Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
এই মাত্তর কদিন হল আবার অফিস শুরু হয়েছে রেখাদের। ভাগ্যিস! নইলে ওদের তো ভয় লাগছিল এবার.. ছোট কোম্পানি, সেরকম পকেটের জোর তো নেই...যদি বন্ধ হয়ে যায়? বা, ছাঁটাই হয়ে যায়? যা দিনকাল! হয়ত বড়বাবু ডেকে বলে দিলেন "রেখাদি, এতজনের আর অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে দরকার নেই। এই মাসই আপনার শেষ!" হ্যাঁ, হয়ত না খেতে পেয়ে মরবে না ও, কিন্তু মাস গেলে এই ক'টা টাকা না পেলে অসুবিধা হবে বড্ড। বুবলির কলেজের মাইনে ওকেই দিতে হয়। সাথে শখ আহ্লাদ, মা কে মাসে মাসে হাতখরচা দেওয়া...সব ই এই সামান্য মাইনেতেই তো! আর এই বয়সে নতুন চাকরি পাওয়াও তো অসম্ভব! এইসব সাতপাঁচ ভেবেই রাতে ঘুম হয় না রেখার। খালি মনে হয় আরো দশটা বছর অন্তত... চাকরিটা বড্ড দরকার...

ভাবতে ভাবতেই দেখে বড়বাবু আসছেন ওদের দিকে। দেখে তাড়াতাড়ি কম্পিউটার খুলে হিসাব মেলাতে শুরু করে ও। পুরোনো পেমেন্টের হিসাব, হার্ড কপি থেকে সফট কপি করে রাখা হয়েছে, সেই হিসাব।
"আজও চন্দ্রানী আসেনি? কি হয়েছে কিছু জানেন কেউ?" জিজ্ঞেস করেন বড়বাবু।
চন্দ্রানীর নাম শুনেই মুখ বাঁকায় রেখা। চন্দ্রানী ওদের সাথেই কাজ করে। তবে নামেই 'কাজ'। বরের প্রশংসা করেই কূল পায় না! দুকথা তিনকথার পরেই 'অমিত এই, অমিত সেই' করে। যেন আর কারো বর ভাল হয় না! যেন আর কারো বর তার জন্য নিত্যনতুন শাড়ি, বা বাইরে থেকে খাবার দাবার কিনে দেয় না! তবে কেউ এত সাতকান করে না। আসলে বাচ্চাকাচ্চা নেই তো, চেহারার বাঁধন ও ভাল, তাই হয়ত...
বড়বাবু চলে যাবার পরে একবার ভাবল রেখা। একবার ফোন করা উচিৎ চন্দ্রানীকে। একসাথে কাজ করে...এটুকু তো কর্তব্য। শরীর টরীর খারাপ হল কিনা কে জানে! দিনকাল ভাল না.. ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশি হচ্ছে খুব।
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে নিল রেখা। কন্টাক্ট লিস্ট খুলে চন্দ্রানীর নাম্বারটা বের করে কানে লাগাল। রিং হচ্ছে।
"হ্যালো" পুরুষের কর্কশ গলা...নিশ্চয়ই ওর স্বামী!
"হ্যালো, দাদা, চন্দ্রানী আছে?"
"চ..আপনি কে?"
"আমি..ওর কলিগ, রেখা। আসলে ও তিন চারদিন হয়ে গেল অফিস আসছে না, তাই ফোন করছি।"
"চারদিন? সেকি! আমাকে তো বলল মঙ্গলবার থেকে যাচ্ছে না, আজ শুক্কুর... মানে সোমবার ও যায় নি? শয়তান মেয়েছেলে! কার সাথে দেখা করতে গেছিল তবে সোমবার? ফুটুনি মেরে বেরিয়েছিল, আমার স্পষ্ট মনে আছে..."
'শয়তান মেয়েছেলে'! 'ফুটুনি'! শব্দগুলো যেন আঘাত করছিল রেখাকে! শুধু শব্দচয়ন না, বলার ভঙ্গিটাও অত্যন্ত কর্কশ এবং একেবারেই ভদ্রসুলভ নয়। আর 'চারদিন' মানে কি সত্যিই চারদিন ই? ওটা তো কথার তালে বলা! তাই নিয়ে জলঘোলা করছেন কেন উনি!
"ও ঠিক আছে তো দাদা?"
"হ্যাঁ, ঠিক ই আছে। বাহানা মেরে খাটে শুয়ে আছেন মহারানি। কোন কাজ করছে না। কিছু বললেই বলছে মাথা ঘুরছে...কাশতে কাশতে পিঠ বুক ব্যথা...যত্তসব! সব ন্যাকামি, বুঝলেন? কাজ না করার বাহানা।"
শুনতে শুনতে অবাক হচ্ছিল রেখা। চন্দ্রানী না বারবার বলত সামান্য হাঁচি হলেও ওর বর ওকে রান্না করতে দেয় না আর। শুয়ে থাকতে বলে! একবার ওর মাথার যন্ত্রণা করছিল বলে নিজে সারারাত ঘুমোয়নি! আর সেই লোকের এমনি আচরণ... নাহ্, এটা অন্য কেউ হবে হয়ত... রং নাম্বার না তো?
"আচ্ছা, আপনি কে বলছেন!" জিজ্ঞেস করল রেখা।
"বাওয়া, এতক্ষণ 'দাদা' বলে কথা বললেন আর এখন জিজ্ঞেস করছেন! আমি ওর হাসব্যান্ড বলছি। তা, সে তো ঘুমোচ্ছে এখন...বললাম না...কাজ না করার বাহানা। ডাকলেও ওঠে না। তা, আপনি ওর অফিসের? কি নাম বললেন যেন?"
"আমি? ইয়ে, আমার নাম রেখা। দাদা, আপনি ওকে প্লিজ বলবেন না আমি ফোন করেছিলাম। আসলে চন্দ্রানীদি আমার সিনিয়ার, আর খুব ভাল কাজ করেন বলে সারা অফিস ওনাকে খুব শ্রদ্ধা করে। আমি তেমন ভাল কাজ পারি না। তাই বকাঝকা খাই রোজ.."
"তার সাথে ওকে না বলার কি সম্পক্ক?"
"না, আসলে সিনিয়ার তো, উনি যদি রেগে যান, তাহলে খুব সমস্যা হবে। উনি সুস্থ হয়ে কাজে জয়েন করুন, এটাই চাই। উনি না এলে সব কাজ আটকে থাকছে আসলে। দাদা, আমি রাখি, কেমন?" তড়িঘড়ি ফোন কাটে রেখা।
তারপর বাথরুমে যায়। চোখে মুখে জল দেবে একটু।
"আহা রে চন্দ্রানী! এতদিন তোর কথা শুনে কত হিংসা করেছি তোকে... 'স্বামী সোহাগিনী' বলে টিটকিরি দিয়েছি, 'অকম্মার ধাড়ি' বলে মুখ বেঁকিয়েছি...কিন্তু বুঝিনি তুই আসলে আমাদের সাথে দেয়ালা করতিস! ভাল থাকার রামধনু রঙের ছবি আঁকতিস! যা নয়, তাই হয়...এই ভেবেই ক্ষণিকের সুখ পেতিস...তাই তো আজ এত প্রশংসা করলাম তোর...জানি না তাতে কাজ হবে কিনা, তবে যদি তোর ঘরের লোকটা একবার হলেও ভাবে "বাহ, বৌটা আমার নেহাত ফ্যালনা নয়" আর মনে মনে লজ্জা পায় তোর প্রতি রূঢ় হবার জন্য... সে ও তো কম প্রাপ্তি হবে না..." মনে মনে দীর্ঘ মনোলগ সেরে হাসে রেখা। বড়বাবুর কাছে চন্দ্রানীর হয়ে লিভ অ্যাপ্লিকেশান করে দিতে হবে। মেয়েটার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখতে হবে। দরকারে ওর কিছু কাজ ও এগিয়ে রাখতে হবে...।
এই যে পাশে থাকা... দরকারে আর অদরকারেও... এই নিয়েই তো জীবন... নানা রঙের এই জীবন...

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 15-07-2021, 06:16 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)