, সেই স্মৃতি শুধুই স্মৃতি এখন। বাবা নেই…শুধু স্মৃতি আছে, ফটোফ্রেমে বন্দী হয়ে আছে হাসি, কান্না, দুঃখ, আনন্দ। মনের অ্যালবামে সাজিয়ে রাখা আছে সেই মানুষটার নিত্যদিনের কথাগুলো………আবার বেজে ওঠে ফোন। বেজে বেজে কেটে গিয়েছিল এতক্ষণে। এখন আবার বাজছে। চোখ মুছে পকেট থেকে বের করে ফোনটা। নিঝুম ফোন করেছে। মনে মনে ভাবে, “এই মুহূর্তে ওকেই সবচেয়ে দরকার ছিল আমার……”। ধরে ফোনটা, কিছু বলার আগেই নিঝুমের গলা শোনা যায়, “মন খারাপ খুব?” নিবিড় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “কীভাবে জানলি?” উত্তর আসে, “জানিনা, মনে হল। খুব মনে হচ্ছিল তোর মন খারাপ। কথা বলতে ইচ্ছে করছিল খুব। বাবা-মাও বাইরে গেল, কী ভাগ্য! তাই ফোন করলাম। ”
-“হুম।”
কেন মন খারাপ জানতে না চেয়েই ওইপাশের মানুষটি বলে, “তুই এমন মন খারাপ করে থাকলে আনটির কেমন লাগবে বল তো? আজ তো উনার তোকে খুব দরকার। প্লিজ আজ একটু উনার পাশে থাকিস তুই, একা ছাড়িস না। আর বিসর্জনের পর তো নয়ই।” নিবিড় বুঝতে পারে কেন এ কথা বলছে। বিসর্জনের পর আবির খেলা হয়, প্রকাশ না করলেও মা’র ও তো মন কেমন করে……… ভালবেসে যার সাথে সাত জন্ম কাটানোর শপথ নিয়েছিলেন, সেই গাঁটছড়া ছুটে গেছে হঠাৎ, অকালে………
আবার ওপাশে নিঝুমের কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরে আসে নিবিড়, “এমন মন খারাপ করেনা রে। একদম চুপ হয়ে গেছিস, কিছুই বলছিস না। আনটির সামনে এমন করিস না, খুব কষ্ট পাবেন উনি।”
এরপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে নিবিড়। একেই বোধহয় ভালোবাসা বলে, টেলিপ্যাথি বলে কিছু থাকলেও সেটাও বোধহয় এটাকেই বলে। কিছু না বলেও অনেক কথা বলে ফেলা, বুঝে ফেলা… আর ঠিক সময়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া…… মেয়েটার কথায় যেন জাদু আছে, মন খারাপ করে থাকা যায় না বেশিক্ষণ। অনেক ভার নেমে যায় মন থেকে। কদিন থেকেই আকাশটা মেঘ হয়ে ছিল, আজ ওরা কথা বলতে বলতেই ঝুমবৃষ্টি নামে। একজন তাতে ভিজতে ভিজতে পুকুরপাড় থেকে বাড়িতে ফেরে, আর আরেকজন ফোন কানে নিয়ে সেই বৃষ্টির শব্দ শোনে আর ভালোবাসার মানুষটির মন ভালো করার খুশির অদৃশ্য বৃষ্টিধারায় ভিজতে থাকে………
*সমাপ্ত*