Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা আমরা তো দেবের গানই শুনে এসেছি এতকাল ধরে তোমার যখন গানের গলা ভাল, তখন তোমাকেও আজ ছাড়ছি না শুভেন্দু বলেছ, তুমি না কি রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুন গাও
শিখা একটু লজ্জ্বা পেল বলল, ‘এই মরেচে সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরেছে আমি এখন কি করি?’
বিদিশা বলল, ‘আমরা সবাই এখানে গানের খুব ভক্তসেই কলেজের সময় থেকেই গান শোনাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছিসেই সময় রোজই আমাদের গানের আসর বসতোকলেজে তো কালচারাল ফাংশনও হতআর এই যে দেখছো লোকটাকে, আমার পাশে বসে আছেবলে আমার দিকে ইঙ্গিত করল বিদিশাবলল, এ হল মধ্যমনিভীড়ের মধ্যে একজনই গায়কআর আমরা হল তার শ্রোতাএর মত গলা, আর দ্বিতীয় কারুর নেই।’
শিখা যেন এবারে আরও ভয় পেয়ে গেলবলল, ‘ও বাবাতাহলে আমি কিছুতেই গাইবো নাদেবদার ধারে কাছেও কোনদিন পৌঁছোতে পারবো না।’
আমি আশ্বস্ত করলাম শিখাকেবললাম, ‘ বিদিশা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে তো? তাই আমার সন্মন্ধে একটু বেশিই বলছেআমি এমন কিছু গাই নাতুমি পরে আমার গান শুনলেই বুঝতে পারবেআর তাছাড়া আমার আগের মতন গলা একেবারেই নেইরেওয়াজ করি নাগলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।’
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ণ কাটলোবলল, ‘কি যাতা বলছিসএকটু আগেই তো গাইলিতোর সাথে কারুর তুলনা হয়?’
আমি এবার ধমক লাগালাম শুভেন্দুকেবললাম, ‘যাও বা মেয়েটাকে রাজী করালামদিলি তো সব ব্যাঘাত করেআমি এখানে শিখার গান শুনবো বলে বসে আছিআর তোরা কিনা আমার গান নিয়েই পড়ে আছিস।’
 
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখাআমরা দেবের গানও শুনবোতোমারটা বরং আগে শুনি।’
শিখা আমার দিকে তাকিয়ে আছেএখনও একটু লজ্জ্বা লজ্জ্বা পাচ্ছেমুখ নিচু করে বলল, ‘গাইতে পারি এক শর্তেআপনাকেও কিন্তু একটা গান শোনাতে হবেবড় আশা করে এসেছি।’
শুভেন্দু শিখার কথা শুনে বাহ্বা নিচ্ছেওকে বলল, ‘ ও ব্যাপারে চিন্তা কোরো নাদেবকে আমি একবার বললেই ও গাইতে শুরু করবেআর তুমিও যখন রিকোয়েস্ট করেছোও তোমার কথা ফেলতে পারবে নাঅলওয়েজ রেডী তো সিঙদ্য মিরাকেল ভয়েজআজকের যুগের সেরা গায়কতবে অ্যামেচারএকেবারেই প্রফেশনাল নয়।’
 
শুক্লা ধমক দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, ‘এই তুই চুপ করআমাদের এবার শিখার গান শুনতে দে।’
 
মাধুরী শিখার কোল থেকে বাচ্চাটাকে আবার নিজের কোলে নিয়ে নিয়েছেবাচ্চাটা হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিলমাধুরী ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল, ‘এই চুপচুপএকদম চেঁচাবি না এখনদেখছিস না? তোর নতুন মামী এখন আমাদের গান শোনাবেখুব মিষ্টি মামীটাশোন শোনদেখ কি মিষ্টি গায় এই মামীটা।’
 
অদ্ভূত ভাবে চেঁচানি থামিয়ে মাধুরীর বাচ্চটাও শিখার দিকে তাকিয়ে রইলযেন গান শোনার জন্য বাচ্চাটাও এবারে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেশুভেন্দু সব দেখেশুনে বলল, ‘বাহ্ আমার বোনপোটা তো বেশ প্রথমদিনই ফ্যান হয়ে গেছে শিখারদারুন দারুনদেখে বড় ভালো লাগছে
 
রনি এবারে একটু বাহবা নিয়ে বলল, ‘কার ছেলে দেখতে হবে না? ও হল আমার ছেলেমাই সনলাইক ফাদার লাইক সনভাবছি ওকেও বড় হয়ে আমি গায়কই বানাবোআজ থেকে আমারও একটা গোল সেট হয়ে গেল।’
 শিখা গান গাইবার জন্য এবারে তৈরীশুরু করতে গিয়েও শেষবারের মতন আবার একটু লজ্জ্বা পেলমুখ নিচু করে বলল, ‘ভীষন ভয় ভয় করছেআপনি সামনে বসে আছেনকি গাইতে কি গাইবোযদি ভুলভাল কিছু হয়?’
 
আমি ওকে আস্বস্ত করলাম। ‘বললাম ভয় কি? শুরু করে দিনআমি কথা দিচ্ছিভুল ধরবো নামনের আনন্দে গানআজ ভালো একটা দুটো রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনানআমিও রবীন্দ্রসঙ্গীতের খুবই ভক্ত।’
 
গানটা যখন শুরু করলো শিখামনে হল সরস্বতী যেন সত্যি সত্যিই বিরাজ করছে ওর গলায়কি অপরূপ গলাগলায় শুধু যে মিষ্টতাই বিরাজ করছে, তাই শুধু নয়একজন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতন মনটা কোথায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবেশিখাই নিয়ে যাবে শ্রোতাকে এক অন্য ভাবনার জগতেমনে হবে এই পৃথিবীতে দূঃখ বলে সত্যি কিছু নেইশুধু আনন্দ আর সুখএমন গলা শুনলে মূমূর্ষ রুগীও বাঁচার তাগিদ অনুভব করবেশরীর জুড়ে অদ্ভূত এক প্রাণের পরশ লেগে যাবেপ্রেমিককে স্মরণ করবে প্রেমিকাপ্রেমিক স্মরণ করবে প্রেমিকাকেমনে হবে পৃথিবীতে ভুল বোঝাবুঝি বলে কিছু আর নেইযত দূঃখের, আজই হল তার অবসানশুধু আমিই কেন? যে কেউ ওর গান একবার শুনবেরীতিমতন শিখার ফ্যান হয়ে যাবেআমি গ্যারান্টী দিয়ে বলতে পারি
 
শুধু আমি কেন? শিখাটা গানটা শুরু করবার পর, সবাই যেন কেমন একটা আবেশের মধ্যে চলে গেলমাধুরী হাঁ হয়ে গেছে শিখার গলা শুনেশুভেন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থুতনীতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ঘাড় নাড়ছেরনিরও চোখ বোজাযেন অভিভূত হয়ে সেই আমেজটাকে গ্রহণ করছেঅদ্ভূত ব্যাপারশুক্লা যেন শিখার গান শুনে রীতিমতন আশ্চর্যভাবতেই পারেনি এত দরদী গলা হতে পারে মেয়েটার
 
আর আমি তো এতটাই তন্ময় হয়ে গেছি কিভাবে শিখাকে গান শেষ হলে সাধুবাদ জানাবোভাষা খুঁজে পাচ্ছি নাশুধু দেখছি বিদিশাই কেমন আনমোনাঅনুশোচনার ভারে আক্রান্তভাবতেই পারছে নাশুধু একটা ছোট্ট ভুলে জীবনের বেশ কয়েকটা বছর ভালোবাসা ছাড়াই একাকী করে দিল দুজনকেআমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে নতুন আর একজনকে বিয়ে করে সত্যি জীবনে কোন সুখ পেলো কি বিদিশা? সেই তো  আমার কাছেই ওকে আবার ফিরে আসতে হল
 
শিখা প্রথম যে গানটা ধরলো, সেটা হল,
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
 
শুক্লা বলে উঠল এক্সিলেন্টঅসাধারণএটা নিশ্চই, শুভেন্দুর জন্যএবার বিদিশার জন্যও একটা গান ধরো শিখাদেখো ও কেমন তোমার গান শুনে অভিভূত হয়ে গেছে
 
বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শিখার দিকেসবাই ওকে জোর করছে। ‘হ্যাঁআর একটা আর একটাপ্লীজ শিখা গাও গাওকি দূর্দান্ত গলা তোমার।’
 
শিখা প্রথমে একটু ইতস্তত করে বিদিশার জন্যই দ্বিতীয় গানটা ধরলোআমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শিখার দিকেমাঝে মধ্যে বিদিশার দিকেও তাকাচ্ছিবুঝতে পারছি শিখা এ বাড়ীতে আসার পর কেমন যেন অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গেছেশুভেন্দু সব দেখেশুনে একটা হীরের টুকরো মেয়েকে জীবনসাথী হিসেবে বাছাই করেছেওর জীবন সত্যি ধন্য হয়ে গেছে
 
দ্বিতীয় গান ধরলো শিখাআমি মন্ত্রমুগ্ধপুরো গানটাই শিখা, বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে গাইলআমি অবাকসত্যি এমন দরদী গলা জীবনে প্রথমবার এতো কাছ থেকে শুনছি
 
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
কবে তুমি গেয়েছিলে,
আঁখির পানে চেয়েছিল, ভুলে গিয়েছি,
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ঐ নয়নের তারা!!
তুমি কথা কয়োনা, তুমি চেয়ে চলে যাও,
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গলে যাও
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে,
চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা, ঢালুক কিরণধারা!!
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
 
ওহ্অসাধারণশুক্লা বলে উঠলদেব তুই কিছু বলবি না শিখার গান শুনেআমার তো সত্যি বলার মতন কোন ভাষা নেই
 
বিদিশার মুখটা তখন নিচুকি যেন চিন্তা করছেওর মাথায় এখন নানা চিন্তাপুরোনো দিনগুলোকে আবার আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করছেকিন্তু কোথায় যেন এখনও সেই পুরোনো ব্যাথাভেতর থেকে মাঝে মধ্যেই গুমড়ে গুমড়ে উঠছেকষ্টটা চলে গিয়েও পুরোপুরি যেন যাচ্ছে না
 
ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে শিখা বলল, ‘আমি সবই শুনেছি ওর মুখেকষ্ট পেও নাজেনে রেখো কষ্টটা সীমিতআনন্দটা চিরদিনের।’
 
বিদিশা কোন কথা বলতে পারছে নাওর মুখের দিকে তাকিয়ে শিখা আবারো বলল, ‘ভগবান যাকে দূঃখ দেন, তাকে আনন্দও ভগবান দিতে জানেনআমি তো সবসময়ই ভগবানকে বলি, তোমার আছে যত দূঃখতুমি এই ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে দাওআর যাতে যত সুখতুমি আমার এই ছোট্ট দিদিটাকেই শুধু দিয়ে দাওআবার তোমার মুখে সেই পুরোনো হাসিটা আমরা দেখতে চাইকাননের একটা সুন্দর ফুল তুমিতারার মত তোমার চোখহাসি না দেখলে তোমাকে যে সত্যি মানায় না
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 11-07-2021, 12:40 PM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)