14-04-2019, 01:17 AM
(This post was last modified: 14-04-2019, 01:19 AM by HASIR RAJA 19. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সময়ের কোন জ্ঞান নেই কতক্ষন যে এখানে এভাবে আছি তার কোন হিসাব নেই। ঘরটা ভীষন অন্ধকার একটাও ফোকর নেই যেখান দিয়ে বাইরের আলো প্রবেশ করতে পারে। এখন কি রাত না দিন। আমায় সম্ভবত একটা চেয়ারে বসিয়ে হাতটাকে পিছমোরা করে বাঁধা হয়েছে পাটা চেয়ারের পায়ার সাথে বাঁধা। কয়েকবার দুহাত পেঁচিয়ে বাঁধন খোলার চেষ্টা করলাম পারলাম না, এ বজ্রবাঁধুনি এইভাবে খোলা সম্ভব নয়। খিদেতে পেট জ্বলছে ছোট থেকেই খিদে আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।
হাল ছেড়ে দিলাম। ধূর শালা আর ভাববোইনা খিদের কথা, নিজের মনে গালাগাল দিয়ে উঠলাম।
মনটা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। মাথাটা ঠান্ডা করে ভাবতে শুরু করলাম এসব কেন হচ্ছে আমার সাথে, আমি ত কারোর কোনদিন কোনপ্রকার ক্ষতি করিনি। তবে আমায় কেন ধরে রেখেছে এরা। আর ওই লোকটা, জ্ঞান হারাবার আগে ওই একঝলক দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম লোকটা আমার চেনা কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কোথায় কখন দেখেছি লোকটাকে।
স্মৃতির দরজায় বারবার আঘাত করতে লাগলাম। মনে পর, মনে পর, মনে পর, মনে পর।
বিদ্যুৎচমকের মত হঠাৎ একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
বছর দুয়েক আগের কথা।
দিল্লীর তাল্কাতোর স্টেডিয়ামে আই.কে.ইউ এশিয়ান ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে আমি অংশগ্রহন করতে গেছি।
ছোটবেলায় গুরুকুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষন তারপর কলকাতাতেই বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহন করেছি। এইবারের ম্যাচটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটা আমার প্রথম জাতীয় লেভেলের এত বড় স্টেজে খেলা। বাড়ী থেকে এখানে আসতে বাবা মা মৃদু একটু আপত্তি প্রথমে তুলেছিলো কিন্তু বারণ করেনি। বাবার কাছ থেকে এই বিষয়ে ছোট থেকেই উৎসাহ পেয়ে এসেছি। তাই কোনরকম বাধা আমার ওপর আসতে দেয়নি।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার দুদিন আগে দিল্লীতে পৌছে গেলাম। আমার সাথে আমার ট্রেনার ও আরো কিছু অংশগ্রহনকারীরা এসেছে। রাতে দিল্লীতে পৌছে সোজা হোটেলে চেকইন করেছি। বাবার এই একটা নির্দেশ আমায় পালন করতে হবে আসার আগে বলে দিয়েছে বিনা প্রয়োজনে কখনই যেন হোটেল থেকে না বেরোই আর ট্রেনার ছারা কোথাও যাওয়া চলবে না। একা যেন কোনপ্রকারেই ঘরের বাইরে পা না রাখি। মেনে নিয়েছিলাম সবকিছুই কিন্তু কেন এই সতর্কতা জিজ্ঞেস করেও সন্তোষজনক উত্তর পাইনি।
দুদিন পরেই আমার খেলা তাই নিজের প্রস্তুতি নিতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।
খেলার দিন একটু আগেই স্টেডিয়ামে চলে গেলাম। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকেই খেলোয়াররা অংশগ্রহন করতে এসেছে। সমস্ত স্টেডিয়াম ভর্তি তবে কোথাও এতটুকু বিশৃঙ্খলতা নেই। আমি আমার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে নিজে তৈরী হতে লাগলাম। বেশ একটু উত্তেজনা বোধ করছি। প্রথমবার এতবড় স্টেজে পারফর্ম করবো বলে।
ক্যারাটে প্রতিযোগিতা সাধারণত দুটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয়। কাতা আর কুমিতি (লড়াই)। কাতা বলতে বোঝায় আত্মরক্ষা মূলক কলাকৌশলের পূর্ব প্রস্তুতি বা কলা কৌশলের সম্মিলিত প্রশিক্ষণ। কাতা প্রতিযোগিতা জুনিয়র গ্রুপ ও সিনিয়র গ্রুপ এ দুইভাগে হয়ে থাকে।
কুমিটি বা লড়াই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে ওজন শ্রেণীতে। কুমিটি বা লড়াই প্রতিযোগিতা তিনটি স্তরে হয়ে থাকে : ফুল কণ্ট্রাক্ট, সেমি-কণ্ট্রাক্ট, নন-কন্ট্রাক্ট। আমি এই কুমিটিতেই নন-কন্ট্রাক্ট হিসেবে অংশগ্রহন করেছি।
স্টেডিয়ামের মাইকে বিভিন্ন প্লেয়ারের নাম ঘোষণা চলছে। গ্রুপ হিসাবে নাম ডাকা হচ্ছে। এখন গ্রুপ 'এ' খেলা শুরু হচ্ছে পরে গ্রুপ 'বি'।
"রাজেন্দ্রনাথ মন্ডল কেয়ার অফ দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল ফ্রম কোলকাতা গ্রুপ বি। ট্রেনার প্রদীপ্ত ব্যানার্জী। হিজ স্পেসালাইজেসন ইস কালারিপায়াত্ত এন্ড তাইচি মিক্সড কমবাইন্ড"
মাইকে আমার নামটা শোনার সাথে সাথে ভিতরের উত্তেজনা দ্বিগুন বেড়ে গেল। তবে এটাকে ভয় বলতে আমি কোনমতেই রাজি নই।
এখানে বলে রাখা ভালো, টুর্নামেন্টে নাম রেজিস্টার করার সময় নিজের স্পেশাল মুভ উল্লেখ করে দিতে হয়। ঘোষনা করার সময় তাই নামের সাথে সাথে ওটাও উল্লেখ করে ওরা।
অনেকেই অবাক হবে যে দেশির সাথে বিদেশি যোগ করলাম কেন? দেশি বলতে এখানে আমি কালারিপায়াত্তকে বোঝাচ্ছি যেটার জন্ম আমাদের এই ভারতবর্ষেই
কেরালা তামিল নাড়ু রাজ্যে, আর ক্যারাটের জন্ম জাপানের রুক্কু আইসল্যান্ডে যার এখনকার নাম ওকিনাওয়া। এই দুই কলারই বিভিন্ন স্টাইলে কিছুটা মিল আছে যেমন মাঙ্কি স্টাইল, স্নেক স্টাইল, টাইগার ক্ল, ঈগল ক্ল ইত্যাদি। তাই আমি এই দুটোকে বেছে নিয়েছি।
যাই হোক, খেলা শুরু হওয়ার আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। আমার ট্রেনার কিছু অফিসিয়ালি ফর্মালিটিস পূরণ করতে বাইরে গেছে হঠাৎ একটি লোক এসে আমার কক্ষে প্রবেশ করলো। সাধারণত ট্রেনার ছাড়া বাইরের কোন লোককে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে ইনি কি করে এ ঘরে প্রবেশ করলেন আর কি বা এনার উদ্দেশ্য??
ঘরে ঢুকে লোকটা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। খেয়াল করলাম ওনার চোখের দৃষ্টিতে অবাক হওয়ার ভাব। বেশকিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের মনে--
"রাজেন্দ্রনাথ" বলে উঠলো লোকটা।
-- হ্যাঁ। কিন্তু আপনি?
-- বাবার নাম, দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল?
-- হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে ত ঠিক চিনতে পারছিনা।
কোন উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলেন লোকটা। পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালেন। বেশ জোরে একটা টান দিয়ে মৃদু মৃদু ধোঁওয়া বার করতে লাগলেন, ভাবখানা এমন যেন উনি অনেক দিন পর আজ নিজেকে নিশ্চিন্ত মনে করছেন।
--তোমরা কতদিন কোলকাতায় আছো।
আচমকা এই প্রশ্নে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। --কতদিন মানে? জন্ম থেকেই ত আছি।
মৃদু হাসলেন উনি। পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা দেখলেন তারপর আমার দিকে ঘুরে -- আচ্ছা আজ চলি, আশা করি খুব শিগ্গির দেখা হবে। বলে সোজা দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলেন।
মনে পড়েছে। এই সেই লোক, হ্যাঁ এই লোকটাই সেদিন হঠাৎ আমার রুমে ঢুকেছিলো, মনে পড়েছে কিন্তু আমার সাথে এমন শত্রুতা কেন? ওই টুর্নামেন্টের আগে ত কোনদিন ওনাকে দেখিনি। আর ওই ঘটনার পরও আমার সাথে আর ওনার দেখা হয়নি। তবে কি........
ওনার সাথে সেদিনের কথোপকথন আরো একবার মনে মনে আওড়ে নিলাম। উমম উনি আমার নাম বাবার নাম আর কোলকাতায় কবে থেকে আছি জিজ্ঞেস করেছিলেন আর কোন কথাই জিজ্ঞেস করেনি। হঠাৎ আমার বাবার নাম জিজ্ঞেস করলো কেন? আর শোনার পরে ওরকম নিশ্চিন্ত ভাবটাও মনে পড়লো। তবে কি এইসবের সাথে আরো অনেক কিছু লুকিয়ে আছে? কিছু ত একটা আছে যার জন্য বাবা মাও আমায় বেশ কিছু কথা খুলে বলেনা সেই ছোট থেকেই বেশ বুঝতে পারতাম আমায় ওরা অনেক কথা গোপন করছে । তবে কি সেইসবের সাথে আজকের এই ঘটনার কোন যোগ আছে?
এই লোকটার সাথে দিল্লীতে দেখা হওয়াটা আমি বাবাকে জানাইনি। আসলে নিজেরই এত অদ্ভুত,এত বিচিত্র লাগছিলো যে মন থেকেই ঘটনাটাকে মুছে দিয়েছিলাম। আজ বুঝতে পারছি এর গুরুত্ব কোথায়।
"আচ্ছা আজ চলি, আশা করি খুব শিগ্গির দেখা হবে" লোকটার বলা কথাটা কানে একবার বেজে উঠলো। কথাটার গুরুত্ব যে কতখানি তা এখন বেশ বুঝতে পারছি।
হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা তীব্র আলোর রশ্মি আমার ওপর এসে পড়লো। চোখ ধাঁধিয়ে গেলো সে আলোতে, মাথাটা নিচু করে নিলাম। একজন গুরুগম্ভীর গলা বলে উঠলো -- অনেক খুঁজেছি তোমায় (একটু থেমে) অবশ্য বলতে পারো তোমাদের। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত চষে ফেলেছি শুধু তোমাদের খুঁজতে আর তোমরা কি না শেষে এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুর কোলকাতায়। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। এর থেকে হাঁসির কথা আমার জীবনে আর কিছুই নেই। কত প্ল্যানিং কত চেষ্টা সব বৃথা। দেবুর সত্যি জবাব নেই কিন্তু একটু কাঁচা কাজ করে ফেলেছে ও। তোমায় দিল্লী পাঠিয়ে জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছে।
-- কে আপনি? আমার বাবাকে আপনি চিনলেন কি করে।
দপ করে আলোটা নিভে গেলো সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আগাগোড়া লোহার চাদরে মোড়া একটা ঘর। ঘরে কোন জানালা নেই। দরজাটাও লোহার। আর দরজার ওপর একটা ব্যালকনি সম্ভবত পাশের ঘরে যাওয়ার জন্য। আমি যে কোথায় ঠিক বুঝতে পারলাম না।
লক্ষ করলাম ব্যালকনির ওপর বেশ দামী একটা স্যুট পরিহিত একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। লম্বায় প্রায় আমার সমান, একমুখ কাঁচাপাকা দাড়ি, মুখটা একটু লম্বাগোছের, মৃদু একটা হাঁসির আভা ছড়িয়ে আছে সেই মুখে। একটা পাইপ মুখে কামড়ে ধরে আছে। সব থেকে অবাক লাগলো ওই চোখদুটো, ওই চোখ আমার খুব চেনা।
হাল ছেড়ে দিলাম। ধূর শালা আর ভাববোইনা খিদের কথা, নিজের মনে গালাগাল দিয়ে উঠলাম।
মনটা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। মাথাটা ঠান্ডা করে ভাবতে শুরু করলাম এসব কেন হচ্ছে আমার সাথে, আমি ত কারোর কোনদিন কোনপ্রকার ক্ষতি করিনি। তবে আমায় কেন ধরে রেখেছে এরা। আর ওই লোকটা, জ্ঞান হারাবার আগে ওই একঝলক দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম লোকটা আমার চেনা কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কোথায় কখন দেখেছি লোকটাকে।
স্মৃতির দরজায় বারবার আঘাত করতে লাগলাম। মনে পর, মনে পর, মনে পর, মনে পর।
বিদ্যুৎচমকের মত হঠাৎ একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
বছর দুয়েক আগের কথা।
দিল্লীর তাল্কাতোর স্টেডিয়ামে আই.কে.ইউ এশিয়ান ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে আমি অংশগ্রহন করতে গেছি।
ছোটবেলায় গুরুকুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষন তারপর কলকাতাতেই বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহন করেছি। এইবারের ম্যাচটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটা আমার প্রথম জাতীয় লেভেলের এত বড় স্টেজে খেলা। বাড়ী থেকে এখানে আসতে বাবা মা মৃদু একটু আপত্তি প্রথমে তুলেছিলো কিন্তু বারণ করেনি। বাবার কাছ থেকে এই বিষয়ে ছোট থেকেই উৎসাহ পেয়ে এসেছি। তাই কোনরকম বাধা আমার ওপর আসতে দেয়নি।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার দুদিন আগে দিল্লীতে পৌছে গেলাম। আমার সাথে আমার ট্রেনার ও আরো কিছু অংশগ্রহনকারীরা এসেছে। রাতে দিল্লীতে পৌছে সোজা হোটেলে চেকইন করেছি। বাবার এই একটা নির্দেশ আমায় পালন করতে হবে আসার আগে বলে দিয়েছে বিনা প্রয়োজনে কখনই যেন হোটেল থেকে না বেরোই আর ট্রেনার ছারা কোথাও যাওয়া চলবে না। একা যেন কোনপ্রকারেই ঘরের বাইরে পা না রাখি। মেনে নিয়েছিলাম সবকিছুই কিন্তু কেন এই সতর্কতা জিজ্ঞেস করেও সন্তোষজনক উত্তর পাইনি।
দুদিন পরেই আমার খেলা তাই নিজের প্রস্তুতি নিতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।
খেলার দিন একটু আগেই স্টেডিয়ামে চলে গেলাম। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকেই খেলোয়াররা অংশগ্রহন করতে এসেছে। সমস্ত স্টেডিয়াম ভর্তি তবে কোথাও এতটুকু বিশৃঙ্খলতা নেই। আমি আমার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে নিজে তৈরী হতে লাগলাম। বেশ একটু উত্তেজনা বোধ করছি। প্রথমবার এতবড় স্টেজে পারফর্ম করবো বলে।
ক্যারাটে প্রতিযোগিতা সাধারণত দুটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয়। কাতা আর কুমিতি (লড়াই)। কাতা বলতে বোঝায় আত্মরক্ষা মূলক কলাকৌশলের পূর্ব প্রস্তুতি বা কলা কৌশলের সম্মিলিত প্রশিক্ষণ। কাতা প্রতিযোগিতা জুনিয়র গ্রুপ ও সিনিয়র গ্রুপ এ দুইভাগে হয়ে থাকে।
কুমিটি বা লড়াই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে ওজন শ্রেণীতে। কুমিটি বা লড়াই প্রতিযোগিতা তিনটি স্তরে হয়ে থাকে : ফুল কণ্ট্রাক্ট, সেমি-কণ্ট্রাক্ট, নন-কন্ট্রাক্ট। আমি এই কুমিটিতেই নন-কন্ট্রাক্ট হিসেবে অংশগ্রহন করেছি।
স্টেডিয়ামের মাইকে বিভিন্ন প্লেয়ারের নাম ঘোষণা চলছে। গ্রুপ হিসাবে নাম ডাকা হচ্ছে। এখন গ্রুপ 'এ' খেলা শুরু হচ্ছে পরে গ্রুপ 'বি'।
"রাজেন্দ্রনাথ মন্ডল কেয়ার অফ দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল ফ্রম কোলকাতা গ্রুপ বি। ট্রেনার প্রদীপ্ত ব্যানার্জী। হিজ স্পেসালাইজেসন ইস কালারিপায়াত্ত এন্ড তাইচি মিক্সড কমবাইন্ড"
মাইকে আমার নামটা শোনার সাথে সাথে ভিতরের উত্তেজনা দ্বিগুন বেড়ে গেল। তবে এটাকে ভয় বলতে আমি কোনমতেই রাজি নই।
এখানে বলে রাখা ভালো, টুর্নামেন্টে নাম রেজিস্টার করার সময় নিজের স্পেশাল মুভ উল্লেখ করে দিতে হয়। ঘোষনা করার সময় তাই নামের সাথে সাথে ওটাও উল্লেখ করে ওরা।
অনেকেই অবাক হবে যে দেশির সাথে বিদেশি যোগ করলাম কেন? দেশি বলতে এখানে আমি কালারিপায়াত্তকে বোঝাচ্ছি যেটার জন্ম আমাদের এই ভারতবর্ষেই
কেরালা তামিল নাড়ু রাজ্যে, আর ক্যারাটের জন্ম জাপানের রুক্কু আইসল্যান্ডে যার এখনকার নাম ওকিনাওয়া। এই দুই কলারই বিভিন্ন স্টাইলে কিছুটা মিল আছে যেমন মাঙ্কি স্টাইল, স্নেক স্টাইল, টাইগার ক্ল, ঈগল ক্ল ইত্যাদি। তাই আমি এই দুটোকে বেছে নিয়েছি।
যাই হোক, খেলা শুরু হওয়ার আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। আমার ট্রেনার কিছু অফিসিয়ালি ফর্মালিটিস পূরণ করতে বাইরে গেছে হঠাৎ একটি লোক এসে আমার কক্ষে প্রবেশ করলো। সাধারণত ট্রেনার ছাড়া বাইরের কোন লোককে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে ইনি কি করে এ ঘরে প্রবেশ করলেন আর কি বা এনার উদ্দেশ্য??
ঘরে ঢুকে লোকটা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। খেয়াল করলাম ওনার চোখের দৃষ্টিতে অবাক হওয়ার ভাব। বেশকিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের মনে--
"রাজেন্দ্রনাথ" বলে উঠলো লোকটা।
-- হ্যাঁ। কিন্তু আপনি?
-- বাবার নাম, দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল?
-- হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে ত ঠিক চিনতে পারছিনা।
কোন উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলেন লোকটা। পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালেন। বেশ জোরে একটা টান দিয়ে মৃদু মৃদু ধোঁওয়া বার করতে লাগলেন, ভাবখানা এমন যেন উনি অনেক দিন পর আজ নিজেকে নিশ্চিন্ত মনে করছেন।
--তোমরা কতদিন কোলকাতায় আছো।
আচমকা এই প্রশ্নে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। --কতদিন মানে? জন্ম থেকেই ত আছি।
মৃদু হাসলেন উনি। পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা দেখলেন তারপর আমার দিকে ঘুরে -- আচ্ছা আজ চলি, আশা করি খুব শিগ্গির দেখা হবে। বলে সোজা দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলেন।
মনে পড়েছে। এই সেই লোক, হ্যাঁ এই লোকটাই সেদিন হঠাৎ আমার রুমে ঢুকেছিলো, মনে পড়েছে কিন্তু আমার সাথে এমন শত্রুতা কেন? ওই টুর্নামেন্টের আগে ত কোনদিন ওনাকে দেখিনি। আর ওই ঘটনার পরও আমার সাথে আর ওনার দেখা হয়নি। তবে কি........
ওনার সাথে সেদিনের কথোপকথন আরো একবার মনে মনে আওড়ে নিলাম। উমম উনি আমার নাম বাবার নাম আর কোলকাতায় কবে থেকে আছি জিজ্ঞেস করেছিলেন আর কোন কথাই জিজ্ঞেস করেনি। হঠাৎ আমার বাবার নাম জিজ্ঞেস করলো কেন? আর শোনার পরে ওরকম নিশ্চিন্ত ভাবটাও মনে পড়লো। তবে কি এইসবের সাথে আরো অনেক কিছু লুকিয়ে আছে? কিছু ত একটা আছে যার জন্য বাবা মাও আমায় বেশ কিছু কথা খুলে বলেনা সেই ছোট থেকেই বেশ বুঝতে পারতাম আমায় ওরা অনেক কথা গোপন করছে । তবে কি সেইসবের সাথে আজকের এই ঘটনার কোন যোগ আছে?
এই লোকটার সাথে দিল্লীতে দেখা হওয়াটা আমি বাবাকে জানাইনি। আসলে নিজেরই এত অদ্ভুত,এত বিচিত্র লাগছিলো যে মন থেকেই ঘটনাটাকে মুছে দিয়েছিলাম। আজ বুঝতে পারছি এর গুরুত্ব কোথায়।
"আচ্ছা আজ চলি, আশা করি খুব শিগ্গির দেখা হবে" লোকটার বলা কথাটা কানে একবার বেজে উঠলো। কথাটার গুরুত্ব যে কতখানি তা এখন বেশ বুঝতে পারছি।
হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা তীব্র আলোর রশ্মি আমার ওপর এসে পড়লো। চোখ ধাঁধিয়ে গেলো সে আলোতে, মাথাটা নিচু করে নিলাম। একজন গুরুগম্ভীর গলা বলে উঠলো -- অনেক খুঁজেছি তোমায় (একটু থেমে) অবশ্য বলতে পারো তোমাদের। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত চষে ফেলেছি শুধু তোমাদের খুঁজতে আর তোমরা কি না শেষে এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুর কোলকাতায়। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। এর থেকে হাঁসির কথা আমার জীবনে আর কিছুই নেই। কত প্ল্যানিং কত চেষ্টা সব বৃথা। দেবুর সত্যি জবাব নেই কিন্তু একটু কাঁচা কাজ করে ফেলেছে ও। তোমায় দিল্লী পাঠিয়ে জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছে।
-- কে আপনি? আমার বাবাকে আপনি চিনলেন কি করে।
দপ করে আলোটা নিভে গেলো সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আগাগোড়া লোহার চাদরে মোড়া একটা ঘর। ঘরে কোন জানালা নেই। দরজাটাও লোহার। আর দরজার ওপর একটা ব্যালকনি সম্ভবত পাশের ঘরে যাওয়ার জন্য। আমি যে কোথায় ঠিক বুঝতে পারলাম না।
লক্ষ করলাম ব্যালকনির ওপর বেশ দামী একটা স্যুট পরিহিত একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। লম্বায় প্রায় আমার সমান, একমুখ কাঁচাপাকা দাড়ি, মুখটা একটু লম্বাগোছের, মৃদু একটা হাঁসির আভা ছড়িয়ে আছে সেই মুখে। একটা পাইপ মুখে কামড়ে ধরে আছে। সব থেকে অবাক লাগলো ওই চোখদুটো, ওই চোখ আমার খুব চেনা।