Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
ভাগ্যিস মা তখন ঘরে ঢোকেনিঢুকলে বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে যেতএকটু খুনসুটি করেই বিদিশাকে আরো জাপটে ধরার চেষ্টা করছিলাম, এবার একটু ধমক দিয়ে জোর গলায় বিদিশা বলল, ‘খুব শক্তি দেখাতে ইচ্ছে করছে, তাই না? ছাড়ো বলছি, ছাড়ো।’
আমি ওকে ছেড়ে দিতেই বিদিশা বলল, ‘কি অসভ্যরে বাবাবেশ শুয়েছিল চুপচাপ, আমাকে পেয়েই অমনি উঠে বসেছেএক্ষুনি যদি মা’ এসে পড়ত কি হত বলোতো? ছিঃ
আমি বললাম, ‘আদর করার জন্য সবসময় ছাড় আছেতুমি জানো না? এর আগে যখন তোমাকে আদর করতাম, মা তো কত ছাড় দিয়ে রেখেছিলঘরের মধ্যে তোমাকে চুমু খেতামতোমার গালে, কপালে, চিবুকে আর ঠোঁটেভুলে গেছ বুঝি? মা’ কি কিছু বলেছে?’
শুভেন্দু হাসছে আমার কথা শুনেশুক্লাও তাইবিদিশা রেগেমেগে বলল, ‘তুমি না একটা যা তাতাই বলে এমন ভাবে কেউ করে? আচমকাআমি কেমন ভয় পেয়ে গেছি।’
আমি বললাম, ‘ভয় তো তোমার কাটিয়ে দিতে চাইছিআর তুমি বলছ, ভয় পেয়ে গেছ?’
বিদিশা বলল, ‘আর ওস্তাদি মারতে হবে নাশুয়ে পড় বলছিএখুনি শুয়ে পড়আবার উঠলেই কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।’
আমি আবার বাধ্য শিশুর মতন বিছানায় শুয়ে পড়লামবিদিশা আমার মাথায় হাত বোলাতে লাগলদেখলাম ও এবার মুচকি মুচকি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে
মুখটা গম্ভীর মতন করে বললাম, ‘আমাকে দিলে না তো আদরটা করতেএই আমি শুলামআর কিন্তু উঠবো না বলে দিচ্ছি।’
বিদিশা বলল, ‘সেই ভালোতোমার হাত পা দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে দিইতাহলে তুমি জোর করেও উঠতে পারবেনাকেমন?’
শুভেন্দু বলল, ‘ভাল প্রস্তাবসেই ভালোতাহলে পাশের ঘর থেকে দড়ি নিয়ে আসব নাকি? দেবকে বাঁধার জন্য?’
শুক্লা হাসছেবিদিশাও মিচকি মিচকি হাসছেআমি বললাম, ‘ভালই তোআমি যাকে বেঁধে রাখতে চাইছিসেই এখন আমাকেই বেঁধে রাখতে চাইছেআমার কাজটা আরো সহজ হয়ে গেলআমার আর চিন্তা কি? দেখ তোরা বিদিশাকে এবার একটু হেল্প কর।’
শুভেন্দু বলল, ‘আমি তো ভাবছি, তোদের দুজনকেই একসাথে বেঁধে রেখে দেবোযাতে কোনদিন আর তোরা ছাড়াছাড়ি হয়ে যেতে না পারিস।’
বিদিশা লজ্জ্বায় আর অনুশোচনায়, মুখটাকে একটু নিচু করে নিলআমি বললাম, বেশ তো মাথায় হাত বোলাচ্ছিলে, থামলে কেন? বোলাও।’
বিদিশাকে সহজ করার জন্য শুভেন্দু এবার শুরু করল পুরোনো কিছু স্মৃতিচারণাহাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে এমন সব ঘটনাআমি হাসছি, শুক্লা হাসছে, বিদিশা হাসছেশুভেন্দু নিজেও না হেসে থাকতে পারছে না
 
 শুভেন্দু বলল, ‘জানিস শুক্লা, দেব যখন খাবার টেবিলে খেতে বসতমাসীমা অনেক দিন লক্ষ্য করেছেন, খাবার রয়েছে পাতে, অথচ ও হাঁ করে রয়েছেদেখে মনে হবে, কোন অদৃশ্যহাত ওকে খাইয়ে দিচ্ছে মুখে টোপলা ভরেমাসীমা দু তিনদিন এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেনআমাকে বললেন, দেব কে কি ভূতে ধরেছে? থালা ভর্তি ভাত নিয়ে বসে থাকেআর থেকে থেকেই হাঁ করে, মুখটা বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকেদেখে মনে হবে কেউ ওকে খাইয়ে দিচ্ছেকিন্তু ঘরে আর তো কেউ কোথাও নেইতাহলে কে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে? অদৃশ্য হাতওই হাতটা কার?’
শুক্লা বেশ চমকে গেছে শুভেন্দুর কথা শুনেআমি হাসছিবিদিশাও বুঝতে পেরেছেচোখ বড় বড় করে শুভেন্দু শুক্লাকে বলল, ‘এখনও বুঝলি না?’
শুক্লা যেন সত্যিই বোঝেনিসরলভাবে শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কে ওটা? শুভেন্দু বলল, ‘আমাদের দেব বাবু, প্রতিদিনই যখন খেতে বসেনসামনের চেয়ারে বসা উনি বিদিশাকে দেখেনবিদিশাই ওই চেয়ারে বসে আছেনপ্রেমিকা তার প্রেমিককে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন, এটাই ওনার কল্পনামাসীমাতো এত কিছু বোঝেন নাদেবকে দু তিনদিন লক্ষ্য করেছেনবাধ্য হয়েই বলে বসলেন, এ কি রে? তুই কার দিকে মুখ বাড়িয়ে রয়েছিসখাবারটা ঠান্ডা করছিস কেন শুধু শুধু?’
শুক্লা বলল, তারপর?
শুভেন্দু বলল, ‘তারপর আর কি? দেব বাবুর হোঁস ফিরলউনি বুঝলেন, কল্পনা আর বাস্তবকে উনি এক করে ফেলেছিলেন একটু আগেওই চেয়ারে বিদিশা নেইউনি মনে মনে বিদিশাকে কল্পনা করছিলেন।’
শুক্লা আমাকে বলল, ‘দেব, তোর কি রাত্রে শুয়ে শুয়েও এমন হত? কল্পনা করতিস না? বিদিশা তোর পাশে শুয়ে আছে।’
শুভেন্দু জবাবটা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘হ্যাঁওই পাশবালিসওটাই তো বিদিশারাত্রে শোবার সময় সব ব্যাটাছেলেদেরই যেটা হয়।’
শুক্লার এবার হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার মতন অবস্থাশুভেন্দু বলল, ‘আর একটা ঘটনা শুনবি?’
শুক্লা তখনও হেসেই যাচ্ছেহাসতে হাসতেই বলল, ‘বল?’
শুভেন্দু বলল, ‘বলি তাহলেমন দিয়ে শোন।’
এবারে শুভেন্দু পেটে কিভাবে খিল ধরায়, আমিও শুনছিবিদিশাও মুচকি মুচকি হাসছিল শুভেন্দু বলতে শুরু করল, ‘একদিন কলেজে গিয়ে দেখি বাবু মুখভার করে বসে আছেনআমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি রে? হলটা কি তোর? বিদিশা বুঝি আজ কলেজে আসেনি? ‘দেব’ গম্ভীর মুখে আমাকে জবাব দিল, আমি কি বিদিশার জন্যই মনটা খারাপ করছি নাকি?’
শুক্লা বলল, ‘দেব এই কথা বলেছে? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’
শুভেন্দু বলল, ‘আরে পুরোটাতো শোনতারপরে বুঝতে পারবি।’
শুক্লা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে শুভেন্দুর কথাটাশুভেন্দু বলল, ‘আমারো একটু অবাক লাগল বুঝলি? ‘দেব’ মুখটা উদাস করে বসে আছে, অথচ মুখে বলছে বিদিশার ওদিন কলেজে না আসাটাই ওর মুখ গম্ভীরের কারণ নয়আমারো না ঠিক বিশ্বাস হল না দেবের কথাটাতবে দেব মিথ্যে কথা খুব বড় একটা বলে নাতবু ভাবছি, শালা আমাকে পট্টি মারলো? বিদিশার জন্য ওর বুকের ভেতরটা হাউ হাউ করে উঠছেব্যাচারার কি কষ্টএকদিন কলেজে বিদিশাকে দেখতে পাইনি, তাতেই বাবুর কিম্ভূতকি মার্কা দশাতবু ও বলছে বিদিশার কলেজে না আসার জন্য ও মুখ ভার করে বসে নেই, আমার একটু দেবের ওপর রাগ হলমনে মনে বললাম, পড়েছিস তো প্রেমেকাঁঠালের আঠা এমন লেগেছে, এ সহজে ছাড়বে নাতুই মুখে স্বীকার না করলে কি হবেআমরা তো সব বুঝি না? তুই বিদিশার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস।’

শুক্লা বলল, তারপর?

শুভেন্দু বলল, ‘আমি আর কি করব? অগত্যা দেবকে বেশি আর ঘাঁটালাম নাক্লাসে ঢুকে গেলামকিন্তু মাঝে মাঝেই ‘দেব’ কে আমি লক্ষ্য রাখছিলাম, দেখলাম তখনও ও স্বাভাবিক হয় নিপরপর দুটো ক্লাস শেষ হলদেবের দিকে আরো একবার ভাল করে তাকালাম, বুঝলাম এর মুখ দিয়ে আর মনে হচ্ছে, কথা আর ফুটবে নাসব ব্যাটাছেলে গুলোই এমন হয়প্রেমরোগ শরীরে ঢোকা মানেই সব শেষ।’

শুক্লা বলল, ‘সেদিন কি আমি কলেজে ছিলাম?

শুভেন্দু বলল, ‘না তুইও সেদিন ডুব দিয়েছিলিসতবে কলেজে যদি সেদিন আসতিস, চাক্ষুস মজাটা টের পেতিসআজকের এই গল্পটা বলার আর দরকার হত নাতবে সেদিন যেটা ঘটেছিল, আমি জীবনে কোনদিন ভুলব না।’

শুক্লার বেশ কৌতূহল বেড়ে যাচ্ছেআমি তো ভালমতন বুঝতে পারছি, শুভেন্দু এবার কি বোমাটা ফাটাবেবিদিশাও চুপ করে বসে আছেহাটে হাড়ি ভাঙতে চলেছে শুভেন্দুসেটা শুধু শোনার অপেক্ষায়শুভেন্দু বলল, ‘এর কিছুক্ষণ পরেই দেখি। ‘দেব’ গায়েবকলেজে আর ও নেই।’

শুক্লা বলল, ‘গায়েব? কোথায় গেল? বাড়ী চলে গেল?’

শুভেন্দু বলল, ‘কলেজে ওকে তন্ন তন্ন করে খুঁজলামকোথাও পেলাম নাআমি আবার ভাবলাম, দেবের কি কোন বিপদ হল নাকি? কোন সমস্যায় পড়েছে? আমাকে খুলে বলল না কেন? আর এভাবে না বলেও চলে গেলও তো কলেজে এরকম কখনও করে না।’

বিদিশা সেইসময় কিছু বলতে যাচ্ছিলশুভেন্দু বাঁধা দিয়ে বলল, ‘এই দাঁড়া দাঁড়াআগে আমি বলে নিই, তারপর তুই বলবি।’

বিদিশা চুপশুভেন্দু এবার বলছে, আমাদের কলেজে একটা ছাদ ছিল মনে আছে তোর?’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ খুব বড় ছাদ ওটাকিন্তু কেউ যেত নাকারণ ছাদে ঢোকার দরজাটায় সবসময় তালা দেওয়া থাকতো।’

শুভেন্দু বলল, যেখানে কেউ কোনদিন যায় নাযাবার কথা চিন্তাও করে নাসেখানে দেবের মত ছেলে গিয়ে বসে থাকতে পারেনা তুই কল্পনা করতে পারিস, না আমি পারি?’

শুক্লা পুরো কথাটা শেষ না হতে দিয়েই বলল, ‘দেব’ কলেজের ছাদে? বলিস কি রে? গেল কি করে? ওটা তো তালা দেওয়া।’
 
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 07-07-2021, 10:58 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)