18-07-2021, 06:56 PM
#অন্য_রূপকথা
এবার লকডাউনের পর থেকেই দেখছি, আমাদের পাড়ায় অনেকে ভ্যান বা সাইকেলে চড়ে জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসছেন। তরি-তরকারি, ফল, বিভিন্নরকম মাছ, ফুল-মালা... সব ই পাওয়া যায় এভাবে। আমার বেশ সুবিধা হয়েছে তাতে... রোজ রোজ বাজার যেতে হয় না, জাস্ট হাঁকডাক শুনে গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে এলেই হলো...। এভাবেই, বেশ কয়েকজনের সাথে রীতিমতো দোস্তি হয়ে গেছে আমার। ওঁরাও জেনে গেছেন কী কী লাগে আমার, আর সেইমতো জানলার কাছে এসে "ও দিদিইইইইই" বা "ও বৌদিইইইইইই" বলে ডাক দেন।
কিন্তু সবকিছু পাওয়া গেলেও, আমার ছোট্ট খরগোশটার জন্য ওর প্রিয় কলমী শাক সবাই আনেন না। শুধু একজন দাদা ই আনেন। তা, তিনিও গত সপ্তাহে একদিন ও আসেননি...তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই যেতে হয়েছিল বাজারে। বেচারা ছোট্ট খরগোশ...আর তো কিছু খায়ও না!
আজ সকালে...কি যেন একটা করছিলাম, হঠাৎ সেই পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে "দাদা, দাঁড়াও" বলে নেমে এলাম। বেশ কয়েক আঁটি শাক নিয়ে, একটু রাগ আর অভিমান মিশিয়ে বললাম "দাদা, তুমি গেল হপ্তায় আসো নি কেন? জানো, তোমার জন্য আমার কত অসুবিধা হয়েছে? একদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করে করে তারপর বাজারে যেতে গিয়ে আমার লগ ইন করতে দেরি হয়ে গেছে। ভাগ্যিস, আমার অফিসের সবাই খুব ভাল, নইলে কি হতো বলো তো?"
আমার কথা শুনে একটুও বেজার হলেন না দাদা। বরং একগাল হাসলেন। তারপর বললেন "আর বলবেন না দিদি, আমার ছেলের কান্ড! সবে এই ক'মাস হলো উবের বাইক চালানো শুরু করেছে। তা, আমি বাড়িতে কিছু দিতেটিতে বলিনা। যতদিন পারি, একাই চালাই। ছেলেও দিচ্ছিল না টাকা। ওর মা রেগে যেত, বলতো ছেলে গোল্লায় যাবে এবার। আমি তাও কিছু চাইনি। হঠাৎ এই রোববারের আগের রোববার বাড়িতে মিস্ত্রি এনে হাজির! কি না, এতদিন ধরে টাকা জমাচ্ছিল, এবার আমাদের বাথরুমটা ঠিকঠাক করবে। আমাদের...ইয়ে...ওই বাংলা বাথরুম তো...ওর মায়ের অসুবিধা হয়...হেঁ হেঁ...ছেলে বলল শুধু মায়ের কেন, তোমার ও বয়স বাড়ছে, এত হাঁটাহাঁটি করো ভ্যান নিয়ে, পা ব্যথা হয় নিশ্চয়ই...তাই দুজনের জন্যই কমোড দরকার। তা, এক সপ্তাহ ধরে সেসব চলল। ভাগ্যিস পাশের বাড়ি ওদের বাথরুমে যেতে দিত আমাদের...তবে হ্যাঁ, খুব সুবিধা হয়েছে দিদি... হেঁ হেঁ...পাগল ছেলে...যা জমিয়েছিল, সব দিয়ে দিল... বলে আবার জমবে, কিন্তু তোমাদের সুস্থ থাকাটা আগে দরকার..."
আরও কিছু বলছিলেন উনি।
তোবড়ানো গালে হাসতে হাসতে।
সে হাসিতে জ্যোৎস্নার ঝিলিক!
পরনে মলিণ জামা, কিন্তু, হৃদয়ে মালিণ্য নেই এতটুকু!
মুখে 'পাগল ছেলে' কিন্তু... আসলে গর্বে উদ্বেলিত পিতৃহৃদয়।
আমরা সবাই চাই বাবা মা কে খুশি রাখতে। কেউ পারি, কেউ পারিনা। কিন্তু, বাবা মায়েরা বড্ড অল্পেতেই খুশি...। এই যেমন ইনি। বারবার মনে হচ্ছিল 'কমোডে খুব সুবিধা' ছাপিয়ে 'আমার ছেলে আমাদের কথা ভেবেছে' এতেই ওঁর যাবতীয় তৃপ্তি। এই ভাবনাতেই বড় সুখ!
আজ, আরও একবার ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিলেন রূপকথা হয়! রাজপুত্তুর রাজা-রানির জন্য জীবনের যুদ্ধ জয় করতে পারে, আর বলতে পারে "তোমাদের দুজনের দরকার ছিল, তাই..."। আর ভালবাসার উষ্ণতায় ভরে যেতে পারে হৃদয়...
জীবন কত্ত সাধারণ।
জীবন কত্ত সুন্দর!
এবার লকডাউনের পর থেকেই দেখছি, আমাদের পাড়ায় অনেকে ভ্যান বা সাইকেলে চড়ে জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসছেন। তরি-তরকারি, ফল, বিভিন্নরকম মাছ, ফুল-মালা... সব ই পাওয়া যায় এভাবে। আমার বেশ সুবিধা হয়েছে তাতে... রোজ রোজ বাজার যেতে হয় না, জাস্ট হাঁকডাক শুনে গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে এলেই হলো...। এভাবেই, বেশ কয়েকজনের সাথে রীতিমতো দোস্তি হয়ে গেছে আমার। ওঁরাও জেনে গেছেন কী কী লাগে আমার, আর সেইমতো জানলার কাছে এসে "ও দিদিইইইইই" বা "ও বৌদিইইইইইই" বলে ডাক দেন।
কিন্তু সবকিছু পাওয়া গেলেও, আমার ছোট্ট খরগোশটার জন্য ওর প্রিয় কলমী শাক সবাই আনেন না। শুধু একজন দাদা ই আনেন। তা, তিনিও গত সপ্তাহে একদিন ও আসেননি...তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই যেতে হয়েছিল বাজারে। বেচারা ছোট্ট খরগোশ...আর তো কিছু খায়ও না!
আজ সকালে...কি যেন একটা করছিলাম, হঠাৎ সেই পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে "দাদা, দাঁড়াও" বলে নেমে এলাম। বেশ কয়েক আঁটি শাক নিয়ে, একটু রাগ আর অভিমান মিশিয়ে বললাম "দাদা, তুমি গেল হপ্তায় আসো নি কেন? জানো, তোমার জন্য আমার কত অসুবিধা হয়েছে? একদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করে করে তারপর বাজারে যেতে গিয়ে আমার লগ ইন করতে দেরি হয়ে গেছে। ভাগ্যিস, আমার অফিসের সবাই খুব ভাল, নইলে কি হতো বলো তো?"
আমার কথা শুনে একটুও বেজার হলেন না দাদা। বরং একগাল হাসলেন। তারপর বললেন "আর বলবেন না দিদি, আমার ছেলের কান্ড! সবে এই ক'মাস হলো উবের বাইক চালানো শুরু করেছে। তা, আমি বাড়িতে কিছু দিতেটিতে বলিনা। যতদিন পারি, একাই চালাই। ছেলেও দিচ্ছিল না টাকা। ওর মা রেগে যেত, বলতো ছেলে গোল্লায় যাবে এবার। আমি তাও কিছু চাইনি। হঠাৎ এই রোববারের আগের রোববার বাড়িতে মিস্ত্রি এনে হাজির! কি না, এতদিন ধরে টাকা জমাচ্ছিল, এবার আমাদের বাথরুমটা ঠিকঠাক করবে। আমাদের...ইয়ে...ওই বাংলা বাথরুম তো...ওর মায়ের অসুবিধা হয়...হেঁ হেঁ...ছেলে বলল শুধু মায়ের কেন, তোমার ও বয়স বাড়ছে, এত হাঁটাহাঁটি করো ভ্যান নিয়ে, পা ব্যথা হয় নিশ্চয়ই...তাই দুজনের জন্যই কমোড দরকার। তা, এক সপ্তাহ ধরে সেসব চলল। ভাগ্যিস পাশের বাড়ি ওদের বাথরুমে যেতে দিত আমাদের...তবে হ্যাঁ, খুব সুবিধা হয়েছে দিদি... হেঁ হেঁ...পাগল ছেলে...যা জমিয়েছিল, সব দিয়ে দিল... বলে আবার জমবে, কিন্তু তোমাদের সুস্থ থাকাটা আগে দরকার..."
আরও কিছু বলছিলেন উনি।
তোবড়ানো গালে হাসতে হাসতে।
সে হাসিতে জ্যোৎস্নার ঝিলিক!
পরনে মলিণ জামা, কিন্তু, হৃদয়ে মালিণ্য নেই এতটুকু!
মুখে 'পাগল ছেলে' কিন্তু... আসলে গর্বে উদ্বেলিত পিতৃহৃদয়।
আমরা সবাই চাই বাবা মা কে খুশি রাখতে। কেউ পারি, কেউ পারিনা। কিন্তু, বাবা মায়েরা বড্ড অল্পেতেই খুশি...। এই যেমন ইনি। বারবার মনে হচ্ছিল 'কমোডে খুব সুবিধা' ছাপিয়ে 'আমার ছেলে আমাদের কথা ভেবেছে' এতেই ওঁর যাবতীয় তৃপ্তি। এই ভাবনাতেই বড় সুখ!
আজ, আরও একবার ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিলেন রূপকথা হয়! রাজপুত্তুর রাজা-রানির জন্য জীবনের যুদ্ধ জয় করতে পারে, আর বলতে পারে "তোমাদের দুজনের দরকার ছিল, তাই..."। আর ভালবাসার উষ্ণতায় ভরে যেতে পারে হৃদয়...
জীবন কত্ত সাধারণ।
জীবন কত্ত সুন্দর!