Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#99
মা ঢুকেছে এবার বিদিশার জন্য চা বানিয়েশুভেন্দু উত্তেজিত হয়ে এতক্ষণ প্রেমের বানী শোনাচ্ছিলমা বলল, ‘একি শুভেন্দু? তুমি কাঁদছ?’
শুভেন্দু বলল, ‘না মাসীমাআমি আবার মেয়েদের কান্না দেখলে কান্না চেপে রাখতে পারি না।’
মা তাকাচ্ছে একবার বিদিশার দিকে, একবার শুক্লার মুখের দিকেকি হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছে নাশুক্লাকেই প্রথমে বলল, ‘কি হয়েছে গো, তোমাদেরহঠাৎই শুভেন্দু এই কথা বলছে?’
শুক্লা বলল, ‘মাসীমা শুভেন্দু যা হাসায়, আপনি তো জানেনহাসতে হাসতে পেট ফেটে এখন চোখে জল চলে এসেছে।’
মা বিদিশার দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে বলল, ‘ওহ্ তাই বুঝি? আমি ভাবলাম কি না কি হয়েছে।’
বিদিশা মা’কে দেখেই আমার মাথার কাছ থেকে উঠে পড়লহাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলমা বলল, ‘দেখলে তো দেবকেমাঝে মধ্যেই এই রোগটা বাঁধায়, আর আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাই।’
বিদিশা একবার মুখ ঘুরিয়ে তাকাল আমার দিকেমায়ের দিকে ফিরে বলল, ‘ভাল হয়ে গেছে ও এখনআর কোন চিন্তা নেই।’
মা বলল, ‘তোমরা সবাই মিলে আমার এই ছেলেটাকে একটু বোঝাও তোকিছুতেই কথা শুনবে নাহাবিজাবি সব খাবেআর থেকে থেকেই পেটের রোগ বাঁধাবে।’
মা’কে আমি বললাম, ‘মা এটা তো পেটের রোগ নয়, এটা হল আলসার কোলাইটিসপ্রবলেমটা ইনটেনস্টাইনে হয়।’
মা বলল, ‘ওই হলরোগ মানেই রোগনিজেকে সাবধানে রাখতে হবে তো?
আমি চুপ করে গেলামবিদিশা আমার দিকে ঘুরে বলল, ‘শুনেছ তো মা কি বলছে? এবার থেকে নিজের শরীর নিয়ে আর ছেলেখেলা কোরো নাসবসময় তো আর শুভেন্দুকেও পাবে নামা তখন একা কি করবে বলোতো?’
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিশুভেন্দু শুক্লাকে বলল, এই বিদিশা দেবকে ধমকাচ্ছে রেদেখ ‘দেব’ কেমন চুপযেন শান্ত শিষ্ট বালকআর আমরা যদি বলতাম, এক্ষুনি দেব, তেড়েমেড়ে উঠত।’
শুক্লা এবার হাসতে শুরু করেছেমা’ও একটু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলআমি যেন বকা খেয়েছি, এইভাবেই বিছানায় করুন মুখটা করে শুয়ে রয়েছি।’
বিদিশা বলল, ‘না নাধমক কোথায়? নিজের শরীরের দিকে আগে খেয়াল রাখতে হবে তো? তারপরে তো সবও নিশ্চই খাওয়াদাওয়াতেও অনিয়ম করে, তাই এরকম হয়আমি জানি নিজের শরীরের দিকে ও একদমই তাকায় না।’
শুক্লা বলল, ‘এক কাজ করবিতুই এবার এসেগেছিসদেবকে নিজের হাতে তুই খাইয়ে দিবিদেব তোর হাতের ছোঁয়া ছাড়া জলস্পর্ষও করবে না।’
বিদিশা বলল, ‘ইসও যেন বাচ্চা ছেলে
 শুভেন্দু বলল, ‘শোন বিদিশা, বাচ্চা হয়ে যতদিন থাকা যায় ততই ভালবুড়ো হলেই যত বিপত্তিএই দ্যাখ, আমিও কেমন দেবের মতনশান্ত শিশুদেব শুধু বিছানায় শুয়ে আছে, আর আমি বসে আছি, এই যা তফাত।’
বিদিশা বলল, ‘তুমি আর কথা বোলো নাবাচ্চা হয়েই থাক চিরকালবিয়ে থা আর কোরো নাতোমাকে খাওয়াবারো কেউ নেই।’
শুভেন্দু বিদিশাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘কে বলছে তোকে? আমার বউদিরা সব আছে না? ওরাই তো আমাকে খাইয়ে দেয়।’
শুক্লা এবার হাসতে শুরু করেছেফোড়ন কেটে বলল, ’এই শুরু হল শুভেন্দুর আবার ফাজলামীসত্যি পারে ও।’
বিদিশা চায়ের কাপটা নিয়ে আবার আমার মাথার কাছটায় বসেছেএকনাগাড়ে শুয়ে থাকতে আমারও ভাল লাগছে নাদেহটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই বিদিশা বাঁধা দিয়ে বলল, ‘হু হুএকদম নয় ওঠার চেষ্টা একদম করবে নাতাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।’
আমি যাও বা শরীরটাকে নিয়ে একটু কসরত করে নিজেকে ঠেলা মেরে ওঠবার চেষ্টা করছিলাম, বিদিশার বকানির ঠেলায় আমার প্রত্যাশা আর পূর্ণ হল নাশুভেন্দু ঠিক বুঝে নিয়েছে ব্যাপারটাশুক্লাকে বলল, ‘আজ দেবের কপাল সত্যি খারাপদিদিমনি এসে গেছেনছাত্রকে থেকে থেকেই বকা দিচ্ছেন।’
আমি হাসব না কাঁদব, তাই বুঝতে পারছি নাবিদিশা বলল, দেখ কোনো মানে হয়ডাক্তার মানা করে দিয়ে গেছেতাও ও জোর করে ওঠবার চেষ্টা করছেআবার যদি পেটে ব্যাথা শুরু হয়?’
শুক্লাও সায় দিয়ে বলল, ‘হ্যা রে দেবতুই জোর করিস নাঅন্তত আজকের দিনটা একটু রেস্ট নে।’
শুভেন্দু বলল, ‘শুধু আজকের দিনটা কি? ডাক্তার তো বলেছে ওকে সাতদিন রেস্ট নিতে।’
আমি বললাম, ‘তাহলে আমি মরে যাবএভাবে বিছানায় মরার মতন পড়ে থাকতে আমি পারব নাতোরা এসেছিস, আমি উঠে বসতে পারছি নাভীষন বিরক্তি কর।’
আমার কাছে এগিয়ে এসে শুভেন্দু বলল, ‘এই সিরিয়াস বলছি, পাশের ঘরে যাব? তোদের একটু নিরিবিলিতে ছেড়ে দিই কি বল?’
বিদিশা চা খেতে খেতেই বলল, ‘এই যে পাশের ঘরে যাবার কিছু হয় নিঅত উদারতা দেখাতে হবে নাআমি যেন এখুনি চলে যাচ্ছি।’
আমি শুয়ে শুয়ে অতি উৎফুল্ল হয়ে বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি থাকবে বিদিশা?’
বিদিশা বলল, ‘কেন? থাকলে তুমি খুশি হবে না?’
আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলছে বিদিশাসেই চেনাপরিচিত মুখদৃষ্টিবিদিশার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি, মনের মধ্যে যে ঝড়টা উঠেছিল, সেটা যেন ও অনেক কাটিয়ে উঠেছেএখন আর দ্বিধা নেইবাঁধা, প্রতিবন্ধকতা, এগুলোকে কাটিয়ে ওঠবার মানসিকতা নিয়ে ফেলেছে ওওর চোখের পরিভাষা সেই কথাটাই বলছে
 আমাকে থ মেরে শুয়ে থাকতে দেখে, শুভেন্দু বলল, একিরে দেব? স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন? বিদিশার কথার জবাব দে।’
শুক্লা বলল, ‘দেব মনে হয় এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে বিদিশা ওর কাছে থাকবার জন্যই এসেছে।’
আমার যেন খানিকের ঘোরটা একটু কাটলশুভেন্দু আর শুক্লা দুজনকেই বললাম, ‘আমি জীবনে অনেক কঠিন জিনিষটা খুব সহজ ভাবে বিশ্বাস করে এসেছিঅথচ কত সহজ, কত সরল, মনের কথাটা কেউ মন থেকে বললে, কেন মনে হয় আমার বিশ্বাস করতে কেন এত কষ্ট হচ্ছেবিদিশা এতদিন পরে আমার বাড়ী এসেছে, ওকে সেই আগের মতন দেখছি বলেই আনন্দে বিশ্বাস করতে পারছি না।’
বিদিশাকে বললাম, ‘বাড়ীতে বলে এসেছো? তোমার মা’ বাবাকে?’
বিদিশা বলল, ‘বলেছি, আজ আর বাড়ী ফিরব নাতোমার এখানে থাকবকাল সকালে আমি চলে যাব।’
শুভেন্দু এবার চোখটা বড় করে ফেলেছেগোল গোল করে বিদিশার দিকে তাকিয়ে রয়েছেএবার আমার মতই শুভেন্দুর অবস্থাএ যেন আশাতীতবেশ বড়সড় একটা ঢোঁক গিলে শুভেন্দু বলল, ‘ওরে তুই তো ষোল আনা দেবের আকাঙ্খা পূর্ণ করলিদেবের এখানে থাকবি বলে তুই বাড়ীতে বলে এসেছিস? গ্রেটএইজন্যই প্রাইভেসির ব্যাপারটা তখন পাত্তা দিচ্ছিলি নাআমি আর শুক্লা যখন বাড়ী ফিরে যাব, তখন তোরা মনের আনন্দে প্রেম সারবি?’
আমার কেমন মনে হল, শরীরের মধ্যে আনন্দশ্রোতগুলো সব বইতে শুরু করেছেকে বলবে আমি একজন অসুস্থ রুগীআমার শিরা উপশিরাগুলো সব আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করে দিয়েছেরক্ত চলাচল স্বাভাবিকপেটের ব্যাথা অদ্ভূত ভাবে পুরোপুরি গায়েবআমি একজন পুরোনো হারিয়ে যাওয়া প্রেম ফিরে পাওয়া ভাগ্যবান প্রেমিকআমার মনের মধ্যে আর কোন কষ্ট নেইআমার জীবনে কোন একাকীত্ব নেই।  আমি এখন নাচতে পারি, গাইতে পারিবিদিশাকে নিয়ে কত কি করতে পারি
শুভেন্দু দেখলাম হেঁড়ে গলায় আবার গাইতে শুরু করেছে, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসেশাখে শাখে পাখী ডাকেকত শোভা চারিপাশেআহা কি আনন্দ-
শুক্লা বলল, ‘তুই থামবিতখন থেকে কিশোরকুমার, মহম্মদ রফি হবার চেষ্টা করছিসদেখ বিদিশা আরো কিছু বলবেআমরা ওর কথাটা বরং শুনি মন দিয়ে।’
শুভেন্দু গান গাওয়াটা বন্ধ করে দিলবিদিশা তখন চা খাওয়াটা সবেমাত্র শেষ করেছেশুক্লা আর শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বিদিশা বলল, ‘এই মাঝখানে একটা দিন, অনেক ভেবেছি, নিজের মনের সাথে শুধু লড়াই করেছিএকবার শুধু ভাবছি, আমি দেবকে সত্যি কথাটা বলতে গিয়েও কেন পারলাম না? আমার নিজের সততাটা কেন এখানে জাহির করতে পারলাম না? আমি কি দেবের কাছে ছোট হয়ে যাব বলেই সত্যি কথাটা বলতে ইতস্তত করে ফেললাম? বললাম যখন পুরোটা কেন বললাম না? দেবকে একদিন বিশ্বাস না করে আমি চলে গিয়েছিলামআবার যখন ফিরে এলাম, বিশ্বাসটা কেন পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারলাম না? আমার মনে হয়েছিল আমি হয়তো ছোট হয়ে যাব দেবের কাছেভুল আমি করেছি, দেবের তো কোন ভুল নেইকিন্তু ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যখন করতে চাইছি, তখন আমার অনেক জ্বালা, আমার অনেক বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতাবারে বারেই আমার মনকে শুধু পেছনে ঠেলে দিচ্ছেদেবের জীবনের অনেকটা সময় নষ্ট করেছি আমি।  আমার জন্যই শুধু শুধু ও কেন এত কষ্ট সহ্য করবে? আজ যে আমার ওখান থেকে ফিরে এসেও এত সমস্যাকে আছে এমন? এত কিছু ঝেমেলা সত্ত্বেও আমাকে-

 
 
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 07-07-2021, 02:16 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)