16-07-2021, 02:41 PM
মঞ্জরী পুজো করতে গেল আর আমি আবার মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখতে লাগলাম ওর পাছার দুলুনি যতক্ষন না চোখের আড়াল হল। ও ছোট বেডরুমে ঢুকতে আমি চারপাশটা দেখে নিলাম ঘরের। বেশ বড় ফ্ল্যাট ১০০০ স্কোয়ার ফুট হবেই। ছোট বেডরুম থেকে বেরোলেই বামপাশে কিচেন আর একটু এগিয়ে কাচের ডাইনিং টেবিল সোফার বামপাশে ওয়াশরুম। ফ্রিজ, ওয়াশিং মেসিন সহ সমস্ত আধুনিক জীবনযাপনের সরঞ্জাম মজুত ঘরে। বুঝতেই পারলাম ওর বড় কিছুর অভাব রাখেনি শুধু ওর একাকিত্বটা কাটাতে পারেনি যেটা একটা মেয়ের সবথেকে আগে দরকার। যাইহোক আমি ঘরের দেওয়ালে লাগানো পেন্টিং, শো পিস গুলো দেখছিলাম কখন মঞ্জরী পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি। পাশ থেকে বলল এগুলো সব আমি পছন্দ করে কিনেছি।আমার নিজের হাতে সাজানো। আমি বললাম দারুন। তোমার পছন্দ আছে মানতেই হবে। এই প্রথম আমি কিছু বললাম। মঞ্জরী- মুখ থেকে এতক্ষনে কথা বেরোল? দাঁড়াও আমি কোলড্রিংক্সটা বের করি। এই বলে ও ফ্রিজটা খুলে কোল্ডড্রিংকসটা বের করল আর দুটো কাচের গ্লাসে ঢেলে একটা আমায় দিলো একটা নিজে নিল। আমার হাতে দেওয়ার সময় ওর হাতের সাথে আমার হাতটা ঠেকল। যেটুকু ছোঁয়া পেলাম বুঝলাম বেশ নরম হাত। আমি কোল্ডড্রিংক্স এ চুমুক দিলাম আর মঞ্জরী ডান পাশের ছোট সোফা চেয়ারে বসল। আমায় জিজ্ঞেস করল আসতে কোন প্রবলেম হল কি না কেউ দেখল কি না।। আমার জড়সড় ভাবটা আস্তে আস্তে কাটছিল আর সহজ হচ্ছিলাম আস্তে আস্তে। আমি বললাম না কোন প্রবলেম হয়নি আর কেউ দেখেনি শুধু সিকিউরিটি গার্ড দেখেছে আর জিজ্ঞেস করেছে কোথায় যাব,কি কাজে যাব। তুমি যা বলেছিলে তাই বলেছি। মঞ্জরী বলল ও কোন ব্যাপার না এরকম গ্যাস,এসি, কেবল এসব লোক আসতেই থাকে। আমি মঞ্জরীর হাতে ক্যাডবেরিটা দিলাম আর গোলাপটাও। মঞ্জরী ভীষন খুশি হয়ে গোলাপটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ নিল কিছুক্ষন চোখ বুজিয়ে তারপর ফুলদানিতে রাখল যত্ন করে। ক্যাডবেরিটা টেবিলের উপর রাখল আর বলল থ্যাংক ইউ। আমি হেসে ঘাড় নাড়লাম। গোলাপটা পেয়ে ওর খুশি দেখে বুঝলাম ওর কাছে এসব ছোট ছোট কিন্তু মন ছোঁয়া উপহার ভীষন দামী। ও বলল দাঁড়াও আমি ভাত বাড়ছি মাটন করেছি তোমার জন্য। আমি চমকে উঠলাম। একটা কথা তো বলাই হয়নি ওকে এখন কি হবে?? আশংকায় বুকটা কেপে উঠল। আমি বললাম আমি কিছু খাব না। কোল্ডড্রিংক্স খেয়েছি খিদে নেই। মঞ্জরীর মুখের হাসিটা হঠাত মিলিয়ে গেল। ব্যাজার মুখ করে বলে উঠল কেন খাবে না? এতটা জার্নি করে এসেছো, তোমার জন্য আমি মাটন করলাম আর তুমি খাবে না কেন? আমি- না গো সত্যি খেতে পারব না। মঞ্জরী- আচ্ছা খেয়ো না আমিও খাবো না ফেলে দিচ্ছি সব। মুখ দেখে বুঝতে পারি খিদে ভালোই পেয়েছে তাও মিথ্যে বলে যাচ্ছো। ওকে, নো প্রবলেম। মঞ্জরী চুপ হয়ে বসে গেল। কোন কথা নেই আমার দিকে তাকাচ্ছে অব্ধি না। আমি খুব ইতস্তত করতে লাগলাম তারপর ভাবলাম বলেই দি। যা হবার হবে। লুকিয়ে রাখা আর ঠিক হচ্ছে না। আমি- তোমায় মাটন করতে বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু আসলে এই মাংস আমি খেতে পারব না। মঞ্জরী - (অবাক ভাবে তাকিয়ে) কেন খেতে পারবে না? আমি- আসলে আমি বাইরে মাংস খাই না সব জায়গায়। মঞ্জরী- তোমার কি মনে হয় আমি বাজে জায়গা থেকে মাংস এনেছি তোমার জন্য?? এত নিচু ভাবো আমায়?? (বেশ রাগী গলায়) আমি- না মঞ্জরী তুমি ভূল বুঝছ আসলে তা নয়। মঞ্জরী- আসলে কি সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। তুমি কি ভাবলে আমায়। আমার দিক থেকে একদম মুখ ফিরিয়ে নিল। রাগে অপমানবোধে গালদুটো প্রায় লাল হয়ে গেছে। পাশ থেকে বোঝা যাচ্ছে। আমি- তোমার কাছে আমি একটা বড় সত্যি লুকিয়েছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেটা ঠিক করিনি। মঞ্জরী - (অবাক চোখে তাকিয়ে) মানে??? কি সত্যি??. আমি- (মুখটা নীচে নামিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে) আমার নাম অভিষেক নয়। আমার নাম আসিফ। রকি আমার ডাক নাম। তোমায় বলব বলব করে বলা হয়ে ওঠেনি আগে ভয় হচ্ছিল তুমি হচ্ছিল তুমি হয়ত রিলেসন রাখবে না আমার পরিচয় জানার পর। আর মাংস আমি খেতে পারব না কারন জবাই ছাড়া আমি খাই না। সেদিন তোমায় যখন মটন করতে বলি তখন একদম খেয়াল করিনি। আমি তোমায় খুব বড় একটা সত্যি লুকিয়েছি পারলে ক্ষমা করে দিও। একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আমি চুপ হয়ে গেলাম। এসির মধ্যেও আমি প্রায় ঘামছি টেনশনে। মঞ্জরী স্থবির হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে বসে রইল। মুখে একটা কথা নেই চোখের পাতা পরছে না। একদম পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে মুখটা। কোনপাশে তাকাচ্ছে না। বুঝলাম ভীষন শক পেয়েছে। দুবার ডাকলাম মঞ্জরী.. মঞ্জরী। কোন কথা নেই। আমার ভীষন অপমানিত লাগল নিজের উপরেও রাগ হল। মনে মনে ভাবলাম চুপচাপ লুকিয়ে অন্য একটা অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে যেতাম আরামসে তা নয় বিনয়ের অবতার হয়ে সত্যবাদী সাজতে গেলাম। এবার বাড়ী বসে ধোন ধরে বসে থাকো। কিছুক্ষন সব চুপ দুজনেই। তারপর আবার ডাকলাম ওকে। তাও সেই একই রকম স্থবির হয়ে বসে আছে মেঝের দিকে তাকিয়ে। কোন কথা নেই। এবার আমি উঠলাম।এরপর বসে থাকা খুব বাজে দেখায়। এরকম চুপ থাকা একপ্রকার বুঝিয়ে দেওয়া যে তুমি প্লিজ চলে যাও।আমি সোফা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগোতে লাগলাম জুতো রাখার জায়গাটায় গিয়ে জুতো মোজা পায়ে দিয়ে আর একবার তাকালাম সোফার দিকে। সেই একইরকম বসে আছে মঞ্জরী। আমি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে দরজার লকটা ঘোরালাম বের হব বলে। এমন সময় পিছন থেকে ডাক। ভারী গলায় মঞ্জরী বলল এত রোদে খিদের পেটে বাইরে যেতে বলব এত অমানুষ আমি নই। জুতোটা খুলে এসে সোফায় বসো আমি খাবার বাড়ছি। আর হ্যা আমি যেখান থেকে মটন নি সেটা . দোকান। নিশ্চিন্তে খেতে পারো। বিশ্বাস করতে পারো তোমার মত মিথ্যে আমি বলি না অন্তত। তোমায় ধর্মভ্রষ্ট করব না। আমি তাও বের হওয়ার জন্য দরজাটা খুললাম। মঞ্জরী বলে উঠল "যেতে চাইলে যাও কিন্তু আজ যদি যাও কোনদিন না আমায় দেখতে পাবে না ফোনে পাবে এমনকি ফেসবুকেও না। এবার যা খুশি কর।" আমি কিছুক্ষন স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম তারপর দরজা বন্ধ করে জুতো রেখে আস্তে আস্তে এসে সোফায় বসলাম।