08-07-2021, 01:59 PM
হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতে চলেছে রনি, এটা মাধুরীও বুঝতে পারেনি। শুভেন্দুর প্রেমের গল্প রনি জানে অথচ মাধুরী জানে না এটাই কেমন আশ্চর্য্যের বিষয়। আজ অবধি আমাকেও কোন কথা শুভেন্দু লুকোয়নি, অথচ লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে শুভেন্দু, আমার ওর উপরে খুব রাগ হচ্ছিল। মনে হল এই শুভেন্দুই না বলেছিল, প্রেম করে তোর মত পস্তাতে আমি আর চাই না। ছাদের উপর কোন মেয়েকে নিয়ে ফস্টি নস্টি করেছে, এটা আমিই জানি না। এ কিরকম হল?
শুভেন্দু দেখি আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘রাগ কোরো না আমার মজনুবাবু। তোমার মত লায়লা আমি এখনও খুঁজে পাইনি। ও রনি শুক্লার কাছ থেকে টাকা হাতাবে বলে এসব গাল গল্প শোনাচ্ছে।
মাধুরী শুভেন্দুর দিতে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, ছোড়দা শেষ পর্যন্ত তুই?
শুভেন্দু এক ধ্যাতানি দিল মাধুরীকে। ‘ কি শেষ পর্যন্ত? কি আবোল তাবোল বলছিস? রনি যেটা জানে, সেটা তুই জানিস না। সেটাকি আবার হয় না কি? তাহলে তোকেও আমি ছাদের গল্প বলতাম। ও দেখছিস না কেমন মুচকি মুচকি হাসছে। ব্যাটা এক নম্বর গুলবাজ। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলতে রনির মতন কেউ পারবে না। ও আসলে শুক্লার ব্যাগ থেকে টাকাটা হাতাতে চায়।’
আমার শোলে সিনেমায় ধর্মেন্দ্রর ডাইলগটা মনে পড়ে যাচ্ছিল। জয় অমিতাভকে শুনিয়ে শুনিয়ে বীরু ধর্মেন্দ্র বলছে, এক গলতী আপনে কি ঠাকুর সাব। আপনে তিজোরি খুলকে ইন দো চোর বদমাশকো দিখাদি।
রনি যেন আমার মনের কথাটা বুঝতে পারল। মাথা চুলকে আবার বলল, কি মুশকিল। টাকা হাতাবো মানে? আমি কি চোর না বদমাশ?’
শুক্লা এবার ধমক লাগালো শুভেন্দুকে। বলল, ‘তুই আর কথা বলিস না। যেন তুমি কতো সত্যি কথা বলো আবার? পদে পদে মিথ্যে কথা। তোকে বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।’
শুভেন্দু মুখ ভার করে বলল, ‘তুই একথা বলতে পারলি শুক্লা?’
আমি দেখলাম বেগতিক। ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। শুয়ে শুয়েই বললাম, ‘এই এই। তোরা কিসব শুরু করলি বলতো? এক কাজ কর। ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়। তাহলে শুভেন্দুকেই ওর প্রেমের কাহিনী শোনাতে দে। আমরা সবাই শুনি, ও নিজের মুখেই বলুক। আর ব্যাপারটা যদি মিথ্যে হয়, তাহলে রনি তুই চেপে যা। খামোকা শুক্লার টাকাটার প্রতি লোভ দেখাস না।’
বিদিশাও আমার দেখাদেখি শুক্লাকে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ। গুলপট্টি দিয়ে ব্যাগ খালি করে দেবে তোর। তার চেয়ে ও যা বলছে শুভেন্দু ওটাই করুক। নিজের মুখে বললে প্রমান হয়ে যাবে প্রেম ঘটিত ব্যাপার, সত্যি না মিথ্যে কিনা।’
শুভেন্দু এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘ আচ্ছা ছাদে যদি কোন মেয়েকে নিয়ে আমি বসেও থাকি। তারমানেই কি প্রমান হয়ে গেল, যে আমি প্রেম করি? তোরা সবাই এতদিন ধরে নিজেরা প্রেম করলি। আর প্রেম কাকে বলে সেটা তোদের এখনও শেখাতে হবে?
শুক্লা এবার চোখ বড় বড় করে বলল, তারমানে শুভেন্দু, সত্যি সত্যিই তুই? রনিতো তাহলে ঠিকই বলেছে।’
ভালোমানুষির মতন শুক্লার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে রনি বলল, ‘ দে তাহলে টাকাটা এবার দে। তাহলে প্রমান হল তো আমি সত্যি বলছি কিনা? চল তোরা সবাই মিলে চল। শুক্লার টাকাটা দিয়ে আমরা আজ পার্কস্ট্রীটে একটু এনজয় করে আসি।’
শুক্লা বলল, ‘রোসো বাবা রোসো। মাধুরী সামনে আছে তাই তোকে কিছু বলছি না। তোমরা এই দুই বন্ধু। দুজনেই খুব সেয়ানা। তাই না? তোমরা অন্যকে বোকা বানাতে খুব সহজেই পারো। নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে নিয়েছ। শালা জামাইবাবু বলে কথা। আমি অত সহজে বোকা বনছি না। আগে ওর ছাদের ইতিহাসটা ভাল করে শুনি। তারপরে আমি সিদ্ধান্ত নেব।
রনি মাথা চুলকে বলল, ‘ যা চলে। কি দিনকাল পড়েছে। ভালমানুষদের আর কদর নেই এই দুনিয়াতে। সত্যি কথা বলতে গিয়ে হোচট খেলাম। ঠিক আছে। বানিয়ে বানিয়ে শুভেন্দুই তাহলে মিথ্যে কথাগুলো বলুক।’
আমি শুয়ে শুয়ে বেশ ভালমতনই বুঝতে পারছি শালা জামাইবাবুতে দুজনে মিলে ভালই খেলা শুরু করেছে শুক্লার সঙ্গে। কে যে সত্যি বলছে আর কে যে মিথ্যে বলছে। আমার পক্ষেও বোঝা বড় মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। প্রেম ঘটিত ব্যাপার, সত্যি যদি শুভেন্দুর জীবনে কিছু হয়ে থাকে। কতদিন আর চেপে রাখবে? আজই এর রহস্য উন্মোচন হোক।শুক্লার প্রতি একটু দরদ দেখিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘ না না টাকাটা তুই রেখে দে। ও তো রনি এমনি ফাজলামী মারছে। আমার প্রেম নিয়ে যখন তোদের এত কৌতূহল। তখন আমিই সত্যি কথাটা তোদের বলছি। তবে তোরা কেউ কান্নাকাটি করবি না। আর হাসাহাসিও করবি না। এ গল্পের মধ্যে কোন ট্রাজেডি নেই, ইমোশন নেই। কোন ড্রামাও নেই। নিছকই একটা টাইম পাশের গল্প। আমার কাছে এটার তেমন গুরুত্ব ছিল না। তাই তোদের কোনদিন বলিনি। হয়তো দেবও রনির কথা শুনে একটু অবাক হয়েছে। আমি যে কবে আবার ওর মতন মজনু হলাম সেটা তো দেবেরও এতদিন জানা ছিল না। আজ তোদের ছাদের গল্প আমিই শোনাচ্ছি।’
দারুন একটা ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট। সবাইকে দেখলাম একটু নড়েচড়ে বসল। বিশেষত মেয়েরা। শুক্লা বিদিশা আর মাধুরী। তিনজনেরই চোখ তখন শুভেন্দু দিকে।
শুভেন্দু শুরু করল এইভাবে, ‘মেয়েটা খুব ভাল ছিল রে। একেবারে সরল সাধাসিধে নিষ্পাপ মেয়ে। এই তোদের মত এত অসভ্য নয়।’
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, ‘এই দেখেছিস দেখেছিস। কেমন বদমাইশ শুভেন্দুটা। প্রথমেই আমাদেরকে ঠেস মেরে শুরু করেছে।’
বিদিশা বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা তোর প্রেমিকা আমাদের থেকেও ভাল। তারপর?’
শুভেন্দু বলল, আসলে আমি ভেবেছিলাম। আমার সাথে ওর খুব পটবে। কারণ আমিও তো খুব ভাল ছেলে। তাই না?’
শুক্লা বলল, ‘জানি জানি। তুই খুব ভাল ছেলে। তারপর?’
শুভেন্দু বলল, ‘এবার একটু মুখশ্রী আর চেহারার বর্ণনাটায় আসি। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী যদি বিদিশা হয়। তাহলে ওকে আমি তারপরেই বসাব। কারণ মেয়েটার মধ্যে যে রূপ ছিল,খুব কম মেয়ের মধ্যেই সেটা আমি দেখেছি। একবারে মার্জিত আর সুশ্রী চেহারা। আলগা কোন চটক নেই। এত গভীরতা আমি খুব কমই দেখেছি।’
মনে হল শুক্লা যেন একটু বোর হচ্ছে। বলতে না বলতেই শুভেন্দুকে ও বলে বসল। তার এই রূপের বর্ননাটা কতক্ষণ চলবে? ছাদের গল্পে কখন আসবি?
আমি বললাম, বলতে দে না ওকে। ভালই তো লাগছে শুনতে। আহা মেয়েটাকে যদি একবার দেখতে পেতাম?
আমিও একটু কথা বলতাম। রূপের বর্ণনা আমি আমার লেখা লেখির মধ্যে ছড়িয়ে দিতাম। শুভেন্দুর প্রেম কাহিনীকে উপন্যাসের রূপ দিতাম আমি।
বিদিশা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। শুভেন্দু বলল, শোন বৎস। এটা কোন অমর প্রেম কথা নয়। নিছকই একটা ছাদের গল্প। ছাদের গল্প দিয়ে কখনও উপন্যাস হয় না।
আমি চুপ করে গেলাম। বিদিশা একটু হেসে বলল, আহা কত সখ? আফশোস হচ্ছে বুঝি?
আমি বললাম, যাঃ পাগল। সবাই কি আর তোমার মত নাকি?
রনি বলল, যা চলে। এরা যে দেখি আবার নিজেদের প্রেম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আরে তোরা শুভেন্দুর প্রেম কাহিনীটাও একটু শোন।
আমি আর বিদিশা দুজনেই আবার শুভেন্দুর কথার দিকে মনোযোগ দিলাম।