20-07-2021, 10:58 PM
হঠাৎই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো বিদিশা। বলল, অনেক কষ্ট করে লোকটার সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিলাম আমি। কিন্তু পারলাম কই? কোথায় তুমি? আর কোথায় আমার অপদার্থ স্বামী। কষ্টগুলো জমতে জমতে পাথর হয়ে গিয়েছিল ভেতরটা। দেহ ভেঙে যেন চূড়মার হয়ে গেছে। এই দু দুটো বছর, যেন শ্বাসরোধকর পরিবেশ। মানসিক যন্ত্রণারও একটা সীমা থাকে। এ যেন সীমানা অতিক্রম করে আমার শরীরের মাংসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মাংস পেশীগুলো চিবোচ্ছে আমাকে করে ফেলছে আরও অবসাদ গ্রস্থ। এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার জীবন। যেখান থেকে ফিরে আসার কোন পথ নেই।
আমি বললাম, তারপর?
তারপর আর কি? দু দুবার মরার জন্য ছটফট করে উঠলাম। এই পৃথিবীতে যদি সুখই না থাকে তাহলে বেঁচে থেকে লাভ কি? আমি মরতে চেষ্টা করেও মরতে পারলাম না। এমনই আমার কপাল।
আমি বললাম কিভাবে? কি করেছিলে তুমি?
বিদিশা বলল, একবার তো সিলিং ফ্যানে শাড়ি বেঁধে গলায় লটকাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু চেয়ারে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাই। আওয়াজ শুনে আমার বাড়ির কাজের মেয়েটা ছুটে আসে। - এ কি করছেন দিদি? এমন কাজ কি কেউ করে?
ওকে মানা করেছিলাম, আমার বরকে না বলতে। তাও বলে দেয় বোকার মতন। তারপর আমার ওপর শুরু হয় শারীরিক অত্যাচার।
-তোমার গায়েও হাত তুলতো?
-তবে আর বলছি কি? পশুর চেয়েও অধম।
আমি অবাক হয়ে বললাম, বলো কি?
যেন এমন শয়তান, আমাকে বলতো, তোমাকে এভাবে মরতে আমি দেবো না। যেদিন মনে করবো, তোমাকেই আমি গুলি করে মেরে দেবো।
- সে কী কেন?
ওর কাছে খুন করাটা কোন ব্যাপার নয়। এর আগেও না কি একটা খুন করেছে। আইন, পুলিস ওর কিচ্ছু করতে পারে নি।
বিদিশার কথা শুনে আমার গায়ের লোম রীতিমতন খাড়া হয়ে উঠছে। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। তবু বললাম, এখুনি লোকটাকে গারদে পাঠানো দরকার। অন্যায়ের একটা সীমা আছে।
বিদিশা বলল, ওর কাছে স্ত্রী, ভালবাসা এসবের কোন দাম নেই। শুনেছিলাম এর আগেও না কি একটা বিয়ে করেছিল লোকটা। স্ত্রী অত্যাচারে পরে পালিয়ে যায়। তারপরে বলির পাঁঠা হলাম আমি।
আমি বললাম, কিন্তু তুমি এই বিয়েটা তাহলে করলে কিভাবে? আমি তো শুনেছিলাম খুব ভাল জায়গায় বিয়ে হয়েছে তোমার। বিদিশা বলল, ভাল বিয়ে কে না চায় বলোতো? সব মেয়েরাই তো চায়, একটা সুন্দর স্বামী হবে তার, সুখে শান্তিতে ঘর করবে। কিন্তু এই বিদিশার জীবনে তো সেটা লেখা ছিল না। একবার তোমার সাথে বেইমানি করলাম আমি। আর একবার আমার স্বামী আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম বিদিশাকে, সন্মন্ধটা কিভাবে হয়েছিল?
-ওই কাগজ দেখে। দিল্লী নিবাসী ব্যবসায়ী ভাল পাত্রী খুঁজছে। বাবা বিজ্ঞাপন দেখেই একেবারে গলে গেলেন। ভাল খোঁজ খবরও নিলেন না। আমি একেবারে এক দানবের খপ্পরে গিয়ে পড়লাম।
বিয়ের আগে তোমরা কিছুই আঁচ করো নি?
একেবারেই না। বিয়ের সময় তো খুবই ভাল। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমার মন জয় করে নিল। তারপর কদিন বাদেই সামনে আসলো ওর আসল রূপ।
-তোমার স্বামী কি খুব বদমেজাজী?
-স্বামী নয়, ওকে আসামী বলাই ভাল। বিয়ের পরই ওর ব্যবসা খারাপের দিকে মোড় নেয়। তার সব রাগ গিয়ে পড়ে আমার ওপর। আমি নাকি অপয়া, ওকে বিয়ে করে ওর জীবন মাটি করে দিয়েছি।
আমি বললাম, তাহলে তখনই তো ডিভোর্সটা দিয়ে দিতে পারতো? এতদিন অপেক্ষা করবার কি দরকার ছিল?
বিদিশা বলল, তাহলে আর বলছি কোথায়? আমি যে কি কষ্ট সহ্য করেছি, সেটা শুধুমাত্র আমিই জানি। আমি অনেকবার বলেছি, তাহলে আমি কলকাতায় মা, বাবার কাছে ফিরে যাই। কোর্টে মিউচাল ডিভোর্স নিয়ে নেবো। তাতেও বাবু রাজী নয়। তার বক্তব্য ব্যবসায় যে লোকসানটা হয়েছে সেটা আমার বাবা মা পুষিয়ে দিক, তাহলেই তিনি আমাকে মুক্তি দেবেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, এ আবার কি রকম কথা? স্ত্রী হয়ে তুমিই তো খোরপোশ পেতে বাধ্য। এখন তো মেয়েদের ফেবারেই সব আইন কানুন।
বিদিশা বলল, উনি আইন কানুন মানেন না। আমাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে। যতক্ষণ না পাঁচ লাখ টাকা না পাচ্ছে আমাকে রেহাই দেবে না।
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, পাঁচ লাখ টাকা? এ কি মগের মুল্লুক না কি?