07-07-2021, 11:01 PM
আমি ভাবছি ও ছাদে কি করছে এত রাত্রে? আর সাথে যে মুখটা দেখলাম, ওটা বিদিশা নাকি?
শুক্লা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভেন্দুর দিকে। শুভেন্দু বলল, ‘আমার তখন কি অবস্থা চিন্তা কর। আমি ধরেই নিয়েছি দেব ছাদে আর সাথে বিদিশাও রয়েছে। রনিকে সঙ্গে সঙ্গে বললাম। রনিও ওপরে তাকালো। নিচে থেকেই বলল, হ্যাঁ রে তোরা আর জায়গা খুঁজে পেলি না?
আমি রনিকে বলছি, আস্তে আস্তে। অত জোরে চেঁচাস না। এখুনি কেলোর কীর্তি হয়ে যাবে।
রনি বলল, কিন্তু ওদের কে এখন কলেজ থেকে বার করব কি করে? সেই দারোয়ান কল্লোলদার বাড়ী যেতে হবে। যার কাছে মেন গেটের চাবি থাকে। কল্লোলদাকে বললেই তো সব জানাজানি হয়ে যাবে। রনি তুই কিছু একটা কর।
রনি বলল, কেস খাওয়াবি তুই। নিজেও খাবি, আমাকেও খাওয়াবি। এবার বোঝো ঠেলা-
ও তো খুব করে গাল পাড়ছে দেবকে। আমি তাও রনিকে বুঝিয়ে সুজিয়ে কল্লোলদার বাড়ীতে গেলাম। কলেজের ওখানে দুটো বাড়ী পরেই কল্লোলদার বাড়ী। আমাকে আর রনিকে অত রাতে দেখে, কল্লোলদা বেশ বিরক্ত। কিছুতেই চাবি দেবে না। তালাও খুলবে না। কল্লোলদার সাফ জবাব, যা হবার কাল দেখা যাবে।
আমি আর রনি বুঝেই নিলাম, কিছু একটা ব্যাপার হয়েছে। এটা ইচ্ছাকৃত। দেব কে ফ্যাসাদে ফেলবার জন্যই এটা করা হয়েছে।
তবু হাতে পায়ে ধরে, কল্লোলদাকে রাজী করালাম কোনমতে। আমাদের বলল, ‘ওপরের ছাদের তালা খুলে দেব ঢুকেছে ওই মেয়েটাকে নিয়ে। যেটা কেউ করে না। আমি তো পরে টের পেয়ে ইচ্ছা করেই অন্য তালা লাগিয়ে ওদেরকে আটকে রেখেছি। কাল প্রিন্সিপাল এলেই তালা খুলবো। তার আগে নয়।
কি সাংঘাতিক কেলেঙ্কারী। আমি আর রনি হতভম্ব। কল্লোলদাকে একটু উপদেশ দিলাম। আরে কল্লোলদা। ওই মেয়েটা কি দোষ করেছে বলোতো? ও যদি তোমার মেয়ে হত? বা দেব যদি তোমার ভাই হত? বাড়ীর লোকেরা চিন্তা করছে না? ভুল করে ফেলেছে। মাফ করে দাও।
শুভেন্দু বলল, ‘আমার আর রনির কাছ থেকে দুশোটাকা নিল হতচ্ছাড়াটা। গেট খুলে ছাদে গিয়ে নতুন তালা খুলে ওদেরকে উদ্ধার করে আনলাম। দেবের তখন মুখ কাচুমুচু। বিদিশারও তাই। রনি দাঁত মুখ খেচাচ্ছে। আর ছাদে যাবি? বল, বল আর ছাদে যাবি?
দেব ব্যাচারা ধ্যাতানি খেয়ে চুপ। আমি গাড়ী নিয়ে ওদের দুজনকেই বাড়িতে আলাদা আলাদা ড্রপ করে দিলাম। পরের দিন, বিদিশা আর দেব, দুজনের কেউই আর কলেজে যায়নি। কিন্তু এর থেকেও বড় যে রিভেঞ্জটা হল, সেটা বিদিশাও জানে না। রনিও জানত না। জেনেছে অনেক পরে। শুধু আমাকে দেব বলেছিল। আর বলেছিল কাউকে বলবি না।’
শুক্লা বলল, কি সেটা? শুভেন্দু বলল, কল্লোলদা যে ইচ্ছে করেই ওটা করেছিল, আমি আর রনি দুজনের কেউই দেব আর বিদিশাকে বুঝতে দিই নি। বলেছি, ছাদের দরজা খোলা ছিল। তাই কল্লোলদা তোদের না দেখেই তালা লাগিয়ে দেয়। আমি আর রনি অত রাত্রে সেদিন না গেলে কল্লোলদাও জানতে পারত না।
কিন্তু কেন জানি না, দেব আসল সত্যিটা বুঝে নেয়। ও প্রতিদিনই ছাদে উঠত। দু মিনিট সময় নিত। আর তালা খুলে ফেলত। কল্লোলদা প্রতিদিনই উপরে গিয়ে দেখত ছাদের দরজা খোলা। আর ওকে ডবল করে খাটতে হত। আবার নতুন করে তালা লাগাতে হত।
শুক্লা বলল, ঠিকই করেছে দেব। মহাপাজী তো কল্লোলদাটা। ইচ্ছে করেই ওদের আটকে রাখল? তোরা যদি সেদিন না যেতিস?
শুভেন্দু হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এদের দুজনের প্রেম করার জন্য ছাদটা আসলে খুব প্রিয়। মনে নেই? আমার বাড়ীতেও তোদের দুজনকে একসাথে ছাদে পাঠিয়েছিলাম।
আমি বললাম, হ্যাঁ। শুক্লা হাসছে। বিদিশাও হাসতে হাসতে বলল, ‘বাড়ীতে সেদিন খুব বকা খেয়েছিলাম। ছাদে প্রেম করার মাশুল গুনতে হয়েছিল। আজও সেটা ভুলিনি।’
আমরা কেউ খেয়াল করিনি। কখন রনিও মাধুরীকে নিয়ে চলে এসেছে আমার ফ্ল্যাটে। মা বারান্দা থেকে ওদের দেখে দরজা খুলে দিয়েছে। আমরা ঘরের মধ্যে বসে কেউ টের পাইনি। ঘরে ঢুকেই রনি অবাক করে দিল আমাদের সবাইকে। পেছনে পেছনে মাধুরী। আর কোলে ওর বাচ্চাটাও। ঘরে ঢুকে রনি প্রথম কথাটাই বলল, ‘শুভেন্দু তোদের ছাদের গল্প বলছে। কিন্তু আসল কথাটাই তো বলেনি। আমি এসে গেছি। এবার আসল কথাটা আমি তোদের বলছি।’
ক্রমশঃ-