20-07-2021, 10:56 PM
হঠাৎই বিদিশার সেল ফোনটা বাজতে শুরু করেছে। ফোনটা ওর ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে রাখা ছিল। বিদিশা ব্যাগের চেন খুলে ফোনটা বার করলো। আমাকে বলল, বাড়ী থেকে মা ফোন করেছে। দেখি কি বলে?
ফোনটা কানে ধরে বিদিশা ওর মা কে বলল, বলো? এই তো আমি দেবের বাড়ীতেই আছি। হ্যাঁ ওর শরীর এখন আগের থেকে ভাল। ওষুধ খাচ্ছে। বিপদ এখন কেটে গেছে।
বিদিশার মা সম্ভবত আমার মায়ের কথাও জিজ্ঞাসা করলেন। বিদিশা উত্তরে বলল, এই তো মা একটু আগে এই ঘরেই ছিল। সারাদিন ধরে প্রচুর খাটাখাটনি করেছে। এখন পাশের ঘরে গেছে, বিশ্রাম নিচ্ছে।
বিদিশার মা সম্ভবত আমাকে চাইছিলেন। কথা বলতে ভীষন উৎসুক করছিলেন। বিদিশা ওর মা কে বলল, এই তো দেব, আমার সামনেই রয়েছে। কথা বলো।
আমি বিদিশার হাত থেকে সেল ফোনটা ধরে হ্যালো বললাম।
-হ্যাঁ আমি দেব বলছি কেমন আছেন?
-তুমি কেমন আছো বাবা? কতদিন পরে তোমার গলার আওয়াজ শুনলাম।
হ্যাঁ, এই তো ভালই আছি। তা আপনি, মেশোমশাই কেমন আছেন?
আর আমাদের আর কি? বুড়ো হয়ে গেছি। এখন শুধু বিদিশার চিন্তাতেই আমরা মশগুল। ওর যে কি হবে ভগবানই জানে?
আমি বললাম, কেন এত চিন্তা করছেন? সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিদিশার মা’ আমাকে ভীষন অনুরোধ করলেন। যেন বুক ফেটে একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এল।
- আমার মেয়েটাকে একটু দেখো বাবা। তুমি ছাড়া ওকে মনোবল জোগানোর মতন কেউ নেই। চুপি চুপি একটা কথা বলছি, বিদিশাকে বোলো না, ও এর আগে দু দুবার আত্মহত্যা করবারও চেষ্টা করেছিল।
আমি প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলাম, বিদিশার মা য়ের কথা শুনে। - আপনি বলছেন কি?
হ্যাঁ বাবা, খুব চিন্তা করি ওকে নিয়ে। ওর বাপীর তো ওর কথা চিন্তা করে করে শরীরটাও ভেঙে পড়েছে। শুধু মেয়েকে নিয়ে টেনশনে ভোগে। তোমাকে ভুল বুঝে তখন যে কি ছেলেমানুষি করলো মেয়েটা। এখন তার শাস্তি ওকে পেতে হচ্ছে।
আমি সান্তনা দিয়ে বললাম, পুরোনো কথা ভুলে যান মাসীমা। এখন নতুন করে আমাদের আবার জীবন শুরু। দেখবেন সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে। নো টেনশন ফেনশন।
-একদিন এসো না আমাদের বাড়ীতে?
- হ্যাঁ যাবো। শরীরটা আর একটু সুস্থ করে নিই। তারপরেই যাচ্ছি।
এখানে এলে কিন্তু একদিন গান ও শোনাতে হবে। তোমার গানের যা ভক্ত ছিল বিদিশা। শুধু তোমার কথা বলতো।আমি হেসে বললাম, - এখনও তাই আছে। আমার মতন আমার গানকেও ভুলতে পারেনি বিদিশা।
রাখছি বলে, ফোনটা ছেড়ে দিল বিদিশার মা। তখন দেখি বিদিশা মুখটা ব্যাজার মতন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম, বিদিশা কি তাহলে ওর মায়ের কথাগুলো শুনে নিল? আমি এখন বকাবকি করবো, তাই আশংকায় ভুগছে?
-কি আর বললো মা?
- ওই তোমার কথা, আমার কথা, তোমার বাড়ীর কথা।
আর কি বলল?
আর কি বলবে? আর কিছু বলে নি তো?
নিশ্চই কিছু বলেছে। তুমি আমার কাছে লুকোচ্ছো।
আমি বিদিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, জানো? পৃথিবীতে যারা সবচেয়ে বেশি আপন হয়, তাদের কাছে কিছু লুকোতে নেই।
-তাহলে তুমি আমার কাছে লুকোচ্ছো কেন? মা আর কি বলেছে আমাকে বলো?
আমি বললাম, তুমি যদি আমাকে এত আপন করো, তাহলে কি সাংঘাতিক ঘটনাটাই কেমন চেপে গেছো আমার কাছে।
বিদিশা আঁচ করে রীতিমতন স্তম্ভিত হয়ে গেল। আমাকে উড়িয়ে দিয়ে বলল, ও এমন কিছু নয়।
-এমন কিছু নয়? সুইসাইড অ্যাটেম্ট, আর তুমি বলছো এমন কিছু নয়?
আরে বাবা মরে তো যাই নি। এই তো দিব্যি বেঁচে আছি তোমার সামনে।
আমি মুখটা গম্ভীর মতন করে বললাম, জীবন কি এতই সস্তা? যে যখন মনে করলাম, টা টা বাই বাই করে চলে গেলাম?
বিদিশা প্রায় বাকশূণ্য হয়ে গেছে। মুখটা নিচু করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। ওকে বললাম, কেমন এমন করতে চেয়েছিলে বলো আমাকে?
আমার চোখের দিকে আরও একবার উদাস চোখে তাকালো বিদিশা। কন্ঠ রোধ, একটু বলার চেষ্টা করলো বিদিশা। দেখলাম গলাটা বেশ ভারী। অনেক কষ্ট করে বলল, মরে যেতেই তো চেয়েছিলাম। তুমিই আমাকে ফিরিয়ে আনলে।
হা ইশ্বর, এই ফুলের মতন মেয়েটাকে তুমি আর কষ্ট দিও না।