18-07-2021, 09:34 PM
(This post was last modified: 18-12-2021, 02:08 PM by Bumba_1. Edited 5 times in total. Edited 5 times in total.)
শৈশবের এক টুকরো স্মৃতি
লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- আমার ছোটমামার ফটোগ্রাফ
শুনেছি ২৫শে ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল বলে ওঁর নাম নাকি "যিশুতোষ" রাখা হয়েছিল। পরবর্তীকালে নাম বদলে "মনতোষ" করা হয়।
মা'এর মুখে গল্প শুনেছিলাম ছোটবেলায় পিচ দিয়ে ইনি বিভিন্ন মডেলের অসাধারণ সব Canadian engine তৈরি করতে পারতেন। পরে অবশ্য এর নিদর্শন পেয়েছিলাম .. অফিসার্স কোয়ার্টারে থাকাকালীন উনি আমাকে ওইরকম একটি engine বানিয়ে দিয়েছিলেন, সেটি সযত্নে এখনও রাখা আছে আমার কাছে।
খুব মজার মানুষ ছিলেন। যেকোনো মানুষের বাচনভঙ্গি অনায়াসেই নকল করতে পারতেন উনি .. তবে সেগুলি ছিল বুদ্ধিদীপ্ত। এখন তো দেখি সস্তার mimicry করে রাতারাতি লোকে বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে। তখনকার দিনে যদি মিরাক্কেল বা Laughter's night এর মতো প্ল্যাটফর্ম থাকতো তাহলে উনিও আজ সমাজের একজন বিখ্যাত ব্যাক্তি হতে পারতেন।
ছোটবেলায় যারা শিশুদের আব্দার মেটায় তারাই হয় তাদের সবথেকে প্রিয়। আমার আর আমার ছোটমামার সম্পর্কটাও ছিল ঠিক সেইরকম। প্রচুর সুখস্মৃতি, প্রচুর মজার ঘটনা জরিয়ে আছে ওঁর সঙ্গে। আজ তার মধ্যে একটি ঘটনা শেয়ার করবো তোমাদের সঙ্গে ...
ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি দই এর প্রতি আমার একটা অমোঘ আকর্ষণ ছিলো (এখনও আছে)। আমার মামার বাড়ি ছিল চন্দননগর। ওখানকার বিখ্যাত সুর্যকুমার মোদক মিষ্টান্ন ভান্ডার এর দই একবার খেলে মুখে লেগে থাকার মতো।
তখন আমার বয়স বড়জোর তিন বছর হবে। মামার সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছি। প্রসঙ্গত উনাকে আমি কোনোদিন মামা বলে ডাকি নি। উনার ডাক নাম ছিল "বাবুন"। আমি উনাকে বাবুন দা বলতাম। যাই হোক, উনার সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছি, বাবুন দা কি আর দই না খাইয়ে ছাড়বে! এই ভেবে ওইটুকু বয়সেই মনে একটা চাপা উত্তেজনা হচ্ছিলো।
এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির পর আমরা সুর্যকুমার মোদক মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে এলাম। ওখানে বাবুন দা'র কয়েকজন বন্ধুবান্ধব বসেছিল। বাবুন দা ওদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলো। কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই ওরা গল্পে মশগুল হয়ে গেলো। মাঝে মাঝে সবাই আমার গাল টিপে, চুমু খেয়ে আমাকে আদর করে দিচ্ছিলো। আমার এসব কিছুই ভালো লাগছিলো না। আমার মনে তখন একটাই অদম্য ইচ্ছা - বাবুন দা কখন আমাকে একটা ছোট্ট ভাঁড়ে মিষ্টি দই কিনে দেবে আর কখন সেটা আমি খাবো।
একসময় ওদের গল্প শেষ হলো। কিন্তু অবাক কান্ড, বাবুন দা রিকশা ডাকছে। বেমালুম ভুলে গিয়েছে আমাকে দই খাওয়ানোর কথা। অন্য কোনো শিশু হলে তখনই বায়না করে মনে করিয়ে দিতো। কিন্তু শিশুকাল অর্থাৎ ওইটুকু বয়স থেকেই আমার মধ্যে অসম্ভব একটা আত্মসম্মান বোধ ছিলো (এখনো আছে)। কিছুতেই বলতে পারলাম না দই কিনে দেওয়ার কথা। তবে এতটাই অভিমান হয়েছিল যে একটাও কথা বলছিলাম না আমার বাবুন দা'র সঙ্গে।
রিকশায় করে ফেরার পথে বাবুন দা জিজ্ঞাসা করলো "কি রে বুম্বা শরীর খারাপ নাকি .. চুপ হয়ে গেলি কেনো?" আমি আদো আদো স্বরে বললাম "দই খেতে নেই, দই খেলে ছলিল (শরীর) খালাপ (খারাপ) হয়।"
আমার কথা শুনে দেখলাম বাবুন দা'র ছোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। বললো ”ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে .. বাবুলাল রিকশা ঘোরাও .. চলো সূর্য্য মোদক।"
miss you বাবুন দা ..