08-07-2021, 02:03 PM
পনেরো
ছাদের গল্প শুরু করার আগে শুভেন্দু বলল, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না।’
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম। মনে মনে বললাম, এই শুরু হল তোর ড্রামা। আজ যদি বানিয়ে বানিয়ে এখানে কিছু বলিস, তোকে কেউ আস্ত রাখবে না।
শুক্লাও হাতটা তুলে শুভেন্দুর দিকে চড় দেখিয়ে বলল, প্যাঁদানি খাবে বুঝলে? আমাদের বোকা বানাবার চেষ্টা কোরো না।’
দেখি সঙ্গে সঙ্গে উপরের দিকে মুখটা করেছে শুভেন্দু। যেন ভগবানকে স্মরণ করছে। একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল একটা নাম। ‘শিখা’। আজ যদি শিখা তুমি এখানে থাকতে? এরা আমাকে এভাবে ছোট করতে পারতো না।’
আমি ওকে বললাম, মেয়েটার নাম শিখা নাকি? বাহ্ নামটা তো দারুন সুন্দর। তা তুই ওপরের দিকে তাকিয়ে শিখাকে স্মরণ করছিস। শিখা এখন কোথায়?
শুভেন্দুর দেখলাম মুখটা গম্ভীর। সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে মুখটা করুন মত করে বলল, ‘আমাকে ওপর থেকে শিখা আশীর্ব্বাদ করছে। ও জানে আজ আমি বিপদে পড়েছি। এই বিপদ থেকে যাতে রক্ষা পাই তার জন্যই এই আশীর্ব্বাদ।’
কথাটা শুনে রনি দেখলাম ফিক ফিক করে হাসছে। শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, একটা মেয়েছেলেকে নিয়ে ইয়ার্ক্কী হচ্ছে? ফাজলামোর আর জায়গা পাও না। না? ও তোমাকে ওপর থেকে আশীর্ব্বাদ করবে? কোথায় আছে সেই মেয়ে?
আমি হাসতে লাগলাম শুভেন্দুর কথা শুনে। বললাম, ‘জ্বলজ্যান্ত মেয়েটাকে তুই উপরে পাঠিয়ে দিলি? শুভেন্দু সত্যি তুই পারিস।’
মাধুরীও রেগে গেছে শুভেন্দুর ওপর। দাদাকে বলল, ‘ছোড়দা তুই না সত্যি পারিস।’
বিদিশাও অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে শুভেন্দুর দিকে। মাধুরী বিদিশাকে বলল, ’দেখো ছোড়দার রকমটা। শুরুটাই করল একটা মিথ্যা কথা দিয়ে। এবার বাকীটা আমরা কি করে বিশ্বাস করব?’
রাগের চোটে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে শুক্লার। রনিকে বলল, এই রনি বলতো তুই। তোর পেয়ারের শালাবাবু সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে। আজ কিন্তু শুভেন্দুকে আমরা সবাই মিলে ধোলাই করব।’
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর শুভেন্দু এতক্ষণে মুখ খুলল। সবাইকে বলল, ‘আহা কি মুশকিল। তোরা না চটপট জিনিষটা ধরতে বড় ভুল করিস। সবকিছু পাখী পড়ানোর মতন অত বোঝানো যায় না। আমি ওপর থেকে শিখার আশীর্ব্বাদের কথা বলেছি। তারমানে কি শিখা মারা গেছে? প্রদীপের শিখা কি অত সহজে নিভে যায়? এখনও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। শিখা তো জীবিতই। এখনও ওর বাড়ীর সামনে দিয়ে যখন যাই। শিখা মাঝে মাঝে বারান্দা নয়তো ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে দেখতে পেলে হাত নাড়ে। মুচকি হাসে। আমিও ওর দিকে হাত নেড়ে তারপরে চলে যাই। তাই বললাম, শিখা ওপর থেকে আমাকে দাঁড়িয়ে আশীর্ব্বাদ করছে।’
ব্যাপারটা দারুন ইন্টারেস্টিং। আমার মনে হল একটু বিদিশার কথার অবাধ্য হয়ে যদি বিছানার ওপরে উঠে বসতে পারতাম? ব্যাটাচ্ছেলে এখনও ওর বাড়ীর সামনে দিয়ে পাস করে বলছে। তারমানে প্রেম এখনও চলছে। ছাদের প্রেমটা হয়তো তার সূত্রপাত।
আমি আবার উঠে বসবার চেষ্টা করছি। বিদিশা চিৎকার করে উঠল। এই, এই, এই? কি করছ তুমি? উঠে বসবে নাকি তুমি?
কথা না শুনে আমি আবার জোর করেই উঠে বসলাম। বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি এসেছো। শুভেন্দু ওর প্রেমের গল্প শুরু করেছে। আমার শরীর এমনিই ভালো হয়ে গেছে। এমন ইন্টারেস্টিং গল্প। আমার শুয়ে শুয়ে শুনতে ভাল লাগছে না।’
রনি একটা সিগারেট আমার দিকে বাড়িয়ে বলল, খাবি নাকি একটা। সুখটান দিতে দিতে শোন। আমেজ এসে যাবে।
মাধুরী এক বকা দিল রনিকে। কি করছ কি তুমি? পাশের ঘরে মাসীমা রয়েছে না? দেবদার শরীর খারাপ। আর তুমি সিগারেট অফার করছ? পাশে যে বউটা বসে রয়েছে তার পারমিশন নিয়েছ?
রনি জিভ বার করে খেঁকিয়ে উঠে বলল, আহা। আমি যেন কত তোমার পারমিশন নিই?
মাধুরী বলল, দেবদাকে দেখে শেখো। জীবনে অনেক পুণ্যিলাভ করবে। দেখো তো দেবদা বিদিশাকে কত ভালবাসে। আর তুমি আমাকে তার সিকিভাগও-
শুক্লা বলল, ‘এই তোরা ঝগড়াঝাটি পরে করিস। আগে শুভেন্দু কি বলছে। সেটা শুনতে দে।
আমাদের সকলের চোখ গিয়ে এবার পড়ল শুভেন্দুর দিকে। শিখা তার প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভেন্দুকে কিভাবে বরণ করে নিল। আমরা শোনার জন্য প্রস্তুত।
রনি একটু পেছন দিকটায় চলে গেছে। আমার ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজাটার ঠিক পাশে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বলল, ‘মাসীমা ঘরে ঢুকলে আমাকে একটু ইশারা করিস। সিগারেটটা নিভিয়ে দেব।’
আমি বললাম, ‘খা না তুই। মা এখন ঘরে আসবে না।’
শুভেন্দু রনির ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিখার নামটা আরো একবার উচ্চারণ করে শুভেন্দু শুরু করল, ‘আসলে আমার কপালে ছিল না তাই। বুঝলি তোরা? না হলে?’
আমি বললাম, কি কপালে ছিল না?
শুভেন্দু বলল, এই শিখা আর আমার অমর প্রেমের ইতিহাস তৈরী হওয়ার ব্যাপারটা।
শুক্লাকে দেখলাম এবার চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেছে। প্রায়ই শুভেন্দুর গলা টিপতে যায়। শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে শুক্লাকে বলল, আরে করিস কি? করিস কি? আমার প্রেমিকা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। ভালো লোকটাকে এভাবে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিস? আমার ভাবী বউটার তাহলে কি দশা হবে বলতো?’
শুক্লাকে দেখলাম এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত পা ছুঁড়ছে বাচ্চাদের মতন। আমাকে প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘এই দেব। বল না তুই শুভেন্দুকে। আসল কথাটা বলছে না। তখন থেকে ভনিতা করে যাচ্ছে। দেখ, তখন থেকে কি শুরু করেছে? একবার বলছে প্রেম হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। আবার বলছে ও নাকি শিখার বাড়ীর সামনে দিয়ে যায়। হাত নাড়ে। আবার বলছে কপালে ছিল না। এভাবে বললে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে না?
রনি পেছন থেকে ফোড়ণ কেটে বলল, কনফিউজড্ কনফিউজড। সি ইজ ভেরী মাচ কনফিউজড্।
আমি শুক্লাকে শান্ত করে বললাম। তুই চুপ করে বোস। ও আসল কথা ঠিকই বলবে। আরে এটাই তো শুভেন্দুর স্টাইল।
ব্যাচারা শুক্লা। বিদিশারও অবস্থা প্রায় তাই। মাঝখান থেকে ব্যাপারটাকে এনজয় করছে রনি। আমিও তাই। মাধুরী শুধু চুপ করে বসে আছে। কোন রিয়াকশন নেই। একটা লম্বা ঢেঁকুড় তুলে শুভেন্দু বলল, না তোদের আর টেনশনে রাখবো না। কে কখন আমার গলা টিপে দেবে। ঠিক নেই। তার থেকে সত্যি কথাটা বলেই দিচ্ছি।
বলেই শুক্লার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘মেয়েটার সাথে আমার পনেরো দিন আগেই আলাপ হয়েছে। তালগোলে তোদের কাউকেই বলিনি। রনি শুধু জানে। আর বলার সুযোগটাই বা পেলাম কোথায়? তাছাড়া বিদিশার এতদিন পরে কামব্যাকটা আমার কাছে আরও অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল। এই কটা দিন আমি শুধু বিদিশা আর দেবকে নিয়েই ভেবেছি। সুযোগ আসলে তোদের শিখার কথাটাও বলতাম। ছাদের গল্প শোনাতাম। আজ আর না বলে তাই পারলাম না। এই রনিই দিল ব্যাপারটা সব ফাঁস করে।’
আমি বললাম, পনেরো দিন আগে যে মেয়ের সাথে তোর আলাপ। তার মানে তো প্রেমের ফুল ফুটেছে সবে। বাড়ীতে কি কেউ জানে?
শুভেন্দু বলল, কেউ জানে না। একমাত্র জানে শুধু রনি। মাধুরীকেও বলেনি। কারণ প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকবে কি টিকবে না। আগে থেকে বলে কি লাভ?’
আমি একটু শান্তনা দিলাম শুভেন্দুকে। বললাম, কেন টিকবে না? আমার দৃঢ় বিশ্বাস শিখা খুব ভাল মেয়ে হবে। টিকিয়ে রাখতে পারলেই টিকবে। তাছাড়া এতদিন বাদে তুই ও প্রেমের কলি গাইতে শুরু করেছিস। প্রেম টিকবে না মানে?
শুভেন্দুকে দেখলাম ঘাড় ঘুরিয়ে শুক্লার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুক্লাও ব্যাপারটাকে আঁচ করে ওকে বলল, বালাই ষাট। এতদিন পরে কাউকে মনে ধরেছে। অমন কথা মুখে আনতে আছে? আমি তো জীবনে একটা ভুল করেছিই। তাই বলে কি তুইও করবি নাকি? আমি জানি তুই অনেক বিচক্ষণ। এতদিন বাদে ভেবে চিন্তে যখন পা বাড়িয়েছিস। দেখে নিস এই শিখার সাথেই তোর বিয়ে হবে।’
শুভেন্দু বলল, বলছিস? তোর মুখে তাহলে ফুল চন্দন পড়ুক।
আমি একটু উতলা হয়ে বললাম, কিন্তু প্রেমটা কিভাবে শুরু হল সেটা তো বল। এখনও তো আসল কথাটাই বললি না।
শুভেন্দু বলল, ওই যে বললাম ছাদে প্রেম। রনিও যেটা বলল।
আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা কিভাবে?
বলতে বলতে মা এসে ঢুকেছে ঘরে। রনি আস্ত সিগারেটটা কোমরের পেছনে নিয়ে আড়াল করল। মা বলল, তোমাদের সবার জন্য পরোটা আর আলুরদম বানিয়েছি আমি। এ ঘরেই কি খাবে? তাহলে প্লেটে করে আমি নিয়ে আসছি।
সবাই অবাক হয়ে গেছে মায়ের কান্ড কারখানা দেখে। শুভেন্দু বলল, মাসীমা সেই আপনি কষ্ট করলেন?
মা বলল, তুমি শিখার কথা বলছিলে না একটু আগে? নিয়ে এলে না কেন মেয়েটাকে? তাহলে আমিও একটু দেখতাম।
ঘরের মধ্যে আমরা সবাই হতভম্ব। সব থেকে বেশী লজ্জ্বায় পড়ে গেছে শুভেন্দু। জিভ বার করে ছ্র্যা করে উঠে বলল, যাঃ। আপনিও জেনে গেলেন?
বিদিশা আর শুক্লা দুজনেই ফিক ফিক করে হাসছে। মজা পেয়েছে মাধুরীও। আমি হেসে বললাম, একসময় তুই বলতিস না। প্রেম হল জীবনে মিথ্যে। এর কোন মানে নেই।
শুভেন্দু বলল, হ্যাঁ। বলেছিলাম। তো?
আমি বললাম, মান্নাদের একটা গান খুব মনে পড়ছে জানিস তো? এক সময় আমি খুব গাইতাম।
শুভেন্দু বলল কি?
আমি দু কলি গেয়ে বললাম, এ দুনিয়ায় ভাই সবই হয় ভাই সবই হয়। সব সত্যি, সব সত্যি।
মা’ও হেসে বলল, শুভেন্দুর মত ছেলেও তাহলে প্রেমে পড়ল। ব্যাপারটা তাহলে সত্যিই সত্যি।
আমি বললাম, হ্যাঁ গো মা। একেবারে সত্যি। আর কদিন বাদেই ছেলে নতুন বউকে বিয়ে করে ঘরে তুলছে। সবাই উলু দেবে। শাঁখ বাজাবে। আর আজকের দিনে এই খুশীতেই তুমি সবাইকে পরোটা আলুরদম খাওয়াও। আমরা এই সুযোগ সবাই মিলে আনন্দটাকে আজ উপভোগ করি।
মা বলল, যাই তাহলে। খাবার ঘর থেকে প্লেট গুলো একে একে সব নিয়ে আসি।
বিদিশা বলল, ‘মা’ আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে। আপনি একা কেন আনবেন? আমি যাই?
বলে মা’র পিছু নিল।
ক্রমশঃ-
আমি আবার উঠে বসবার চেষ্টা করছি। বিদিশা চিৎকার করে উঠল। এই, এই, এই? কি করছ তুমি? উঠে বসবে নাকি তুমি?
কথা না শুনে আমি আবার জোর করেই উঠে বসলাম। বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি এসেছো। শুভেন্দু ওর প্রেমের গল্প শুরু করেছে। আমার শরীর এমনিই ভালো হয়ে গেছে। এমন ইন্টারেস্টিং গল্প। আমার শুয়ে শুয়ে শুনতে ভাল লাগছে না।’
রনি একটা সিগারেট আমার দিকে বাড়িয়ে বলল, খাবি নাকি একটা। সুখটান দিতে দিতে শোন। আমেজ এসে যাবে।
মাধুরী এক বকা দিল রনিকে। কি করছ কি তুমি? পাশের ঘরে মাসীমা রয়েছে না? দেবদার শরীর খারাপ। আর তুমি সিগারেট অফার করছ? পাশে যে বউটা বসে রয়েছে তার পারমিশন নিয়েছ?
রনি জিভ বার করে খেঁকিয়ে উঠে বলল, আহা। আমি যেন কত তোমার পারমিশন নিই?
মাধুরী বলল, দেবদাকে দেখে শেখো। জীবনে অনেক পুণ্যিলাভ করবে। দেখো তো দেবদা বিদিশাকে কত ভালবাসে। আর তুমি আমাকে তার সিকিভাগও-
শুক্লা বলল, ‘এই তোরা ঝগড়াঝাটি পরে করিস। আগে শুভেন্দু কি বলছে। সেটা শুনতে দে।
আমাদের সকলের চোখ গিয়ে এবার পড়ল শুভেন্দুর দিকে। শিখা তার প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভেন্দুকে কিভাবে বরণ করে নিল। আমরা শোনার জন্য প্রস্তুত।
রনি একটু পেছন দিকটায় চলে গেছে। আমার ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজাটার ঠিক পাশে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বলল, ‘মাসীমা ঘরে ঢুকলে আমাকে একটু ইশারা করিস। সিগারেটটা নিভিয়ে দেব।’
আমি বললাম, ‘খা না তুই। মা এখন ঘরে আসবে না।’
শুভেন্দু রনির ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিখার নামটা আরো একবার উচ্চারণ করে শুভেন্দু শুরু করল, ‘আসলে আমার কপালে ছিল না তাই। বুঝলি তোরা? না হলে?’
আমি বললাম, কি কপালে ছিল না?
শুভেন্দু বলল, এই শিখা আর আমার অমর প্রেমের ইতিহাস তৈরী হওয়ার ব্যাপারটা।
শুক্লাকে দেখলাম এবার চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেছে। প্রায়ই শুভেন্দুর গলা টিপতে যায়। শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে শুক্লাকে বলল, আরে করিস কি? করিস কি? আমার প্রেমিকা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। ভালো লোকটাকে এভাবে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিস? আমার ভাবী বউটার তাহলে কি দশা হবে বলতো?’
শুক্লাকে দেখলাম এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত পা ছুঁড়ছে বাচ্চাদের মতন। আমাকে প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘এই দেব। বল না তুই শুভেন্দুকে। আসল কথাটা বলছে না। তখন থেকে ভনিতা করে যাচ্ছে। দেখ, তখন থেকে কি শুরু করেছে? একবার বলছে প্রেম হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। আবার বলছে ও নাকি শিখার বাড়ীর সামনে দিয়ে যায়। হাত নাড়ে। আবার বলছে কপালে ছিল না। এভাবে বললে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে না?
রনি পেছন থেকে ফোড়ণ কেটে বলল, কনফিউজড্ কনফিউজড। সি ইজ ভেরী মাচ কনফিউজড্।
আমি শুক্লাকে শান্ত করে বললাম। তুই চুপ করে বোস। ও আসল কথা ঠিকই বলবে। আরে এটাই তো শুভেন্দুর স্টাইল।
ব্যাচারা শুক্লা। বিদিশারও অবস্থা প্রায় তাই। মাঝখান থেকে ব্যাপারটাকে এনজয় করছে রনি। আমিও তাই। মাধুরী শুধু চুপ করে বসে আছে। কোন রিয়াকশন নেই। একটা লম্বা ঢেঁকুড় তুলে শুভেন্দু বলল, না তোদের আর টেনশনে রাখবো না। কে কখন আমার গলা টিপে দেবে। ঠিক নেই। তার থেকে সত্যি কথাটা বলেই দিচ্ছি।
বলেই শুক্লার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘মেয়েটার সাথে আমার পনেরো দিন আগেই আলাপ হয়েছে। তালগোলে তোদের কাউকেই বলিনি। রনি শুধু জানে। আর বলার সুযোগটাই বা পেলাম কোথায়? তাছাড়া বিদিশার এতদিন পরে কামব্যাকটা আমার কাছে আরও অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল। এই কটা দিন আমি শুধু বিদিশা আর দেবকে নিয়েই ভেবেছি। সুযোগ আসলে তোদের শিখার কথাটাও বলতাম। ছাদের গল্প শোনাতাম। আজ আর না বলে তাই পারলাম না। এই রনিই দিল ব্যাপারটা সব ফাঁস করে।’
আমি বললাম, পনেরো দিন আগে যে মেয়ের সাথে তোর আলাপ। তার মানে তো প্রেমের ফুল ফুটেছে সবে। বাড়ীতে কি কেউ জানে?
শুভেন্দু বলল, কেউ জানে না। একমাত্র জানে শুধু রনি। মাধুরীকেও বলেনি। কারণ প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকবে কি টিকবে না। আগে থেকে বলে কি লাভ?’
আমি একটু শান্তনা দিলাম শুভেন্দুকে। বললাম, কেন টিকবে না? আমার দৃঢ় বিশ্বাস শিখা খুব ভাল মেয়ে হবে। টিকিয়ে রাখতে পারলেই টিকবে। তাছাড়া এতদিন বাদে তুই ও প্রেমের কলি গাইতে শুরু করেছিস। প্রেম টিকবে না মানে?
শুভেন্দুকে দেখলাম ঘাড় ঘুরিয়ে শুক্লার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুক্লাও ব্যাপারটাকে আঁচ করে ওকে বলল, বালাই ষাট। এতদিন পরে কাউকে মনে ধরেছে। অমন কথা মুখে আনতে আছে? আমি তো জীবনে একটা ভুল করেছিই। তাই বলে কি তুইও করবি নাকি? আমি জানি তুই অনেক বিচক্ষণ। এতদিন বাদে ভেবে চিন্তে যখন পা বাড়িয়েছিস। দেখে নিস এই শিখার সাথেই তোর বিয়ে হবে।’
শুভেন্দু বলল, বলছিস? তোর মুখে তাহলে ফুল চন্দন পড়ুক।
আমি একটু উতলা হয়ে বললাম, কিন্তু প্রেমটা কিভাবে শুরু হল সেটা তো বল। এখনও তো আসল কথাটাই বললি না।
শুভেন্দু বলল, ওই যে বললাম ছাদে প্রেম। রনিও যেটা বলল।
আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা কিভাবে?
বলতে বলতে মা এসে ঢুকেছে ঘরে। রনি আস্ত সিগারেটটা কোমরের পেছনে নিয়ে আড়াল করল। মা বলল, তোমাদের সবার জন্য পরোটা আর আলুরদম বানিয়েছি আমি। এ ঘরেই কি খাবে? তাহলে প্লেটে করে আমি নিয়ে আসছি।
সবাই অবাক হয়ে গেছে মায়ের কান্ড কারখানা দেখে। শুভেন্দু বলল, মাসীমা সেই আপনি কষ্ট করলেন?
মা বলল, তুমি শিখার কথা বলছিলে না একটু আগে? নিয়ে এলে না কেন মেয়েটাকে? তাহলে আমিও একটু দেখতাম।
ঘরের মধ্যে আমরা সবাই হতভম্ব। সব থেকে বেশী লজ্জ্বায় পড়ে গেছে শুভেন্দু। জিভ বার করে ছ্র্যা করে উঠে বলল, যাঃ। আপনিও জেনে গেলেন?
বিদিশা আর শুক্লা দুজনেই ফিক ফিক করে হাসছে। মজা পেয়েছে মাধুরীও। আমি হেসে বললাম, একসময় তুই বলতিস না। প্রেম হল জীবনে মিথ্যে। এর কোন মানে নেই।
শুভেন্দু বলল, হ্যাঁ। বলেছিলাম। তো?
আমি বললাম, মান্নাদের একটা গান খুব মনে পড়ছে জানিস তো? এক সময় আমি খুব গাইতাম।
শুভেন্দু বলল কি?
আমি দু কলি গেয়ে বললাম, এ দুনিয়ায় ভাই সবই হয় ভাই সবই হয়। সব সত্যি, সব সত্যি।
মা’ও হেসে বলল, শুভেন্দুর মত ছেলেও তাহলে প্রেমে পড়ল। ব্যাপারটা তাহলে সত্যিই সত্যি।
আমি বললাম, হ্যাঁ গো মা। একেবারে সত্যি। আর কদিন বাদেই ছেলে নতুন বউকে বিয়ে করে ঘরে তুলছে। সবাই উলু দেবে। শাঁখ বাজাবে। আর আজকের দিনে এই খুশীতেই তুমি সবাইকে পরোটা আলুরদম খাওয়াও। আমরা এই সুযোগ সবাই মিলে আনন্দটাকে আজ উপভোগ করি।
মা বলল, যাই তাহলে। খাবার ঘর থেকে প্লেট গুলো একে একে সব নিয়ে আসি।
বিদিশা বলল, ‘মা’ আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে। আপনি একা কেন আনবেন? আমি যাই?
বলে মা’র পিছু নিল।
ক্রমশঃ-