Thread Rating:
  • 85 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller চক্রব্যূহে শ্রীতমা (সমাপ্ত)
[Image: 94653215-2535430183385671-8765417103059582976-n-1.jpg]

যে দুই ব্যক্তিকে এই এলাকার বিশেষ করে ফ্যাক্টরির সমস্ত কর্মচারীরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক চিরকাল সম্মান করে এসেছে .. উচ্চস্বরে কথা বলা তো দুরস্ত কোনোদিন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পেরেছে কিনা সন্দেহ .. সেই দুই ব্যক্তি আজ সিআইডি ইন্সপেক্টর দেবাংশুর কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে চরম হেনস্থার শিকার হওয়ার পরে এবং সর্বোপরি তাদের অপরাধমূলক কাজের বাকি দুই সঙ্গীর মৃত্যুসংবাদ শুনে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থাতেই কিছুটা যেন জবুথবু মেরে বসে রইলো মাটিতে।

এদিকে দেবযানী দেবী ততক্ষনে আকস্মিক এই ঘটনার ঘোর কাটিয়ে সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজের নগ্ন দেহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তড়িঘড়ি মাটি থেকে গোলাপি রঙের সিল্কের হাউসকোটটি উঠিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলেন।

"এই হাউসকোট পড়েই শ্রীরামপুর থেকে এখানে এসেছিলেন নাকি মিসেস ব্যানার্জি? তা ভালো .. তাহলে এটা পড়েই চলুন .. আমি আর বেশি দেরি করতে চাইছি না.." দেবযানীকে 'মামী' সম্মোধন না করে 'মিসেস ব্যানার্জি' বলে উক্তি করলো দেবাংশু।

"না না, তা নয় .. আমাকে দশ মিনিট সময় দিন .. I mean দাও .. আমি এখনই washroom থেকে চেঞ্জ করে আসছি" এই বলে মাটিতে পড়ে থাকা তার সাদা রঙের উর্ধাঙ্গের এবং নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসটি উঠিয়ে নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন দেবযানী দেবী।

"তোরা দু'জন কি ল্যাংটো অবস্থাতেই আমার সঙ্গে থানায় যাবি? তাতে অবশ্য অসুবিধা কিছু নেই.. ওখানে গিয়ে এমনিতেই তোদের জামা প্যান্ট খুলবো আমি। ও ভালো কথা, যাওয়ার আগে একবার তোর বাড়িটা ঘুরে যাবো .. বুঝেছিস?" মিস্টার ঘোষের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো দেবাংশু।

"আজ্ঞে .. কেনো?" করজোড়ে আমতা-আমতা করে প্রশ্ন করলো হিরেন ঘোষ।

"তোর একটা মেয়ে আছে না .. দেশবন্ধু কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে .. ওকে তুলবো তোর বাড়ি থেকে .. তারপর থানায় নিয়ে এসে আমার পার্সোনাল রুমে একটু মৌজ-মস্তি হবে .. হেঁ হেঁ হেঁ .." মুখের মধ্যে হাসির ভাব বজায় রেখে অথচ স্থির দৃষ্টিতে মিস্টার ঘোষের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো দেবাংশু।

"মানে? ছিঃ ছিঃ .. আ.. আপনি এসব কি বলছেন স্যার?" অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় এটুকুই বলতে পারলো মিস্টার ঘোষ।

"ছিঃ ছিঃ .. এ্যাঁ .. ছিঃ ছিঃ? অন্যের স্ত্রী,‌ অন্যের মা'কে ভোগ করার সময় এই ছিঃ ছিঃ শব্দটা কি লকার রুমে রেখে আসো বানচোদ? আর তাছাড়া আমি তো শুনেছি তুই এবং তোর বাড়ির লোক খুব open minded .. তোর বউ বাড়িতে আধা-ল্যাংটো হয়ে থাকে .. তুই নাকি তোর ছোটো শ্যালিকার পিউবিক হেয়ার কেটে ছেঁটে পরিষ্কার করে দিস .. তার উপর তোর নিজের মেয়েও নাকি তোর সামনে অন্তর্বাস পড়ে ঘুরে বেড়ায় .. আজ না হয় সে আমার সামনে একটু ঘুরে বেড়াবে ব্রা আর প্যান্টি পড়ে .. চিন্তা করিস না তোর মেয়েকে যখন লাগাবো তোদের দু'জনকে ডেকে নিয়ে আসবো .. কারণ তুই এবং তোর এই বন্ধু যে মানসিকতার লোক তোরা দু'জনেই খুব এনজয় করবি ব্যাপারটা .. তারপর সেরকম হলে আমার সঙ্গে যোগ দিয়ে তোর মেয়েকেও না হয় একসঙ্গে .." ঠিক দৃষ্টিতে হিরেন ঘোষের দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো দেবাংশু সান্যাল।

মিস্টার ঘোষ বেশ বুঝতে পারলো শ্রীতমা সমস্ত কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ব্যক্ত করেছে এই সিআইডি অফিসারটিকে। তৎক্ষণাৎ সে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে দেবাংশুর পা জড়িয়ে ধরে বললো "ক্ষমা করে দিন স্যার ক্ষমা করে দিন .. এই সর্বনাশ আমার করবেন না স্যার .. আপনি যা বলবেন তাই করবো .. কথা দিচ্ছি স্যার .."

ওষুধে কাজ হয়েছে বুঝতে পেরে আর বেশী সময় নষ্ট না করে সিআইডি ইন্সপেক্টর দেবাংশু ওদের কাছ থেকে অরুণবাবুর সই করা ওই স্ট্যাম্প পেপার টা ফেরত চাইলো।

প্রথমদিকে মিস্টার আগারওয়াল "আমাদের কাছে তো নেই .. আমরা এই ব্যাপারে কিছু জানি না" এইসব বলে একটু গাঁইগুঁই করলেও হিরেন ঘোষের মুখ ঝামটানি এবং তৎপরতায় ওই ঘরের আলমারির লকার থেকে কোর্টের স্টাম্প পেপার টা বের করে দেবাংশুর হাতে চালান করে দিলো।

রেপ কেস দিয়ে এদের দু'জনকে জেলে আটকে রাখা যাবে না। কারণ এর ফলে পারিবারিক কেচ্ছা সামনে এসে পড়বে। তাই দেবাংশু ঠিক করলো থানায় নিয়ে যাওয়ার পর প্রমাণ স্বরূপ এদের দু'জনকে দিয়ে লিখিয়ে নেবে স্ট্যাম্প পেপার টা ওদের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে।

সাদার উপর কাজ করা সেই বুটিকের শাড়ি এবং সাদা স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে একদম ফিটফাট হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেও দেবযানীকে দেবীর চোখ দুটো সর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত ছিলো .. হয়তো একটা ধরা পড়ার ভয় বা লজ্জা তাকে সর্বক্ষণ গ্রাস করছিলো।

ততক্ষণে মিস্টার ঘোষ এবং আগারওয়াল নিজেদের পরিধেয় বস্ত্রগুলি পড়ে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদিম মানুষ থেকে আজকের সভ্য জগতের মানুষে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে।  

পুলিশের গাড়িতে যেতে যেতে বিশেষ কোনো কথা হলো না। থানার সামনে গাড়ি থেকে নামার পর দেবাংশু নির্দেশের সুরে দেবযানী দেবীকে বললো "এই গাড়িটা এখনই আপনাকে রূপনারায়ণপুর স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসবে .. স্টেশন মাস্টারকে আমি ফোন করে দিচ্ছি .. ওখানকার ওয়েটিংরুমে আজকের বাকি রাতটুকু কাটিয়ে কালকের ভোরের ট্রেনে শ্রীরামপুর ফিরে যাবেন .. চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমার পাঠানো একজন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল সবসময় আপনার সঙ্গে থাকবে.."

দেবাংশুর কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে "আমি কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ জানাবো .. ধন্যবাদ দেওয়া তো দূরের কথা তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও বোধহয় আমার নেই .. কোনো সাফাই দিচ্ছি না, তবুও বলি আমার মেয়ে আর জামাইয়ের যাতে কোনো বিপদ না হয় সেই জন্যেই এই পাপ আজকে আমি করতে রাজি হয়েছি বা করেছি .. তবে এখন তোমাকে এখানে দেখে আমি খুব নিশ্চিন্তে ফিরে যেতে পারবো .. কারণ তোমার উপস্থিতিতে আমার মেয়ে সব থেকে নিরাপদ থাকবে .. আর একটা কথা,  তুমি আর মৌ মিলে যদি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নাও তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না .. এটাকে যদি প্রায়শ্চিত্ত বলে কটাক্ষ করো, করতে পারো .. চলি.." কথাগুলো বলে গাড়িতে উঠে বিদায় নিলেন দেবযানী দেবী।

পুলিশ স্টেশনের ভিতরে ওই দুই দুর্বৃত্তকে দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত প্রয়োজনীয় আইনি কাজকর্ম সম্পন্ন করে ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দেবাংশু।

★★★★

অনেকক্ষণ আগে দমকল এসে আগুন নিভিয়ে দিলেও আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া ডিসপেনসারি ও তার ভেতরের বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং বিশেষ করে পোড়া মাংসের গন্ধে যেনো একটা শ্মশানের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডিসপেন্সারির ভেতরে না ঢুকে এবং ঝলসে যাওয়া মৃতদেহগুলির দিকে না গিয়ে আগুনে পুড়ে ফ্রেম থেকে খুলে আসা ডিসপেনসারির কাঠের দরজার কপাটগুলো ভালো করে পরীক্ষা করলো দেবাংশু। তারপর পাশের মিটার ঘর অর্থাৎ যেখান থেকে শর্ট সার্কিটের জন্য আগুন লেগেছিলো সেই স্থান কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বৃদ্ধা পাগলিনীটিকে না দেখেই তাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে জেনারেল ম্যানেজার সুধীর যাদবের চেম্বারে ঢুকে গেলো দেবাংশু।  

[Image: 94474165-2536359159959440-8545964735458181120-n.jpg]

প্রায় ১৫ দিন পর সুন্দরনগর ফিরলেন অরুণ বাবু। বেলা এগারোটা নাগাদ কলকাতা থেকে পুলিশের গাড়ি এসে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। এই ১৫টা দিন তার কাছে যেন ১৫ বছরের সমান মনে হচ্ছিলো। বাড়িতে ঢুকে প্রথমে কারোর দেখা বা সাড়াশব্দ পেলেন না তিনি। তারপর শোবার ঘর থেকে বুকানের গলার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে ওই ঘরে ঢুকে দেখলেন খাটের উপর সোমা আর বুকান দু'জনে খেলা করছে।

সোমাকে দেখেই প্রচন্ড অসুন্তুষ্ট হয় কিছুটা উচ্চস্বরে অরুণবাবু বললেন "এই বিশ্বাসঘাতক মহিলাটি আমার বাড়িতে কি করছে? বেরিয়ে যাও এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে .."

"hold on Mr. Arun Roy .. একজন অসহায় মহিলাকে দেখেই তোমার ভেতরের নকল পুরুষসিংহ জেগে উঠলো? কোনো কিছু না জেনেই, শুধুমাত্র নিজের ধারণার উপর নির্ভর করে কি হিসাবে তুমি অপমান করছো সোমাকে? এতদিন তোমার পৌরুষত্ব কোথায় লুকিয়ে ছিলো? বিনা দোষে একটি মিথ্যে কেসে তোমাকে সুন্দরনগর থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে কলকাতাতে এতদিন রাখা হলো। অথচ এর মধ্যে একবারও তোমার বাড়িতে পুলিশ গেলো না .. তোমার চাকরিটাও গেলো না! তোমার একবারও সন্দেহ হলো না তোমাকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যানটা তাহলে কিসের জন্য করা হয়েছিল? নিজে থেকে সেই প্রথম দিনের খবরটা দেওয়া ছাড়া একবারও ফোন করেছিলে তুমি? আমি যতবার ফোন করে ডুকরে কেঁদে উঠতাম .. তুমি কিছু বুঝেই হোক বা না বুঝেই হোক আমার পুরো কথাটা শেষ করতে দেওয়ার আগেই অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতে। ভীতু এবং অপদার্থের মতো অন্য জায়গায় লুকিয়ে বসে থেকে শুধুমাত্র নিজের চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে দিনের পর দিন মুখ বুজে থেকেছো তুমি। for your kind information যতদিন না আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে এই বাড়িটা যতটা তোমার ততটা আমারও .. তাই ওকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলার কোনো অধিকার তোমার নেই।" হাঁটুর অনেকটা উপরে ওঠানো ঝুলের একটি কালো রঙের পাতলা স্লিভলেস bodycon gown পরিহিতা শ্রীতমা বাথরুম থেকে বেরিয়ে ততোধিক উচ্চস্বরে কথাগুলি বললো অরুণ বাবুর উদ্দেশ্যে।

শ্রীতমার এই অত্যন্ত ঝাঁজালো এবং অপ্রিয় সত্য কথাগুলি শোনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুটা অবাক হয়ে এবং অবশ্যই অপরাধবোধে থতমত খেয়ে গিয়ে চুপ করে গেলেন অরুণবাবু।

সেই মুহূর্তেই ওদের কোয়ার্টারের সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে বারকয়েক হর্ন বাজালো। গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ওই পোশাকেই শ্রীতমাকে বেরিয়ে যেতে দেখে অরুণবাবু মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলেন "এইভাবে এই পোশাকে কোথায় যাচ্ছো?"

"দরকার আছে বলেই যেতে হচ্ছে ..স্বামীর সহচর্য এবং নিরাপত্তা না পেলে কপালে সতীত্ব নষ্ট হওয়ার থাকলে হতেই পারে .. আবার নিজেকে রক্ষা করার মানুষজনের সাহায্যের হাত যদি চারপাশে পাওয়া যায় তাহলে যেকোনো অবস্থায় নিজের সতীত্ব বাঁচানো সম্ভব .. এর সঙ্গে পোশাকের কোনো সম্পর্ক নেই .. যাইহোক, বুকান রইলো .. একটু দেখো .. অনেক দূর থেকে এসেছো .. ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে-দেয়ে, একটু বিশ্রাম করে নাও .. সোমা রান্না করে দেবে .." এই বলে গায়ে বিদেশী পারফিউমের সুগন্ধ ছড়িয়ে, নিজের ভারী নিতম্বদেশে তরঙ্গ তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শ্রীতমা।

★★★★

"আপনার ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্য শুধু শুধু বিনা দোষে আমার ক্লায়েন্টদের আটকে রেখেছেন মিস্টার সান্যাল .. এই নিন ওদের দু'জনের জামিনের কাগজ .. এই মুহূর্তে ছেড়ে দিন ওদেরকে" দেবাংশুর টেবিলের উপর ঝুঁকে উক্তি করলো এই কোম্পানির লিগাল অ্যাডভাইজার এবং পেশায় উকিল বিকাশ চতুর্বেদী।

 দেবাংশু তখন নিজের চেম্বারে বসে এই কেসের একটা রিপোর্ট তৈরি করছিলো। উকিল বাবুর উক্তি কানে আসতেই লোকটার উপর নিজের রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে মুহুর্তের মধ্যে চেয়ার থেকে উঠে সর্বশক্তি নিয়ে চতুর্বেদীর ডান দিকের কানের গোড়ায় এক থাপ্পর মারলো।

অতর্কিত এইরূপ আক্রমণে এবং প্রচন্ড আঘাতে উকিল বাবু ছিটকে পড়ে গেলো মাটিতে। বেশ কিছুক্ষণ কানে হাত দিয়ে বসে থাকার পর যখন কিছুটা যন্ত্রণা প্রশমিত হলো তখন সে অনুভব করলো হয়তো সে ডান দিকের কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তারপর কোনক্রমে দেওয়াল ধরে উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত ক্ষীণকন্ঠে অথচ প্রতিবাদী সুরে বললো "আপনি জানেন আপনি এটা কি করলেন? আপনি একজন উকিলের গায়ে হাত তুলেছেন .. এর ফল আপনাকে ভোগ করতে হবে .. I'll not spare you.."

উকিলবাবুর এই কথার ফল আরো ভয়ঙ্কর হলো। চতুর্বেদীর চুলের মুঠি ধরে বাঁ হাতের কনুইটা পেছনদিকে পুলিশি কায়দায় মুচড়ে ধরে দেবাংশু চেঁচিয়ে উঠলো "আরে ধুর শকুনের বাচ্চা .. তোর মত কত উকিল এলো আর গেলো আমার বাল ছিঁড়তে পেরেছে .. তাছাড়া এই কেসের জন্য আমি সবকিছু করতে পারি .. এটা যদি আমার জীবনের শেষ কেস হয় তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই .. তাই তোকে আমার ক্যালানির হাত থেকে আজ কেউ বাঁচাতে পারবে না .. তাছাড়া কাল রাতে ওই দুই বেজন্মাকে দিয়ে মিস্টার অরুণ রায়ের কেসের ব্যাপারে ওদের সমস্ত দুষ্কর্মের স্টেটমেন্ট লিখিয়ে নিয়েছি আমি .. তাই তোমার এই জামিনের কাগজ তো এখন আর কোনো কাজে আসবে না চাঁদু .. ওটাকে বরং তোমার সঙ্গে নিয়ে গিয়ে টিস্যু পেপার হিসেবে ব্যবহার করো .. যদি অবশ্য তোমার হাতদুটো আমি ব্যবহার করার মতো অবস্থায় রাখি তবেই .. এদের মুক্তি হতে পারে একমাত্র পার্সোনাল বন্ড দিয়ে যদি কেউ এই কেসটা উইথড্র করে তবেই .. এবং সেটা করতে পারেন একজন high income tax payer সজ্জন ব্যক্তি .. যিনি এই এলাকার অতি পরিচিত মুখ অথচ যার কোনো পুলিশ কেস নেই .. সেরকম কেউ এসে এই কুত্তার বাচ্চাগুলোকে বাঁচাবে বলে আমার মনে হয় না।"

"পার্সোনাল বন্ড দেওয়ার উপযুক্ত criteria গুলো আপনার কথা অনুযায়ী সব যখন আমার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে মিস্টার সান্যাল .. তখন আমিই না হয় হলাম এদের দু'জনের জামিনদার .. এরা দু'জন আমার ফ্যাক্টরির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চপদস্থ অফিসার .. আপনি শুধু শুধু এদের আটকে রেখে harass করছেন .. আমি আমার ব্যক্তিগত জামিনে এদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চাই।" ঠিক সেই মুহূর্তে দেবাংশুর চেম্বারে ঢুকে কথাগুলো গুরুগম্ভীর গলায় বললেন এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সুধীর যাদব।  

"স্যার এতক্ষণে এলেন? আরেকটু দেরী করে এলে এই দানবটা আমাকে খুন করে ফেলতো।" দেবাংশুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এসে বিশালাকার সুধীর যাদবের পিছনে লুকালো মিস্টার চতুর্বেদী।

"আরে আমরা অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছি .. চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম .. আমি ঢুকতে গেছিলাম কিন্তু আমাকে ম্যাডাম শ্রীতমা বাধা দিয়ে বললেন তিনি আরো কিছুক্ষণ তোমার মতো জানোয়ারের একজন হিরোর হাতে আড়ং ধোলাই খাওয়া দেখতে চান .. তাই আমি আর ম্যাডামকে মনোক্ষুন্ন না করার জন্য বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলাম .. যাই হোক, আমাদের কাজ হয়ে গেছে এবার তুমি কেটে পরো বিকাশ, নাহলে আরো ধোলাই হতে পারে .. আরে ম্যাডাম শ্রীতমা ভেতরে এসো .. তোমার সই ছাড়া তো কেসটা উইথড্র হবে না.." উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে কথাগুলো বললেন সুধীর যাদব।

চেম্বারে ঢোকার পর নবরূপে সজ্জিতা শ্রীতমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো দেবাংশু। তারপর মুগ্ধতার ঘোর কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে এসে শ্রীতমাকে উদ্দেশ্য করে বললো "যে পাষণ্ডগুলো তোর এত বড় সর্বনাশ করলো .. তোর পরিবারের সর্বনাশ করলো .. তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার বদলে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তুই মিস্টার যাদবের সাহায্য নিচ্ছিস? আর মিস্টার সুধীর যাদবকে তো একজন ন্যায় পরায়ণ, উচ্চশিক্ষিত এবং সজ্জন ব্যক্তি বলে মনে হয়েছিল আমার .. তিনি কি করে তোর মতো একটা নির্বোধ বাচ্চা মেয়ের কথায় এভাবে নেচে উঠলেন বুঝতে পারলাম না .. যাই হোক আপনারা যখন এই কেসটা উইথড্র করে ওদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চান, তখন আমার আর কিচ্ছু বলার নেই .. তবে এইটুকুই আফসোস আবারো ঠোকলাম আমি .. আবারও মানুষ চিনতে ভুল করলাম .. কনস্টেবল, লক-আপ থেকে নিয়ে এসো ওদেরকে.."

চেম্বারে ঢুকে মিস্টার ঘোষ এবং আগারওয়াল ওই পোশাকে শ্রীতমাকে দেখে লালায়িত হয়ে পড়লেও এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে নিজেদেরকে মুক্ত করবার জন্য জোনাল ম্যানেজার মিস্টার যাদবের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো "আপনিই আমাদের বাবা .. আপনিই আমাদের মা .. আজকের উপকারের জন্য চিরদিন আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো।"

থানার ভেতর আরো কিছুক্ষণ মান-অভিমান, ভুল করে ক্ষমা চাওয়া, মেকী মরাকান্না .. এই সমস্ত নাটক চলার পর ওরা সবাই বিদায় নিলো। নিজের চেম্বারে শূন্য দৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো দেবাংশু।

[Image: 95633196-2538457226416300-6107769079202840576-n.jpg]

রাতে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসার সময় দেবাংশুকে প্রচন্ড গম্ভীর এবং মনমরা হয়ে থাকতে দেখে অরুণাভ জিজ্ঞেস করলো "কি ব্যাপার বন্ধু .. এত নামকরা একজন দুঁদে সিআইডি অফিসার হয়েও তুমি আসার পর থেকে এই কেসের সঙ্গে যুক্ত একটার পর একটা ঘটে যাওয়া ঘটনার এখনো পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা করতে না পারার গ্লানি .. নাকি বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রনা .. এই মৌনব্রতের কারণ কি?"

"তোমাকে সামনে যতই আন্ডারএস্টিমেট করি আসলে বুদ্ধিতে তোমার সঙ্গে আমি কোনদিনই পেরে উঠিনি .. তুমি ঠিকই ধরেছো.. মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন এতকিছু করলাম .. তখন আমার সম্মানের আর বিশ্বাসের কোনো মর্যাদাই রাখলো না সে.." ধরা গলায় শুধু এটুকুই বলতে পারলা দেবাংশু।

"সব সময় সেই মানুষটাকে ভালো রাখার চেষ্টা করো  এবং তাকে যথাযোগ্য সম্মানও দাও, যাকে তুমি প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে দেখতে পাও .. দেখবে, ভালো থাকতে শিখে গেছো.. আর একটা কথা .. তোমার মত একজন সৎ এবং কর্তব্যপরায়ন পুলিশ অফিসারের এইভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া চলে না .. সবে প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে .. দ্বিতীয়ার্ধের খেলা এখনো বাকি এবং ম্যাচটা যে তোমাকেই জিততে হবে বন্ধু" অরুণাভর কথা শুনে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল দেবাংশু।

সেই মুহূর্তে ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো ..

রিসিভারটা তুলতেই ওপাশ থেকে অফিসার ইনচার্জ প্রবীর ঘোষালের কন্ঠ ভেসে এলো "কিছুক্ষণ আগে মিস্টার আগারওয়ালের বাগানবাড়ি থেকে উনার মেইড-সার্ভেন্ট ফোন করে জানালো সে কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়েছিল। তারপর ফিরে এসে দেখে বৈঠকখানার ঘরের টিভি চলছে আর সোফার ওপর দুই বন্ধু অর্থাৎ মিস্টার ঘোষ এবং আগারওয়াল বসে একাগ্রচিত্তে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমে মহিলাটির কিছু সন্দেহ হয় নি.. ঘন্টাখানেক পরে খেতে ডাকার জন্য যখন সে আবার ওই ঘরে ফিরে আসে তখন দেখে ওই একই ভাবে ওরা দুজন বসে আছে .. সেই সময় সন্দেহ হওয়াতে আলতো করে মিস্টার আগারওয়ালের গায়ে টোকা দিতেই তিনি ধপ করে সোফার গায়ে এলিয়ে পড়েন .. মিস্টার ঘোষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে .. আমরা এখন অকুস্থলেই আছি .. আপনি দয়া করে একটু তাড়াতাড়ি আসুন.. কারণ আপনি এলে বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হবে"

ফোনটা রেখে দিয়েই দ্রুত পোশাক পড়ে বের হতে যাওয়ার মুখে অরুণাভ জিজ্ঞেস করলো "কি ব্যাপার .. খাবার ফেলে এখন আবার এইরকম চিন্তিত মুখে চললে কোথায়?"

"নিশ্চিন্ত আর থাকা গেল না বুম্বা .. আগারওয়ালের বাগানবাড়িতে দুটো খুন ‌.. তুমি কি যেতে চাও আমার সঙ্গে?" অরুণাভর কথার উত্তরে বললো দেবাংশু।

"নাহ্ .. তুমি একাই যাও .. কারণ এই গল্পের নায়ক তুমি .. আমি নই .."

পুলিশের গাড়িতে উঠে বাগানবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দেবাংশু সান্যাল।

(ক্রমশ)

লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন পাঠক বন্ধুরা

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply


Messages In This Thread
RE: চক্রব্যূহে শ্রীতমা (চলছে) - by Bumba_1 - 12-07-2021, 09:52 PM



Users browsing this thread: 189 Guest(s)