Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুনিতা মাতা
#43
আকাশও প্রথমে বুঝে উঠতে পারে না এই খবরে ও আনন্দ করবে না চিন্তা করবে। খুশীতে পাগল হয়ে যাবে না ভবিষ্যতের কথা ভেবে টেনশন করবে। তারপর ভাবে সুনিতা তো ওর লিগ্যাল আর বৈধ স্ত্রী। আর বিয়ের পরে বৌয়ের বাচ্চা হয় এটা তো জানা কথা। আকাশ তো লুকিয়ে বিয়ে করেনি। সবাই জানে যে সুনিতা আকাশের বৌ। এর পর থেকে সবাই জানবে সুনিতা আকাশের বাচ্চার মা। এর মধ্যে খারাপ তো কিছু নেই। তাই দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কিন্তু চিন্তা করতে হবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে।


আকাশের মনে পরে ও কন্যাকুমারীতে দু বার কনডম ছাড়া সঙ্গম করে ছিল। আর তাতেই হয়েছে। ও মনে মনে সেই স্নান করার সময়ের কথা আর সূর্যোদয়ের সময় অনেক লোকের সামনে ভালবাসার কথা ভেবে মনে মনে হেঁসে ওঠে। তারপর ভাবে একটু আনন্দ করা যাক। ও নীচে গিয়ে ১০০ টাকার মিষ্টি (১৯৮৫ সালে ১০০ টাকার মিষ্টি মানে অনেক) কিনে আনে আর অফিসের সবাইকে খাওয়ায়। সবাই কারণ জানতে চাইলে ও বেশ গর্বের সাথে বলে ও বাবা হতে চলেছে। অফিসের সবাই হইচই করে ওঠে।

ওদের অফিসে একটা তামিল মেয়ে কাজ করতো নাম সুগন্ধি। ও তামিল কিন্তু পরিষ্কার বাংলাতেই কথা বলত। ও প্রথম থেকেই আকাশের মন টানার কাজে লেগে পড়েছিল। কোন না কোন বাহানায় আকাশের গায়ে গা লাগিয়ে দিত। অনেকবার আকাশের হাতে ওর স্তন দিয়ে চাপ দিয়েছে। আকাশ প্রথম দিকে গা করতো না কিন্তু পরে ও সোজা বলেছিল ওর এটা ভালো লাগছে না। সুগন্ধি অবাক হবার ভান করে জিজ্ঞাসা করেছিল, “কোনটা”?

সেই সুগন্ধি আকাশের বাবা হবার খবরে সব থেকে বেশী মজা করেও চেঁচিয়ে বলে ওঠে এই টুকু বাচ্চা ছেলে বাবা হবে, বেশ মজার ব্যাপার তো। আকাশ বলে ও এর মধ্যে মজার কি দেখল। সুগন্ধি বলে, এই টুকু বাচ্চা ছেলে, সে আবার একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলল। আবার তার সাথে সেক্সও করল, আর এমন সেক্স করল যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল। দেশে কি ইন্সুলেসন পাওয়া যায় না ? আকাশ বলে ওরা ভোর বেলা সমুদ্রের ধারে ছিল আর ইন্সুলেসন শেষ হয়ে গিয়েছিল। নিজেদেরকে সামলাতে পারেনি। আর যা হয়েছে ভালই তো হয়েছে। এই কথাগুলো ওরা দুজনে জোরে জোরেই বলেছিল আর অফিসের সবাই শুনছিল। অন্য সবাইও বেশ মজা করল আকাশের বাবা হবার ব্যাপারটা নিয়ে। শেষে সুগন্ধি আকাশের কানে কানে বলে যায় যে ও একদিন ঠিক দেখবে আকাশের ভালবাসার যন্ত্রটার কেমন ক্ষমতা। 

আরেকজন একটু বেশী বয়সের মহিলা ছিল যে অফিসের সবার প্রতিমা দি। সে বলে একটা বাচ্চা মেয়ে যার নাক টিপলে দুধ বেরত, আকাশ ওর সাথে দুদিন কি করল যে অন্য কিছু দিয়ে দুধ বেরোবার সময় এসে গেল, খুব ভালো খুব ভালো। অফিসের সবাই খুব হাসাহাসি করে। আকাশের এক সিনিয়র ওকে বলে বাচ্চা হবে এই খবরটা সবার সাথে শেয়ার না করলেই ভালো করতোআকাশ কারণ জিজ্ঞাসা করলে ও বলে বাচ্চা হবার আগে আনন্দ করলে সেটা বাচ্চা জন্য সবসময় ভালো নয়, কারো নজর লেগে যেতে পারে। আকাশ বলে এখনকার দিনে কেউ আবার এইসব মানে নাকি!

আকাশ বাড়ি ফিরে মা আর বোনকে বলে সুনিতার মা হতে চলার খবর। এই খবরে স্মৃতি দেবী খুব খুশী হন, আর বলেন, “এতদিনে আমার ছেলে কোন একটা ছেলের মত কাজ করেছে”।

আকাশ লজ্জা পেয়ে যায়। চন্দ্রিকা এসে আকাশ কে বলে, “ভোর বেলা সমুদ্রের ধারে, সেম সেম দাদা বৌদির ভালবাসার ফসল আসছে। কি মজা আমরা সবাই একটা পুতুল পাবো”।

স্মৃতি দেবী – সমুদ্রে ধারে সেম সেম মানে ?

চন্দ্রিকা – ও তুমি বুঝবে না, ওটা বড়দের কথা। বাবা মায়ের মত বাচ্চাদের ওটা শুনতে নেই।

স্মৃতি দেবী – তোরা খুব বড়ো হয়ে গিয়েছিস ?

চন্দ্রিকা – দেখো দাদাও এবার বাবা হবে, তাই ওকে আর তুমি বাচ্চা বলতে পার না। আর আমি দাদার থেকে একটু খানি ছোটো তাই আমিও প্রায় বড়ো হয়ে গেছি।

স্মৃতি দেবী – ঠিক আছে তোমরা সবাই বড়ো হয়ে গেছ। কিন্তু আর বেশী পাকামো করতে হবে না।

চন্দ্রিকা – কিন্তু এই বাড়ীতে সমুদ্র আসলে, ও কিন্তু আমার কাছে থাকবে।

স্মৃতি দেবী – এই সমুদ্র আবার কে ?

চন্দ্রিকা – কেন দাদার ছেলে হবে। আর তার নাম হবে ‘সমুদ্র’

আকাশ উঠে বোনকে আলতো করে গাঁট্টা মারে। চন্দ্রিকা বলে, “দাদা দেখিস তোর ঠিক ছেলে হবে”।

আকাশ – না আমার মেয়ে হবে আর ওর নাম হবে ‘ঊষাশ্রী’

এমন সময় সুভাস বাবু বাড়ি ফেরেন আর জিজ্ঞাসা করেন এতো হইচই কিসের।

স্মৃতি দেবী – আকাশের বৌ সুনিতা মা হতে চলছে, আকাশ বাবা হচ্ছে। তুমি দাদু আর আমি ঠাকুমা হবো।

চন্দ্রিকা – আর আমি পিসি হবো।

সুভাস বাবু – ঠিক আছে পুরো ব্যাপারটা কি বল তো।

স্মৃতি দেবী – ব্যাপার আবার কি ছেলে বিয়ে করেছে তাই ওর বাচ্চা হবে। এর মধ্যে আবার ব্যাপারের কি আছে। বিয়ের পরে আমি আর তুমি যা করেছিলাম আকাশরাও তাই করেছে।

সুভাস বাবু – আরে ছেলে মেয়ের সামনে কি কথা বলছ একটু বুঝে বল।

স্মৃতি দেবী – এতে আবার লজ্জা পাবার বা বোঝার কি আছে। ওরা সবাই বড়ো হয়ে গেছে।

আকাশ আর চন্দ্রিকা মায়ের ব্যবহার দেখে আর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। ওদের মা যেন একদম বাচ্চা হয়ে গেছে।

স্মৃতি দেবী – এবার তাড়াতাড়ি পালঘাটে যাবার টিকিট কাটো দেখি। বৌমা কে দেখে আসি আর সম্ভব হলে নিয়ে সাথে করে নিয়ে আসি।
আকাশ রাত্রে আবার চিঠি লিখতে বসে।
 
পালঘাটে সুনিতা –
সুনিতার জীবনও বদলে গেছে। সুনিতা ভাবতেই পারে না ও মা হবে। ও ভাবে এই কিছুদিন আগে ও একা ছিল। বাবা মা ছিল, ভাই ছিল, বন্ধুরা ছিল। তবুও ও একাই ছিল। আকাশ আসার পরে ওরা ‘দুজন’ হল। সেটা হতে না হতেই এবার ‘তিনজন’ হবে! ও মনে মনে কতবার বলে মা মা। যতবারই মনের মধ্যে ‘মা’ বলে এক আশ্চর্য রোমাঞ্চ ওকে ঘিরে ধরে। ও ভাবে একটা রক্ত মাংসের তৈরি নতুন প্রান ওর দেহের মধ্যে বড়ো হচ্ছে।  সুনিতা নিজের মনেই বার বার বলতে থাকে ‘আমি মা হবো’, আমি মা হবো।

কিছুদিন পর সুনিতা বলে কলেজ যাবে। ওর ডাক্তার বলেন প্রথম তিনমাস খুব সাবধানে থাকতে হবে সুতরাং বাসে যাতায়াত করা একদম মানা। একদিন রাজন গাড়ি করে ধীরে সাবধানে চালিয়ে সুনিতাকে কলেজে নিয়ে যায়। ওর এই সেসনের আর মাত্র দুমাস ক্লাস বাকি ছিল। কলেজের প্রফেসররা আর কতৃপক্ষ রাজী হয় যে সুনিতাকে কলেজে না আসলেও চলবে। সুনিতা দিব্যার কাছ থেকে ক্লাসের নোটস নিয়ে নেবে। আর বাঙলা শিক্ষক কে রাজী করান হয় যে শনিবার আর রবিবার রাজন গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসবে আবার পরে বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।

রোজ কলেজ থেকে ফিরে দিব্যা আর লতা সুনিতার কাছে চলে আসে। সারাদিনে কি হল সব বলতে আর নোটস দিতে। লতা মাঝে মাঝে আসে না বা দেরি করে আসে। দিব্যা সুনিতাকে বলে ও ছুটির পর কিছু ছেলের সাথে মস্তি করতে চলে যায়। ক্লাসের মধ্যেও মাঝে মাঝে লতা পেছনের দিকে গিয়ে বসে। দিব্যা দেখেছে লতার দুপাস থেকে দুটো ছেলে ওর স্তন নিয়ে খেলছে। একটা ছেলের হাত ওর স্কার্টের মধ্যে।

একদিন সুনিতা লতাকে জিজ্ঞাসা করে ও কলেজে সব ছেলেদের সাথে কি করে। ও দিব্যার কাছ থে যা শোনে সেটা ওর ভালো লাগে নালতা জিজ্ঞাসা করে, “দিব্যার কাছ থেকে কি শুনেছিস”?

সুনিতা – তুই ছেলেদের মাঝে গিয়ে বসিস। ক্লাসের মধ্যেই ছেলে গুলো তোর বুকে হাত দেয়, নীচে যোনিতে হাত দেয়। তুইও ওদের প্যান্টের মধ্যে হাত দিস।

লতা – খেলা করি, তো কি হয়েছে ?

সুনিতা – আর ওই ছেলে গুলো ?

লতা – ওরাও আমার সাথে খেলা করে মজা নেয়।

সুনিতা – তুই এখনও সবার সাথে সেক্সের খেলা চালিয়ে যাচ্ছিস! আমি যে তোকে কত বোঝালাম, তুই একটুও পালটাবি না ?

লতা – আমি অনেক ভেবেছি ভালবাসা না সেক্স কোনটা নেব। শেষে দেখলাম আমি ভালবাসা বুঝিনা। ওই প্যান প্যান করে হাতে হাত রেখে ‘আমি তোমার সব’ আমার দ্বারা হয় না। কেউ আমাকে ভালোবাসে বলার থেকে আমার যোনির ভেতর আঙ্গুল দিয়ে খোচালে আমার বেশী ভালো লাগে।

সুনিতা – তুই ছেলেদের কে ওইসব করতে দিস ?

লতা – আমি কলেজে স্কার্টের নীচে কিছু পরে যাই নাঅনেক ছেলেই সেটা জানে। পেছনে বসে এক এক ক্লাসে এক একটা ছেলে আমার যোনির ভেতর আঙ্গুল দিয়ে আমাকে আরাম দেয়।

সুনিতা – তোর ক্লাসের মধ্যে এইসব করতে ভয় লাগে না ? কেউ যদি দেখে নেয় ?

লতা – ভয় কিসের। আমার চার পাশে যারা বসে সবাই জানে আর আমার সাথে খেলে। তো ভয় কেন পাব!

সুনিতা – কোন টিচার যদি দেখে ফেলে ?

লতা – চার জন টিচার জানে। আমাকে পরে ফাঁক মত গিয়ে ওদের একটু বেশী করে আরাম দিয়ে দিতে হয়।

সুনিতা – মানে?

লতা – আমাকে ওই টিচারদের সাথে খেলা করতে হয় আর সঙ্গম করতে হয়। খুব মজা লাগে। তোরা যে টিচারদের দেখে ভয় পাস ওরা আমার বুকের মধ্যে মিউ মিউ করে। কলেজের কয়েকটা ছেলেও আমার সাথে জঙ্গলে গিয়ে সঙ্গম করে। সে যে কি মজা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।

সুনিতা – কেন তোরা কোথায় যাস আর কি করিস?

লতা – আমি আর রেখা (ক্লাসের আর একটা মেয়ে) ওদের পাঁচ জনের সাথে ওই ক্যানালের ধারের জঙ্গলে চলে আসি। সবাই উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াই। যার যখন খুশী যে ভাবে খুশী সঙ্গম করি। বহুত মজা হয়।

সুনিতা – তুই কিন্তু ভালো করছিস না।

লতা – ভালো খারাপের কি আছে! তুই আকাশকে ভালবেসে শুধু ওর সাথেই সেক্স করেছিস। তাও কতবার! দশ বার কুড়ি বার, খুব বেশী হলে পঞ্চাশ বার। তার বেশী নয়।     

সুনিতা – না না আমরা ওত বার করিনি। খুব বেশী হলে কুড়ি বার হবে।

লতা – তবেই দ্যাখ। আমি প্রায় রোজ করি। কম করে দুশো বার করেছি আর কুড়ি জন আলাদা আলাদা ছেলে আর লোকের সাথে। বল কোনটা বেশী মজার ?

সুনিতা – তুই সেক্স করেছিস। ভালবাসা করিস নি। ভালবাসা দিয়ে সেক্স কত আনন্দ দেয় সেটা জানিসই না।

লতা – সেক্স শুধুই সেক্স। তার মধ্যে ভালবাসা থাকল কি থাকল না তাতে ভারি বয়ে গেছে।

সুনিতা – তুই জানিস না তুই কি পাসনি।

লতা – তুইও জানিস না তুই কি পাচ্ছিস না।

সুনিতা – লতা সাবধান হয়ে যা, একদিন বিপদে পড়বি।

লতা – কিচ্ছু হবে না। সব এইভাবেই থাকবে। এই বেশ ভালো আছি।

লতা লতার মতই থাকে। সুনিতা ওকে বলে কিছুই পাল্টাতে পারে না। প্রায় রোজই সুনিতা ওকে বলে ঠিক হতে। লতা ওকে বলে, “দ্যাখ এক আকাশকে ভালবেসে তুই শুধু দুঃখোই পাচ্ছিস। একটা ফুলের ওপর যেমন একশোটা প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়, আমার চারপাশে সব সময় কত ছেলে ঘুরে বেড়ায়”

সুনিতা - দ্যাখ ফুলের মধু শেষ হয়ে গেলে কোনো প্রজাপতি সেই ফুলের কাছে যায় না। তোর মধু শুকিয়ে গেলে ওই ছেলেরাও কেউ তোর পাশে থাকবে না।

লতা – আমার মধু ওত তাড়াতাড়ি শুকাবে না। আর মধু শুকিয়ে গেলে তুইকি ভাবছিস আকাশও তোর সাথে থাকবে ? আকাশও অন্য ফুলের পেছনে চলে যাবে তখন।

সুনিতা – আমার আকাশ আমাকে ছেড়ে কক্ষনো কোথাও যাবে না। আর কোন দিন যদি একবার কোথাও চলেও যায় পরদিন আবার আমার কাছেই ফিরে আসবে।
সুনিতা একদিন বাড়ি ফিরে আকাশের চিঠি পায়। আকাশ লিখেছে আর একমাস পরে আকাশের বাবা আর মা ওকে দেখতে পালঘাট আসছেন। সেদিন সুনিতা আনন্দে কেঁদে ফেলে। সুনিতার বাবা আর মা খুব খুশী। সুনিতার বাবা বলেন যে উনি জানতেন আকাশ খুব ভালো ছেলে। আকাশ কখনই ওদের সুনিতাকে ছেড়ে যাবে নাসুনিতার মা বলেন উনি আরও আগে থেকেই সেটা জানতেন আর তাই সুনিতাকে আকাশের সাথে সম্পর্ক রাখতে দিয়েছিলেন। 
 
কোলকাতায় আকাশ –
সুভাস বাবু আর স্মৃতিকনা দেবী পালঘাটে যাবেন। বিশাল লম্বা জার্নি। কোলকাতা থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই তখন ৩৪ ঘণ্টার জার্নি ছিল। তারপর চেন্নাই থেকে পালঘাট আরেকটা ট্রেনে ১২ ঘণ্টা। ওনারা বেড়োবেন ৯-ই আগস্ট (১৯৮৫) শুক্রবার। রবিবার সকালে চেন্নাই পৌঁছবেন। রবিবারে চেন্নাইয়ে একটা হোটেলে থাকবেন। রাজন ওর এক বন্ধুর সাহায্যে ওখানে টি-নগরে হোটেল পেনিনসুলা বলে একটা হোটেল বুক করে দিয়েছে। রবিবারে চেন্নাইয়ে বাজার করবেন। সোমবার সকালে ওখানে একটা হাসপাতালে স্মৃতি দেবিকে দেখাবেন। তারপর রাত্রে আলেপ্পি এক্সপ্রেসে পালঘাট যাবেন। মঙ্গলবার সকালে রাজন ওনাদের জন্য হোটেল ক্যাসিনো তে বুক করে রেখেছে। ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা রাজন করে রাখবে।

আকাশ ভাবে ওর জীবনে যেরকম সুনিতা স্ত্রী হিসাবে এসেছে সেইরকমই ভাগ্য করে একটা বন্ধু পেয়েছে। ওর যখন যা সাহায্যের দরকার হয়েছে রাজন কিছু না বলতেই করে দিয়েছে। আকাশ কোন দিন কোন কিছু অনুরোধ করেনি বা চায়নি রাজনের কাছে। আকাশের কখন কি দরকার রাজন না বলতেই বুঝে যায়।  আকাশ বাবা মায়ের যাবার টিকিট করে রাজনকে ফোন করে ছিল। টিকিটের তারিখ গুলো শুধু রাজনকে জানিয়েছিল। রাজন পরের দুদিনে বাকি সব ব্যবস্থা করে আকাশকে জানিয়ে দিয়েছে।

আমরা অনেকেই ভাববো আকাশ কি ভাবে ওইরকম বন্ধু পেয়ে গেল। এর রহস্য হল যদি আমি সবাইকে দরকার মত সাহায্য করি, তবে আমিও সাহায্য পাব না চাইতেই। আমি যদি ঠিক থাকি তবে সব জায়গাতেই বন্ধু পাব। সব কিছু ‘এই আমি’-এর Attitude-এর ওপর নির্ভর করছে।   

আকাশের মন এখন অনেক শান্তসুনিতার জন্য মন খারাপ করে। মানুষের মনও নাকের মত। আমরা কে কোন একটা গন্ধ দু মিনিট মত শোঁকার পর আর সেই গন্ধটা বুঝতে পারি না। অন্য গন্ধ বুঝতে পারিমানুষের মনও সেইরকম দুঃখের মধ্যে কিছুদিন থাকার পর সেই দুঃখটাকে আর বুঝতে পারে না। আমরা বলি সয়ে গেছে। এখানে আকাশের আর ওখানে সুনিতার দুজনেরই মনের অবস্থা একই রকম, বিরহ জ্বালা আছে কিন্তু সয়ে গেছে। এই বিরহ আকাশকে আলাদা করে কষ্ট দেয়না। রোজ রাত্রে স্বপ্নে সুনিতাকে দেখবে। প্রত্যেক রাতে আলাদা জায়গায় ওকে নিয়ে যায়। প্রত্যেক রাতে আলাদা ভাবে ভালোবাসে। আর প্রত্যেক দিন সকালে আলাদা ভাবে ঘুম ভাঙ্গে। কোনদিন সুনিতাকে চুমু খেতে গিয়ে দেয়ালে ঠোঁট ঘষে যায় আর ব্যাথায় ঘুম ভাঙ্গে। কোনদিন সুনিতার কবুতর কে আদর করতে করতে দেখে বালিস চেপে ধরে আছে। চন্দ্রিকা দুষ্টুমি করে দাদাকে দুটো পাস বালিস দিয়ে গেছে।

অফিসে গেলে আকাশ মন দিয়ে কাজ করে। সেখানে কোন ফাকি দেয় না। ও ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যে যে মেসিনের ট্রেনিং নিয়েছে সব গুলোতেই এক্সপার্ট হয়ে গেছে। ওর বেশীর ভাগ কাজই মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি নিয়ে। ই সি জি মেসিন আর ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মেসিন দেখে। সেই জন্য অনেকদিনই কোলকাতার সব নারসিং হোম আর হাসপাতালে ঘুরে বেড়ায়। সবাই ওদের অফিসে ফোন করে আকাশকে পাঠাতে বলে।

এর মধ্যে একদিন একটা জরুরি মেসিন ঠিক হচ্ছিল না। বেশ রাত্রি পর্যন্ত বসে ছিল। আর সুগন্ধিও বসে ছিল কোন একটা রিপোর্ট রেডি করার জন্য। ও মাঝে মাঝে এসে আকাশের সাথে কথা বলে যাচ্ছিল। অফিসে আর কেউ ছিল না, শুধু অফিসের পিওনটা বাইরে বসে পাহারা দিচ্ছিল। সুগন্ধির কাজ শেষ হয়ে গেলেও বাড়ি যাচ্ছিল না। একবার গিয়ে আকাশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ লাফিয়ে উঠে ওকে সরিয়ে দেয়। সুগন্ধি বলে, “কেন আমার বুকের ছোঁয়া কি তোমার ভালো লাগলো না”?

আকাশ – আমি তোমাকে আগেও বলেছি যে আমি তোমার সাথে কিছু করতে পারবো না, তুমি কেন আমাকে ছারছ না ?

সুগন্ধি – আমিও তোমাকে চাই আকাশ।

আকাশ – সেটা কখনই সম্ভব নয়। আমি সুনিতাকে সব দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার জন্য আর কিছুই নেই।

সুগন্ধি – তুমি সুনিতাকে তোমার মন দিয়েছ। আমি জানি আমি কখনই তোমার মন পাবো না। তবু অন্তত তোমার শরীরটা আমাকে দাও।

আকাশ – সেটাও সম্ভব নয়, সেটা সুনিতার সাথে প্রতারনা করা হবে। আর আমি শরীরের সম্পর্কতে বিশ্বাস করিনা। পেতেও চাই না।

সুগন্ধি – শুধু একদিনের জন্য দাও। তুমি একবার একটু আদর করো আমাকে। আমি সেই টুকু নিয়েই খুশী থাকব।

আকাশ – আমিতো বার বার বলেছি সেটা সম্ভব নয়। কেন একটা অসম্ভবকে নিয়ে তুমি এতো জেদ করছ ?

সুগন্ধি – তুমি আর সুনিতা সত্যিই কি হোটেলের বারান্দায় অন্যদের চোখের সামনে সুনিতার সাথে সঙ্গম করেছিলে?

আকাশ – হ্যাঁ করেছিলাম, তাতে কি হয়েছে ?

সুগন্ধি – অনেক লোকে তোমাকে আর সুনিতাকে উলঙ্গ দেখেছে ?

আকাশ – হ্যাঁ দেখেছে, তাতেই বা কি হয়েছে।

সুগন্ধি – তোমার সব কিছু কত জনে যখন দেখেছে, তখন আমাকে দেখালেই বা কি এসে যায়?

আকাশ – আমি ওদের দেখায়নি, ওরা দেখেছে।

সুগন্ধি – সে একই হল। আমাকে একদিন দাও তোমার সোনাকে আদর করি। প্লীজ।

আকাশ – না, পারবো না তুমি যা চাইছ সেটা দিতে। অফিসে আরও অনেকেইতো আছে। পলাস দা কে বললেই তোমার সাথে সব কিছু করে দেবে। তুমিও খুশী পলাস দাও খুশী।

সুগন্ধি – আমাকে কি তুমি বেশ্যা ভেবেছ নাকি যে যে খুশী করতে চাইলেই আমি দিয়ে দেব! আমি শুধু তোমাকে চাই।

আকাশ – তুমি যদি আমাকে ভালবেসেই থাকো আগে বলতে হত। এখন আর সম্ভব নয়। এখন বাড়ি যাও অনেক রাত হয়ে গেছে। বাড়ীতে সবাই চিন্তা করছে।

সুগন্ধি – আমাকে ফিরিয়ে দিলে। দুঃখ পেলাম কিন্তু রাগ করলাম না। সুনিতাকে একবার হিংসা হচ্ছে, কিন্তু সেই নিস্পাপ মেয়েটাকেও আমি তোমার কাছ থেকে শুনে ভালবেসে ফেলেছি। আমি চাই না ওর কোন ক্ষতি হোক। ও বাচ্চা নিয়ে আসুক। ওর কাছ থেকে তোমাকে এক রাতের জন্য চেয়ে নেব। তখন প্লীজ তুমি না করো না।

আকাশ বুঝতে পারে সুগন্ধিও ওকে সত্যিই ভালোবাসে, কিন্তু ও নিরুপায়। ওর মনের মধ্যে একটাই ঘর আর সেখানে সুনিতা দখল নিয়ে বসে আছে। ওর কাছে আর কোন ঘর নেই যেখানে ও সুগন্ধিকে রাখতে পারে। তবু সুগন্ধিকে সান্তনা দেবার জন্য ও বুকে টেনে নেয়, গভীর মমতায় ওর ঠোঁটে একটা চুমু খায় আর বলে, “এখন আমি তোমাকে এর বেশী ভালবাসা দিতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও”।
 
পালঘাটে সুনিতা –
সুনিতার দিনও ভালই যাচ্ছে। আকাশের বাবা মায়ের আসতে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। ও যদিও জানত যে ওনারা ওকে গ্রহন করে নেবেনই, তবু মনের মধ্যে একটা ‘কিন্তু’ ছিল বা ‘যদি’ ছিল। ওর আকাশের ওপর কোন অবিশ্বাস ছিল না। ও জানত আকাশ ওকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। কিন্তু ওর বাবা মায়ের ‘যদি’ পছন্দ না হয়। যদিবা পছন্দ হয়েও যায় তখন ওনারা বললেন মেয়ে পছন্দ ‘কিন্তু’ অমুক টা ঠিক নেই, তমুক টা খারাপ তখন কি হবে। ওর এখন মাথা থেকে ‘যদি’ টা গিয়েছে। কিন্তু ‘কিন্তু’ টা থেকেই গেছে। রোজ সকাল বেলা সূর্যদেবের কাছে প্রার্থনা করে ওকে যেন কোন ‘কিন্তু’-এর শিকার না হতে হয়।

দিব্যার সহযোগিতায় পড়াশুনা ভালই চলছে। রাজনের সহযোগিতায় বাঙলা শেখাও ভালো এগোচ্ছে। ও তিনবন্ধু বইটা পড়তে পারে, সব বুঝতে পারে না। দু দিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। সব নর্মাল আছে। ওর রক্তে হিমোগ্লোবিন কম বলে, ডাক্তার আয়রন ট্যাবলেট খেতে দিয়েছে।

সুনিতা দিনের বেলা আকাশের কথা ভাবে। আকাশের কথা মনে করে মাঝে মাঝে হেঁসে ওঠে। প্রথম দিকে ওর মা আর ভাই ভয় পেয়েছিল সুনিতা হয়ত একটু পাগল মত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সবাই জানে সুনিতা কেন হাসে। আকাশের চিঠি পড়ে ও মনের মধ্যে একটা ছবি এঁকে নিয়েছে ওর শ্বশুর বাড়ি কেমন দেখতে। আকাশের বাবা, মা আর বোন কেমন দেখতে।  রাত্রি বেলা ঘুমিয়ে ও সেই কাল্পনিক বাড়ীতে ঘুরে বেড়ায়। ও ভবিষ্যতের সন্তান কে নিয়ে ওই বাড়ীতে কত কি করে। কিন্তু কোনদিন বুঝতে পারে না ওর ভবিষ্যতের সন্তান ছেলে না মেয়ে। ও রোজ সকালে ভাবে এর পড়ে যখন স্বপ্নে বাচ্চাকে দেখবে খেয়াল করবে সে ছেলে না মেয়ে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় সেটা আর মনে থাকে না। দেখতে দেখতে ৯-ই আগস্ট এসে যায়। রাজন রাত্রে খবর দেয় যে আকাশ ফোন করেছিল আর ওর বাবা আর মা ট্রেনে উঠে পরেছেন।
 
কোলকাতায় আকাশ –
বাবা আর মাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে একটা স্টেশনের টেলিফোন বুথ থেকে আকাশ রাজনকে ফোন করে দেয়। বাবা, মাকে ট্রেনে তোলার পর আকাশ মনে মনে সূর্য দেবতাকে স্মরন করে যেন সব কিছু ভালো মত হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে বোনকে বলে ও জীবনে প্রথমবার সূর্য ঠাকুরের কাছ থেকে কিছু চেয়েছে। চন্দ্রিকা বলে সব ঠিক মত হয়ে যাবে কোন চিন্তা না করতে।

আকাশ সেই রাতে স্বপ্ন দেখে সুনিতার সাথে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাথে ওদের মেয়ে। কোথা থেকে সুগন্ধি এসে যায় আর সুনিতা কে বলে ও কেন আকাশকে নিয়ে নিয়েছে। আকাশকে ছেড়ে সুগন্ধিও থাকতে পারবে না। সুনিতা উত্তর দেয় আকাশ ওর আর শুধুই ওর, ও ওর আকাশকে কাউকে দেবে না। সুনিতা আকাশকে জিজ্ঞাসা করে ওর প্রভু কি আরেকটা ভক্ত চায়। আকাশ বলে ওঠে না চায় না। যে সুনিতার মত সাথী পেয়েছে তার আর অন্য কাউকে চায় না। তারপর সুগন্ধি আকাশকে জড়িয়ে ধরে আর সুনিতা কাঁদতে থাকে। সুগন্ধি আকাশকে ছেড়ে ওদের মেয়েকে কোলে নিয়ে নেয় আর দুরে পালিয়ে যেতে থাকে। সুনিতা আর আকাশ দুজনেই সুগন্ধির ওপর চেঁচিয়ে ওঠে। আর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আকাশের চেঁচানো শুনে চন্দ্রিকাও চলে আসে।

আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। চন্দ্রিকা এসে ওর মাথায় হাত রাখে। জিজ্ঞাসা করে কি হল। আকাশ বলে ও সেদিন ওদের মেয়েকে স্বপ্নে দেখেছে। আর সুগিন্ধি ওদের মেয়েকে কেরে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাই চেঁচিয়ে উঠেছে। চন্দ্রিকা সান্তনা দিয়ে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আকাশ যেন ওর সূর্য দেবতার ওপর ভরসা রাখে।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply


Messages In This Thread
সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 28-06-2021, 12:11 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 28-06-2021, 12:29 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 01:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 02:30 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 29-06-2021, 05:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 01-07-2021, 01:35 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 02-07-2021, 05:55 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 05-07-2021, 10:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 06-07-2021, 01:51 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 07-07-2021, 04:03 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 07-07-2021, 07:13 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:14 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:54 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:44 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:45 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:47 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:48 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:49 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:51 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Siraz - 06-01-2022, 10:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 30-03-2022, 01:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 09-01-2023, 07:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by S_Mistri - 09-01-2023, 10:10 AM
RE: সুনিতা মাতা - by kourav - 12-01-2023, 07:38 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)