06-07-2021, 01:59 PM
সুভাস স্মৃতির জার্নি –
সুভাস বাবুরা অনেক দিন পড়ে একা একা কোথাও যাচ্ছেন। একা একা মানে ছেলে মেয়ে ছাড়া শুধুই দুজনে। সেই কত বছর আগে দুজনে বেড়িয়েছিলেন। সুভাস বাবুর মনে পড়ে দুজনে মিলে ঘাটসিলা গিয়েছিলেন বিয়ের পরেই। সেই সময় ১৯৬০ সালে হানিমুন কথাটাও কেউ জানত না। কিন্ত দুজনে ফুলডুংরি পাহাড়ে আর সুবর্ণরেখা নদির ধারে যেভাবে এঁকে অন্যকে কাছে পেয়েছিলেন সেটা গত ২৫ বছরে ভুলতে পারেন নি। সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী ঠিক সময় মত চেন্নাই পৌঁছান। হোটেলেও ওঠেন। সুভাস বাবু বলেন, “আমাদের ছেলের জন্য আমরা আবার একসাথে কোথাও এলাম। একটু আমার পাশে এসে বস”।
স্মৃতি দেবী পাশে গিয়ে বসেন আর বলেন, “কি বলছ বল।“
সুভাস বাবু – কিছু না। তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছা করছে। আমার ঘাটসিলার কোথা মনে পড়ছে।
স্মৃতি দেবী – এই বুড়ো বয়সে আবার প্রেম জেগে উঠেছে তোমার ?
সুভাস বাবু – কেন জাগবে না। আমি সবসময়ই তোমার সাথে প্রেম করি।
স্মৃতি দেবী – আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চান টান করে রেডি হয়ে নাও আমাদের বাজার করতে যেতে হবে। আমাদের ঘরের লক্ষ্মীকে দেখতে যাচ্ছি খালি হাতে তো আর যাব না।
বিকালে দুজনে মিলে টি-নগরে নেলি বলে একটা শাড়ির দোকানে যান। স্মৃতি দেবী সুনিতার জন্য আর সুনিতার মায়ের জন্য শাড়ি কেনেন। সারাভানা স্টোর্সে গিয়ে স্মৃতি দেবী পাগল হয়ে যান স্টিলের বাসন দেখে। উনি কোনদিন কোন দোকানে একসাথে ওত বাসন দেখেননি। উনি কত কি কিনতে চান। সুভাস বাবু বলেন ওরা ফেরার সময় কিনে নিয়ে যাবেন। ওখান থেকে দুজনে মিলে মেরিনা বীচে গিয়ে সমুদ্রের ধারে বসেন। পরদিন সকালে হাসপাতালে স্মৃতি দেবীকে দেখান। সব কিছুই ঠিক ছিল। তারপর সোমবার সন্ধ্যায় পালঘাটে যাবার ট্রেনে ওঠেন।
মঙ্গলবার সকাল ন’টার সময় পালঘাটে পৌঁছন। ট্রেন থেকে নামার একটু পড়েই রাজন গিয়ে ওদের চিনে নেয়। আর কোন বাঙালি লোক ছিল না ওখানে। রাজন ওনাদের হোটেলে পৌঁছে বলে দু ঘণ্টা পড়ে ও ওনাদের নিয়ে যেতে আসবে। রাজন অফিসে গিয়ে আকাশকে সুভাস বাবুদের পৌঁছানোর খবর দেয়।
রাজন গাড়ি করে সুভাস বাবুদের নিয়ে যায়। যত দূর গাড়ীতে যাওয়া সম্ভব গিয়ে রাজন ওনাদের নামতে বলে আর বলে একটু হাঁটতে হবে। সবাই মিলে হেঁটে পৌঁছায় সুনিতাদের বাড়ি। রাজন দেখে সেই মেহগনি গাছের নীচে সুনিতা একটা নীল রঙের ঘাগরা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কাছে যেতেই সুনিতা আকাশের বাবা আর মায়ের সামনে বসে দুজনকে প্রনাম করে। তারপর স্মৃতি দেবীর পায়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার বাংলাতে বলে, “মা তোমার পায়ে আমাকে একটু জায়গা দাও মা”।
পালঘাটে সুনিতা -
স্মৃতি দেবী সুনিতাকে বুকে তুলে নেন। বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “ও মা এতো পুরো বাংলা বলে গো। তোর জায়গা আমার পায়ে না মা, তোর জায়গা আমার এই বুকে। কি সুন্দর বৌ হয়েছে গো আমার। সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো”।
সুভাস বাবু ভেবেছিলেন একটা কালো মেয়ে বিয়ে করেছে আকাশ। তার মানে এই নয় যে উনি কালো পছন্দ করেন না বা কালো মেয়েদের ওপর ওনার কোন বিতৃষ্ণা আছে। উনি শুধু ভেবেছিলেন আমরা তথাকথিত ‘মাদ্রাজী’ বলতে যে চেহারা বুঝি সেইরকম একটা মেয়ে হবে। উনি অবাক হয়ে দেখেন সুনিতা মোটেই সেইরকম নয়। প্রায় বাঙ্গালিদের মত গায়ের রঙ, শান্ত, সুশ্রী, নিখুঁত চেহারা, মুখটা দেখেই মনে ভক্তি আসে। কুমারটুলিতে যেরকম সরস্বতী ঠাকুরের মুখ বানায় অনেকটা সেইরকম। উনি সুনিতার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। ততক্ষনে সুনিতার বাবা মা বেড়িয়ে এসেছেন। ওনারা সবাইকে ভেতরে যেতে বলেন।
কথা বার্তা বলা নিয়ে বেশ একটু সমস্যা হয়। একটু দেখা যাক এখনকার চরিত্রদের মধ্যে কে কি কি ভাষা জানে।
সুনিতা – মালয়ালম, ইংরাজি (আকাশের সাথে দেখা হবার পরে অভ্যেস হয়ে গেছে) আর বাংলা (সবে শিখেছে)
সুনিতার বাবা – মালয়ালম, হিন্দি
সুনিতার মা – শুধু মালয়ালম
সুভাস বাবু – বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি (মোটামুটি)
স্মৃতি দেবী – শুধু বাংলা
রাজন – মালয়ালম, ইংরাজি
মীনা - মালয়ালম, ইংরাজি
সুনিতাই প্রধান দোভাষী সবার মধ্যে। সুনিতার না থাকলে স্মৃতি দেবীর পক্ষে সুনিতার মাকে কিছু বোঝানও প্রায় অসম্ভব। স্মৃতি দেবী বাংলায় বললেন, সুভাস বাবু সেটা ইংরাজিতে অনুবাদ করলে, রাজন বা মীনা সেটা মালয়ালম করে দিল। অসুবিধা হলেও সবাই মেনে নিল। আর অনুবাদের পর অনুবাদ করে কথা বলতে থাকল।
প্রথম স্মৃতি দেবী সুনিতাকে একা একা বসে জিজ্ঞাসা করেন ও আকাশকে কেন ভালবাসে আর কি ভাবে শুরু হল। সুনিতা বোঝে সব কথা আকাশ নিশ্চয়ই ওর মা বাবাকে বলে দিয়েছে। উনি তাও জানতে চান সুনিতার মুখে। সুনিতা যে ভাবে শুরু হয়েছিল, মেহগনি গাছ, তিনবন্ধু বই, মালম্বুলাহ ড্যাম সব কোথা বলে। সুভাস বাবু ঢুকে জিজ্ঞাসা করেন, “কি ব্যাপার মা মেয়েতে কি গল্প হচ্ছে”।
স্মৃতি দেবী – তুমি আসলে কেন এখন। এখানে আমাদের প্রাইভেট কোথা হচ্ছে। তুমি গিয়ে বেয়াই মসায়ের সাথে কোথা বল।
সুভাস বাবু চলে গেলেন। সুনিতা বুঝে গেল আকাশদের সংসারে চাবিটা কার কাছে। সুনিতা বলে, “মা আমি জানিনা তোমাদের সংসারে কি ভাবে থাকব। তোমরা আমাকে গ্রহন করবে কি করবে না জানিনা। আমি শুধু তোমার ছেলেকে জানি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। তোমরা আমাকে যা করতে বলবে তাই করবো। যে ভাবে থাকতে বলবে সেই ভাবেই থাকব। শুধু তোমার ছেলেকে ছেড়ে যেতে বল না। ও আমার শিব ঠাকুর। আমি ওকে পুজা না করে কিচ্ছু করতে পারি না”।
স্মৃতি দেবী – পাগলী মেয়ে। তোকে কখন বললাম আকাশকে ছেড়ে যেতে হবে। তুই আমাদের বাড়ীর বৌ। তুই আমাদের লক্ষ্মী। তোকে যত তাড়াতাড়ি পারি আমরা কোলকাতায় নিয়ে যাব।
সুনিতা – তোমরা কবে ফিরে যাবে ? আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে চল। আমি ওকে ছেড়ে আর থাকতে পারছি না। তুমি হয়ত ভাবছ আমার কোন লজ্জা নেই। আকাশের কোন কিছু করার জন্য সত্যিই আমার কোন লজ্জা নেই।
স্মৃতি দেবী – আমি তোর মন বুঝতে পারছি। কিন্তু সোনা তোর এই অবস্থায় কি করে যাবি। যতদিন না তোর বাচ্চা হবে আমার মনে হয় না ডাক্তার তোকে যেতে দেবে।
সুনিতা – মা তুমি দেখো না ডাক্তার কে বলে।
স্মৃতি দেবী – আচ্ছা আমি আর তোর বাবা গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো।
সুভাস বাবু কিছুটা হিন্দিতে আর কিছুটা মীনার সাহায্য নিয়ে সুনিতার বাবা আর মায়ের সাথে কথা বলেন। উনি বলেন যে আকাশের ওপর ওদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তাই আকাশ যা করেছে ঠিক করেছে। ওনারা যেদিন ডাক্তার অনুমতি দেবে সেদিনই সুনিতা কে ঘরের লক্ষ্মী হিসাবে নিয়ে যাবে। সুনিতার বাবাও আকাশ আর সুনিতার সম্পর্কের মধ্যে যা দেখেছেন সব বলেন। স্মৃতি দেবী বাইরে এসে ওদের সাথে যোগ দেন। চার জন বাবা মায়ের মধ্যে সব আলোচনা হয়ে যায়। সুভাস বাবু বলেন যে পালঘাটে সুনিতাদের সব প্রতিবেশী আর আত্মিয়রা জানে সবাই জানে সুনিতার আকাশ সাথে বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কোলকাতায় প্রায় কেউই জানে না। তাই ওনারা কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে একটা অনুষ্ঠান করবেন। সেখানে শুধু মালা বদল হবে আর খাওয়া দাওয়া হবে। আর সেই অনুষ্ঠানে সুনিতার বাবা, মা, ভাই সবাইকে যেতে হবে।
দুপুরে খেতে বসেন সবাই। সব রান্নাই ওখানকার মত। সাম্বার, রসম আর আভিয়েল। শুধু মাছ সুনিতা রান্না করেছিল। সুনিতা সেদিন কারিমিন মাছের সর্ষে বাটা করেছিল। কারিমিন মাছ শুধু কেরালাতেই পাওয়া যায়। প্রায় আমাদের তেলাপিয়া মাছের মত দেখতে আর খেতেও প্রায় একই। দুপুরে খেতে বসে সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী একেবারে অভিভূত। স্মৃতি দেবী বলেন যে উনি ভাবতেই পারছেন না একটা মেয়ে যে বাংলা বা বাঙ্গালীদের কিছুই জানত না, সে কি করে ছ’ মাসের মধ্য এতো কিছু শিখে গেল। সুভাস বাবু বলেন, “ওকে ভালবাসা সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে”।
খাওয়ার পড়ে সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। সুভাস বাবু জিজ্ঞাসা করেন, “কেমন দেখলে বৌমা কে”?
স্মৃতি দেবী – খুব লক্ষ্মী মেয়ে। প্রথমদিন আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ তোমাকে বলছি আকাশের জায়গায় আমি যদি সুনিতাকে আগে দেখতাম, আমি এই মেয়েকে ছেলের বৌ করে নিয়ে যেতে বলতাম।
সুভাস বাবু - এই মেয়েটা আমাদের আকাশের জন্য সব পারে। ও আকাশকে পাগলের মত ভালো বাসে। আর ভালবাসা সবাইকে যে কোন কাজ করিয়ে নিতে পারে। আজ সুনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে আমরা অনেকেই এই ভাবে ভালোবাসতে পারিনা। আমরা সবাই আমাদের কর্তব্য করে যাই। ভালবেসে কতটা করছি সেই চিন্তাই করিনা। আমাদের আকাশের জীবন ধন্য যে সুনিতাকে পেয়েছে।
স্মৃতি দেবী – তুমি এতদিনে প্রথমবার সত্যি কথা তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছ।
সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী সন্ধ্যা বেলা হোটেলে ফিরে আসেন। রাজন গিয়েছিল ওনাদের নিয়ে আসতে। রাজন ওনাদের ফেরার টিকিট রবিবার বিকালের ট্রেনে করেছে। সুভাস বাবু রাজনকে বললেন ওদের পরদিন কোন সময়ে একবার সুনিতার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য।
পরদিন ১১ টার সময় রাজন ওঁদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলেন এই অবস্থায় কোলকাতায় কোন ভাবেই নেয়ে যাওয়া উচিত হবে না। কম করে চার মাস হবার পড়ে তখন দেখে ঠিক করবেন। ডাক্তারের কাছ থেকে বেড়িয়ে একটা টেলিফোন বুথ থেকে আকাশের অফিসে ফোন করেন আর সব খবর দিয়ে ওকে আশ্বস্ত করেন। আকাশ মায়ের সাথে কথা বলতে চায়। স্মৃতি দেবী ফোন ধরলে আকাশ জিজ্ঞাসা করে বৌ পছন্দ কিনা। স্মৃতি দেবী বলেন খুব ভালো মেয়ে। একদম আকাশ যা বলেছিল তাই।
কোলকাতায় আকাশ –
যখন স্মৃতি দেবী ফোনে বললেন যে ওনাদের সুনিতা পছন্দ হয়েছে, আকাশ আনন্দে পাগল হয়ে যায়। তখন ওর পাসেই সুগন্ধি দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশ কোন নিছু না ভেবেই সুগন্ধিকে জড়িয়ে ধরে। সুগন্ধি অবাক হলেও কিছু বলে না। আকাশ ছেড়ে দিলে ও জিজ্ঞাসা করে, “কি হয়েছে আকাশ ? এতো আনন্দ কেন”?
আকাশ – মা বাবার সুনিতাকে পছন্দ হয়েছে।
সুগন্ধি – তাই, তবে তো আজকে পার্টি চাই তোমার থেকে।
আকাশ – সুনিতা যেদিন কোলকাতায় আসবে আমি সেদিন পার্টি দেব।
সুগন্ধি – কিছু তো একটা দাও আমাকে।
আকাশ – কি নেবে বল। তোমাকে কিই বা দিতে পারি।
সুগন্ধি – তুমি আমাকে অনেক কিছু দিতে পার। দিতে চাইছ না তাই দাও না।
আকাশ – আমার শরীর তোমাকে দিতে পারবো না। একদিনের জন্যে হলেও না, সুনিতা রাজী হলেও না।
সুগন্ধি – তোমার এই উত্তর আমি জানি। ঠিক আছে আমি ভেবে তোমাকে সন্ধ্যা বেলা বলবো আমি কি নেব। আজ একটু দেরি করে থেকো। আমি রিপোর্ট বানানোর পড়ে তোমার কাছে আসব।
সুগন্ধি ইচ্ছা করে দেরি করে। সবাই চলে যায় অফিস থেকে। ভেতরে শুধু আকাশ আর বাইরে সে পিওন টা। সন্ধ্যে সাতটার সময় সুগন্ধি আসে আকাশের কাছে। আর বলে, “দাও আমার উপহার”।
আকাশ – কি নেবে বল।
সুগন্ধি – আরও কয়েকটা চুমু। তুমি বলেছ তুমি আমাকে চুমু খেতে পার।
আকাশ – ঠিক আছে তুমি যদি চুমু খেতেই চাও, তাই হোক।
আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে সুগন্ধির মুখ কাছে টেনে নেয়। পরপর তিনবার চুমু খায়। তারপর সুগন্ধি বলে আর একটা চুমু। বলেই সাথে সাথে ওর শাড়ির আঁচল নামিয়ে দেয় আর ব্লাউজ টেনে ওপরে উঠিয়ে ওর স্তন বের করে দেয়, আর বলে, ঃআমার এই দুই বুকে চুমু দাও”।
আকাশ হতভম্ব হয়ে যায়। চোখের সামনে খোলা বুক দেখে আর সামলাতে পারে না নিজেকে। আস্তে আস্তে দুটো ছোট্ট চুমু খায় দুই স্তন বৃন্তে। তারপরেই ব্যাগ নিয়ে চকিতের মধ্যে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়।
পালঘাটে সুনিতা –
সুভাষ বাবুরা যাবার পর থেকে সুনিতার মন নেচে চলেছে। ওর সব সংশয় শেষ। আকাশের বাবা মা ওকে মেনে নিয়েছে। ওর জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন। দিব্যা আর লতা আসলে ও উত্তেজিত হয়ে সব কিছু বলে। আকাশের বাবা ভালো, আকাশে মা ভালো। ওরা সুনিতার রান্না খেয়ে খুব ভালো বলেছে। সুনিতা ওঁদের বলে একটু বসতে। সন্ধ্যে সাত টা বেজে গেছে। ও হাত মুখ ধুয়ে ঠাকুর কে পুজা দিয়ে আসছে। বাথরুমে ঢোকার সময় খেয়াল করেনি অনেকটা জল পড়ে। তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে সুনিতার পা পিছলে যায়, ও মুখ থুবড়ে পড়ে সামনের ইট গুলোর ওপরে। সুনিতা মাআআআ বলে চেঁচিয়ে উঠেই অজ্ঞান হয়ে যায়।
সবাই দৌড়ে আসে। ধরা ধরি করে সুনিতাকে তুলে এনে বিছানায় শোয়ায়। মুখে সুনিতার মা চোখে জলের ছিটা দিতে থাকে। সুনিতা চোখ খোলে না। রাজন তখনো ঘরে ফেরেনি। দিব্যা দৌড়ে যায় রাজনকে ডাকতে। পাশের ঘরের বাকি ছেলে দুটোকে বলে সুনিতার বাবাকে ডেকে আনতে। দশ মিনিটের মধ্যে রাজন চলে আসে। ততক্ষনে সুনিতা চোখ খুলেছে। চোখ খুলেই বলে ব্যাথা, ভীষণ ব্যাথা। কোথায় ব্যাথা জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলতে পারে না। সুনিতার মা দেখেন সুনিতার রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে। উনি রাজনকে বলেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। রাজন দৌড়ে গিয়ে গাড়ির ব্যবস্থা করে। কোনরকমে সুনিতাকে নিয়ে যে ডাক্তারকে দেখাত ওনার নারসিং হোমে নিয়ে যায়।
ডাক্তার ওকে ভেতরে নিয়ে যায়। আধ ঘণ্টা মত পরে এসে বলেন সুনিতার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। রাজন সুভাসবাবুদের হোটেলে গিয়ে খবর দেয়। সুভাষ বাবু আর স্মৃতি দেবী তক্ষুনি হাসপাতালে চলে আসেন। সুনিতা তখনো প্রায় অজ্ঞান। ডাক্তার বলেন আরও ঘণ্টা চারেক লাগবে ওঁদের সব চিকিৎসা করতে। আশা করা যায় সুনিতার কিছু হবে না। তবে সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে। ওষুধ পত্র যা লাগে রাজন সব ব্যবস্থা করে। সুভাষ বাবু বলেন যত টাকা খরচ হোক উনি করবেন। ওনার ছেলের বৌয়ের সব দায়িত্ব ওনার। ওনার সাথে কিছু টাকা ছিল। উনি বললেন দরকার হলে উনি একদিন পরে আরও ব্যবস্থা করতে পারবেন।
রাত্রি বারোটার সময় সুনিতা মোটামুটি সামলে উঠেছে। সবাই কথা বলতে গেলে ডাক্তার নিষেধ করেন। বলেন পরদিন সকালে গিয়ে কথা বলতে। রাত্রে আর কোন সমস্যা হবে না। রাজন আর দিব্যা হাসপাতালে থেকে যায়। দিব্যা সুনিতার পাশে থাকে। সুভাষ বাবুরা হোটেলে ফিরে যান। সুনিতার বাবা মা ঘরে চলে যায়। একটা আনন্দের পরিবেশ, আনন্দের সময় মুহূর্তের উত্তেজনায়, মুহূর্তের ভুলে চরম বিষাদের রাত্রে পরিণত হয়।
সকাল ন’টায় আকাশের অফিস খোলে। সুভাষ বাবু ন’টা বাজতেই আকাশের অফিসে ফোন করেন। আর সব কিছু বলেন। আকাশ নির্বাক হয়ে যায়। ওর চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। যারা পাশে ছিল বুঝতে পারে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। সুভাষ বাবু আকাশকে বলেন সেই রাতেই পালঘাটের জন্য রওনা দিতে। আকাশ অফিসের বস মিঃ জয়ন্ত বোসকে গিয়ে সব বলে। উনি আকাশকে রেডি হতে বলেন। তারপর উনি ওনার চেনাশোনার দ্বারা জরুরি কোটা থেকে আকাশের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।
সকাল দশটার সময় সবাই হাসপাতালে যায়। সুনিতা মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার বলেন পেটের বাইরে থেকে দু এক জায়গায় কেটে গেছে ইঁটে লাগার জন্য। ভেতরে কতটা নষ্ট হয়েছে সেটা তক্ষুনি বলা যাবে না। এর পড়ে সুনিতার পক্ষে মা হওয়া কঠিন হতে পারে। সকালে সুনিতার পুরোপুরি জ্ঞান এসেছে। ওর বাচ্চা নষ্ট হবার খব শুনে প্রচুর কেঁদেছে। সবাই ওর রুমে ঢুকলে সুনিতা আবার কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সবাই গিয়ে সুনিতাকে সান্তনা দেয়। শুধু স্মৃতি দেবী দুরে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুপুর বেলা সুনিতাকে বাড়ি নিয়ে যায়। স্মৃতি দেবী বলেন যে উনি সুনিতাদের বাড়ি যাবেন না। সুভাষ বাবু ওনাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে সুনিতাদের বাড়ি যান।