19-07-2021, 12:40 PM
দুপুরে কোচিং ক্লাসে যায়। সারাক্ষণই আনমনা হয়ে থাকে নিঝুম। বিকেলে মায়ের সাথে ফেরার সময় ভিড়ের রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ টান পড়ে হাতে। চোখ পড়ে পাশের ফুটপাতের দিকে। তাকিয়ে চমকে যায়। তার জন্য এত বড় চমক যে এভাবে এখানে অপেক্ষা করবে, নিঝুম ভাবতেও পারেনি।
গত তিনটি দিন নিবিড় নিঝুমের ল্যান্ডফোনে মিসডকল, এবং শেষে থাকতে না পেরে ফোন দিয়ে গেছে। প্রচণ্ড অস্থিরতায় কেটেছে দিনের প্রতিটা মুহূর্ত, রাতের প্রতিটা নিস্তব্ধতা। ফোন বাজলেই মনে হয়েছে এই বুঝি নিঝুমের ফোন আসলো। কিন্তু না, বারবার হতাশ হতে হয়েছে তাকে। বারবার মনে হয়েছে, কোন বিপদ হল না তো? প্রজ্ঞা আর নিলীমাকে দিয়ে বারবার ফোন করিয়েছে নিঝুমের বাড়িতে, কোনবারই নিঝুম তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। নিবিড় বেশি মেসেজ দেওয়ারও সাহস পায়নি নিঝুমকে, কারণ নাম্বারটা নিঝুমের বাবার। একেকটা দিন, একেকটা নরককুণ্ডের মত মনে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারেনি নিবিড় আজ। বের হয়ে পড়ে বাসা থেকে নিঝুমের খোঁজে, দরকার হলে ওর বাসাতেই যাবে, যা হয় হোক।
উদভ্রান্ত চেহারায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিবিড় রায়। নিবিড় জানে নিঝুমের কোচিং শিডিউল। জানে আজ এখানে তার ক্লাস আছে। তাই আগেই এসে দাঁড়িয়ে ছিল নিঝুমের জন্য। জানে নিঝুমের সাথে তার মা থাকবে, নিবিড়কে এই সময় এখানে দেখলে মহাবিপদ হয়ে যাবে, তারপরও চলে এসেছে সে কোন কিছুর পরোয়া না করে। দূর থেকেই নিঝুমকে মায়ের পিছে পিছে আসতে দেখে। মুখের দিকে একবার নজর দিতেই বুঝে যায় মেয়েটা খুব কষ্টে আছে কোন কিছু নিয়ে। আর সেই কোন কিছুটা যে তার সাথে যোগাযোগ না করা-ই, তা বুঝতে নিবিড়ের একটুও সময় লাগে না। কেমন যেন করতে থাকে নিবিড়ের বুকের ভেতরটা ওই মুখের দিকে তাকিয়ে।
কোন দিকে না তাকিয়েই হাঁটছিল নিঝুম। একেবারে নিবিড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত ধরে টান দিয়েছে সে। মুখ ফিরিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায় নিঝুমের। এক মুহূর্তের জন্য চোখাচোখি তাকিয়ে থাকে দুজন। নিবিড়ের আকুতিভরা দৃষ্টি আর নিঝুমের বেদনা ও বিস্ময়ের মিলিত অভিব্যক্তি যেন অনন্তকালের জন্য থমকে যায়। তারপরই হাত ছেড়ে দেয় নিবিড়, আলতো চাপ দিয়ে বোঝায় সামনে এগুতে, মা পিছে তাকালে সমস্যা হবে। চোখে চোখে কথা হয়ে যায়। নিঝুম সাবধানে চোখ মুছে মায়ের পিছে এগোয়। নিবিড় দাঁড়িয়ে থাকে পিছনে। নিঝুম আর ফিরে না তাকিয়েও অনুভব করতে পারে তার প্রতিটা পদক্ষেপ নিবিড় মনে গেঁথে রাখছে, তার চলে যাওয়া পথের উপর পড়ে থাকছে নিবিড়ের দৃষ্টি। আর নিবিড় বুঝতে পারে নিঝুমের আর পিছনে না তাকানো চোখের জল লুকোনোর প্রানান্তকর কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা। একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে মনে প্রশ্ন জাগবে, একফোঁটা জল কি নিবিড়ও মুছে ফেললো না চোখের কোণ থেকে?
রাতে নিবিড়ের মেসেজ পায় নিঝুম, পরদিন যেভাবে হোক ফোন করার অনুরোধ রয়েছে সেখানে। পরদিন সুযোগ এসেও যায় ফোন করার। কিন্তু শুরু থেকেই নিঝুম কেমন যেন গুটিয়ে যায় নিজের ভেতর। তার প্রাণচঞ্চল স্বভাবের আভাস মাত্রও পাওয়া যায় না কথায়। অনেক জেরা, অনেক কাকুতি মিনতির পর মুখ খোলে সে, বলে অনন্যা তাকে কী বলেছে, আর সেজন্য নিঝুম নিজেকে অপরাধী মনে করে। সব শুনে নিবিড় প্রচণ্ড রেগে যায় অনন্যার উপর। কিন্তু একই সাথে খুব কষ্টও পায় নিঝুম এই কদিন একা একা কষ্ট পেয়েছে ভেবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিঝুমকে ডাকে
-নিঝুম?
-হুম?
-স্যরি।
-তুই কেন স্যরি বলছিস? স্যরি তো আমার বলা উচিত, আমার জন্য অনন্যা…
-চুপ কর। অনন্যার জন্য কোনদিন আমার মনে কিছু ছিল না। অনন্যা নিজেও তো জানত যে আমি তোকে ভালোবাসি। শুধু তোকে। তারপরও এমন কথা ও কেন বলল আমি জানিনা। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি শুধু তোকে ভালোবাসি। আমি শুধুই তোর। তোর নিবিড়। আমার নিঝুমের নিবিড়।
-হুম…
-উম নিঝুম, তুই কাঁদছিস?
-কই না তো।
-আমাকে তুই নিজেকে চিনাতে আসিস না।
-আচ্ছা। রাখি এখন।
-কেন?
-ভাল লাগছে না।
-কেন?
-জানিস না?
-জানি। স্যরি।
-যাহ আবার তুই স্যরি বলিস কেন? ঠিক আছে তো।
-স্যরি বলছি তোর কষ্টটা আমি এই কদিন ভাগ করে নিতে পারিনি, তুই একা একাই কষ্ট পেয়েছিস তাই। শোন
-বল
-তোকে এত কম কথা বললে মানায় না। তুই কথা বলবি ননস্টপ ট্রেনের মত, সেটাই তোকে বেশি স্যুট করে। বুঝলি পাগলি?
এবার নিঝুম হেসে দেয়। নিবিড়ের খুব ইচ্ছে করে ফোনেই একটা কিস করে দেয়। কিন্তু নিঝুম যদি রেগে যায়, তাই কিছু বলে না। শুধু অনুভব করতে থাকে নিজের ভেতর বয়ে যাওয়া ভালোবাসার ঝর্ণাধারা।
গত তিনটি দিন নিবিড় নিঝুমের ল্যান্ডফোনে মিসডকল, এবং শেষে থাকতে না পেরে ফোন দিয়ে গেছে। প্রচণ্ড অস্থিরতায় কেটেছে দিনের প্রতিটা মুহূর্ত, রাতের প্রতিটা নিস্তব্ধতা। ফোন বাজলেই মনে হয়েছে এই বুঝি নিঝুমের ফোন আসলো। কিন্তু না, বারবার হতাশ হতে হয়েছে তাকে। বারবার মনে হয়েছে, কোন বিপদ হল না তো? প্রজ্ঞা আর নিলীমাকে দিয়ে বারবার ফোন করিয়েছে নিঝুমের বাড়িতে, কোনবারই নিঝুম তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। নিবিড় বেশি মেসেজ দেওয়ারও সাহস পায়নি নিঝুমকে, কারণ নাম্বারটা নিঝুমের বাবার। একেকটা দিন, একেকটা নরককুণ্ডের মত মনে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারেনি নিবিড় আজ। বের হয়ে পড়ে বাসা থেকে নিঝুমের খোঁজে, দরকার হলে ওর বাসাতেই যাবে, যা হয় হোক।
উদভ্রান্ত চেহারায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিবিড় রায়। নিবিড় জানে নিঝুমের কোচিং শিডিউল। জানে আজ এখানে তার ক্লাস আছে। তাই আগেই এসে দাঁড়িয়ে ছিল নিঝুমের জন্য। জানে নিঝুমের সাথে তার মা থাকবে, নিবিড়কে এই সময় এখানে দেখলে মহাবিপদ হয়ে যাবে, তারপরও চলে এসেছে সে কোন কিছুর পরোয়া না করে। দূর থেকেই নিঝুমকে মায়ের পিছে পিছে আসতে দেখে। মুখের দিকে একবার নজর দিতেই বুঝে যায় মেয়েটা খুব কষ্টে আছে কোন কিছু নিয়ে। আর সেই কোন কিছুটা যে তার সাথে যোগাযোগ না করা-ই, তা বুঝতে নিবিড়ের একটুও সময় লাগে না। কেমন যেন করতে থাকে নিবিড়ের বুকের ভেতরটা ওই মুখের দিকে তাকিয়ে।
কোন দিকে না তাকিয়েই হাঁটছিল নিঝুম। একেবারে নিবিড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত ধরে টান দিয়েছে সে। মুখ ফিরিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায় নিঝুমের। এক মুহূর্তের জন্য চোখাচোখি তাকিয়ে থাকে দুজন। নিবিড়ের আকুতিভরা দৃষ্টি আর নিঝুমের বেদনা ও বিস্ময়ের মিলিত অভিব্যক্তি যেন অনন্তকালের জন্য থমকে যায়। তারপরই হাত ছেড়ে দেয় নিবিড়, আলতো চাপ দিয়ে বোঝায় সামনে এগুতে, মা পিছে তাকালে সমস্যা হবে। চোখে চোখে কথা হয়ে যায়। নিঝুম সাবধানে চোখ মুছে মায়ের পিছে এগোয়। নিবিড় দাঁড়িয়ে থাকে পিছনে। নিঝুম আর ফিরে না তাকিয়েও অনুভব করতে পারে তার প্রতিটা পদক্ষেপ নিবিড় মনে গেঁথে রাখছে, তার চলে যাওয়া পথের উপর পড়ে থাকছে নিবিড়ের দৃষ্টি। আর নিবিড় বুঝতে পারে নিঝুমের আর পিছনে না তাকানো চোখের জল লুকোনোর প্রানান্তকর কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা। একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে মনে প্রশ্ন জাগবে, একফোঁটা জল কি নিবিড়ও মুছে ফেললো না চোখের কোণ থেকে?
রাতে নিবিড়ের মেসেজ পায় নিঝুম, পরদিন যেভাবে হোক ফোন করার অনুরোধ রয়েছে সেখানে। পরদিন সুযোগ এসেও যায় ফোন করার। কিন্তু শুরু থেকেই নিঝুম কেমন যেন গুটিয়ে যায় নিজের ভেতর। তার প্রাণচঞ্চল স্বভাবের আভাস মাত্রও পাওয়া যায় না কথায়। অনেক জেরা, অনেক কাকুতি মিনতির পর মুখ খোলে সে, বলে অনন্যা তাকে কী বলেছে, আর সেজন্য নিঝুম নিজেকে অপরাধী মনে করে। সব শুনে নিবিড় প্রচণ্ড রেগে যায় অনন্যার উপর। কিন্তু একই সাথে খুব কষ্টও পায় নিঝুম এই কদিন একা একা কষ্ট পেয়েছে ভেবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিঝুমকে ডাকে
-নিঝুম?
-হুম?
-স্যরি।
-তুই কেন স্যরি বলছিস? স্যরি তো আমার বলা উচিত, আমার জন্য অনন্যা…
-চুপ কর। অনন্যার জন্য কোনদিন আমার মনে কিছু ছিল না। অনন্যা নিজেও তো জানত যে আমি তোকে ভালোবাসি। শুধু তোকে। তারপরও এমন কথা ও কেন বলল আমি জানিনা। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি শুধু তোকে ভালোবাসি। আমি শুধুই তোর। তোর নিবিড়। আমার নিঝুমের নিবিড়।
-হুম…
-উম নিঝুম, তুই কাঁদছিস?
-কই না তো।
-আমাকে তুই নিজেকে চিনাতে আসিস না।
-আচ্ছা। রাখি এখন।
-কেন?
-ভাল লাগছে না।
-কেন?
-জানিস না?
-জানি। স্যরি।
-যাহ আবার তুই স্যরি বলিস কেন? ঠিক আছে তো।
-স্যরি বলছি তোর কষ্টটা আমি এই কদিন ভাগ করে নিতে পারিনি, তুই একা একাই কষ্ট পেয়েছিস তাই। শোন
-বল
-তোকে এত কম কথা বললে মানায় না। তুই কথা বলবি ননস্টপ ট্রেনের মত, সেটাই তোকে বেশি স্যুট করে। বুঝলি পাগলি?
এবার নিঝুম হেসে দেয়। নিবিড়ের খুব ইচ্ছে করে ফোনেই একটা কিস করে দেয়। কিন্তু নিঝুম যদি রেগে যায়, তাই কিছু বলে না। শুধু অনুভব করতে থাকে নিজের ভেতর বয়ে যাওয়া ভালোবাসার ঝর্ণাধারা।