21-07-2021, 12:08 PM
এভাবে কতক্ষণ যে কেটে গেছে, খেয়াল নেই নিঝুমের। পেছনে কেমন একটা নড়াচড়া টের পেয়ে ঘুরে তাকায়। দেখে নিবিড় এসে দাঁড়িয়ে আছে কখন থেকে যেন। চোখে চোখ পড়ে। সেই স্থির দৃষ্টি কাঁচের ওপাশে। “কখন এলি?” জিগ্যেস করতে যেয়েও করে না নিঝুম। চোখ সরিয়ে নিয়ে, মাথা নামিয়ে নিবিড়ের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যায়। কিন্তু নিবিড় সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে…“কোথায় যাচ্ছিস?”
নিঝুম উত্তর দেয় না। মাথা নামিয়েই রাখে। তাকায় পর্যন্ত না নিবিড়ের দিকে। “কী হল? উত্তর দিচ্ছিস না কেন? যাচ্ছিস কোথায়? আমার বাড়ি এসে আমার সাথেই কথা বলছিস না কেন?” নিবিড়ের কণ্ঠের উত্তাপ টের পেয়ে এবার চোখ তোলে নিঝুম। আহত, মৃদু কণ্ঠে বলে, “আমি তো বলিনি নিবিড় যে তুই আমায় বিরক্ত করছিস। বলেছি?”
গলাটা কি ভেজা মনে হয়? তবে কি এতক্ষণ…? খানিকক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে যায় নিবিড়। কী করবে সে? নিঝুম সেদিন মোটর নিয়ে যা করেছে, তাতে তো সারাজীবনের মত ওর নিঝুমকে হারাতেও হতে পারত। নিবিড় যে কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, পুরো ব্যাপারটার জন্য তার নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে। সে তো জানে মেয়েটার মাথায় সারাক্ষণই নানা উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খায়, তবুও সে কেন দিতে গেল ওর হাতে এরকম একটা জিনিস? সে জন্যই রেগে আছে। আর রাগটা নিঝুমকে দেখে ঝেড়ে ফেলেছে। “ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে। তখন অতো শক্ত বকুনি দেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু ওর কিছু হলে আমার কী হবে তা কি ও বোঝে না? ও বোঝে না সেদিনের ঘটনা শুনে আমার কেমন লেগেছে? বুঝেছে আমি জানি। শুধু ওই অমন করে দূরে ঠেলে দেওয়াটা মেনে নিতে পারেনি…” ভাবতে ভেবতে কথা আর বলা হয়ে ওঠে না নিবিড়ের। আহত হরিণীর চোখ দুটোতে কখন যে ডুব মেরেছে কে জানে। কোথায় আছে, কী করছে সব ভুলে যেয়ে আরও এক পা এগোয় নিঝুমের দিকে। কী করতে চেয়েছিল, জানে না। তার আগেই বাধা পড়ে নিঝুমের কণ্ঠে-
-“উঁ।”
-“কী?”
-“উঁহু।”
-“কী উঁহু? কী করেছি?”
-“কিছু না।” অভিমানী স্বরটা যেন আরও অভিমানী হয়ে ওঠে।
-“হুম।”
নিঝুম আবার চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আবার বাধা দেয় নিবিড়, “কী সমস্যা? যাচ্ছিস কেন?”
মুখ ফিরিয়ে নেয় নিঝুম। তখনই চোখের কোণে চিকচিকে কিছুর আভাস ধরা পড়ে নিবিড়ের চোখে।
এবার আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারেনা সে। বলে, “কেন সেদিন অমন পাগলামি করতে গেছিলি? তুই জানিস আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম? বুঝিস না তুই তোকে ছাড়া আমি…?”…কথা শেষ হয় না, আবেগে গলা বুজে এসেছে নিবিড়ের।
অভিমানিনীর অভিমানের বরফ এতক্ষণে গলে জল। ইচ্ছে করে নাকটা টিপে দেয় দুষ্টুটার। কিন্তু “ধ্যাত কী সব ভাবছি!” বলে মনে মনে নিজেই নিজেকে বকা দেয় একটা। জলভরা চোখ এবার ভরে ওঠে দুষ্টু মিষ্টি হাসিতে। আর কিচ্ছু বলার দরকার নেই। শুধু ঘাড় কাত করে কানে হাত দিয়ে শব্দহীন ছোট্ট একটা শব্দ বলে, “স্যরি!”
সেই ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে আবার ভাষা হারিয়ে ফেলে নিবিড় রায়। না, সামনের জন কোন অপ্সরীর ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে নেই। কোন মোহের জালে জড়াবার ইঙ্গিতও করেনি। তবুও কী যেন আছে যা শুধুই আকর্ষণ করে, মায়ায় জড়ায়। দুষ্টু অথচ নিষ্পাপ চাহনি, আর সেই চাহনিতে কারুর জন্য ভীষণ ভালোবাসা মানুষটির সমস্ত সত্তাকে দিয়েছে অন্যরকম স্নিগ্ধতা। ‘স্নিগ্ধা’ নামটি বোধহয় এ কারণেই তার জন্য ঠিক করা হয়েছিল জন্মের পরপরই, মনে মনে স্বীকার করে নিবিড়। মুখে বলে, “হুম…উহহু এতো সহজে ক্ষমা করা যাবে না তো।”
-“কেন?” আদুরে গলায় প্রশ্ন করে ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলে নিঝুম। অভিমানের মেঘ কেটে গেছে। এখন আহ্লাদ করতে বাধা নেই। বাঁধ মানছেও না অবশ্য আহ্লাদ।
– “Compensation লাগবে।”, দুষ্টুমি ঝিলিক দিয়ে ওঠে নিবিড়ের চোখে।
সাথে সাথে সেই হরিণীর চপলতা ফিরে আসে, “ইশশশ! ভাল হচ্ছে না কিন্তু, এই! দেব এক চড়! একটা খেয়ে শখ মেটেনি? আবার খেতে চাস, না?” একই সাথে পালানোর রাস্তা খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে।
-“দে না। আমি তো খেতেই চাইছি।”, বলে আরও একটু এগোয় আরেকজন। এবার নিঝুমের আর যাবার জায়গা নেই। পিছিয়ে জানলার তাকেই বসে পড়ে পা ঝুলিয়ে। মুখে ড্যাম কেয়ার ভাব। কিছুতেই অপ্রস্তুত হতে রাজি নয় যেন। কিন্তু ততক্ষণে নিবিড়ের চোখ আবার বেঁধে নিয়েছে তার চোখ দুটোকে। আয়না না থাকলেও গালে রক্তিমাভা টের পায়। সম্মোহন করে ফেলছে যেন ছেলেটা তাকে…না পারছে চোখ নামাতে, না সরাতে। এই সম্মোহনের মধ্যেই কখন যেন ওর নিবিড় হাত বাড়িয়ে খুলে দিয়েছে পনিটেলটা, আর কানের একদম কাছে মুখ নিয়ে বলেছে, “শোন না, এরকম অগোছালো চুলের নিঝুমকেই আমার বেশি পছন্দ জানিস তো? লাভ ইউ।” আর তারপর ঠিকমতো লজ্জা পাওয়ারও সুযোগ না দিয়ে আরও কাছে এসে বলেছে, “আর কখনও সেদিনের মত কিছু করলে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেব মনে রাখিস।” তারপর আলতো করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে জানলা থেকে। আর…তারও পর দেখা যাচ্ছে সদ্য-ঘাড়-ধাক্কা-প্রাপ্তা মেয়েটি ভীষণ অখুশি হয়ে নিবিড়কে পেটানোর জন্য ওর পিছে বাড়িময় ছুটে বেড়াচ্ছে মায়েদের বকুনি উপেক্ষা করেই। কে বলবে এই একটু আগেও অভিমান বাসা বেঁধেছিল দুজনের মাঝে? ঠিক এই মুহূর্তে দুজনের হৃদয়সাগরের অতলে তলিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের বিরল সংমিশ্রনের ঝিনুকের রস নিঃসরণে গঠিত মুক্তো। যে মুক্তো জ্বলছে আগুনের মত; ভালোবাসার পবিত্রতায় শীতল সে আগুন। আর সাথে রয়েছে সবচেয়ে ভাল দুটি বন্ধুর সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ের কঠিন অথচ স্নিগ্ধ শুভ্রতা।
নিঝুম উত্তর দেয় না। মাথা নামিয়েই রাখে। তাকায় পর্যন্ত না নিবিড়ের দিকে। “কী হল? উত্তর দিচ্ছিস না কেন? যাচ্ছিস কোথায়? আমার বাড়ি এসে আমার সাথেই কথা বলছিস না কেন?” নিবিড়ের কণ্ঠের উত্তাপ টের পেয়ে এবার চোখ তোলে নিঝুম। আহত, মৃদু কণ্ঠে বলে, “আমি তো বলিনি নিবিড় যে তুই আমায় বিরক্ত করছিস। বলেছি?”
গলাটা কি ভেজা মনে হয়? তবে কি এতক্ষণ…? খানিকক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে যায় নিবিড়। কী করবে সে? নিঝুম সেদিন মোটর নিয়ে যা করেছে, তাতে তো সারাজীবনের মত ওর নিঝুমকে হারাতেও হতে পারত। নিবিড় যে কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, পুরো ব্যাপারটার জন্য তার নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে। সে তো জানে মেয়েটার মাথায় সারাক্ষণই নানা উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খায়, তবুও সে কেন দিতে গেল ওর হাতে এরকম একটা জিনিস? সে জন্যই রেগে আছে। আর রাগটা নিঝুমকে দেখে ঝেড়ে ফেলেছে। “ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে। তখন অতো শক্ত বকুনি দেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু ওর কিছু হলে আমার কী হবে তা কি ও বোঝে না? ও বোঝে না সেদিনের ঘটনা শুনে আমার কেমন লেগেছে? বুঝেছে আমি জানি। শুধু ওই অমন করে দূরে ঠেলে দেওয়াটা মেনে নিতে পারেনি…” ভাবতে ভেবতে কথা আর বলা হয়ে ওঠে না নিবিড়ের। আহত হরিণীর চোখ দুটোতে কখন যে ডুব মেরেছে কে জানে। কোথায় আছে, কী করছে সব ভুলে যেয়ে আরও এক পা এগোয় নিঝুমের দিকে। কী করতে চেয়েছিল, জানে না। তার আগেই বাধা পড়ে নিঝুমের কণ্ঠে-
-“উঁ।”
-“কী?”
-“উঁহু।”
-“কী উঁহু? কী করেছি?”
-“কিছু না।” অভিমানী স্বরটা যেন আরও অভিমানী হয়ে ওঠে।
-“হুম।”
নিঝুম আবার চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আবার বাধা দেয় নিবিড়, “কী সমস্যা? যাচ্ছিস কেন?”
মুখ ফিরিয়ে নেয় নিঝুম। তখনই চোখের কোণে চিকচিকে কিছুর আভাস ধরা পড়ে নিবিড়ের চোখে।
এবার আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারেনা সে। বলে, “কেন সেদিন অমন পাগলামি করতে গেছিলি? তুই জানিস আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম? বুঝিস না তুই তোকে ছাড়া আমি…?”…কথা শেষ হয় না, আবেগে গলা বুজে এসেছে নিবিড়ের।
অভিমানিনীর অভিমানের বরফ এতক্ষণে গলে জল। ইচ্ছে করে নাকটা টিপে দেয় দুষ্টুটার। কিন্তু “ধ্যাত কী সব ভাবছি!” বলে মনে মনে নিজেই নিজেকে বকা দেয় একটা। জলভরা চোখ এবার ভরে ওঠে দুষ্টু মিষ্টি হাসিতে। আর কিচ্ছু বলার দরকার নেই। শুধু ঘাড় কাত করে কানে হাত দিয়ে শব্দহীন ছোট্ট একটা শব্দ বলে, “স্যরি!”
সেই ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে আবার ভাষা হারিয়ে ফেলে নিবিড় রায়। না, সামনের জন কোন অপ্সরীর ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে নেই। কোন মোহের জালে জড়াবার ইঙ্গিতও করেনি। তবুও কী যেন আছে যা শুধুই আকর্ষণ করে, মায়ায় জড়ায়। দুষ্টু অথচ নিষ্পাপ চাহনি, আর সেই চাহনিতে কারুর জন্য ভীষণ ভালোবাসা মানুষটির সমস্ত সত্তাকে দিয়েছে অন্যরকম স্নিগ্ধতা। ‘স্নিগ্ধা’ নামটি বোধহয় এ কারণেই তার জন্য ঠিক করা হয়েছিল জন্মের পরপরই, মনে মনে স্বীকার করে নিবিড়। মুখে বলে, “হুম…উহহু এতো সহজে ক্ষমা করা যাবে না তো।”
-“কেন?” আদুরে গলায় প্রশ্ন করে ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলে নিঝুম। অভিমানের মেঘ কেটে গেছে। এখন আহ্লাদ করতে বাধা নেই। বাঁধ মানছেও না অবশ্য আহ্লাদ।
– “Compensation লাগবে।”, দুষ্টুমি ঝিলিক দিয়ে ওঠে নিবিড়ের চোখে।
সাথে সাথে সেই হরিণীর চপলতা ফিরে আসে, “ইশশশ! ভাল হচ্ছে না কিন্তু, এই! দেব এক চড়! একটা খেয়ে শখ মেটেনি? আবার খেতে চাস, না?” একই সাথে পালানোর রাস্তা খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে।
-“দে না। আমি তো খেতেই চাইছি।”, বলে আরও একটু এগোয় আরেকজন। এবার নিঝুমের আর যাবার জায়গা নেই। পিছিয়ে জানলার তাকেই বসে পড়ে পা ঝুলিয়ে। মুখে ড্যাম কেয়ার ভাব। কিছুতেই অপ্রস্তুত হতে রাজি নয় যেন। কিন্তু ততক্ষণে নিবিড়ের চোখ আবার বেঁধে নিয়েছে তার চোখ দুটোকে। আয়না না থাকলেও গালে রক্তিমাভা টের পায়। সম্মোহন করে ফেলছে যেন ছেলেটা তাকে…না পারছে চোখ নামাতে, না সরাতে। এই সম্মোহনের মধ্যেই কখন যেন ওর নিবিড় হাত বাড়িয়ে খুলে দিয়েছে পনিটেলটা, আর কানের একদম কাছে মুখ নিয়ে বলেছে, “শোন না, এরকম অগোছালো চুলের নিঝুমকেই আমার বেশি পছন্দ জানিস তো? লাভ ইউ।” আর তারপর ঠিকমতো লজ্জা পাওয়ারও সুযোগ না দিয়ে আরও কাছে এসে বলেছে, “আর কখনও সেদিনের মত কিছু করলে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেব মনে রাখিস।” তারপর আলতো করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে জানলা থেকে। আর…তারও পর দেখা যাচ্ছে সদ্য-ঘাড়-ধাক্কা-প্রাপ্তা মেয়েটি ভীষণ অখুশি হয়ে নিবিড়কে পেটানোর জন্য ওর পিছে বাড়িময় ছুটে বেড়াচ্ছে মায়েদের বকুনি উপেক্ষা করেই। কে বলবে এই একটু আগেও অভিমান বাসা বেঁধেছিল দুজনের মাঝে? ঠিক এই মুহূর্তে দুজনের হৃদয়সাগরের অতলে তলিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের বিরল সংমিশ্রনের ঝিনুকের রস নিঃসরণে গঠিত মুক্তো। যে মুক্তো জ্বলছে আগুনের মত; ভালোবাসার পবিত্রতায় শীতল সে আগুন। আর সাথে রয়েছে সবচেয়ে ভাল দুটি বন্ধুর সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ের কঠিন অথচ স্নিগ্ধ শুভ্রতা।