20-07-2021, 01:01 PM
(This post was last modified: 10-08-2021, 02:59 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এর মধ্যে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া নাটক জামিয়ে ফেললেন। হঠাৎ ঢাকায় নির্বিচারে গনহত্যা চালিয়ে বসল পাকিস্তানিরা। মুক্তিকামীরাও স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বসলেন। শুরু হল যুদ্ধ। সমস্ত মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘঠতে লাগল সব অসভাবিক ঘটনা। দলে দলে মানুষ যে যার সুবিধা মত দলে যোগ দিতে লাগল। বাবা মৌন মুক্তি যোদ্ধা হলেন। চাচা হলেন শ্রেণী শত্র“ খতম আন্দোলনের সমর্থক।মাঝে মাঝে বাবা আর চাচার মধ্যে উত্তপ্ত কথা কাটা কাটি হত। বাবা বলতেন শ্রেণী শত্র“ খতমের নামে তোরা ত ডাকাতি করছিস। চাচা বলতেন, বাঁশের লাটি আর খোন্তা-কোদাল, দু’একটা পাখি মারা বন্দুক দিয়ে তোমরা দেশ স্বাধীন করতে পারবেনা। বাবার দৃষ্টিতে শ্রেণী শত্র“ খতমকারীরা স্রে¬ফ ডাকাত । আদর্শহীন একদল সংঘবদ্ধ খুনী। চাচা বলতেন, তোমরা তো স্রে¬ফ মুজিবের চামচা। সে পাকিস্তানের জেলখানায় বসে পোলাও-বিরাণী খাচ্ছে, আর তোমরা খালে-বিলে, বনে জঙ্গলে লাঠি সোটা নিয়ে যুদ্ধ করছ এবং স্বেচ্ছায় নিজেরা বলছ শহীদ হচ্ছে।সেতো জেল থেকে বেরিয়ে নানা চমৎকার বক্তৃতা দিয়ে তোমাদের মন ভোলাবে। বাবা আর কিছু বলতেন না। দেখতে দেখতে গ্রাম প্রায় লোকজন শূন্য হয়ে গেল। বাবা তার কিছু প্রতিবেশি নিয়ে আমাদের বাড়িতে সারা রাত গল্প গুজব করতেন। গোপনে বিভিন্ন ক্যাম্পে খবরা খবর পৌছে দিতেন। চাচা প্রায় বাড়ি আসতেন না। ছোট বাচ্চা মেয়ে নীলার জন্যও কোন দিন আসতেন না। চাচি কেঁদে কেটে অস্তির হতেন।হঠাৎ একদিন রাতে বাড়ি ফিরলেন। সাথে একটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এক বস্তা ভর্তি গহনা ঘাটি এবং নগদ টাকা। চাচার চোখ দুটা লাল টকটক করছে। বাবা সাহস করে বললেন, কিরে আবেদ এগুলো কোথায় পেলি? চাচা কিছু বললেন না। হাত মুখ ধুতে লাগলেন। চাচী ফুপিয়ে ফূপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। আমার মাও অবাক হলেন। বাবা বললেন, এগুলো কোথায় পেলি? চাচা বললেন, এগুলো এখন আমার সম্পদ। বাবায় চাচায় বেশ কথা কাটা কাটি হল। এক সময় আমরা সবাই শুনতে পেলাম চাচা বললেন দেখ বড় ভাই হয়েছ বলে সব কিছুতে নাক গলিও না। এখন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের সময় কোন নিয়ম কানুন থাকে না। তুমি আমাকে কিছু করতে বাধ্য কর না। আমি একটু পরেই চলে যাব।আর ফিরব না। চাচা তার কথা রাখলেন। সেদিন রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন।এক পলকের জন্য নীলাকে দেখলেন না। মা-চাচি-বাবা আমি কাঁদছি অঝোরে। নীলা কাঁদছে ট্যা- ট্যা করে। ওর কান্নার মধ্যে ও কি কোন ইঙ্গিত ছিল? সেই যে চাচা গেলেন, আর এলেন না! যুদ্ধ শেষ হলেও তিনি এলেন না। বাবা বহু খোজাখুজি করলেন।