16-07-2021, 12:14 PM
সেদিন বিকেলটা অসম্ভব অস্থির কাটে নিঝুমের। ভাললাগা না ভালোবাসা? ভালোবাসা না ভাললাগা? মাথাটাই খারাপ হয়ে যাবার যোগাড় হয়। আবার ভাবে, নিবিড় তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। ও নিশ্চয়ই নিঝুমকে ঠকাবে না। ভাবতে ভাবতে কোন দিক দিয়ে যে সময় কেটে যায় টের পায় না। অবশেষে ভাবে, নাহ, তাকেই এ পরীক্ষা নিতে হবে। আর এর মধ্যে না ঢুকে পরীক্ষা নেওয়ার কোন উপায় নেই, কারণ তাকে তো নিজের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে। নিবিড়কে মেসেজ লিখতে শুরু করে, “যা তোকে বেটে হারিয়ে দিলাম। ” ঈশিতার কাছে শুনেছে সে আর নিবিড় নাকি বেট ধরেছে ওর সিদ্ধান্তের উপর। নিবিড় বলেছে যে নিঝুম না-ই বলবে। আর ঈশিতা বলেছে, হ্যাঁ। মেসেজটা লিখে আবার কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর সেন্ড বাটনে চাপ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। দুরুদুরু বুকে প্রতীক্ষা এরপর রিপ্লাইয়ের। প্রায় দশ মিনিট পর নিবিড়ের রিপ্লাই আসে। একদম স্বাভাবিক কথাবার্তা; দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নিঝুম। এজন্যই এই ছেলেটা তার বেস্ট ফ্রেন্ড। নিবিড় ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে এই মুহূর্তে নিঝুম ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছে। তাই অন্য কোন কথায় যায়নি, বন্ধুর মতই ব্যবহার করেছে তার সাথে।
দিন যায়। কেটে যায় দুটো মাস। এরমধ্যে ঈশিতার অনেক অনুরোধে নিবিড়ের বাসায় আর না যাওয়ার জেদ ছেড়েছে নিঝুম। গেছে নিবিড়ের বাসায়। নিবিড় আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে যে সে নিঝুমকে ভালবাসে। নিঝুম এড়িয়ে গেছে। কারণ আরও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত ছিল। কিন্তু বারবার তার দিকে নিবিড়ের একমনে তাকিয়ে থাকা দেখে শেষ পর্যন্ত মৃদু বকা না দিয়ে পারেনি। নিঝুম নিজের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন অনুভব করতে পারে। নিবিড় আশেপাশে থাকলে কেমন একটা ভাললাগা এসে ভর করে তার চারদিকে। একটু বেশি হাসি, একটু বেশি আনন্দ, আর… চলে আসার সময় আরও একটু থাকার ইচ্ছে। তবে এসব অনুভূতির কোনটাই সে নিবিড়ের সামনে প্রকাশ করেনা। নিবিড়ও চায় না তার কাছে আলাদা কিছু। সে হয়তো আপনমনেই অনুভব করতে পারে সবচেয়ে আপন বন্ধুটির অনুভূতিগুলোকে। “ভালবাসি” বলা হয় না কোন পক্ষ থেকেই। তাও যেন ভালবাসার বাঁধনে ধীরে ধীরে বাঁধা পড়ছে দুটি মন। যদিও এখনও প্রশ্ন করে ফেরে অবুঝ মন, এ কী আসলেই ভালোবাসা? না শুধুই ভাললাগা? কিন্তু একদিনের ঘটনায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে যায় একে অপরের। রেজাল্ট বের হয়ে গেছে। কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়াও সমাপ্ত। নিঝুম ভর্তি হয়েছে তাদের কলেজেরই কলেজে। বলা বাহুল্য, নিলীমা, প্রজ্ঞা, অনন্যাও সেই একই কলেজে। নিবিড় ভর্তি হয়েছে আরেকটি কলেজে। ক্লাস শুরুর আগের দিনের কথা। ছোট একটা গেট টুগেদারে মিলিত হয় নিবিড়, ঈশিতা, নিঝুম, লিসা, সুপ্তি। সাথে অবশ্যই তাদের বাবা-মা’রাও আছেন। ডিনার শেষে বন্ধুরা মিলে একটু হাঁটতে বেরোয়। নিঝুম-নিবিড়ের মধ্যে কী চলছে তা শুধু ঈশিতাই জানে, লিসা আর সুপ্তিকে জানান হয়নি। সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে নিবিড় ইচ্ছে করেই একটু পিছিয়ে পড়ে, আর ঈশিতাকে ইঙ্গিতে বুঝায় যাতে নিঝুমকে পিছে পাঠিয়ে দেয়। ঈশিতা সেইমত লিসা আর সুপ্তিকে কথার জালে ব্যস্ত রেখে নিঝুমকে পাঠিয়ে দেয় নিবিড়ের সাথে। কিন্তু পাশাপাশি এসেও দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই। চুপচাপ হাঁটতে থাকে। নীরবেই যেন একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করে। সেসময়টা নিবিড়ের চরিত্রের আরেকটা দিক স্পষ্ট হয় নিঝুমের কাছে। তার বান্ধবীরা, যাদেরই বয়ফ্রেন্ড আছে, তাদের মোটামুটি সবারই বয়ফ্রেন্ডদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। অন্তত কিস তো হয়েছেই। মুখে কিছু না বললেও নিঝুমের এটা মোটেই পছন্দ নয়। তার মতে একটা মানুষকে শরীর দিয়ে চেনার আগে মন দিয়ে চিনতে হয়। প্রথম পরিচয়েই কিস করা, শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা, অল্পদিনের মধ্যেই এসব করা উচিত নয়। “যে মানুষ আমার শরীরকে নয়, মনকে আগে ভালবাসবে সে-ই প্রকৃত প্রেমিক, সে-ই আমায় সত্যিকার অর্থে ভালবাসে”, এটাই নিঝুমের আদর্শ। বিস্মিত হয়ে নিঝুম দেখে যে এতদিনের পরিচয় তাদের, তবুও এই নির্জন পথে তাকে একা পেয়েও নিবিড় তাকে ছোঁয়ার কোনরকম চেষ্টা করছে না। এক অন্যরকম আনন্দে ভরে যায় নিঝুমের মন। নিবিড়ের প্রতি নতুন একটা শ্রদ্ধা জেগে ওঠে মনে। নিবিড়ের মনেও তখন একই অনুভূতির খেলা চলছে। সে নিজে একটা কো এড কলেজে পড়েছে, রিলেশনে গেলে ছেলেমেয়ে উভয়ের আচরণই দেখার সুযোগ হয়েছে তার। এখনকার দিনে ভালোবাসা মানে শুধু যেন শরীরের আনন্দ। ছেলেরা যতটা অ্যাগ্রেসিভ এ ব্যাপারে, মেয়েরাও তার চেয়ে কিছু কম নয়। অথচ এই একটি ঘণ্টায় তার পাশাপাশি হেটেও নিঝুম সেরকম কোন ইঙ্গিত দেয়নি। দুজনই বুঝতে পারে, হয়তো এটাই ভালোবাসা, যা শুধু স্বচ্ছ জলের মত বয়ে চলে, যাতে নেই কোন ক্লেদ। কিন্তু একই সাথে একটা বিষাদও এসে ভর করে, এই ভালোবাসা কীভাবে সার্থক হবে? নিবিড় আর নিঝুমের মাঝে যে সীমাহীন সীমা, তাকে অতিক্রম করা কি সম্ভব হবে তাদের দুজনের পক্ষে? নিবিড় ভাবে, “আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এই অগ্নিপরীক্ষা দেবার, কিন্তু নিঝুম কি পারবে?” আর নিঝুম যে কী ভাবছে, নিজেই তার থৈ খুঁজে পায়না। নীরবে একজন আরেকজনের উপস্থিতি, সান্নিধ্য উপভোগ করতে করতেই ফিরে আসে তাদের পরিবারের কাছে। সেদিন বিদায় নেবার সময় দুজনের মনই যেন একই সাথে আনন্দ আর বেদনায় ভরপুর হয়ে থাকে।
দিন যায়। কেটে যায় দুটো মাস। এরমধ্যে ঈশিতার অনেক অনুরোধে নিবিড়ের বাসায় আর না যাওয়ার জেদ ছেড়েছে নিঝুম। গেছে নিবিড়ের বাসায়। নিবিড় আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে যে সে নিঝুমকে ভালবাসে। নিঝুম এড়িয়ে গেছে। কারণ আরও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত ছিল। কিন্তু বারবার তার দিকে নিবিড়ের একমনে তাকিয়ে থাকা দেখে শেষ পর্যন্ত মৃদু বকা না দিয়ে পারেনি। নিঝুম নিজের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন অনুভব করতে পারে। নিবিড় আশেপাশে থাকলে কেমন একটা ভাললাগা এসে ভর করে তার চারদিকে। একটু বেশি হাসি, একটু বেশি আনন্দ, আর… চলে আসার সময় আরও একটু থাকার ইচ্ছে। তবে এসব অনুভূতির কোনটাই সে নিবিড়ের সামনে প্রকাশ করেনা। নিবিড়ও চায় না তার কাছে আলাদা কিছু। সে হয়তো আপনমনেই অনুভব করতে পারে সবচেয়ে আপন বন্ধুটির অনুভূতিগুলোকে। “ভালবাসি” বলা হয় না কোন পক্ষ থেকেই। তাও যেন ভালবাসার বাঁধনে ধীরে ধীরে বাঁধা পড়ছে দুটি মন। যদিও এখনও প্রশ্ন করে ফেরে অবুঝ মন, এ কী আসলেই ভালোবাসা? না শুধুই ভাললাগা? কিন্তু একদিনের ঘটনায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে যায় একে অপরের। রেজাল্ট বের হয়ে গেছে। কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়াও সমাপ্ত। নিঝুম ভর্তি হয়েছে তাদের কলেজেরই কলেজে। বলা বাহুল্য, নিলীমা, প্রজ্ঞা, অনন্যাও সেই একই কলেজে। নিবিড় ভর্তি হয়েছে আরেকটি কলেজে। ক্লাস শুরুর আগের দিনের কথা। ছোট একটা গেট টুগেদারে মিলিত হয় নিবিড়, ঈশিতা, নিঝুম, লিসা, সুপ্তি। সাথে অবশ্যই তাদের বাবা-মা’রাও আছেন। ডিনার শেষে বন্ধুরা মিলে একটু হাঁটতে বেরোয়। নিঝুম-নিবিড়ের মধ্যে কী চলছে তা শুধু ঈশিতাই জানে, লিসা আর সুপ্তিকে জানান হয়নি। সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে নিবিড় ইচ্ছে করেই একটু পিছিয়ে পড়ে, আর ঈশিতাকে ইঙ্গিতে বুঝায় যাতে নিঝুমকে পিছে পাঠিয়ে দেয়। ঈশিতা সেইমত লিসা আর সুপ্তিকে কথার জালে ব্যস্ত রেখে নিঝুমকে পাঠিয়ে দেয় নিবিড়ের সাথে। কিন্তু পাশাপাশি এসেও দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই। চুপচাপ হাঁটতে থাকে। নীরবেই যেন একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করে। সেসময়টা নিবিড়ের চরিত্রের আরেকটা দিক স্পষ্ট হয় নিঝুমের কাছে। তার বান্ধবীরা, যাদেরই বয়ফ্রেন্ড আছে, তাদের মোটামুটি সবারই বয়ফ্রেন্ডদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। অন্তত কিস তো হয়েছেই। মুখে কিছু না বললেও নিঝুমের এটা মোটেই পছন্দ নয়। তার মতে একটা মানুষকে শরীর দিয়ে চেনার আগে মন দিয়ে চিনতে হয়। প্রথম পরিচয়েই কিস করা, শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা, অল্পদিনের মধ্যেই এসব করা উচিত নয়। “যে মানুষ আমার শরীরকে নয়, মনকে আগে ভালবাসবে সে-ই প্রকৃত প্রেমিক, সে-ই আমায় সত্যিকার অর্থে ভালবাসে”, এটাই নিঝুমের আদর্শ। বিস্মিত হয়ে নিঝুম দেখে যে এতদিনের পরিচয় তাদের, তবুও এই নির্জন পথে তাকে একা পেয়েও নিবিড় তাকে ছোঁয়ার কোনরকম চেষ্টা করছে না। এক অন্যরকম আনন্দে ভরে যায় নিঝুমের মন। নিবিড়ের প্রতি নতুন একটা শ্রদ্ধা জেগে ওঠে মনে। নিবিড়ের মনেও তখন একই অনুভূতির খেলা চলছে। সে নিজে একটা কো এড কলেজে পড়েছে, রিলেশনে গেলে ছেলেমেয়ে উভয়ের আচরণই দেখার সুযোগ হয়েছে তার। এখনকার দিনে ভালোবাসা মানে শুধু যেন শরীরের আনন্দ। ছেলেরা যতটা অ্যাগ্রেসিভ এ ব্যাপারে, মেয়েরাও তার চেয়ে কিছু কম নয়। অথচ এই একটি ঘণ্টায় তার পাশাপাশি হেটেও নিঝুম সেরকম কোন ইঙ্গিত দেয়নি। দুজনই বুঝতে পারে, হয়তো এটাই ভালোবাসা, যা শুধু স্বচ্ছ জলের মত বয়ে চলে, যাতে নেই কোন ক্লেদ। কিন্তু একই সাথে একটা বিষাদও এসে ভর করে, এই ভালোবাসা কীভাবে সার্থক হবে? নিবিড় আর নিঝুমের মাঝে যে সীমাহীন সীমা, তাকে অতিক্রম করা কি সম্ভব হবে তাদের দুজনের পক্ষে? নিবিড় ভাবে, “আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এই অগ্নিপরীক্ষা দেবার, কিন্তু নিঝুম কি পারবে?” আর নিঝুম যে কী ভাবছে, নিজেই তার থৈ খুঁজে পায়না। নীরবে একজন আরেকজনের উপস্থিতি, সান্নিধ্য উপভোগ করতে করতেই ফিরে আসে তাদের পরিবারের কাছে। সেদিন বিদায় নেবার সময় দুজনের মনই যেন একই সাথে আনন্দ আর বেদনায় ভরপুর হয়ে থাকে।