07-07-2021, 04:51 PM
বাবার মৃত্যুর পর
আমার বাবার মৃত্যু হয়াছিল একটি ট্রেন দুর্ঘটনাতে। বাবা একটি কেমিক্যাল কোম্পানি তে মার্কেটিং ম্যানেজার এর কাজ করতেন। বাবার ছোটবেলাকার বন্ধু ছিলেন মন্তু কাকু। উনি প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতেন। ওনার স্ত্রীর এর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা টাচ্চাও ছিলোনা। রবিবার বা অন্য ছুটির দিনে উনি আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন ও দুপুরের খাবার আমাদের সাথেই খেতেন। বাবার থেকে উনি বয়সে বছর দুই এর ছোট হলেও বাবা মন্তু কাকুকে খুব ভালবাসতেন। মন্তু কাকু কে দেখতে খুব সিদাসাদা হলেও আসলে উনি একজন এম ডি ডাক্তার ছিলেন। যদিও ওঁর পসার তেমন ভাল ছিলোনা আর উনি পসার জমানোর তেমন চেষ্টাও করতেন না। যাই হোক আমাদের ছোট খাট অসুখ বিসুখ এ আমরা কনো দিন ডাক্তার দ্যাখাই নি। যে দিন সেই ট্রেন দুর্ঘটনার খবর এল সেদিন মা খুব ভেঙ্গে পরে ছিল। মন্তু কাকু তাড়াতাড়ি চেম্বার থেকে আমাদের বাড়ি চলে এলেন আর তারপর দেহ আনা থেকে সুরু করে সৎকার পর্যন্ত বাকি সমস্ত কাজ একাই সামলালেন। যদিও আমার ছোট কাকা এসে ছিলেন কিন্তু ওনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তেমন ভাল ছিল না বলে উনি একটু ছাড়াছাড়া ভাব দেখালেন। যাই হোক মন্তু কাকু সব সামলে নিলেন আর তারপর থেকে কয়েক দিন টেলিফোন এ নিয়মিত আমাদের খোঁজ খবর নিতে লাগলেন যে আমাদের কোন অসুবিধা হোচ্ছে কিনা। যাই হোক বাবা মারা যাবার মাস দু এক পর মন্তু কাকু এক দিন মা কে নিয়ে বাবার অফিস এ গেলেন বাবার পাওনা টাকা কড়ি সব বুঝে নিতে। সেদিন আবার আমার শরীর টা খারাপ ছিল বলে কলেজে যাইনি। মন্তু কাকু আর মা সকালে বেড়িয়ে ফিরলেন সেই বিকেল এর দিকে। ওরা বাড়ি ফেরার পর হটাত খুব জোর বৃষ্টি সুরু হল। মা মন্তু কাকু কে বললেন রাতের খাবারটা এখানেই খাওয়ার জন্য। মন্তু কাকু রাজি হলেন। কিন্তু রাতের দিকে বৃষ্টির সাথে প্রবল ঝড় শুরু হল আর সেই সঙ্গে কারেন্টটাও চলে গেল। আমি দু তলার ঘরে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম। হটাত ঘুম ভেঙ্গে যেতে কি মনে করে আস্তে আস্তে নিচে নেবে এলাম। দেখি বাইরের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। চুপি চুপি ঘরে উঁকি মেরে দেখি মা বাইরের ঘরের সোফাতে বসে খুব কান্না কাটি করছে আর মন্তু কাকু মা কে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছে। মা বাবার সম্পর্কে নানা পুরনো কথা মনে করে বলছে আর কান্না কাটি করছে। কাঁদতে কাঁদতে এক বার মা মন্তু কাকুর বুকে মাথা রাখল আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। মন্তু কাকু মার মাথাতে এর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তারপর হটাত দেখি মন্তু কাকু কখন যেন সান্তনা দিতে দিতে মা কে নিজের বুকের সাথে একবারে জড়িয়ে ধরেছে। মা ও কাঁদতে কাঁদতে মন্তু কাকুর বুকে মুখ ঘষছে। মা বুকে মুখ ঘষছে দেখে মন্তু কাকুও জোরে জোরে মার মাথাতে আর পিঠে হাত বোলাতে শুরু করল। মা কিন্তু কেঁদেই চলছিল আর মন্তু কাকুর বুকে মুখ ঘসেই চলছিল। মন্তু কাকু হটাত মার কপালে আর মাথার চাঁদিতে ছোট ছোট চুমু খেতে শুরু করল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মা ব্যাপারটা পাত্তাই দিলনা। মা মন্তু কাকু কে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল “ওকে ছাড়া আমি এত বড় জীবনটা কাটাব কি করে………আমার এই সাজানো গোছান সংসারটা একবারে ফাঁকা হয়ে গেল”। মন্তু কাকু মা কে বলছিল “জানি যা হয়েছে তা মেনে নেওয়া তোমার পক্ষে খুব মুস্কিল, কিন্তু তুমি ভেবনা, ভগবান চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে”। এর কিছুক্ষণ পর মন্তু কাকুর চুমু মার মাথা আর কপাল ছারিয়ে মার কান্নার জলে ভেজা নরম গালে পরতে লাগল। মন্তু কাকু মা কে জিগ্যেস করল “তুমি কিছু খেয়েছো”? মা মাথা নেড়ে বলল না। মন্তু কাকু বলল “তোমার এখন কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত”। মা বললো “আমার ইচ্ছে করছে না”। মন্তু কাকু তখন মা কে ছেড়ে রান্না ঘরে ঢুকে একটা বিস্কুট এর প্যাকেট নিয়ে এল। মা কে বলল “অন্তত কটা বিস্কুট খাও”। মা প্রথমে খেতে চাইছিল না। কিন্তু পরে যখন মন্তু কাকু প্যাকেট থেকে নিজে হাতে বিস্কুট বের করে মার মুখে ধরল তখন মা মন্তু কাকুর হাত থেকে নিতান্ত অনিচ্ছা স্যত্বেও বিস্কুট মুখে নিতে লাগল। কটা বিস্কুট খাবার পর মা বললো “ আমার আর ভাল লাগছেনা”। মন্তু কাকু মার ঠোঁটের কোনে লাগা বিস্কুট এর গুঁড়ো নিজের হাতের আঙুল দিয়ে ঝেড়ে দিল। তারপর মা কে বলল “চল আমরা এবার ভেতরে তোমার শোবার ঘরে গিয়ে বসি”। ওরা এক তলায় মার শোবার ঘরে ঢুকে মার বিছানাতে বসলো। দু একটা এদিক ওদিক কথার পরে আবার বাবার প্রসঙ্গ এসে পরলো। মা হটাত খুব উদাস হয়ে গেল। মন্তু কাকু এদিক ওদিক নানা প্রসঙ্গ তুলে মার মন অন্য দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু কোন লাভ হলনা। মার চোখের কোণে আবার জল চিকচিক করতে লাগল। তাই দেখে মন্তু কাকু মা কে বললো “কি গো আবার ওর কথা মনে পরছে”? মা ছলছল চোখে মন্তু কাকু কে বলল “আমার ভরা বিছানাটা একবারে খালি হয়ে গেল ঠাকুরপো………রাতে এই খালি বিছানায় আমার একবারে ঘুম আসেনা……সারা রাত জেগে বসে থাকি……খালি মনে হয় বিছানার ওই দিকটা খালি”।
আমার বাবার মৃত্যু হয়াছিল একটি ট্রেন দুর্ঘটনাতে। বাবা একটি কেমিক্যাল কোম্পানি তে মার্কেটিং ম্যানেজার এর কাজ করতেন। বাবার ছোটবেলাকার বন্ধু ছিলেন মন্তু কাকু। উনি প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতেন। ওনার স্ত্রীর এর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা টাচ্চাও ছিলোনা। রবিবার বা অন্য ছুটির দিনে উনি আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন ও দুপুরের খাবার আমাদের সাথেই খেতেন। বাবার থেকে উনি বয়সে বছর দুই এর ছোট হলেও বাবা মন্তু কাকুকে খুব ভালবাসতেন। মন্তু কাকু কে দেখতে খুব সিদাসাদা হলেও আসলে উনি একজন এম ডি ডাক্তার ছিলেন। যদিও ওঁর পসার তেমন ভাল ছিলোনা আর উনি পসার জমানোর তেমন চেষ্টাও করতেন না। যাই হোক আমাদের ছোট খাট অসুখ বিসুখ এ আমরা কনো দিন ডাক্তার দ্যাখাই নি। যে দিন সেই ট্রেন দুর্ঘটনার খবর এল সেদিন মা খুব ভেঙ্গে পরে ছিল। মন্তু কাকু তাড়াতাড়ি চেম্বার থেকে আমাদের বাড়ি চলে এলেন আর তারপর দেহ আনা থেকে সুরু করে সৎকার পর্যন্ত বাকি সমস্ত কাজ একাই সামলালেন। যদিও আমার ছোট কাকা এসে ছিলেন কিন্তু ওনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তেমন ভাল ছিল না বলে উনি একটু ছাড়াছাড়া ভাব দেখালেন। যাই হোক মন্তু কাকু সব সামলে নিলেন আর তারপর থেকে কয়েক দিন টেলিফোন এ নিয়মিত আমাদের খোঁজ খবর নিতে লাগলেন যে আমাদের কোন অসুবিধা হোচ্ছে কিনা। যাই হোক বাবা মারা যাবার মাস দু এক পর মন্তু কাকু এক দিন মা কে নিয়ে বাবার অফিস এ গেলেন বাবার পাওনা টাকা কড়ি সব বুঝে নিতে। সেদিন আবার আমার শরীর টা খারাপ ছিল বলে কলেজে যাইনি। মন্তু কাকু আর মা সকালে বেড়িয়ে ফিরলেন সেই বিকেল এর দিকে। ওরা বাড়ি ফেরার পর হটাত খুব জোর বৃষ্টি সুরু হল। মা মন্তু কাকু কে বললেন রাতের খাবারটা এখানেই খাওয়ার জন্য। মন্তু কাকু রাজি হলেন। কিন্তু রাতের দিকে বৃষ্টির সাথে প্রবল ঝড় শুরু হল আর সেই সঙ্গে কারেন্টটাও চলে গেল। আমি দু তলার ঘরে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম। হটাত ঘুম ভেঙ্গে যেতে কি মনে করে আস্তে আস্তে নিচে নেবে এলাম। দেখি বাইরের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। চুপি চুপি ঘরে উঁকি মেরে দেখি মা বাইরের ঘরের সোফাতে বসে খুব কান্না কাটি করছে আর মন্তু কাকু মা কে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছে। মা বাবার সম্পর্কে নানা পুরনো কথা মনে করে বলছে আর কান্না কাটি করছে। কাঁদতে কাঁদতে এক বার মা মন্তু কাকুর বুকে মাথা রাখল আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। মন্তু কাকু মার মাথাতে এর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তারপর হটাত দেখি মন্তু কাকু কখন যেন সান্তনা দিতে দিতে মা কে নিজের বুকের সাথে একবারে জড়িয়ে ধরেছে। মা ও কাঁদতে কাঁদতে মন্তু কাকুর বুকে মুখ ঘষছে। মা বুকে মুখ ঘষছে দেখে মন্তু কাকুও জোরে জোরে মার মাথাতে আর পিঠে হাত বোলাতে শুরু করল। মা কিন্তু কেঁদেই চলছিল আর মন্তু কাকুর বুকে মুখ ঘসেই চলছিল। মন্তু কাকু হটাত মার কপালে আর মাথার চাঁদিতে ছোট ছোট চুমু খেতে শুরু করল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মা ব্যাপারটা পাত্তাই দিলনা। মা মন্তু কাকু কে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল “ওকে ছাড়া আমি এত বড় জীবনটা কাটাব কি করে………আমার এই সাজানো গোছান সংসারটা একবারে ফাঁকা হয়ে গেল”। মন্তু কাকু মা কে বলছিল “জানি যা হয়েছে তা মেনে নেওয়া তোমার পক্ষে খুব মুস্কিল, কিন্তু তুমি ভেবনা, ভগবান চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে”। এর কিছুক্ষণ পর মন্তু কাকুর চুমু মার মাথা আর কপাল ছারিয়ে মার কান্নার জলে ভেজা নরম গালে পরতে লাগল। মন্তু কাকু মা কে জিগ্যেস করল “তুমি কিছু খেয়েছো”? মা মাথা নেড়ে বলল না। মন্তু কাকু বলল “তোমার এখন কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত”। মা বললো “আমার ইচ্ছে করছে না”। মন্তু কাকু তখন মা কে ছেড়ে রান্না ঘরে ঢুকে একটা বিস্কুট এর প্যাকেট নিয়ে এল। মা কে বলল “অন্তত কটা বিস্কুট খাও”। মা প্রথমে খেতে চাইছিল না। কিন্তু পরে যখন মন্তু কাকু প্যাকেট থেকে নিজে হাতে বিস্কুট বের করে মার মুখে ধরল তখন মা মন্তু কাকুর হাত থেকে নিতান্ত অনিচ্ছা স্যত্বেও বিস্কুট মুখে নিতে লাগল। কটা বিস্কুট খাবার পর মা বললো “ আমার আর ভাল লাগছেনা”। মন্তু কাকু মার ঠোঁটের কোনে লাগা বিস্কুট এর গুঁড়ো নিজের হাতের আঙুল দিয়ে ঝেড়ে দিল। তারপর মা কে বলল “চল আমরা এবার ভেতরে তোমার শোবার ঘরে গিয়ে বসি”। ওরা এক তলায় মার শোবার ঘরে ঢুকে মার বিছানাতে বসলো। দু একটা এদিক ওদিক কথার পরে আবার বাবার প্রসঙ্গ এসে পরলো। মা হটাত খুব উদাস হয়ে গেল। মন্তু কাকু এদিক ওদিক নানা প্রসঙ্গ তুলে মার মন অন্য দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু কোন লাভ হলনা। মার চোখের কোণে আবার জল চিকচিক করতে লাগল। তাই দেখে মন্তু কাকু মা কে বললো “কি গো আবার ওর কথা মনে পরছে”? মা ছলছল চোখে মন্তু কাকু কে বলল “আমার ভরা বিছানাটা একবারে খালি হয়ে গেল ঠাকুরপো………রাতে এই খালি বিছানায় আমার একবারে ঘুম আসেনা……সারা রাত জেগে বসে থাকি……খালি মনে হয় বিছানার ওই দিকটা খালি”।