15-07-2021, 11:30 PM
উনিশ
এ মা তা কি করে হয়? আজ বাদে কাল তুই দেবের ঘরণী হবি। তুই পাশে শোবে না তো কে শোবে?
আমার মোবাইল ফোনটা হঠাৎই বেজে উঠল। বিদিশাকে বললাম, ফোনটা ধরে দেখো তো, আবার কার ফোন এল?
বিদিশা বলল, তোমার ফোন আমি ধরবো? তারপর অচেনা যদি কেউ হয়?
আমি বললাম, অচেনা আবার কে হবে? করলে বন্ধু বান্ধব রাই করবে।
বিদিশা ইতস্তত করছিল। ওকে জোর করে বললাম, যেই হোক, তুমি বলবে আমি বিদিশা বলছি। ওর শরীর খারাপ। ও এখন রেস্ট নিচ্ছে।
মোবাইলের স্ক্রীনে নামটা ফুটে উঠতেই বিদিশার মুখে এক গাল হাসি। আমাকে বলল, কে আবার? শুভেন্দু ফোন করেছে।
আমি হেসে বললাম, তুমিই ধরো। দেখো ব্যাটা কি বলতে চাইছে।
আমার কাছে এগিয়ে এসে ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, না তুমিই কথা বলো আগে। আমি কথা বললেই ও আমার সাথে ফাজলামী শুরু করে দেবে।
ফোনটা আমিই রিসিভ করলাম। ও প্রান্ত থেকে শুভেন্দুর বেশ ভারী গলা।
-হ্যালো।
- কি করছিস?
- কি আর করবো? এই তো বিশ্রাম নিচ্ছি।
বিশ্রাম নিচ্ছিস না অন্য কিছু করছিস?
মানে?
বিদিশা কোথায়?
এই তো আমার পাশেই আছে।
বিদিশাকে আদর করেছিস?
ভাগ শালা, ফাজলামী হচ্ছে না?
শুভেন্দু অট্টহাসি দিয়ে বলল, তুমি হলে শালা ডুবে ডুবে জল খাওয়া পাবলিক। বিদিশাকে এতদিন বাদে পেয়েছ, আদর না করে কি আর তুমি ছাড়বে?
আমি বললাম, কেন? এর পর থেকে তুইও তো শিখাকে আদর করবি আমার মতন।
বিদিশা পাশ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সব কথাই শুনছে। শুভেন্দু জবাবে বলল, এই শোন না? আজ রাতে তুই আর বিদিশা কি পাশাপাশি শুবি?
এমন বদমায়েশ। আমি হেসে বললাম, কেন তোমার বুঝি খুব ছুঁক ছুঁক করছে?
শুভেন্দু বলল, ওখানেই তো আমার আফশোস।কেন? আফশোস হবে কেন?
তোর মতন আমিও যদি শিখাকে পাশে নিয়ে শুতে পারতাম?
শালা বলে কি? কটা দিন যেতে না যেতেই এখনই পাশে নিয়ে শোয়ার তাল করছে?
গাল দিয়ে ওকে বললাম, শালা এত তাড়া কিসের তোমার? সবে তো ফুল ফুটলো। এখনই সব গন্ধ শুঁকে নিতে ইচ্ছে করছে?
শুভেন্দু আরো জোরে হাসতে লাগল। বলল, শোনো, আজ রাতে কিন্তু সেনসর বোর্ড থাকবে না তোমার ঘরে। সুতরাং যা খুশি করে নিতে পারো।
আমি মনে মনে ভাবছি। বিদিশা পাশে দাঁড়িয়ে সবই শুনছে। কি ভাবছে ও কে জানে?
ফোনটা আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল, দাও তো, ওর মজা আমি বার করছি।
- কি হয়েছে বল?
- কে বিদিশা?
-হ্যাঁ বিদিশা বলছি। বল।
এই তোদের একটু খবর নিচ্ছিলাম।
আমি তো চলে যাবো একটু পরে।
চলে যাবি? ও মা কেন?
বাড়ী থেকে ফোন এসেছিল। আমাকে তাড়া দিচ্ছে।
সে কি রে? এতদিন বাদে দেবের কাছে এলি। আজ রাতটুকু অন্তত ওর পাশে থাক।
না না। একসাথে থাকার অসুবিধা আছে। মা খারাপ ভাববে।
কে মাসীমা?
হ্যাঁ আমি দেবের মা য়ের কথা বলছি।
আরে দূর, কিচ্ছু খারাপ ভাববে না। মাসীমা তো খুশিই হয়েছে। তুই এতদিন বাদে দেবের কাছে ফিরে এসেছিস।
বিদিশা বলল, সেটাই তো বলতে চাইছি। এসেছিলাম, কাজ মিটে গেছে। এবার আমি ফিরে যাচ্ছি।
অপর প্রান্ত থেকে শুভেন্দু একটু গম্ভীর হয়ে গেল। আমি আর বিদিশা দুজনেই তখন মুখ টিপে হাসছি। শুভেন্দু এবার প্রায় হাতে পায়ে ধরার মতন বিদিশা কে রিকোয়েস্ট করলো, না তুই থাক। প্লীজ, আজ রাতটা অন্তত থাক।
থাকতে পারি এক শর্তে। আমি আজ রাতে দেবের পাশে শোবো না। মা’ য়ের কাছে শোবো।
বিদিশা গম্ভীর মুখে বলল, বিয়েটা হয়ে যাক। তখন দেখা যাবে। তাছাড়া ও তো অসুস্থ এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয় নি। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
শুভেন্দু পুরোপুরি মন মরা হয়ে গেল। স্পীকারটা অন করে বিদিশা কথা বলছে। আমি পরিষ্কার শুনছি, শুভেন্দু বলছে, যাহ্ চ্চলে। এটা কেমন হলো? এমন একটা রজনী, বৃথা যাবে? কত তপস্যা করে অপেক্ষা করেছিল ব্যাচারা।
বিদিশা বলল, তোর কেন এত দূঃখ হচ্ছে বলতো?
আরে দেবের সুখই তো আমার সুখ। আর দেবের দূঃখ মানেই তো আমার দূঃখ।
ও তাই বুঝি? সেইজন্যই ওই সব সেন্সর ফেন্সর কি সব বলছিলিস।
ও তুই শুনে নিয়েছিস?
শুনবো ছাড়া আর কি? খালি ফাজলামো আর ফাজলামো।
শুভেন্দু এবার রসিকতটা আরও চরম পর্যায়ে নিয়ে গেল। বিদিশাকে লজ্জ্বা শরমের বালাই রেখে বলল, এই শোন না। আজ রাতের কাহিনীটা তোরা শুধু আমাকে বলবি। আর কেউ জানতে পারবে না।
-হ্যাঁ, ওটাই বাকী আছে। তারপর তুমি পেট পাতলা করে সবাই কে বলো বসো আর কি?
বিশ্বাস কর, কাউকে বলবো না। এমন কি শিখাকেও নয়।
বিদিশার হাত থেকে ফোনটা আবার নিয়ে আমি বললাম, ইয়ার্কী ছাড়। বাড়ী কখন পৌঁছোলি বল?
শুভেন্দু বলল, এই তো একটু আগে শিখা আমাকে ড্রপ করে দিয়ে গেল।
-সত্যি তুই খুব ভাগ্য করে পেয়েছিস মেয়েটাকে।
আর শিখা বুঝি আমাকে ভাগ্য করে পায়নি?
নিজের ঢাক নিজেই পেটাতে ব্যস্ত। আমি হাসতে হাসতে বললাম, তোর মাইরী স্বভাবটা আর গেল না। সবেতেই ইয়ার্কী মারিস।
শুভেন্দু এবার যে কথাটা আসতে আসতে বলল, শুনলে পিলে চমকে যাবে। আমাকে বলল, শোন বৎস, সুযোগ যখন পেয়েছো আজই তার সদব্যবহার করে নাও। আমি কিন্তু শিখার সাথে শুচ্ছি, আর কিছুদিন পরেই। হাঃ হাঃ হাঃ।