20-07-2021, 11:00 PM
বিদিশা বলল, এ বার বুঝতে পারছো তো? কেন পালিয়ে এসেছি ওখান থেকে।
-তুমি যে কলকাতায় এসে রয়েছো, সেটা তোমার স্বামী জানে?
-জানবে না কেন? আমি তো কলকাতায় এসেই মামলা করেছি ওর নামে। আর কয়েক মাস পরেই মামলার তারিখ। ওকে তখন কলকাতায় আসতে হবে। এর মধ্যেই দু দূবার ফোন করে শাসানোও হয়ে গেছে আমাকে। টাকা না পেলে কিছুতেই মুক্তি দেবে না আমাকে।
বিদিশাকে বললাম, তোমার বাবা, মা খুব চিন্তায় পড়ে গেছে তোমাকে নিয়ে?
বিদিশা আমার হাত দুটো ধরে বলল, ওরা দুজনেই খুব চিন্তা করে আমাকে নিয়ে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। খুবই আদুরে। তার কপালে যে এমন পরিণতি লেখা ছিল কে জানে?
আমিও বিদিশার হাতে হাত রেখে বললাম, খুবই পীড়া দায়ক, যন্ত্রণা দায়ক। কিন্তু জীবন তো কখনও থেমে থাকে না। স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক জীবন এক ধরনের চুক্তি। আর কেউ যদি সেই চুক্তি ভাঙে, বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে পড়ে, তাহলে শাস্তি তাকে পেতে হবেই। তুমি দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তাছাড়া তুমি তো কোন অন্যায় কাজ করো নি। এতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছো, এবার তোমার জবাব দেবার পালা।
বিদিশা বলল, জানো, মা বাপী খালি আমাকে বলতো, কি অমায়িক ব্যবহার ছিল দেবের। তুই ছেলেটাকে অকারণে সন্দেহ করলি। আজ যদি দেবের সাথেই তোর বিয়ে হতো, তাহলে তো এই দিনটা দেখতে হতো না। সবই ভাগ্যের খেলা, জানি না ভাগ্যে আমার কি লেখা আছে?
বিদিশার উদাসীন চোখ। অবিরাম মনের কষ্টে ভুগছে। দু বছর ধরে যেন একটা মারাত্মক বিষ বয়ে বেড়াচ্ছিল নিজেরই ভুলে। পাগলা কুকুরের মতন তার স্বামী তাকে শুধু দংশনই করেছে। জীবন যেন অসহ্য হয়ে উঠেছিল। আমাকে ছলছল চোখে বলল, ফিরে এসে যদি দেখতাম, তুমিও বিয়ে করে নিয়েছ, তাহলে হয়তো সত্যি সত্যি আমি মরেই যেতাম।
আবার সেই ভুলের স্বাকারোক্তি, ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্য ছটফটে মন, কাঁদতে চেষ্টা করেও গলাটা শুধু একবার কেঁপে উঠল। ভেতরে অনেক জমানো ব্যথা, বেদনা। আমাকে শুধু বলল, মিনু যে ইচ্ছা করেই সেদিন ওই কান্ডটা ঘটিয়েছিল, আমি বুঝিনি। আসলে আমি খুব বোকা আর সরল ছিলাম জানো তো? মিনু ছিল চালাক, তাই আমার জীবনটা ছিন্ন ভিন্ন করে দিল। সেই সাথে তোমারও।
আমি বিদিশাকে বললাম, শোনো ভুল করাটা কোন দোষের নয়, কিন্তু ভুল থেকে যে শিক্ষা নিতে পারে সেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লাভবান। -ভগবান তো যা শিক্ষা দিয়েই দিয়েছে, আর এর থেকে কি বেশি শিক্ষা পাবো আর জীবনে?
এখনো যেন আফশোস পিছু ছাড়ছে না বিদিশার মন থেকে। ওকে বললাম, যতই বাঁধা আসুক নিজেকে নিঃশ্বেস করে দেওয়ার তো কোন মানেই হয় না। This is a part of a life. অতীতের ভুলের কথা স্মরণ করে বর্তমানে বাঁচার কোন রসদ পাওয়া যায় না। আমাকে দেখেও তোমার কিছু মনে হচ্ছে না? কষ্ট ভুলে দিব্যি কেমন বেঁচে আছি। আর এমন কি হয়েছে তোমার? জীবনের নয় দুটো বসন্ত পার হয়ে গেছে। না তোমার রূপের কোন পরিবর্তন হয়েছে? না তোমার গোলাপের পাপড়ি ঝরে পড়ে গেছে। একটা ফালতু লোকের জন্য জীবন কে বলিদান দেবার তো কোন মানে হয় না। তাই না? জীবন কি অতই সস্তা?
এবার একটু হেসে বিদিশা বলল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি রেখে চেহারাটা তো কিম্ভূত কি মার্কাই করেছো। আমার কথা চিন্তা করে করে এই দশা হয়েছে তোমার। সেটা বুঝি খুব ভাল লাগছে আমার?
বললাম, আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর তো কোন নারী ছিল না, আর কোনদিন থাকবেও না। আমি হলাম তোমার আসল প্রেমিক বর। বিয়ের আগেও যা ছিলাম, এখনও তাই রয়েছি।
বিদিশা বলল, হয়েছে হয়েছে, এবার তো খাওয়া দাওয়া করে শুতে হবে না কি? মুড়ি জল টা খেয়ে নাও। আমি দেখি মায়ের কাছে গিয়ে রাতের খাবার কিছু জোটে কি না?
বিদিশা আমার পাশ থেকে উঠতেই যাচ্ছিল। ওর হাত ধরে ওকে টেনে বললাম, এই শোনো, আজ রাতে আমরা আর ঘুমোবো না। তুমি আর আমি শুধু গল্প করবো।
- তাই বুঝি? গল্প করা যেন পালিয়ে যাচ্ছে?
আমি বললাম, আরে এ গল্প তো সে গল্প নয়। এ হোল ভালবাসার গল্প। যাতে রোমান্স থাকবে, ড্রামা থাকবে। ট্র্যাজেডি তো আছেই আর সেই সাথে-
- সেই সাথে কি?
- সেই সাথে মস্তি।
বিদিশা চোখ বড় বড় করে বলল, মস্তি? সেটা কি রকম?
এই ধরো গল্প করতে করতে আমরা হারিয়ে যাবো। তুমি আর আমি হাত ধরাধরি করে ধরো কোথাও পাশাপাশি হাঁটছি। তুমি আমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলে। আমি তোমার কোমরে হাত দিলাম। সেখান থেকে তোমার পিঠ ছুঁয়ে তোমার ঘাড়ে, গলায়। তারপরই অকস্মাত-
অকস্মাত কি?
আমি দুম করে তোমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বসলাম। তুমি নিজেকে আর সামলাতে পারলে না। তুমিও আমাকে জড়িয়ে ধরলে। তারপর-
তারপর কি?
দূর, সব গল্প এখনই বলে দেবো না কি? তাহলে রাতের জন্য আর কি বাকী থাকবে?
তোমার অভিসন্ধী আমি বুঝে গেছি। এ সব গল্প শুনিয়ে আমাকে সারারাত জাগিয়ে রাখা না অন্য কিছু? আর অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে হবে না। গল্প করার জন্য অনেক রাত পড়ে আছে। আমি বরং মায়ের পাশে গিয়ে শুচ্ছি। মায়ের সাথে গল্প করবো। সেটাই ভাল হবে।
- না, না প্লীজ ওটা কোরো না, তাহলে আমি মারা পড়ব।
কি মারা পড়বে? মরা কি অতই সস্তা না কি?
বিদিশার জন্য একটা মান্না দের গানও ধরলাম, সুন্দরী গো, দোহাই তোমার মান কোরো না, আজ নিশীথে, কাছেই থাকো, না বোলো না।
এতেও বিদিশা গলল না, হাত ছাড়িয়ে উঠে গেল। বলল, দাঁড়াও আমি বাটি করে তোমার খাবারটা নিয়ে আসছি।
দু মিনিট পরেই ফিরলো। আমার হাতে মুড়ি জল ভর্তি বাটিটা ধরিয়ে বলল, এতে চামচে আছে। আসতে আসতে খাও। আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।
মূহূর্তে বিদিশার প্রস্থান। আমি মুড়ি জল ভর্তি বাটিটা হাতে ধরে মুখটা ব্যাজার করে বসে আছি। ভাবছি কি করবো এখন? অনেক চেষ্টা করেও চামচ শুদ্ধু মুড়িটা মুখে ঢোকাতে পারলাম না। দু মিনিট বিষন্ন মুখে বসে রইলাম। হঠাৎই চোখ পড়ল দরজার দিকে। দেখলাম বিদিশা মুখ বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে।
ক্রমশঃ
তারপর কি?
দূর, সব গল্প এখনই বলে দেবো না কি? তাহলে রাতের জন্য আর কি বাকী থাকবে?
তোমার অভিসন্ধী আমি বুঝে গেছি। এ সব গল্প শুনিয়ে আমাকে সারারাত জাগিয়ে রাখা না অন্য কিছু? আর অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে হবে না। গল্প করার জন্য অনেক রাত পড়ে আছে। আমি বরং মায়ের পাশে গিয়ে শুচ্ছি। মায়ের সাথে গল্প করবো। সেটাই ভাল হবে।
- না, না প্লীজ ওটা কোরো না, তাহলে আমি মারা পড়ব।
কি মারা পড়বে? মরা কি অতই সস্তা না কি?
বিদিশার জন্য একটা মান্না দের গানও ধরলাম, সুন্দরী গো, দোহাই তোমার মান কোরো না, আজ নিশীথে, কাছেই থাকো, না বোলো না।
এতেও বিদিশা গলল না, হাত ছাড়িয়ে উঠে গেল। বলল, দাঁড়াও আমি বাটি করে তোমার খাবারটা নিয়ে আসছি।
দু মিনিট পরেই ফিরলো। আমার হাতে মুড়ি জল ভর্তি বাটিটা ধরিয়ে বলল, এতে চামচে আছে। আসতে আসতে খাও। আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।
মূহূর্তে বিদিশার প্রস্থান। আমি মুড়ি জল ভর্তি বাটিটা হাতে ধরে মুখটা ব্যাজার করে বসে আছি। ভাবছি কি করবো এখন? অনেক চেষ্টা করেও চামচ শুদ্ধু মুড়িটা মুখে ঢোকাতে পারলাম না। দু মিনিট বিষন্ন মুখে বসে রইলাম। হঠাৎই চোখ পড়ল দরজার দিকে। দেখলাম বিদিশা মুখ বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে।
ক্রমশঃ