07-07-2021, 04:13 PM
ছুটির প্রথমদিন সকালে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে নিঝুম। সবে নাস্তা শেষ করে গোসল করেছে, ডোরবেল বেজে ওঠে। দরজা খুলে নিবিড়, ঈশিতা আর আনটিকে দেখে ভীষণ অবাক হয় সে। ভাবতেই পারেনি ওরা চলে আসবে আজ। মাও খুব খুশি হন তাঁর বান্ধবীকে পেয়ে। নিবিড় আর ঈশিতাকে পাঠিয়ে দেন নিঝুমের রুমে। ওরা আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিঝুম একটাও কথা বলেনি নিবিড়ের সাথে। নিবিড়ের মা আর ঈশিতার সাথে কথা বলে নিজের ঘরে চলে গেছে। নিবিড় আর ঈশিতা ঘরে ঢুকে দেখে নিঝুম জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, তার ‘ঝনটু মিয়া’র সাথে গল্প করছে। ঝনটু মিয়া হচ্ছে নিঝুমের পোষা কাকের ছানা। আসলে ঠিক পোষা নয়। নিঝুমের ঘরের জানালার ঠিক পাশেই বিশাল আমগাছ আছে একটা,যার একটা ডাল নিঝুমের জানালা ছুঁইছুঁই। সেই ডালেই কাকের বাসা রয়েছে। এমনিতে নিঝুম কাক অসম্ভব ভয় পায়। তার দিকে কোন কাক উড়ে আসতে দেখলে চিৎকার করে চারপাশ কাঁপিয়ে দেয়। এই নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা কত হাসাহাসি করে, নিবিড়ও তার বাইরে নয়। কিন্তু এই বাসাটায় কয়দিন আগে একটা কাকের ছানা হতে দেখেছে নিঝুম। কেন যেন খুব মায়া পড়ে গেছে তার বাচ্চাটার ওপর। চোখ নেই, ডানা নেই, খালি কিচকিচ করে। নিঝুম এর আগে কখনও কাকের ছানা দেখেনি, তাই হয়তো এটাকে প্রথম দেখে তার কাছে “চরম কিউট” লেগেছে। তারপর থেকে নিঝুমকে দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় এই জানালার কাছে কাকের বাসার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। কাকের বাচ্চার আবার নামও রেখেছে, ‘ঝনটু মিয়া’! নিবিড় আর অনন্যা শুনে হাসতে হাসতে কাহিল হয়ে গেছে। মানুষের এমন খেয়ালও হতে পারে! তবে নিবিড় জানে যে তার নিঝুম এমনই। তাই বেশি হাসাহাসি করেনি। সস্নেহে বলেছে, “পাগলি।” তাই আজ যখন ঘরে ঢুকে নিঝুমকে জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল, বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে সে ওখানে কী করছে। নিঝুমের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কেন যেন কিছু বলতে পারে না। নিঝুমও মুখ ফিরায় না তার দিকে। কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করতে থাকে দুজনে। প্রথম কথা শুরু করে ঈশিতাই। তারপর আস্তে আস্তে নরমাল হয়ে আসতে থাকে নিবিড় আর নিঝুম। কথাপ্রসঙ্গে অনন্যার কথা এসে যায়। নিঝুম জিগ্যেস করে, “তুই যে এখানে এসেছিস তোর বউ জানে? ওকে জানা। ও তো তোকে দেখেনি। আমাকে বলেছিল তুই আসলে জানাতে। আমার তো ফোন নেই, তাই তুইই জানা।” নিবিড় একটু গাইগুই করলেও তেমন আপত্তি করেনা। ফোন দেয় অনন্যাকে। কিন্তু ফোন ধরেনা কেউ। বলে, “ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে হয়তো।” নিঝুম বলে, “সে এখনও আছে? আবার তুইও তো তার বর। কীজানি বাবা, বুঝিনা তোদের ব্যাপার।”