Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
[Image: IMG-20210719-WA0004.jpg]

Update 3

প্রতিদিনের মতোই আজও সকালে ঘুম থেকে উঠে আকাশের মা রাতের ম্যাক্সি ছেড়ে একটা নীল রঙের ম্যাচিং শাড়ি পড়ে বিছানা গুছিয়ে রাখছিলেন। আকাশের তখনও রাতের ঘুম শেষ হয়নি । আর আকাশের বাবা তখন সবে ব্রাশ করে বালতিতে জল ভর্তি করে স্নান করার তোড়জোড় শুরু করছেন। জামা কাপড় এখনও খোলা হয়নি তার।

ঠিক তখনই ড্রেসিং টেবিলে রাখা নোকিয়া ফোনটা বেজে উঠলো । স্নেহা দেবী ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে কেউ একজন ভীত সন্ত্রস্ত গলায় উদ্বেগ ঝড়িয়ে কাঁপা কন্ঠে বললো “ হ্যালো দিদি ! „

কন্ঠ চিনতে কোন অসুবিধাই হলোনা আকাশের মায়ের। কন্ঠটা হলো সৌরভের। সৌরভ হলো আকাশের মামা স্নেহাংশু বাবুর সমবয়সী বন্ধু এবং সহপাঠী। পাশাপাশি বাড়ি। সৌরভের কাঁপা কন্ঠস্বর শুনে আকাশের মা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন “ কি হয়েছে ? তোর গলা কাঁপছে কেন ? সব ঠিক আছে তো ? „

কাঁপা কন্ঠেই সৌরভ বললো “ দিদি , জ্যেঠা আর নেই ! „

আকাশের দাদুকে সৌরভ ছোট থেকেই জ্যেঠা বলে ডাকে। সৌরভের নিজস্ব কোন কাকা জ্যেঠা নেই। তাই যখন সৌরভ জ্যেঠা বললো তখন স্নেহা দেবীর বুঝতে পারলেন যে সৌরভ তারই বাবা অর্থাৎ সুধাংশু বাবুর কথা বলছে। কথাটা শুনেই স্নেহা দেবীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। সৌরভ কাঁপা কন্ঠে আরো বললো “ আমি স্নেহাংশু কে ফোন করেছি। ও পরের ফ্লাইট থেকেই আসছে। তুমি যতো শীঘ্র পারো চলে এসো। জ্যেঠিমা পুরো ভেঙে পড়েছে। „

অপর প্রান্তে সৌরভ আরও কিছু বললো কিন্তু সেগুলো আকাশের মায়ের কানে গেল না। আধগোছানো বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লেন তারপর ডুকরে কেঁদে উঠলেন। সেই কান্না শুনে শুভাশীষ বাবু বাথরুম থেকে দৌড়ে বেডরুমে চলে এলেন “ কি হয়েছে ? কাঁদছো কেন ? „ স্নেহা দেবীর পুরো সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।

স্নেহা দেবী তার স্বামীর পেটের কাছের জামা চেপে ধরে তাতে মুখ লাগিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন “ এ আমার কি হলো গো ? বাবা আমাদের ছেরে চলে গেল । „

“ কি বলছো ! বাবা তো সুস্থ সবল মানুষ। তার কি হবে ? „ আকাশের বাবার গলায় বিস্ময় ঝরে পড়ে।

“ সৌরভ ফোন করেছিল। ওই বললো। „ কাঁদতে কাঁদতে বললেন স্নেহা দেবী

মাথার উপর থেকে আরও একটা আশ্রয়ের হাত উঠে গেল । এটা ভাবতেই শুভাশীষ বাবুর চোখ ঝাপসা হয়ে পড়লো। স্নেহা দেবী কে শান্ত করার জন্য আকাশের বাবা বললেন “ শান্ত হও একটু। আকাশ ঘুমাচ্ছে। জেগে যাবে। „ আকাশের কথা শুনে স্নেহা দেবী আওয়াজ বন্ধ করলেন কিন্তু কান্না থামাতে পারলেন না।

তারপর ফোন তুলে দেখলেন সৌরভ তখনও লাইনে আছে। তারপর সৌরভের সাথে কথা বলে কনফার্ম হলেন ঘটনাটা সত্যি। আজ ভোরেই আকাশের দাদু দেহ রেখেছেন। আকাশের বাবা সৌরভ কে বললেন  “ হ্যাঁ আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি। তুমি মাকে ( বীণাপাণি দেবী  ) কে দেখো। আমরা খুব শীঘ্রই আসছি। „

তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন “ চলো যেতে হবে তো। „ আকাশের বাবা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অফিস যাওয়ার কিন্তু সেখানে আর যাওয়া হলো না। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই তারা নিজেদের গাড়ি Austin Maestro  করে সুধাংশু বাবুর বাড়ির দিকে রওনা হলো। আকাশ তখনও ঘুমাচ্ছে। মৃত বাড়িতে কুকুর নিয়ে যাওয়া যায় না তাই বাদশাকে সুচেতা দেবীকে বলে সেখানেই রেখে তারা রওনা হয়েছেন।

রাস্তায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে আকাশ ঘুম থেকে উঠে পড়লো । মাকে কাঁদতে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো “ মা তুমি কাদচো কেন ? „

“ কিছু না সোনা । „

আকাশ মায়ের চোখ মুছিয়া দিল। তারপর জিজ্ঞেস করলো “ আমলা কোথায় যাচ্ছি । „ আকাশ কথা বলতে শিখে গেলেও এখনও তোতলায়।

“আমরা তোমার দাদুর বাড়ি যাচ্ছি সোনা। „ আকাশ দুঃখ পাবে ভেবে তিনি খুব সংযত হয়ে কান্না থামালেন। কিন্তু বুকটা মুচড়ে উঠতে লাগলো বারবার।

সকালে যানজট তেমন নেই তাই প্রায় দেড় ঘন্টার মধ্যে নটা বাজার কিছুক্ষণ আগে তারা বারাসাত পৌঁছে গেলেন । বারাসাতেই স্নেহা দেবীর বাপের বাড়ি। যখন বড়ো পুরানো দু তলা বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো তখন তারা দেখলো বাড়ির সামনে বেশ জটলা আছে। লোক জনের ভীড়। রাস্তার ধারে গাড়িটা রেখে তারা ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন। বাড়ির মেন গেট দিয়ে ঢুকলেই লিভিং রুম পড়ে । সেখানেই সোফা চেয়ার টেবিল সরিয়ে মৃতদেহ রাখা হয়েছে।

লিভিং রুমে আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশীতে ভর্তি। সৌরভের মা বীণাপাণি দেবীর পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আর বীণাপাণি দেবীর ঠিক সামনে  একটা সাদা চাদরে মোড়া সুধাংশু বাবুর মৃত দেহ রাখা হয়েছে। বাবার প্রাণহীন মড়া মুখ দেখেই স্নেহা দেবীর চোখে আবার জল চলে এলো। যেন শুকিয়ে যাওয়া নদীতে হঠাৎ করে বান চলে এলো। সুধাংশু বাবুর বুকের উপর মাথা রেখে স্নেহা দেবী কাঁদতে কাঁদতে বললেন “ বাবা তুমি আমাদের ছেড়ে গেলে ? কে দেখবে এখন আমায় ? আমি কাকে বাবা বলে ডাকবো ? কি করে হলো এইসব ? „

ভোর থেকেই বীণাপাণি দেবী কান্নাকাটি করে এখন একটু ধাতস্থ ছিলেন। খোলা চুল শুকিয়ে যাওয়া আর বয়সের জন্য গুটিয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে  সৌরভের মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বসে ছিলেন তিনি। মেয়েকে এইভাবে কাঁদতে দেখে তার চোখ থেকেও অশ্রুর বর্ষা হতে লাগলো। “ ভোরবেলায় দেখি ঘুমের ভিতরেই গোঁ গোঁ আওয়াজ করছে । আমি ডাকলাম কিন্তু চোখ খুলছিল না। গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে করতে বললো জল জল। আমি টেবিল থেকে জল নিয়ে খাইয়ে দিলাম। তারপর থেকেই কথা বলছে না। „ মেয়ের থেকেও তিনি আরো বেশি কাঁদতে কাঁদতে বললেন কথা গুলো। বলার সময় তার গলা বুজে আসছিল। খুব কষ্ট করে তিনি বললেন।

আকাশ তখন বাবার কোলে ছিল। মাকে আর দিদাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে সে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো “ বাবা মা কাদছে কেন ? „

“ কেউ হারিয়ে গেছে তো। তাই কষ্টে কাঁদছে । „

“ হালিয়ে গেলে বুঝি কষ্ত পায় । „

“ খুব কষ্ত হয় সোনা। „ কথাটা তিনি বললেন বটে মুখ দিয়ে। কিন্তু কথাটা বলতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনে যতগুলো মানুষকে হারিয়েছেন সবার মুখ চোখের সামনে ভেঁসে উঠলো। আর সেই সব মুখ চোখের সামনে ভাঁসতেই আকাশের বাবার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।

আকাশকে এই পরিস্থিতিতে রাখা ঠিক নয়। তাই তিনি আকাশকে নিয়ে দু তলায় চলে গেলেন। সেখানে তেমন কেউ নেই।

দুপুরের দিকে সবাই মোটামুটি ধাতস্থ হলেন । দুঃখটা অনেক সয়ে এসছে। তাই আকাশের বাবা আকাশকে নিয়ে নিচে নেমে এসছেন। ঠিক সেই সময়ে এলেন আকাশের মামা। এসে ঘরে ঢুকতেই স্নেহা দেবী ঝাপিয়ে পড়লেন ভাইয়ের উপর। কষে দুটো চড় মারলেন ঠাসসস ঠাসসস করে । সেই চড়ের আওয়াজ  করে সারা ঘরে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।

চড় মারতে মারতেই বললেন “ আমি শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় তোকে বলে গিয়েছিলাম বাবা মা কে দেখিস আর তুই দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছিস । কি এমন কাজ যা পরিবারের থেকেও বড়ো ? „

কথা গুলো স্নেহা দেবী নিজের ভাইকে বলছিলেন কিন্তু সেই কথা গুলোই আকাশের বাবার গায়ে চাবুকের মতো আছড়ে পড়তে লাগলো। যেন কথা গুলো তার জন্যেই বলা হচ্ছে। শালাকে বাঁচানোর জন্য আকাশের বাবা স্নেহা দেবীকে টেনে সরিয়ে আনলেন। এইভাবে সবার সামনে মারা উচিত না , খারাপ দেখায়। দিদির কথায় স্নেহাংশু বাবু চুপ থাকাই সমীচীন মনে করলেন। তারপর তিনিও বাবার মৃতদেহ আঁকড়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন।

বিকালের দিকে আকাশের বাবা মামা সৌরভ আরো কয়েকজন মিলে দাহ সৎকারের জন্য চলে গেলেন পাশেরই সোদপুর শ্মশানে । তারপর সন্ধ্যার দিকে দাহ করে তারা ফিরলেন। এদিকে সকাল থেকে মা মেয়ে কিছুই খাই নি তাই আকাশের বাবা জোড় করে সৌরভের মায়ের রান্না করা ভাত আর তরকারি খাইয়ে দিলেন। রাত গভীর হলেও মা মেয়ে শান্ত হতে পারে না। তারা তখনও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মেঝেতে চুপচাপ বসে আছেন। আর খাটে বাকি সবাই বসে আছে । পাড়া প্রতিবেশী অনেক আগেই চলে গেছে।

স্নেহা দেবী কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর খাটে বসে থাকা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো “  আমি মাকে নিয়ে যাবো ।  তোর হাতে ছাড়তে পারবো না আর। „

বীণাপাণি বললেন “ না মা , আমাকে এখানেই থাকতে দে । এখানে যে আমার স্মৃতি আছে অনেক। „

“ স্মৃতির মাঝে বাঁচা যায় কিন্তু একা স্মৃতির মাঝে বেঁচে থাকা যায় না। „

“ আমি এখানেই থাকবো। একা থাকলে একাই থাকবো। „ দৃঢ় কিন্তু শান্ত কন্ঠে বললেন বীণাপাণি দেবী।

আকাশের বাবা তখন আকাশকে বললেন “ দিদিমা কে বলো আমাদের সঙ্গে যেতে। „ বাচ্চাদের কথা বয়স্ক মহিলারা অনেক সময় ফেলতে পারেন না। তার উপর বীণাপাণি দেবী হলেন আকাশের নিজের দিদিমা। আকাশের কথায় হয়তো বীণাপাণি দেবী যেতে রাজি হবেন।

আকাশকে শুভাশীষ বাবু খাট থেকে নিচে নামিয়ে দিলেন। আকাশ ছোট ছোট পায়ে বীণাপাণি দেবীর কাছে গিয়ে তার কোলে বসে বললো “ দিদা চলো না আমাদেল সাথে „ বলে দিদার গলা জড়িয়ে ধরলো ।

এই একটা কথাতেই কাজ হলো। বীণাপাণি দেবী আবার কাঁদতে শুরু করলেন। আর আকাশের মাথায় একটা চুমু খেলেন।

কিছুক্ষণ পর আকাশের মা গোছগাছ শুরু করলেন। বীণাপাণি দেবীর সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে বিভিন্ন ব্যাগে ভরতে লাগলেন।  বীণাপাণি দেবী চুপচাপ ঘরের দেওয়াল গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন , আর এইসব আকাশের মামা খাটে বসে দেখছিলেন। আসলে তিনিও চাইছিলেন মাকে দিদি নিয়ে যাক। এখানে মায়ের সাথে একা থাকার কোন ইচ্ছাই তার ছিল না বা নেই।

রাতে কিছু একটা খেয়ে সবাই শুয়ে পড়লো। কিন্তু আকাশ আর আকাশের মামা বাদে কারোরই ঘুম এলো না। সকাল বেলা সৌরভের মা বাবা আর সৌরভকে এই বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে তারা রওনা হলেন অর্জুন ভবনের উদ্দেশ্যে। আর বীণাপাণি দেবী গাড়ির ভিতর থেকেই সেই দুতলা বাড়িটা দেখলেন যতক্ষণ দেখা যায়। নিজের বৈবাহিক সম্পর্কের পুরোটাই এই বাড়িতে কাটিয়েছেন তিনি। সব স্মৃতি মনে পড়তেই চোখ ঝাপসা হয়ে পড়লো।


বাড়িতে এসে বীণাপাণি দেবী আকাশকে নিয়ে গেস্টরুমে বসলেন। আকাশের বাবা তড়িঘড়ি স্নানে করতে চলে গেলেন । আর স্নেহা দেবী স্বামীর জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে চলে গেলেন । কিছুক্ষণ পরেই একটা রোগা ফর্সা মেয়ে বাদশা কে নিয়ে আর একটা পুতুল হাতে নিয়ে ঘরে উপস্থিত হলো। ঘরে ঢুকেই বাদশা ঘেউ ঘেউ করতে করতে লেজ নাড়তে নাড়তে খাটে উঠে আকাশের পাশে বসলো।

সুচিকে দেখে বীণাপাণি দেবী চিনতে পারলেন। সুচির মুখে দেখেই তার চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠলো “ এই , এদিকে আয় । কতো বড়ো হয়ে গেছিস তুই। „ আসলে বিভিন্ন কাজের চাপে অন্নপ্রাশনের পর বীণাপাণি দেবীর আর এই বাড়িতে আসা হয়ে ওঠেনি। আর এই দুই বছরে সুচির উচ্চতা বেড়ে হয়েছে প্রায় চার ফুট। “ কি করিস এখন ? „

“ আমি নাচ শিখি । „ সুচি তখন খাটে উঠে বীণাপাণি দেবীর পাশে বসে পড়েছে।

“ আর কলেজ ! „

“ পরের বছর থেকে যাবো ।  এখনও ছয় বছর তো হয়নি । তাই কলেজ ভর্তি নেইনি । „

আর এইসব কথাবার্তা আকাশ চুপচাপ শুনছিল । সে তার দিদা কে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরলো। সেটা সুচি দেখলো । সে আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বীণাপাণি দেবীকে জিজ্ঞেস করলো “ তুমি এখানেই থাকবে ? „

“ হ্যাঁ মা, আমি এখানেই থাকবো । „

“ আমি মা নই । „ রেগে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো সুচি।

রাগলে যখন সুচি গাল ফুলিয়ে কথা বলে তখন খুব মিষ্টি দেখায় তাকে। তাই বীণাপাণি দেবী সুচির মিষ্টি মুখ আর মিষ্টি রাগ দেখে ঠোঁটের কোনায় হাঁসি নিয়ে বললেন “ তাহলে ? „

“ আমি সুচিত্রা সবাই সুচি বলে ডাকে। শুধু বাবাই মা বলে ডাকে। „ তখনও রাখ কমেনি সুচির।

“ আচ্ছা , তাহলে আমি তোকে সুচি বলেই ডাকবো । „ বলে সুচির কপালে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা বীণাপাণি দেবী একটা চুমু খেলেন

“ আমি তোমায় কি নাম ডাকবো  । „ সুচির রাগ কমেছে।

“ আমায় তুই দিম্মা বলে ডাকিস । „ বললেন দিম্মা। ডাকটা খুব পছন্দ হয়েছে সুচির। সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা গেল।

আকাশের কিন্তু একদম পছন্দ হলো না সে বললো “ না , তুমি সুদু আমাল দিদিমা । „

“ উহুহু শখ কতো ! শুধু আমাল দিদিমা ।  „ সুচি মুখ ভেঙিয়ে বললো আকাশকে । আসলে কয়েকদিন ধরে আকাশ আর সুচির মধ্যে ঝামেলা চলছে। কারন হলো বাদশা।  আকাশ বিকালে নিচে নামতে পারে না। যখন মা নামিয়ে দেয় তখনই নামে । তাই বেশিরভাগ সময় বাদশাকে বিকালে ঘোরাতে নিয়ে যায় সুচি। সেখান থেকেই সুচির প্রতি বাদশা একটু বেশিই নেওঠা হয়ে পড়েছে। আর এটা আকাশ সহ্য করতে পারছে না। ওর মনে হচ্ছে বাদশাকে সুচি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে । অবশ্য এইসব মনের কথা আকাশ ছাড়া কেউ জানে না। তাই যখন বীণাপাণি দেবী সুচিকে অনুমতি দিলেন দিম্মা ডাক ডাকার তখন আকাশের মনে হলো সুচি তার দিদাকেও নিয়ে নেবে।

সুচিকে এইভাবে ভেংচি কাটতে দেখে বীণাপাণি দেবী হেঁসে উঠলেন। তারপর আরো অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন। কিছুক্ষণের জন্য স্নেহা দেবী ঘরে এসে দেখে গেলেন যে সুচির সাথে কথা বলার জন্য মায়ের মন কিছুটা অন্য দিকে ঘুরে আছে।

সেদিন রাতে ঘুমানোর সময় আকাশ জেদ ধরলো সে তার দিদার সাথেই ঘুমাবে। কারন সুচিকে কোনভাবেই দিদাকে নিতে দেবে না । “ মা আমি দিদাল সাথে ঘুমাবো । „

আকাশ এখনও স্নেহা দেবীর বুকের খায়। ছেলের কথা শুনে তিনি ভাবলেন এই সুযোগে হয়তো দুধ খাওয়া টা বন্ধ করবে আর মাও একা থাকবে না। “ আচ্ছা, ঘুমাও । „

তাই করা হলো। বীণাপাণি দেবী আর আকাশ একসাথেই ঘুমালো। এই প্রথম আকাশ মাকে ছেড়ে ঘুমাচ্ছে। তাই ঘুম আসছিল না। দিদাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালেও তার দুই চোখ এক হচ্ছিল না। তখন বীণাপাণি দেবী বললেন “ গল্পো শুনবি রাজকুমার আর রাজকুমারীর গল্পো । „

আকাশ কখনো গল্পো শোনেনি। আকাশ একটা হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়লো

তারপর বীণাপাণি দেবী শুরু করলেন --- এক দেশে এক বিরাট রাজা ছিলেন। তার মেয়ে ছিল এক রাজকুমারী। সে একদিন পুকুরে স্নান করতে গেল । রাজকুমারী যেই জলে নেমেছে ওমনি পুকুরের ভিতরের রাক্ষস তার পা ধরে টেনে জলের তলায় রাজ্যে নিয়ে গেল। এদিকে রাজ্যে শোরগোল পড়ে গেল। রাজ্যের সমস্ত সৈন্য জলে যায় কিন্তু সেই রাক্ষস সবাইকে জলের তলার রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখে। শেষে রাজা ঘোষনা করলো যে রাজকুমারী কে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করতে পারবে তাকে এই রাজ্য দিয়ে দেবো। ঠিক তখন এক রাজকুমার এলো সাদা ঘোড়ায় চড়ে। কোমরে তার তরবারি। সে বললো আমি করবো মুক্ত। এতোটা হতেই বীণাপাণি দেবী দেখলেন আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে।

সকালে যখন সুচির সাথে আকাশের দেখা হলো তখন আকাশ বললো “ জানিস দিদা আমায় গলপো শুনিয়েছে । রাজকুমার আর রাজকুমারীর গলপো। „

সেদিন রাতে  সুচিও বায়না ধরলো সে দিদার কাছেই ঘুমাবে। সুচেতা দেবী সুচিকে বীণাপাণি দেবীর কাছে এনে বললেন “ দেখো না , বলছে তোমার কাছেই ঘুমাবে। „

“ ঘুমাক  না। কোন অসুবিধা নেই। „ হাঁসি মুখে বললেন বীণাপাণি দেবী।

সমরেশ বাবু এটা মেনে নিতে পারলেন না। সকাল বিকালে খেলাধুলা ঠিক আছে , কিন্তু রাতে একসাথে ঘুমানো একটু বাড়াবাড়ি । সমরেশ বাবুর এই ঘটনা ভালো না লাগার কারন দেবাশীষ বাবু দুই পরিবারের এত ঘনিষ্টতা পছন্দ করতেন না। সুচির বীণাপাণি দেবীর সাথে ঘুমানো নিয়ে তিনি আপত্তি করেছিলেন কিন্তু সুচির জেদের কাছে তিনি হেরে গেলেন।

রাতে বীণাপাণি দেবী দুজনকেই গল্প শোনালেন

বীণাপাণি দেবী দুই পাশে দুইজন কে নিয়ে শুয়ে একটা অন্য গল্পো শুরু করলেন । সেটা শুনে সুচি বললো “ না দিম্মা , কালকে যেটা শুনিয়েছো সেটাই শুনবো। „ বীণাপাণি দেবী গতকালের বলা গল্পটা আবার প্রথম থেকেই শুরু করলেন । এতে আকাশ বেশ রুষ্ট হলো।সেটা অবশ্য কেউ দেখতে পেলো না। ---- তারপর রাজকুমার সেই পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। তখন পুকুর পাড়ের এক নাম না জানা গাছের মাথা থেকে একটা তোতা বলে উঠলো রাককস মরবে না। রাককস মরবে না । রাজকুমার জিজ্ঞেস করলো তাহলে কিভাবে মরবে ?

এতোটা শোনানোর পর বীণাপাণি দেখলেন দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার কিছুক্ষণ পর সুচেতা দেবী এসে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 11 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 19-07-2021, 08:02 AM



Users browsing this thread: 159 Guest(s)