19-07-2021, 10:14 AM
অদ্ভুত এক মন্ত্রবলে কেটে যায় একটি বছর। একদম উড়ে চলে যায় যেন। নিবিড়ের অন্তত তাই মনে হয়। এই একটি বছরে নিঝুমকে সে চিনেছে আরও ভালভাবে। নিঝুমের অসাধারণ মনোবল আর চিত্তের দৃঢ়তা তাকে করেছে বিমুগ্ধ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক যেটা নিঝুমের চরিত্রের, তা হল, নিবিড়কে নিয়ে কেউ একটা বাজে কথা বললে সে সহ্য করতে পারে না। শুধুমাত্র এই কারণে আকাশের সাথে অনেক ভাল বন্ধুত্বটাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে নিঝুম দ্বিধা করেনি একবিন্দু। হ্যাঁ, আকাশকে তাদের সম্পর্কটার কথা জানিয়েছিল নিঝুম। কিন্তু আকাশ সেটাকে সহজভাবে নিতে পারেনি। নিঝুম পারিবারিক সমস্যার কারণে তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় সে এটাকে বলেছে “বন্ধুত্বের অপমান”। নিবিড়কে বেছে নিয়েছে শুনে রাগে ক্ষোভে বলেছে নিঝুম তাকে শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে নিবিড়কে আকর্ষণ করার জন্য, নিঝুমের চরিত্রের দিকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি আকাশ। শুধু এতটুকু পর্যন্ত জল গড়ালেও নিঝুম চুপচাপ হজম করতে পারত সবকিছু। কিন্তু এরপর আকাশ নিবিড়ের উদ্দেশ্যে অজস্র কটুকথার বান ছুঁড়েছে। আর এখানে এসেই নিঝুমের ধৈর্যের বাঁধ গেছে ভেঙ্গে। সংক্ষেপে অথচ কঠিন বক্তব্যে সে জানিয়ে দিয়েছে, আকাশের সাথে তার বন্ধুত্বের এখানেই ইতি। যে মানুষ নিবিড়কে সম্মান করে কথা বলতে পারবেনা, তার দিকে তাকাতেও সে নারাজ। নিবিড় নিজে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। তার যে খারাপ লাগেনি, তা না, কিন্তু নিঝুমের রাগ দেখে সে নিজেই রাগ করতে ভুলে গিয়েছিল……সম্পর্কের এক বছর পর এক শীতের বিকেলে মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে মাখতে এসব কথাই ভেসে আসছিল বারবার নিবিড়ের মনে। নিঝুম! নিঝুম নিঝুম আর নিঝুম! নিবিড়ের সমস্ত অন্তরাত্মা জুড়ে ধ্বনিত হয় এই একটিই নাম। সমস্ত পৃথিবী এসে কেন্দ্রীভুত হয় তিন অক্ষরের এই একটি শব্দে। ইস! যদি এই সমস্ত কথা নিঝুমকে বলা যেত, এক্ষুনি! তা তো হবার উপায় নেই, প্রেয়সী তার এখনও মুঠোফোনহীনা। এখনও সেই আগের মতই ছোট্ট ছোট্ট সময়ে ছোট্ট ছোট্ট কথার ঠাসবুননে গাঁথা হয় তাদের প্রেমের মালা। “কী করছে এখন মেয়েটা?”, ভাবতে ভাবতে আনমনেই নিজের মোবাইলে হাত চলে যায় নিবিড়ের। নিঝুমের ল্যান্ডলাইনে একটা মিসডকল দিয়েই দেয়। সাথে সাথেই তার ফোন বাজতে শুরু করে। স্ক্রীনে নাম উঠেছে, “নিঝুম”।