Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic লুজ ক্যারেক্টার by pongapaka
#16
ওরা রাধার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন. সোমদত্তা নিরাশ. কোনো সঠিক পথ পেলেন না. সত্যি মিথ্যা সব গুলিয়ে গেছে. আগের টাকা নিয়ে কেস তোলার কথা তীব্রভাবে অস্বীকার করলো না. এবারে টাকা নিয়ে তুলতে চাইল না. স্পষ্ট করে বললও না প্রদীপ কিছু করেছিল কিনা. যে অশান্তির পুকুরে ছিলেন সেখানেই রইলেন. কথাকলির সকালের দেখানো স্বপ্ন অধরা রয়ে গেল. ওর প্রচেষ্টা ব্যর্থ. হেঁটে এগোলেন গাড়ির দিকে.
গাড়িতে উঠবার আগে একজন বয়স্ক মহিলা একটা বাচ্চা ছেলের সাথে ওদের কাছে এলো. ওরা গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ওই মহিলা বলে উঠলো, 'আপনারা রাধার সাথে কথা বলতে এসেছিলেন. আমি ওর মা.'
সোমদত্তা বললেন, 'কি চান?'
রাধার মা বলল, 'কি কথা বলতে এসেছিলেন?'
সোমদত্তা বললেন, 'সেটা মেয়ের সাথে হয়ে গেছে.'
রাধার বলল, 'আপনারা কি টাকা দিয়ে কেস তুলে নিতে চেয়েছিলেন? ছোটু এইটুকুই বলতে পেরেছে. আমি কাজে গেছিলাম. তাই আপনাদের সাথে দেখা হয় নি. নাহলে আমার সাথে কথা বলতে পারতেন.'
কথাকলি বললেন, 'এভাবে কথা বলা যাবে না. আপনি বরঞ্চ গাড়িতে উঠে আসুন. তাহলে আরামে কথা বলা যাবে.'
সোমদত্তা ভ্রু কোঁচকালেন. নোংরা শাড়ি পরা মহিলাকে গাড়িতে উঠাবার মানে কি? মুখে কিছু বললেন না. নিশ্চয় কলি কিছু একটা ভেবেছে. সবাই গাড়িতে উঠলেন.
কথাকলি বললেন, 'তুই গাড়ি চালা. কোথাও একটু চা খাওয়া যাক.'
সোমদত্তা গাড়ি চালাতে শুরু করলেন.
কথাকলি বললেন, 'শুনেছি রাধা টাকা নিয়ে আগে দুবার কেস তুলে নিয়েছে. আপনি জানেন?'
রাধার মা বলল, 'জানি.'
কথাকলি বললেন, 'এবারেও টাকা দিতে চেয়েছিলাম. কিন্তু রাধা রাজি হয় নি. কোর্টে যাবে. কোর্টে গেলে উকিল বাজে বাজে প্রশ্ন করবে. তার থেকে বাইরে মিটিয়ে নিলে বেশি ভালো হত না?'
রাধার মা বলল, 'মেয়ে আমার জেদী. আগের দুবার খুব কষ্টে বুঝিয়ে ছিলাম. এবারে গো ধরেছে যে কোর্টে যাবে.'
কথাকলি বললেন, 'সে তো অনেক খরচ. হেরে গেলে সব যাবে.'
সোমদত্তা বললেন, 'রাধার সাথে সত্যি কি হয়েছিল? আপনি কিছু জানেন?'
রাধার মা বলল, 'আমি জানি না মা. মেয়ে কিছু বলে না. এবারে কোর্টে যাবে সেটা শুধু বলেছে.'
কথাকলি বললেন, 'আপনি সাক্ষী দেবেন?'
রাধার মা বলল, 'তাতে আমার কি হবে?'
কথাকলি বললেন, 'যে টাকা পেলে কেস তুলে নিত সেই পরিমান টাকা আপনাকে দেব.'
রাধার মা বলল, 'আমি কি বলব?'
কথাকলি উত্সাহের সাথে বলল, 'সেটা আমি শিখিয়ে দেব. আপনি শুধু রাজি হন.'
চা খেতে একটা ভালো রেস্তরাতে গেলেন. রাধার মা জীবনে প্রথমবার এমন কোথাও গেল. ওর মলিন কাপড় ওকে রেস্তোরায় বেমানান করে দিল. চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এটা ওদের জায়গা নয়. সবাই কেমন একটা দৃষ্টি দিয়ে ওদের দেখতে লাগলো. কথাকলি দুটো চা আর খাবার অর্ডার দিলেন.

'বুঝলি ললিতা, এই কেসটা আমাকে জিততেই হবে. যে কেউ গায়ে হাত দিয়ে পার পেয়ে গেলে বাজার দেহ বেচনিদের সাথে আমার কোনো পার্থক্য থাকে না.' রাধা ললিতাকে বলল. ললিতা ছোটবেলার বন্ধু. ওকে সব কথা বলতে পারে রাধা. সাধ্যমত সাহায্য করবার চেষ্টা করে ললিতা. শিক্ষা কম থাকার জন্যে সব সময় সেটা পারে না. রাধা সবসময় সাহায্যের আশায় আসে না. মনের কথা বলে নিজেকে হালকা করে, নিজেকে নিজের কাছে যথার্থ প্রমান করার চেষ্টা করে.
ললিতা জিজ্ঞাসা করলো, 'তুই কি করবি? মামলা লড়তে গেলে তো অনেক খরচা. আমি নিয়ে গেলাম, শালারা খচ্চর. মজা নেয়.'
রাধা বলল, 'খরচা তো থাকবেই. এবারে আমার সাধ্যমত লড়ব. যা টাকা জমানো আছে সব দিয়ে লড়ব.'
ললিতা বলল, 'হেরে গেলে কি হবে?'
রাধা বলল, 'হারার কথা ভাবছি না. মালটা গায়ে হাত দিয়েছিল!'
ললিতা জিজ্ঞাসা করলো, 'উকিল ঠিক করেছিস?'
রাধা বলল, 'গুপিদাই ঠিক করে দিয়েছে. সে নাকি হেবি উকিল.'
ললিতা বলল, 'উকিলের পয়সা কত নেবে? তুই কোথায় পাবি টাকা?'
রাধা বলল, 'আগের দুটো কেস খেয়ে গেছি. স্রেফ মায়ের জন্যে. তখন ভাইটা ভুগছিল. টাকার দরকার ছিল. তাই আগের কেস দুটো টাকার জন্যে তুলে নিয়েছিলাম. ভেবেছিলাম ভাইয়ের চিকিত্সা করতে লাগবে. দ্বিতীয়বারের টাকা কিন্তু ভাইয়ের জন্যে আর খরচ করতে পারি নি. সেই সুযোগ দেয় নি. ওর আগেই কেটে পড়ল. টাকা সব খরচ করতে হয় নি. দেখা যাক এবারে কি হয়. যা আছে তা দিয়ে লড়ব.'
ললিতা বলল, 'ওই টাকা দিয়ে তুই অন্য কিছুও তো করতে পারিস. শুধু মামলা লড়ে কি হবে? জিতলেই বা তোর কি উপকার হবে? তুই জিতলে নাহয় জেলে যাবে, তোরও তো টাকাগুলো চলে যাবে.'
রাধা বলল, 'জানি রে বাবা. আমাদের মত লোকের টাকার কতটা প্রয়োজন. কিন্তু বারবার এমন হলে নিজের ওপর ঘেন্না ধরে যায়. আত্মমর্যাদা বলে আর কিছু অবশিষ্ঠ থাকে না. নিজেকে নিজের সামনে ঠিক রাখার জন্যেই লড়ব. আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেন লজ্জা না পাই.'
ললিতা বলল, 'তাও ভেবে দেখ. ওই টাকা থাকলে তোর বাবার চিকিত্সা বা তোর বিয়েতে খরচ করতে পারতিস.'
রাধা ওর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলল, 'ধুরর, ওই পাপের টাকায় চিকিত্সা করলে বাবা আরও তাড়াতাড়ি মারা যাবে. যেমন গেছে ভাই. আর বিয়ে? আমাদের জন্যে আবার কোন রাজপুত্তর অপেক্ষা করছে? সেই তো অটোচালক বা ওই জাতীয় কেউ কপালে নাচছে তার জন্যে ভালো করে বিয়ে করবার দরকার নেই. সেই তো একই ঘানি টানতে হবে!! জীবনে ভালোভাবে বাঁচার চেষ্টা করা যে কত বড় কাজ সেটা গত কয়েক মাসে বুঝেছি. যখন পড়াশোনা করেছি তখন তফাত অত চোখে পড়ে নি. এখন যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের সামাজিক অবস্থানটা বুঝিয়ে দেয়.'

Like Reply


Messages In This Thread
RE: লুজ ক্যারেক্টার by pongapaka - by ddey333 - 16-07-2021, 01:15 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)