Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
ষোলো
কে বলবে আমি অসুস্থ? এক তো বহুদিন পরে বিদিশার প্রত্যাবর্তনতার ওপর শুভেন্দু যেভাবে প্রেমের নতুন কাহিনী শোনাতে আরম্ভ করেছে, আমার মনে হচ্ছে প্রেম হল সব রোগের একমাত্র ওষুধযারা প্রেম করে তাদের শরীরে কোন রোগ ধরে নাএরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম
হঠাৎই আমাকে একটু উত্তেজিত করে শুভেন্দু বলল, কি রে দেব? তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে বিছানা ছেড়ে তোর এবার দৌড়াতে ইচ্ছে করছে।  যাবি না কি একটা লং ড্রাইভে? বল তাহলে, গাড়ীটাকে নিয়ে এসে যাচ্ছি সকালে তোর বাড়ীতে।  বিদিশা তো আছেইআর যাবার পথে শিখাকেও গাড়ীতে তুলে নেবসামনের সীটে আমি আর শিখাআর পেছনের সীটে তুই আর বিদিশাওফঃ-
-আহাআমরা বুঝি বাদ? সব বাণের জলে ভেসে এসেছিশুক্লা যেন হেই হেই করে উঠল
রনিও মুখটা কাচুমুচু করে বলল, একিরে? তুই আমার কথাও ভাবলি না? এ কেমন শালা রে? শালা-
শুভেন্দুও দাঁত মুখ খেচিয়ে বলল, আচ্ছা মুশকিল তোএকটা গাড়ীর সীটে কজন ধরে? আমাকে বোঝা তো? তোরা না বড্ড না বুঝে কথা বলিসআমাকে দেখছি, তাহলে একটা আস্তো বাস নিয়ে আসতে হয়
মাধুরীও মুখ ভার করে চুপচাপ বসে আছেস্বামীকে তাল দিয়ে ছোড়দাকে মাধুরীও একটু খোচা দিল। -হ্যাঁ হ্যাঁতাই যাওপ্রেমের ফুল ফুটতে শুরু করেছে না সবেএখন কি আমাদের কথা মনে পড়বে সহজে?
বোনকে সান্তনা দেবার জন্য শুভেন্দু বলল, এই দেখোদিলি তো সব মাটি করে?
আমি বললাম, না নাসবাই মিলেই আমরা যাবসেরকমই একটা ব্যবস্থা করতে হবেশুধু আমাকে পুরোপুরি সুস্থটা হতে দে।  তারপর দ্যাখ, ছোটখাটো একটা পিকনিকই হয়তো অ্যারেঞ্জ করে ফেলবো
বলতে বলতে বিদিশা আলু পরোটা প্লেটে করে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে মা’ও হাতে দুটো প্লেট নিয়ে বিদিশার পেছনে
বিদিশাই বলল, কোথায় যাবার প্ল্যান হচ্ছে তোমাদের?
আমি বললাম, ভাবছি একটা পিকনিক করব, সবাই মিলে শুভেন্দু বলছে, শিখাকেও সঙ্গে আনবে আমাদের সারাটা দিন দারুন এনজয় হবে
বিদিশা বলল, বাহ্ তাহলে তো দারুন হবে
শুভেন্দু বলল, সবাই মিলে গেলে প্রেম তো আর হবে না তখন শুধু হুল্লোরবাজী হবে
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, সেই ভাল তুই আর দেবই বরং যা জোড়ায় জোড়ায় আমরা সাথে গেলে তোদের আবার প্রেম তো মাটি হয়ে যাবে তাই না?
শুভেন্দু হেসে বলল, আহা রাগ করিস না, রাগ করিস না আমি তো এমিন মস্করা করছি
আলুরদম আর পরোটা শুদ্ধু চারটে প্লেট মা আর বিদিশার হাতেমাধুরী আর রনির দিকে প্লেটটা বাড়িয়ে দিল মা আর বিদিশা দিল শুভেন্দু আর শুক্লাকে আলু পরোটার ভোজ শুভেন্দু পরোটা মুখে পুরে চেটেপুটে খেতে শুরু করেছে মা’কে বলল, আহা মাসীমা, আপনার হাতের রান্না লা জবাবকতদিন এমন পরোটা খাইনি
শুক্লা বলল, ব্যাচারা দেবআমরা সবাই মিলে খাচ্ছিআর ও ব্যাচারা কিছুই খেতে পারছে না
শুভেন্দু বিদিশাকে বলল, কি রে বিদিশা? তোরটা কোথায়?
মা বলল, আমি বিদিশারটা নিয়ে আসছিআর তোমাদের কারুর পরোটা লাগলে আমায় বোলো
শিখার বাকী অধ্যায়টা শোনবার জন্য আমি ভীষন ছটফট করছিশুভেন্দুকে বললাম, এখনও কিন্তু ছাদের গল্পটা পুরোপুরি শোনা হয় নি।  পরোটা আলুরদম খেয়ে বাকীটা শেয়ার করউই আর ওয়েটিং

শুভেন্দু বলল, ওই তো তারপরেই ভালোবাসা শুরু হলনটেগাছটি মুড়োলোআর আমার কথা ফুরোলো

শুক্লা পরোটা খেতে খেতে বলল, ধ্যাতআবার ফাজলামীকিছুই তো শেয়ার করলি নাশুধু ফাজলামীই মেরে গেলি

শুভেন্দু রসিকতা করে বলল, আচ্ছা সবকি তোদের ডিটেলস এ বলতে হবে নাকি? তাহলে তো অন্তরঙ্গ মূহূর্তগুলোও ডিটেলস এ বলতে হয়।  এই আমি শিখাকে একটু জড়িয়ে ধরলাম, শিখাও আমাকেতারপর গালে একটা চুমুঠোঁটেও পরপর দুটোশিখা কটা খেল, আমি কটা খেলামবলতে হবে নাকি?

শুক্লা বলল, হ্যাঁসবই তো বলবেআমাদের কাছে কিছু গোপণ রাখবে নাজানো না আমরা রেগে গেলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারি

রনি বলল, বলে ফেল শুভেন্দুনইলে শুক্লা তোকে আজ ছাড়বে না

শুভেন্দুও রসিকতা জারি রেখে চলেছেপরোটা আর আলুরদম খেতে খেতেই বলল, দাঁড়া আগে মাসীমার কাছ থেকে আরো দুটো চেয়ে নিয়ে আসিখেতে যা দারুন লাগছে নাফ্যানটাসটিকতারপর শিখার সাথে আমার রাতে শোওয়ার গল্পটাও তোদের শেয়ার করববলেই ফিক ফিক করে হাসতে লাগল

রনিও এবার হেসে ফেলেছে শুভেন্দুর কথা শুনেশ্যালককে বলল, এই এইএটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছেতুই শিখার সাথে মোটেই এখনও শুসনিখামোকা কেন গুল মারছিস? শুক্লা তাহলে আরো রেগে যাবে

শুক্লা এবার চোখ বড় করে ফেলেছেএক ধ্যাতানি দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, সত্যি শুভেন্দুসবকিছুরই একটা লিমিট আছে।  যা গুল মারা শুরু করেছিস না তুইআমি আর কি বলব?

মাধুরীও টিপ্পনি কেটে বলল, দেখো আবার, সত্যি শিখা বলে কোন মেয়ে আদৌ আছে নাকিওটাও গুল হতে পারেছোড়দা সব পারেদিনকে রাত আর রাতকে দিন

নিজের বোনকে দাবিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলল, বলিস না ওভাবে বলিস নাশিখা জানতে পারলে দূঃখ পাবেআমি তোর কথা ওকে কত বলেছিস জানিস? বলেছি আমরা চারভাইকিন্তু আমাদের এই একটি মাত্রই আদরের বোনবড় আদরের ছোটবোনমাধুরী

মাধুরী বলল, বল না তাহলেতুই তো সব খুলে বলছিস নাওই জন্য তো, তোর ওপর আমরা সবাই মিলে রেগে যাচ্ছি

শুভেন্দু বলল, বলবো রে বাবা বলবোসব তোদের খুলেই বলবোতবে ওপেনলি তো সব কথা বলা যায় নাতাই একটু সেন্সর করে বলতে হবে

আমি শুভেন্দুর কথা শুনে হেসেই অস্থিরশুক্লা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটু আগে কেমন ঢং করছিল শুভেন্দুযাহা বলিব সত্য বলিবএখন কি রকম করছে দেখেছিস তো? রনি নেহাত আজকে সব ফাঁস করে দিলনইলে এটাও আমাদের জানা হত না

মা বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার পরোটা ভর্তি থালা নিয়ে ঢুকলোসাথে বিদিশার জন্য একটা আলাদা প্লেটসবাই বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছেমা বলল, কে কটা নেবে বলো? এই ভাজতে ভাজতে আমার একটু দেরী হয়ে গেল

আমি বললাম, দাও দাওশুভেন্দুকে আরো দুটো পরোটা দাওও নইলে শিখার গল্পটা পুরোটা আমাদের কাছে শেয়ার করবে না

শুভেন্দু বলল, না নাআমি এমনি বলবআর এই পরোটা খাবার গল্পটাও শিখার কাছে গিয়ে বলতে হবেও শুনে দারুন খুশি হবে
 খাওয়া দাওয়া এবারে শেষশুভেন্দুর প্রেম কাহিনী শোনবার জন্য সবাই তখন উদগ্রীবশুভেন্দু এবার শুরু করল একমাত্র বক্তা হিসেবেআমরা বাকীরা তখন শ্রোতা।  মা’কে কায়দা করে আমিই ভেতরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিমা জানে এখন অনেক রসিকতাই হবেমায়ের সামনে সবকথা তো আর অকপটে বলা যায় নাশুভেন্দু অনেক ফ্রী হয়ে বলতে পারবেআরো এক প্রস্থ চা বানাবে বলে মা নিজেই চলে গেল।  শুভেন্দু শুরু করল এইভাবে। -দ্যাখ তোরা বিশ্বাস করই বা না করতবে আমার প্রেমটাকে অত খাটো করে দেখিস নাহতে পারে এটা অনেকদিনের প্রেম নয়বিদিশা আর দেবের মতনতবে আমার প্রেমের মধ্যে একটা বেশ রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব আছে।  ঠিক যেমন বিদিশা আর দেবের বেলায় ঘটেছিলচিরকাল তো ওই লোকটাই প্রেমের অমৃতবানী আমাদের শুনিয়ে এসেছেআমি ছিলাম উল্টো পথের যাত্রীতোরা যেদিক দিয়ে এতদিন হেঁটেছিস, আমি হেঁটেছি উল্টো পথে।  কিন্তু কেন জানিনা, এই শিখাই আমাকে সঠিক রাস্তাটা চেনালোসেই হিন্দীতে একটা কথা আছে না ‘তুমকো ভটকনে নেহী দুঙ্গা মেরী জানম্যায় আ গ্যায়ী হু নাতুমহারা জানশিখা।’

শুক্লা শুনে বলল, বাহ বা বাহ বাতারপর?

শুভেন্দু বলল, শিখা মানে কি? হিন্দীতে এর মানে হল রোশনীআর শিখাকে নিয়ে আমার শায়েরীটা হল, ভটক রাহা থা অন্ধরোমে এক রোশনীকে লেকর

কাহাসে শিখা নাম কি এক চাঁদ নিকাল আয়া চাঁদনী লেকর

শুক্লা আবার বলল, বাহ বা, বাহ বাক্যায়া বাততারপর?

আমিও হেসে বললাম, বারে শুভেন্দুতুই তো আসর একেবারে গরম করে দিলি

শুভেন্দু বলল, দাঁড়া দাঁড়া আমাকে বাঁধা দিস নাতাহলে সুর তাল সব কেটে যাবে।  অনেকদিন পরে আমিও সত্যি কথাটা বলছি তোতাই বেশ একসাইটমেন্ট ফীল হচ্ছে

আমি হাসছি ওর কথা শুনেশুভেন্দু বলতে থাকলো, শিখাকে কিন্তু কলকাতায় আমি প্রথম দেখিনিওর সাথে আমার প্রথম দেখা পুরীতেতারপর কোনারক মন্দিরের সামনে হাতে হাত ধরে অনেকটা পথ চলাপ্রেম সেখানেই শুরুবাড়ীর ছাদের গল্পটা তো অনেক পরেযেটা রনি জানেপুরী আর কোনারকের গল্পটা রনিও জানে না

আমি অতি আগ্রহ নিয়ে বললাম, বল বলশুনি

শুভেন্দু বলতে থাকল, অনেক মেয়েই আছে তোতা পাখীর মত শুধু বকবক করে অবান্তর কথা বলে যেতে পারে কিন্তু বলার ভঙ্গীমাটা যদি সুন্দর আর বুদ্ধিদীপ্ত হয়, তাহলে পুরুষ মানুষের চোখকে তা মুগ্ধ করে তোলেআমি অবাকঅচেনা একটা লোকের সাথে কি করে এত সহজ হয়ে যেতে পারল মেয়েটি? ও যেন সত্যি সুন্দর পুরীতে যে হোটেলটায় উঠেছিলাম, বাবা মা’কে সঙ্গে করে ও পুরীতে সেই হোটেলটাতেই উঠেছিল হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে ওর অপরূপ সৌন্দর্য শোভা দেখছিসত্যি কথা বলতে কি বিদিশার পর এত সুন্দর মুখশ্রী আমিও জীবনে প্রথমবার দেখছি

আমি বললাম তারপর?              
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 09-07-2021, 03:24 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)