07-07-2021, 02:18 PM
বিদিশা পুরো কথাটা বলতে গিয়েও পারল না। হু হু করতে কাঁদতে লাগল অঝোরে।
আমি ওকে শুয়ে শুয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছি। শুক্লা বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলল, এই পাগলি মেয়ে। তাকা আমার দিকে। দ্যাখ, একবার।
বিদিশা মুখ তুলে তাকালো। ওর চোখে তখন জল ছলছল করছে।
শুক্লা হাসিমুখে বলল, ‘প্যায়ার করনে ওয়ালে কভি ডরতে নেহী। যো ডরতে হ্যায়। ও প্যায়ার করতে নেহী। গানটা শুনিস নি।?’
বিদিশা বলল, ‘সব শুনেছি, সব শুনেছি। কিন্তু কোথাও যেন- মনের ভেতরে খুব কষ্ট হয় রে। তাই তো ভাবি, না বুঝে শুনে কাউকে কখনও কষ্ট দিতে নেই। কাউকে দূঃখ দিতে নেই। ভগবান তাকে সুখী করতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কি? আমিও কি জীবনে সুখী হতে পারলাম? বিয়ে করলাম যাকে একপ্রকার জোর করেই, নিজের প্রেমের সাথে প্রতারণা করে। এতদিন শুধু বিভীষিকার মতন কাটিয়েছি। দম বন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিলাম। একটা মানুষ যখন মনের কোনায় ছবির মতন এঁকে যায়, তার মুখটাই শুধু ভেসে ওঠে। আমার কেন জানি না ওই অবস্থার মধ্যে আমি শুধু দেবের কথাই চিন্তা করে গেছি। শুধু ভেবেছি, আমার জীবনে কি ঘটবে, আগাম ভবিষ্যত আমি জানি না। কিন্তু দেব কাউকে বিয়ে করে সুখী হোক। হয়তো আমার থেকে অনেক ভাল মেয়ে পাবে ও। আমি তো পোড়ামুখি। সুন্দরী শুধু। আমার রূপটাই আছে। আর কিছু নেই।’
শুক্লা বিদিশাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছে। উঠে এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘ছিঃ। অমন করে বলতে আছে? ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। আমার হয় নি? আমিও জীবনে অনেক ভুল করেছি। তারজন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে কোন লাভ আছে বিদিশা? যা হয়েছে ভুলে যা। মনে কর ওগুলো তোদের জীবনে কিছুই ঘটেনি। তাহলেই হল। তোরা আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।’
বিদিশা তবু কান্না থামাচ্ছে না। ওকে এভাবে চোখের সামনে চোখের জল ফেলতে দেখছি, আমার ভেতরে আনন্দশ্রোতটা আবার কেমন যেন মিইয়ে যাচ্ছে। অস্বস্তিও হচ্ছে, আবার ভাবছি, মা যদি আবার এখুনি ঘরে ঢুকে পড়ে, তাহলে আরও মুশকিল হবে। ওর পিঠে একটা হাত রেখে বললাম, ‘বিদিশা কেঁদো না অত। সব ঠিক হয়ে যাবে। এতদিন বাদে তুমি এসেছ। আজ শুধু আনন্দ করো।’
বিদিশা এবার শুভেন্দুর দিকে তাকাল। শুক্লাকে বলল, ‘এই লোকটা, জানিসরে শুক্লা, সব বলেছি ওকে। শেষ পর্যন্ত ফোনে আমাকে একটা কথাই বলল, ‘বাড়ীর গোটা ছাদটাই তোদের দুজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম। সব বললি, আর নিজের কষ্টটা দেবকে খুলে বলতে পারলি না? দেব কি তোকে দূর ছাই করে তাড়িয়ে দিত? তুই এখনও দেবকে বুঝতে ভুল করছিস বিদিশা। এরজন্য তুই নিজেই পরে আফশোস করে মরবি। আমারও তখন আর কিছু করার থাকবে না।’
আমি সব জানি, তবুও নির্বাক হয়ে চেয়ে রয়েছি ওদের দুজনের দিকে। শুভেন্দু বিদিশাকে এবার ধমক দিল।
ওকে বলল, ‘থামবি তুই? তখন থেকে প্যান প্যান প্যান। কি হয়েছে? কি দোষ করেছিস তুই? কিছু দোষ করিসনি। কিছু হয় নি। সব ঠিক আছে। এবার হাস তো?’ঠিক ওই অবস্থায় বিদিশার মনকে সান্তনা দেবার মত যেন আমি ছাড়া আর কেউ নেই। এক প্রকার জোর করেই উঠে বসলাম বিছানার ওপরে। শুভেন্দু আর শুক্লা দুজনেই আমাকে উঠে বসতে দেখে চমকে গেছে। বিদিশাও প্রথমে খেয়াল করেনি। উঠে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। বিদিশার মাথাটাই তখন আমার বুকে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। শুভেন্দু আর শুক্লার সামনেই বিদিশার কপালে একটা চুমু খেলাম। চোখে চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘কান্না থামাবে তুমি? তুমি কি চাও আমি আবার অসুস্থ হয়ে যাই? না সুস্থ হয়ে তোমার সাথে আগের মত প্রেম শুরু করি।’
বিদিশা আমাকে ঠেলা দিয়ে বলল, ‘ধ্যাত। ছাড়ো বলছি। কে তোমাকে উঠে বসতে বলেছে?’
শুভেন্দু আর শুক্লা তখন দুজনেই জোর হাসা হাসছে। হাসতে হাসতেই শুভেন্দু বলল, ’ঠিক এই সময়ে মাসীমা যদি আবার ঘরে ঢোকে না? ঢুকে তোদের দুজনকে দেখলে, পিলে একেবারে চমকে যাবে।’
ক্রমশঃ-